উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৩৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৩৭)

সারা রাত লতা ঘুমাতে পারলো না। তরু রাত জেগে পড়ছিলো। হুট করে কান্নার আওয়াজ শুনে উঠে দাঁড়ায় তরু।রাতের প্রায় আড়াইটা বাজে।এতো রাতে কে কান্না করছে?
বাহিরে উথাল-পাতাল জোছনা।
চারদিক ভেসে যাচ্ছে যেনো চাঁদের আলোয়।
রাবেয়া আলমগীর সবাই-ই চলে গেছে সন্ধ্যার দিকে।
তরু একা।বাহিরের দিকে তাকিয়ে তরুর মনে হচ্ছিলো এই বিশাল পৃথিবীতে তরু শুধু একাই আছে।
জানালার দিকে তাকিয়ে তরুর বুকটা কেমন মোচড় দিয়ে উঠে। কতো দিন ফাইজান জানালার সামনে এসে দাঁড়িয়ে থাকতো তরুকে দেখার জন্য।
নিজেকে সামলে তরু রুম থেকে বের হলো।লতার কান্নার আওয়াজ আসছে।
লতার রুমের দরজায় নক করে তরু।
দরজা খুলতে সময় নেয় লতা।চোখ দুটো ফুলে গেছে লতার কান্না করতে করতে।
তরুকে দেখে লতার সব রাগ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সব কিছুর মূলে তো তরু।তরুর জন্যই তো লতা ফাইজানকে পেলো না আর।হিংস্র প্রাণীর মতো লতা তরুর গলা চেপে ধরে।
আচমকা আক্রমণে তরু হতচকিত হয়ে যায়।লতার শক্ত হাতের বাঁধন ছাড়াতে তরুকে বেগ পেতে হয়।শেষে উপায় না পেয়ে তরু লতার চুলের মুঠি টেনে ধরে।চুলে আঘাত পেতেই লতার হাতের বাঁধুনি আলগা হয়ে আসে।
তরু চুল ছেড়ে দেয়।
হাঁপাতে থাকে তরু।
লরার জন্য তরুর মায়া হয়।আহা বেচারা!
মিথ্যে মায়ায় জড়িয়ে ফেলেছে নিজেকে। যাকে ভালোবাসলো,জানতে পারে নি সে যে আসলে কারো ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্য না।
সে আসলে ভীষণ স্বার্থপর একজন মানুষ। যে নিজের স্বার্থে সবাইকে ব্যবহার করতে জানে শুধু।
লতা ফ্লোরে বসে চোখ মুছতে মুছতে বললো, "আমার জীবন থেকে ফাইজানকে কেড়ে নিলি তুই।তোর জন্য শেষ মুহূর্তে এসে ফাইজান আমার হয় নি।
তোকে আমি কখনোই ক্ষমা করবো না।"
তরু হেসে বললো, "আমি কি তাকে পেয়েছি লতা?যে আমাকে ঠকিয়ে তোকে আপন করতে চেয়েছে তারপর আবার তোকে ছেড়ে দিয়েছে। সে তো মৌমাছি রে পাগল, ফুলে ফুলে উড়ে বেড়ায়।
ও কাউকে ভালোবাসতে জানে না লতা।"
লতা চিৎকার করে বলে, "আমার ভালোবাসা দরকার নাই। আমার ফাইজানকে চাই।আমি ওকে প্রথম দেখে ভালোবেসেছি।সবসময় সব কিছুতে তুই আমাকে হারিয়েছিস।আমি সবসময় হেরে গেছি তোর কাছে। তাই ফাইজানকে নিয়ে আমি মরন বাজি ধরেছি।তোকে আমি জিততে দিবো না।"
তরু লতার পাশে বসে বললো, "আমার আর হার জিত!
যে মানুষটা আমাকে দুমড়ে মুচড়ে ভেঙে চুরমার করে দিয়েছে, আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসা দিয়ে কাছে টেনে ছুড়ে ফেলে দিয়েছে আস্তাকুঁড়ে। তাকে আমি আর চাই না লতা।তোর ভালোবাসা তুই নিয়ে যা।আমার আর কাউকে চাই না।"
লতাকে শান্ত করে তরু নিজের রুমে যায়।
জানালা বন্ধ করতে গিয়ে তরু ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। জানালার সামনে ফাইজান দাঁড়িয়ে আছে। তরু দাঁতের সাথে দাঁত চেপে এগিয়ে যায় জানালার দিকে।
ফাইজানের পরনে একটা সাদা টি-শার্ট আর ট্রাউজার। শান্ত স্বরে তরুকে জিজ্ঞেস করলো," কেমন আছো তরু?"
তরুর মনে হলো কত যুগ পরে যেনো সে ফাইজানের কণ্ঠস্বর শুনতে পেলো।কি আশ্চর্য, বুকের ভেতরের আগুন যেনো আরো দাউদাউ করে জ্বলে উঠলো। এক মুহূর্ত ও অপেক্ষা করে ফাইজানের মুখের উপর জানালা বন্ধ করে দিলো তরু।
ফাইজান হতবিহ্বল হয়ে তাকিয়ে রইলো বন্ধ জানালার দিকে। তরু কি তবে সত্যি মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে?
অবশ্য নেয়ার মতোই তো কাজ করেছে ফাইজান।তরু তাকে ঘৃণা করবে এখন তা তো ফাইজানের জানা কথা।
তবুও কিসের আকর্ষণ এতো তরুর প্রতি?
কেনো তরুর শান্ত মুখখানা দেখার জন্য এতটা ঝুঁকি নিয়ে ফাইজান এখানে এসেছে!
ভালোবাসার যে কি ব্যথা তা বুঝি ভালো না বাসলে কেউ বুঝবে না।
আফসোস একটাই ফাইজানের,কেউ-ই নেই তাকে বুঝার মতো।
কালাম হোসেন ফাইজানের সব বন্ধুদের সাথে যোগাযোগ করেছেন। সবাইকে জানিয়েছেন ফাইজানের সাথে যোগাযোগ হওয়া মাত্রই যাতে জানায় যে ফাইজানের পছন্দের মেয়েকে মেনে নিতে তার কোনো অসুবিধা নেই।তিনি দরকার হলে স্ট্যাম্পে সই দিয়ে বলবেন এই কথা। তবুও ছেলে যাতে বাড়ি ফিরে যায়।
সারা রাত কালাম হোসেনের দুশ্চিন্তা নিয়ে কাটে।তরুর মতো মেয়ে হাতছাড়া হয়ে যাবে এটা ভাবলেই কালাম হোসেনের বুকে ব্যথা শুরু হয়। এতো অর্থ সম্পদের মালিক মেয়েটা।তার ছেলে তো সোনার ডিম পাড়া হাঁস খুঁজে নিয়েছিলো নিজেই।
কেনো যে ছেলের পছন্দ বুঝতে চাইলো না।
নিজেকে নিজের গালাগাল দিতে ইচ্ছে করছে কালাম হোসেনের।
এতো বোকামি কেনো করলো।
সেই সাথে আলমগীরের উপর ও চরম রাগ হলো।শালা,নিজের বেকুব মেয়েকে তার এরকম মেধাবী ছেলের কাছে গছিয়ে দেয়ার ধান্ধা করছিলো!
ভাগ্যিস ছেলে পালিয়েছে!
কালাম হোসেন পরিকল্পনা সাজিয়ে নেয়।ফাইজান ফিরে এলে কিভাবে ব্যাপারটা হ্যান্ডেল করবে সেই ছক সাজিয়ে ফাইজানের মা'কে তার রোলটা বুঝিয়ে দেয়।
সাজেদা স্বামীর পরিকল্পনা বুঝতে পেরে বললো, "মাগো,আপনের মাথায় এতো চিকন বুদ্ধি! আমি বুঝতেই পারি না আপনি কেমনে সব এম্নে পরিকল্পনা কইরা ফেলেন।"
কালাম হোসেন আরামে চোখ বুজেন।বুদ্ধির তারিফ পেতে তার ভালো লাগে।তার স্ত্রী মহিলাটা অত্যধিক বোকা।বোকা বলেই স্বামীর সব কিছু তার কাছে বুদ্ধিদীপ্ত মনে হয়।
অবশ্য মেয়েলোক বোকা হওয়া উপকারী। তা না হলে পুরুষের মাথায় কাঁঠাল ভেঙে খাওয়ার চেষ্টা করে।
কালাম হোসেন এসব পছন্দ করেন না।তিনি চান মেয়েরা থাকবে স্বামীর কথার নিচে।তাদের কাজ রান্না করা,সন্তান পালন করা।পুরুষের সাথে টক্কর দেওয়া মেয়ে তার চোখের বিষ।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন