উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ১৩)
একটানা ব্যাঙ ডাকছে অনেকক্ষণ ধরে। রাবেয়া বসে আছে শাশুড়ির রুমে।রাবেয়ার শাশুড়ী সালেহা বেগম রাবেয়াকে শুকনো সুপারি দিয়ে বললো, "বউ,একদম চিকন চিকন কইরা কুঁচি করবা।আমি আবার একেবারে চিকন সুপারি না হইলে খাইতে পারি না।আমার খাটের তলায় বস্তায় শুকনা সুপারি আছে।প্রত্যেক দিন আমার পানদানের এই কৌটার এক কৌটা সুপারি কুঁচাইয়া রাইখা দিবা বুঝলা।আর জানি বলা না লাগে।"
রাবেয়া মাথা নাড়ালো।সালেহা বেগম রাবেয়াকে কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করলেন।তারপর বললেন,"আমার ছেলের লগে কোনো কিছু নিয়া ঘ্যানঘ্যান করবা না।আগের পক্ষের বাচ্চাগো লগে কোনো সময় হিংসা,রেষারেষি করবা না।ওগো জানি কোনো অযত্ন না হয়।
আর একটা কথা, আমার পোলা কইলেও তোমার আগের ঘরের মাইয়ারে এই বাড়িতে আনবা না।এইটা হোটেল না,এতিমখানা ও না। বুঝছো?"
রাবেয়ার চোখ ভিজে উঠলো মুহুর্তেই।কি বলছেন উনি?
তরু আসবে না এখানে?
কিন্তু রাবেয়ার ভাই তো বলেছে এরা তরুকেও এখাবে থাকতে দিবে।
সালেহা বেগম বললেন, "মুখরে এরকম ভোঁতা কইরা রাখবা না।হাসিখুশি থাকবা সর্বক্ষণ। আর শুনো,কথায় কথায় আমার পোলারে নিয়া দরজায় খিল দিবা না।দিনের বেলায় তো না ই।এসব বেহায়াপনা আমি বরদাস্ত করতে পারি না। "
রাবেয়া হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। এক আমেনার হাত থেকে রক্ষা পেয়ে রাবেয়া বুঝি আরেক আমেনার হাতে এসে পড়েছে!
রাবেয়া চোখের পানি লুকিয়ে মুছে ফেললো। মেয়েটা কেমন আছে কে জানে!
একটা বার কথা ও হয় নি মেয়ের সাথে, আর গতকাল তো দেখেও নি।
যেই মেয়েকে বুকে নিয়ে জীবন পার করে দিবে ভেবেছিলো সেই মেয়ে কোথায় আজ!
ভাগ্য এতো নির্মম হয় কেনো মাঝেমাঝে?
দুপুরে খেতে বসে রাবেয়ার স্বামী নজরুল বললো, "আমাদের তো বাড়ি খালি,তরুকে না হয় এখানে নিয়ে আসি।তাহলে তোমার ও আর মন খারাপ হবে না তরুও ভালো থাকবে।"
রাবেয়ার মুখটা উজ্জ্বল হয়ে গেলো মুহূর্তে। কিন্তু পরমুহূর্তে মনে পড়ে গেলো শাশুড়ীর কথা। সালেহা আর সালেহার ছোট মেয়ে নাজমা বললো, "কি কন ভাইজান? আপনার মাথা কি পুরাই গেছে?
ওই মেয়ে কি আমাগো রক্ত না-কি? তাছাড়া মেয়ে তো ছোট না।এরকম উঠতি বয়সের একটা মাইয়ারে কি পরিচয় দিয়ে এইখানে রাখবেন?বাড়িতে তো বেডা মানুষের অভাব নেই।"
রাবেয়ার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো। এরা এতো পাষাণ কেনো?
এতো নিষ্ঠুরভাবে কিভাবে বলতে পারছে এসব কথা?
তরুর ঘুমন্ত মুখটা ভেসে উঠলো রাবেয়ার চোখে। আহারে সোনা বাচ্চা!
আজ মা কই,তুই কই?
কেনো এরকম করলি?
রাবেয়া ভেবে পায় না।চোখের পানির জন্য রাবেয়া খেতে পারে না আর।
নজরুল বললো, "তোকে বেশি কথা বলতে বলছি আমি?আমার ঘরে কি মানুষ নেই?বাড়িতে পুরুষ মানুষ আছে তো কি হয়েছে?
এই জন্য কি এই বাড়িতে আর কোনো মেয়েরা থাকে না?তোর মেয়ে থাকে না?"
নাজমা রাগে ফেটে পড়লো যেনো।অগ্নিশর্মা হয়ে বললো, "কি কইলেন ভাইজান?আপনি আমার মাইয়ারে খোঁটা দিলেন?এক রাইত না যাইতেই পর হয়ে গেলেন আপনি এরকম করে? মা দেখছেন আপনি? "
সালেহা রাবেয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। তার মাথামোটা ছেলেটা যে এরকম কিছু বলে ফেলবে তা তো তিনি জানতেন।এজন্যই আগেই রাবেয়াকে শাসিয়েছেন।কিন্তু এই মেয়ে তো কিছু বলছে না।
এক রাতেই ছেলের মাথা খেয়ে ফেললো!
বিকেলে সালেহা রাবেয়াকে বললো তার মাথায় তেল দিয়ে দেওয়ার জন্য। রাবেয়া তেল নিয়ে বসলো। সালেহা তরুর প্রসঙ্গে কিছু বললেন না।রাবেয়া স্বস্তি পেলো।
রাতটা কাটলো এক অন্যরকম সুখস্বপ্ন নিয়ে। দীর্ঘদিন পর কারো গভীর ভালোবাসা, তীব্র আদর। সুখের সাথে সাথে মনের এক কোণে তবুও একটা চাপা কষ্ট লুকিয়ে থাকলো। একটা শরীর একজনকেই মানুষ উৎসর্গ করে থাকে,অথচ রাবেয়ার তো তা হলো না।
নজরুল বুঝতে পারলো রাবেয়ার জড়তা কোথায়।গভীর আদর দিয়ে বললো, "আল্লাহর আদেশ মেনে শরীয়ত সম্মতভাবে আমাদের বিয়ে হয়েছে রাবেয়া।গত পরশু পর্যন্ত তোমার প্রাক্তন স্বামী তোমার জীবনের সব কল্পনা জুড়ে থাকতে পারে। স্বাভাবিক সেটা। কিন্তু এখন আমরা যেই বর্তমানে আছি সেখানে আমার মনোজগতে তুমি আছো শুধু আর তোমার মনে আমি থাকবো।
এর বাহিরে অন্য কাউকে তুমি হয়তো মনে করতে পারো কিন্তু তাকে জীবনের সব কিছু ভেবে রেখো না।তাহলে তা মনের প্রতি,আমার প্রতি জুলুম হবে।
আমি জানি সব কিছু ভুলে যাওয়া যায় না কিন্তু সেই সব স্মৃতিকে মনের একপাশে রেখে আমরা যদি আমাদের নতুন জীবন, নতুন জার্নিটা দুজনের সুখ দুঃখ ভাগাভাগি করে এগিয়ে যেতে না পারি তবে আমরা কখনো একে অন্যের আপন হতে পারবো না।
আমাকে একটু ভালোবেসো,আমি তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসবো।"
এরপর আর রাবেয়ার কিছু বলার থাকতে পারে না।
পরদিন সকালে স্কুল যাওয়ার সময় ফাইজান পথে গিয়ে দাঁড়ালো।লতা আর তরু দুজনেই রওয়ানা দিলো। ফাইজান দূর থেকে তরুকে দেখলো।এক নজর দেখেই চলে গেলো।
স্কুল থেকে ফিরে তরু দেখে নজরুল এসেছে। তরু আংকেল বলে ডাকলো নজরুলকে।
মায়ের স্বামী হলেও কেনো জানি বাবা বলতে পারলো না।
নজরুল ভালো মন্দ জিজ্ঞেস করে বললো, "তরু,আমি তোমাকে নিতে এসেছি। তোমার মা তোমার জন্য ভীষণ মন খারাপ করে আছে।আমি তোমার মা'কে বলি নি আমি যে তোমাকে নিতে এসেছি। চলো, গিয়ে তোমার মা'কে একটা সারপ্রাইজ দিবো।"
তরুর কেমন আনন্দ লাগছিলো শুনে। কিন্তু হুট করে মনে পড়ে ফাইজানের কথা। ফাইজান বাসায় নেই।তরুর কাছে মোবাইল ও নেই,ফাইজানের ফোন নাম্বার ও জানা নেই।
এতো দোটানায় তরু কখনো পড়ে নি।
নজরুল বললো, "তৈরি হয়ে নাও তরু। "
তরু কথা বাড়ালো না।তৈরি হয়ে নিজের জামা কাপড় আর বইখাতা নিলো।ভালোবাসার জোর থাকলে তরুর বিরহে ফাইজানের ভালোবাসা আর বাড়বে।
রাবেয়া আজকেও সালেহার চুলে তেল দিচ্ছে। তরু আস্তে করে পেছনে দাঁড়িয়ে বললো, "মা।"
রাবেয়া পেছনে তাকিয়ে চমকে উঠলো। তরু এসেছে!
রাবেয়ার পুরো দুনিয়া খুশিতে ভরে উঠলো।
সালেহার মুখে মেঘ জমলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন