উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৬)

রাবেয়া তরুর কথা শুনে স্বস্তি পায়।তরু যে বিয়ের জন্য হ্যাঁ বলে নি এতেই রাবেয়া খুশি।রাবেয়া আকাশের দিকে তাকিয়ে ভাবে,এরকম কতো দিন পার হয়ে গেছে রাবেয়া শুধু আকাশের দিকে তাকিয়ে তরুর বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলতো এই যন্ত্রণার জীবন আর টানতে পারছি না আমি।টাকা পয়সা ছাড়া যে একা একটা নারীর জীবনে কতো বিচিত্র অভিজ্ঞতা হয় তা ভুক্তভোগী ছাড়া কেউ জানে না।
তাই স্বার্থপরের মতো হলেও রাবেয়া চায় মেয়েটা এখনই বিয়ে না করুক।রাবেয়ার ও তো এই বয়সে বিয়ে হয়ে যায়, বছর না পেরুতেই তরুর জন্ম হয়।লেখাপড়া করতে পারলো কই?
নিজে যদি শিক্ষিত হতো,কিছু করতো তাহলে খুঁটির জোর থাকতো।আলমগীর আর আমেনা রাবেয়ার সাথে অবিচার করতে পারতো না।
রাবেয়া তাই চায় মেয়ে পড়ুক।পড়ে নিজে প্রতিষ্ঠিত হোক।রাবেয়া জীবনে ঠকেছে তরুকে কেউ যাতে না ঠকাতে পারে।
তরু মন দিয়ে পড়ছে।মন প্রাণ দিয়ে চাইছে ফাইজানকে ভুলে যেতে।ফাইজান কেউ না।ফাইজান তার জীবনে একটা দুঃস্বপ্ন ছাড়া কিছু না।
বুকটা কেমন পাথরের মতো ভারী হয়ে আছে।তরুর জীবনের অংকের হিসেব মিলছে না।
ফাইজানকে তরু এই জীবনে আর ফিরে পেতে চায় না। তবে তরুকে এভাবে ঠকানোর হিসেব ফাইজানকে দিতেই হবে।
এক চুল৷ ছাড় দিবে না তরু।একদিন আগে ও যদি তরু জানতো তাহলে তো নজরুল আংকেলকে,মা'কে জানাতো না।এই মানুষদের সামনে যেতে তরুর এখন ভীষণ অস্বস্তি হয়।লজ্জায় চোখ তুলে তাকাতে পারে না।
একজন ভুল মানুষকে বিশ্বাস করে তরু ঠকে গেছে।
এই জন্মে কি এই আঘাত ঘুচবে?
নদীর নামটা ফাইজান জানে না।একটা গাছের সাথে হেলান দিয়ে ফাইজান বসে আছে। পরনের শেরোয়ানি ঘাসের উপর পড়ে আছে। পাগড়ি ভাসছে নদীর জলে।ফাইজানের গায়ে একটা পাঞ্জাবি পাজামা।
মাথা ভার ভার লাগছে ফাইজানের।কতো দিন হলো তরুকে দেখে না।
ফাইজানের বুকের ভেতর জ্বলছে ভীষণ। তরুকে এক নজর দেখার জন্য মনটা অস্থির হয়ে আছে।
বিড়বিড় করে বললো, "আমি যাই করে থাকি তরু,সবকিছুরই ব্যাখ্যা আমার কাছে আছে।আমি জানি আমি ভুল ছিলাম না।তোমার জন্য আমার মনে সেই শুরু থেকে যেই অনুভূতি ছিলো, আজ৷ ওতাই আছে,শেষ নিশ্বাস অবধি তাই থাকবে।কিন্তু আমি নিরুপায় তরু।আমার ছায়া তোমার জীবনে পড়ুক আমি চাই না।আমি না হয় শুকতারা হয়ে দূর থেকে তোমাকে দেখে যাবো।"
ফাইজানের দুই চোখ অশ্রুসজল হয়ে গেলো।আকাশের দিকে তাকিয়ে ফাইজান বললো, "তুমি ও আমাকে ভালোবেসেছিলে,আমি ও তোমাকে ভালোবেসেছিলাম।পার্থক্য হলো,তোমার ভালোবাসা আমার প্রতি ঘৃণায় রূপ নিয়েছে আর আমার ভালোবাসা তোমার প্রতি আরো তীব্র হয়েছে। "
কালাম হোসেন ঘরের বারান্দায় বসে মাথায় পানি দিচ্ছে।সাজেদা বেগম রুমে বসে বিলাপ করে কাঁদছেন।ছেলে এমন কোন ডাইনির পাল্লায় পড়েছে কে জানে!
আশেপাশের বাড়ির সবাই আসছে বউ দেখতে।সবাই যখন জানতে পারছে ফাইজান বিয়ের আসরে যায় নি একে অন্যের গা টেপাটেপি করছে।
কালাম হোসেন হুঙ্কার দিয়ে বললো, "তামাশা দেখতে আইছে না-কি এরা?আমার বাড়ি কি চিড়িয়াখানা? বাইর হ সবাই।"
দুই একজন বলছে,"আহারে শরম রে।কেমন শরম দিলো পোলা বাপ মায়েরে।"
সোহেল শ্বশুরের পাশে একটা চেয়ার টেনে বসে।শ্বশুরের মাথায় বরফের পুটলি চেপে ধরে সোহেল বললো, "আব্বা,ফাইজান কাজটা হয়তো ঠিক করে নাই আমি জানি কিন্তু আব্বা ও ভুল ও করে নাই।আপনি যেই স্বপ্ন নিয়ে ফাইজানের সাথে লতার বিয়ে দিতে চাইছিলেন সেটা কোনো দিন ও পূর্ণ হতো না।"
কালাম হোসেন বিরক্ত হয়ে বললো, "গাঁজাখুরি কথা কইবা না।আমার মাথা গরম এখন।"
"বিয়েটা হইলে তো মাথা আরো গরম হইতো যখন সত্যিটা জানতেন।"
কালাম হোসেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায়।
সোহেল এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো, "লতারা যেই বাড়িটাতে থাকে এই বাড়িটা তো আমার আলমগীর মামুর না।ওইটা তরুর আব্বার করা বাড়ি।যার আইনত মালিক তরু।আর আলমগীর মামা যেসব দোকান পাট সম্পদের কথা বলছে আপনারে ওগুলো সবকিছুই তরুর আব্বার।আলমগীর মামা তেমন কিছু করতে পারে নি বিদেশে থেকেও।বড় মামু মারা যাওয়ার পরে এখন সব জোর করে দখল করছে।
আব্বা,তরু তো সারাজীবন এরকম ছোট থাকবে না।বড় হবে,বিচার বুদ্ধি হবে।ওর সবকিছুই ও আদায় করে নিবে তখন।"
কালাম হোসেন সন্দিহান দৃষ্টিতে তাকায় জামাইয়ের দিকে। তারপর বলে, "তুমি আমাকে এসব কথা আগে বলো নাই কেনো?"
সোহেল বললো, "আমি কি জানতাম না-কি আগে এসব!আমি তো ভেবেছি ফাইজান তো লতাকে পড়াতো ও হয়তো পছন্দ করে বিয়ে করতে চেয়েছে। আজকে আসার পথে আপনার মেয়ে আমাকে বলে সবকিছু। "
কালাম হোসেন উঠে গিয়ে সাজেদাকে বললো, "নাঁকি কান্দা বন্ধ করো।আল্লাহ যা করছে ভালোর জন্যই করছে।পোলার সন্ধান কর।পোলার পছন্দের মাইয়ার লগেব্ব্র বিয়া দিমু।সোনার ডিম পাড়া হাঁস তো ওই মাইয়াই।আমার পোলা তো খাঁটি সোনাই খুঁইজা নিছে।"
সাজেদা বুঝতে পারে না কিছু। তবুও স্বামীর আনন্দিত মুখ দেখে সাজেদার বুক থেকে পাথর নেমে যায়।


 আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন