উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
১১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১২)
পড়ার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে লতা।এখনই ফাইজান আসবে।লতা নীল রঙের একটা থ্রিপিস পরেছে।আজকে খুবই হালকা ভাবে সেজেছে।
মনটা খুঁতখুঁত করছে যদিও।একটু ফাউন্ডেশন দিলে ভালো হতো মনে হয়।
একবার ভাবলো উঠে গিয়ে দিয়ে আসবে কিন্তু তার আগেই ফাইজান এলো।
লতার বুকের ভেতর একটা সুখের পাখি ডেকে উঠলো। ফাইজানকে আজকে ভীষণ প্রাণচঞ্চল হয়ে কথা বলছে।
লতা বললো, "আপনাকে ভীষণ খুশি খুশি মনে হচ্ছে। "
"আজ আমি সবচেয়ে বেশি খুশি লতা।আমি আজ যা পেয়েছি এই পৃথিবীতে কেউ তা পায় নি।আজ যে আমার হয়েছে সে আজীবনের জন্য আমার মনে বাঁধা পড়ে গেছে।হিমালয় জয় করার চাইতে কঠিন বন্ধুর পাহাড় আজ আমি জয় করতে পেরেছি। "
লতার মাথায় ঢুকলো না কিছু। ফাইজানের মনে পড়লো তরু বলেছে সেদিন লতা না-কি তাকে পছন্দ করে। ফাইজানের মনে হলো এটাই সবচেয়ে ভালো সুযোগ লতাকে জানিয়ে দেওয়ার।
হাসতে হাসতে ফাইজান বললো, "আমি একজনকে ভীষণ ভালোবাসতাম লতা।ভীষণ, ভীষণ, ভীষণ।
সে বড় কঠিন মানুষ। আমার কাছে কখনো ধরা দিতে চায় না।বহু সাধনার পর আজ তাকে আমার করে পেয়েছি। "
লতার বুকের ভেতর ধ্বক করে কেঁপে উঠলো। লতার মনে হলো কেউ বুঝি তার বুকের ভেতরে টান দিয়ে কলিজাটা তুলে বের করে নিয়ে এসেছে। হাসি মুখটা মুহূর্তেই বিবর্ণ হয়ে গেলো।
মরে গেলে ও বুঝি এতো কষ্ট হয় না।লতার দম বন্ধ হয়ে আসছে যেনো।
লতা দুম করে বললো, "না না,আপনি কাউকে ভালোবাসতে পারেন না।কিছুতেই না।"
ফাইজান ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লতা আর বসলো না।দৌড়ে নিজের রুমে চলে গেলো। ফাইজান ও অপেক্ষা করলো না। আজ তার নিজেকে ভীষণ নির্ভার লাগছে।
লতা বুঝতে পারছে না কি করবে।মনে হচ্ছে সব মিথ্যে। এরকম কিছু হয় নি,কখনো হতে পারে না।
ফাইজান কখনোই কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
লতা এতো পরিকল্পনা করে ফাইজানকে বাড়িতে পর্যন্ত নিয়ে এসেছে অথচ সে কি-না বলছে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
লতার সহ্য হচ্ছে না কিছুতেই।রাগে সারা শরীর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে লতার।কে সেই মেয়ে!
লতার ইচ্ছে করছে খু///ন করে ফেলে তাকে।
সারা বিকেল ধরে লতা ভাবনা চিন্তা করতে লাগলো। বেঁচে থাকতে সে ফাইজানকে অন্য কারো হতে দিবে না।
আমেনা লতার রুমের দরজায় নক করলো। লতা দরজা খুললো না।কয়েকবার নক করা পর লতা দরজা খুললো। বদ্ধ রুমে বসে লতা পরিকল্পনা করে ফেললো কিভাবে কি করবে।এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা।
ফাইজানের নিজেকে মনে হচ্ছে সদ্য কৈশোরে পা দেওয়া একজন। যার কি-না উত্তেজনার শেষ নেই।ইচ্ছে করছে এক ছুটে গিয়ে এক নজর তরুকে দেখে আসে।কিন্তু অনেক কষ্টে সেই ইচ্ছে দমন করলো ফাইজান।এই বয়সে ছেলে মানুষি মানায় না তবুও মনটা ভীষণ ছেলেমানুষি করতে চায়।
ফাইজান অপেক্ষা করতে লাগলো রাত হওয়ার জন্য। রাত হলে তরু আসবে খাবার নিয়ে।
রাতে আমেনা খাবার বেড়ে তরুকে বললো,"ফাইজানের খাবার দিয়ে আয়।"
কথাটা শুনে তরুর কেমন যেনো লাগলো। লজ্জা এসে ভীড় করলো অন্তর জুড়ে।লতা উঠে দাঁড়িয়ে বললো, "মা আমি নিয়ে যাচি,আমার একটা অংক করার আছে।সেটা ও বুঝে আসা লাগবে।"
আমেনা আর কথা বাড়ালো না। লতার হাতে প্লেটটা ধরিয়ে দিলো।
তরু তাকিয়ে রইলো তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে। কি আশ্চর্য!
মনের কি অদ্ভুত খেয়াল।লতা যে ফাইজানের প্রতি দুর্বল তা তো তরু আগে থেকেই জানে অথচ কখনো তো এরকম রাগ হয় নি বা হিংসে হয় নি।আজ কেনো অন্তর জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে লতা উপরে যাচ্ছে দেখে!
কিসের এতো জোর মনের ফাইজানের উপর?
২৪ ঘন্টা হয় নি মন দেওয়া নেওয়ার অথচ মন এখনই কেমন খবরদারি করছে?
তরু খেতে বসলো। দুই চোখ বারবার ভিজে উঠছে।মা কি করছে এখন?
মা কি খেয়েছে?
মা'য়ের কি তরুকে মনে পড়ছে?আহা মাগো!
কতো দূরে মা এখন?
তরুকে কলিজার ভেতরে গেঁথে রাখতো যেই মা সেই মা এখন কোথায়?
কি করছে?
তরু চোখের পানি মুছে নিলো। নিজেকে নিজে বললো না কাঁদবো না।কেনো কাঁদছি আমি।আমি তো চেয়েছি এরকমই। মা ভালো থাকুক,আমার চোখের পানি মায়ের সুখের পথে বাঁধা যাতে না হয়।
আমেনা তরুর দিকে তাকিয়ে রইলো।
কি অদ্ভুত মেয়ে!
একটা বার মায়ের জন্য কাঁদছে না,একবার মা'য়ের সাথে কথা বলতে চাচ্ছে না।
পাথর না-কি!
এই মেয়ে মা'য়ের মতো সোজা না। একে শায়েস্তা করা এতটা সোজা হবে না।
ফাইজান লাফিয়ে উঠে দরজায় নক করা শুনে। দরজা খুলেই বললো, "তুমি! "
বাকি কথা শেষ করতে পারলো না।যতটা উৎসাহ নিয়ে দরজা খুলেছে ততটাই হতাশ হলো লতাকে দেখে।
লতা ভ্রু কুঁচকে তাকালো ফাইজানের দিকে।
লতা খাবার রেখে চেয়ার টেনে বসলো।ফাইজান গম্ভীর হয়ে বললো, "তুমি যাও আমার খেতে দেরি হবে।সকালে নিলেই হবে এঁটো বাসন। "
লতা তবুও বসে রইলো। ফাইজানের অস্বস্তি হচ্ছে ভীষণ। লতা বসে বসে হিসেব মেলাচ্ছে। লেখাপড়ার মাথা যদিও কিছুটা খারাপ কিন্তু কূট বুদ্ধি কম নেই।লতার মন বলছে ফাইজান তরুকেই ভালোবাসে।নয়তো যেমন হাসি মুখে দরজা খুললো লতাকে দেখে সেই হাসি মিলিয়ে গেলো কেনো?
ফাইজান বিরক্ত হয়ে বললো, "লতা অযথা কেনো বসে আছো?যাও নিচে যাও।আমার পড়া আছে।"
লতা উঠে নিচে চলে গেলো। তরু দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে কখন লতা নেমে আসবে।অনেকক্ষণ পর লতাকে আসতে দেখে কে জানে কেনো তরুর ভীষণ রাগ হলো।ইচ্ছে করলো গিয়ে দুটো দেয় দুই গালে।কিন্তু নিজেকে সামলালো তরু।
লতা তরুকে দেখে হেসে বললো, "জানিস তরু,আজকে আমি ভীষণ খুশি।"
তরু কিছু বললো না, কিছু জানতেও চাইলো না।লতা নিজে থেকে বললো, "ফাইজান স্যারকে নিয়ে দেখতে থাকা স্বপ্ন আমার সত্যি হতে আর বেশি দেরি নেই।"
তরুর মুখটা গম্ভীর হয়ে গেলো মুহূর্তে। কিছু না বলে তরু নিজের রুমে ঢুকে গেলো। লতার কথা যদিও তরুর বিশ্বাস হচ্ছে না তবুও মনটা কেমন খচখচ করতে লাগলো। বেয়াদব লতাটা ভালোবাসার ঘরে আগুন লাগাতে চাইছে নিশ্চয়।
তরু ফিক করে হেসে ফেললো নিজে নিজে। মনে মনে বললো, "আমাকে এতটা গাঁধা ভাবিস না লতা।তোর চালাকি আমি বুঝি।"
রাতে তরুর ঘুম ভেঙে গেলো হঠাৎ করে।কেমন অস্থির লাগছে তরুর। বুক ভেঙে কান্না আসছে।কে জানে কেনো নিজেকে ভীষণ নিঃস্ব মনে হচ্ছে।
বিছানায় উঠে বসলো তরু।তারপর নেমে গিয়ে রুমের লাইট অন করলো।লাইট অন করতেই নজরে এলো দরজার সামনে একটা পার্পল কালারের খাম।
তরু খামটা খুললো।ভেতরে একটা চিঠি।
ফাইজানের চিঠি।
চিঠিতে লিখা,"ভালোবাসি তরু,তোমাকে ভীষণ ভালোবাসি।"
মাঝরাতে এই ছোট্ট চিঠিটাই তরুর মনটা ভালো করে দিলো। যেই মন খারাপ নিয়ে তরু ঘুম থেকে উঠেছে, ঘুমাতে গেলো তার চাইতে হাজার গুণ আনন্দ নিয়ে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন