উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
১০ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১১)
একটি নতুন সকাল, একটি নতুন গল্প বলে। একটি আলো ঝলমলে দিন,একটি মনের আঁধার দূর করে। গতকালের আঘাতে ক্ষত-বিক্ষত তরুর নতুন করে জন্ম হলো যেনো।তরু ঘর থেকে বের হলো স্কুলের সময় হওয়ার আগে। গিয়ে ডাইনিং টেবিলে বসলো। লতা বসে বসে নাশতা করছে।তরুকে এখানে দেখে কিছুটা অবাকই হলো লতা।তরুর উপর কিছুটা রাগ ও জন্মেছে লতার।গতকাল ফাইজান ভাই তরুকে নিয়ে কতো চিন্তিত ছিলো বলে লতার মনে হচ্ছিলো।
এজন্য ভীষণ রাগ লাগছে লতার।
তরু গলা ছড়িয়ে ডেকে বললো, "চাচী,নাশতা দিয়ে যান।"
আমেনা রান্নাঘরে বসে তরুকে গালাগাল দিচ্ছিলো। সকালে দুই বার গিয়ে ডেকে এসেছে আমেনা তরুকে,তরু জবাব দেয় নি।সকালের নাশতা বানানোর জন্য তরুকে ডেকেছে। এই মেয়ে কতো বেয়াদব হলে মটকা মেরে ছিলো রুমের ভেতরে।
তরুর ডাক শুনে আমেনার হাত পা রাগে ফেটে যাচ্ছিলো যেনো।হাতে করে একটা পরোটা নিয়ে উঠে এলো ঘরে।
তরুর সামনে দিয়ে বললো, "তোকে সকালে আমি কতো বার ডেকেছি?"
তরু পা নাচাতে নাচাতে বললো, "শুনতে পাই নি,ঘুমে ছিলাম।"
আমেনা নিজের রাগ সংবরণ করে বললো, "আগামীকাল থেকে ফজরের নামাজের সময় উঠবি,নাশতা বানিয়ে দুপুরের রান্না করে স্কুলে যাবি।"
তরু বললো, "কেনো?"
আমেনা বিস্মিত হলো তরুর প্রশ্ন শুনে। কেনো বলছে এই মেয়ে?
ও জানে না কেনো?
আবারও কথা রিপিট করলো আমেনা।
তরু লতার সামনে থেকে মাংসের ঝোলের বাটিটা টেনে নিজের সামনে এনে পরোটা চুবিয়ে বললো, "না চাচী,সম্ভব না।আমার লেখাপড়ার ক্ষতি করে কোনো কিছু করা আমার পক্ষে সম্ভব না।আমি এই বাড়ির মেয়ে,কাজের লোক না।তোমার কাজ তুমি করবে, না পারলে কাজের লোক রাখবে। যেভাবে তোমার কাজ হয়,কিন্তু আমি পারবো না।আমি তরু,রাবেয়া না।"
লতা বিস্ফোরিত চোখে তাকিয়ে রইলো তরুর দিকে। আমেনার মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না। কি বলছে এই পুঁচকে মেয়ে?ওর মায়ের ও তো এতো সাহস ছিলো না যে আমেনার সাথে এরকম ব্যবহার করার।অথচ তার মেয়ে কি-না!
তরু পরোটা শেষ করে বললো, "একটা পরোটা আমার হয় না চাচী,আগামীকাল থেকে তিনটি দিবা আমাকে।আর আবারও বলছি চাচী,তুমি যদি মনে করো আমার বাবা নেই,মা নেই আমার সাথে যেভাবে খুশি ব্যবহার করবে তাহলে সেসব ভুলে যাও।আমার মা আমার পিছুটান ছিলো, এখন আর আমার কোনো পিছুটান নেই।চাইলে ও আমাকে কাজের মেয়ের মতো ব্যবহার করতে পারবে না তুমি। "
তরু চলে গেলো নিজের রুমে।অনেক অনেক বছর পর আজকে বুকের ভেতর একটু শান্তি শান্তি লাগছে তরুর।
ভীতু মা থাকলে কখনো তরু এভাবে জবাব দিতে পারতো না।
এরকম অসহায় জীবন আর কতো মেনে নিবে তরু?
গতকালের ঘটনার পর থেকে তরুর মাথায় একটা ব্যাপার খুব ভালো করে ঢুকে গেছে।এই দুনিয়া অসহায়ের পাশে কখনোই থাকে না,যে ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিবাদ করে দুনিয়া তাকেই বাহবা দেয় তার পাশেই থাকে।
তরু চলে যাওয়ার পর আমেনা কিছুক্ষণ স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। লতার নিজের কাছেও খুব অবাক লাগছে তরুর ব্যবহার।
আমেনাকে লতা বললো, "এবার কি হবে মা?"
হিসহিসিয়ে আমেনা বললো, "বিষ দাঁত ভেঙে দিতে হবে সময় মতো। "
লতা বুঝতে পারলো না। আমেনা সিদ্ধান্ত নিলো আলমগীর ঘুম থেকে উঠলে দ্রুত সবটা জানাতে হবে।
স্কুল থেকে ফিরে গোসল করে তরু ছাদে গেলো।ফাইজান বের হবে লতাকে পড়াতে যাওয়ার জন্য। তরু নিজেই ফাইজানের রুমে গেলো। হুট করে তরুকে দেখে ফাইজান ভীষণ অবাক হলো।
তরু এসেছে!
দেহের প্রতিটি রক্তকণায় মিছিল শুরু হলো যেনো তরুকে দেখে।কি সুন্দর শান্তি দিঘির মতো একটা মুখ।দেখলেই মনের সব চিন্তা ভাবনা যেনো কর্পুরের মতো উড়ে যায়।
ভালো লাগায় মনটা ভরে যায়।
তরু বললো, "আপনাকে ধন্যবাদ জানাতে এসেছি। "
"ওহ আচ্ছা, তুমি এসেছো এতেই আমি খুশি তরু।"
"গতরাতে আমার ভীষণ ক্ষিধে ছিলো জানেন।আপনি খাবার দিয়ে আসার পর টের পেলাম কি ভীষণ ক্ষুধার্ত আমি।"
"তুমি কেমন আছো তরু?তোমাকে আজকে অন্য রকম লাগছে।"
"কেমন লাগছে?আমি তো ভালোই আছি।"
"তরু,মানুষ যখন খুব বেশি যন্ত্রণায় থাকে কিন্তু কাউকে বুঝতে দিতে চায় না তার কষ্ট তখন এভাবেই করে। তোমার কথাবার্তা আজ খুব চঞ্চল মনে হচ্ছে। যেনো তুমি আসলে তুমি নেই।অন্য কেউ হওয়ার ভান করছো তুমি। সবার সামনে নিজেকে আনন্দিত, কেয়ারলেস,নির্বিঘ্ন প্রমাণ করতে চাইছো।কিন্তু পুরোটাই তোমার ভান।মনের দিক থেকে তুমি খুব মুষড়ে আছো।"
তরু চেয়ার টেনে বসলো। বিষণ্ণ হয়ে বললো, "আমি কাজল পরেছি দেখুন।আমি খুব কষ্টে থাকলে চোখে কাজল পরি।কি করবো বলুন, আমি আসলে শুধু কষ্টে আছি বললে ভুল হবে।কষ্টের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি। মনে হচ্ছে বৃথা একটা জীবন আমার। আমার তো একটা সুন্দর ফ্যামিলি হতো।অথচ আমার জীবন হলো সবচেয়ে বেশি ছন্নছাড়া।"
ফাইজান তরুর সামনে হাটু গেড়ে বসলো। তরুর একটা হাত টেনে নিজের দুই হাতের মধ্যে নিয়ে বললো, "তরু,আমাকে কি একটু বিশ্বাস করা যায় না?
বিশ্বাস করো,আমার বাবা মা ভাই বোন সবাই মিলে জয়েন্ট ফ্যামিলি আমাদের। আমি তোমাকে ভীষণ ভালো রাখবো।এই চোখের কাজল চোখের জলে মুছে যেতে দিবো না কখনো এই প্রতিজ্ঞা করলাম।"
তরুর বুকের ভেতর কেঁপে উঠলো। ষোড়শীর বুকের কাঁপন ফাইজান টের পেলো। কেউ কোনো কথা বললো না,তরুর চোখ থেকে দুই ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো ফাইজানের হাতে।
সেই বিষন্ন বিকেলে তরুর এক অচেনা অনুভূতি হলো।মনে হলো তরু আর একা নেই।কেউ একজন তো তার আছে যার কাছে তরু ভীষণ স্পেশাল।
এক রাশ ভালো লাগা নিয়ে তরু নেমে এলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন