উপন্যাস : শকুন
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “শকুন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
শকুন || আরশি আয়াত |
১ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
শকুন || আরশি আয়াত (পর্ব - ২)
শামীমের দেওয়া তাবিজ খানা মূলতঃ বশীকরণের।ও চায় হিমানী ওর বশে চলে আসুক।ওকে বশে এনে ক্ষতি করাটাই মুখ্য উদ্দেশ্য শামীমের।একটা সময় খুব করে চাইতো বিয়ে করতে ওকে কিন্তু এখন আর না।বেইমান,বিশ্বাসঘাতক'কে বিয়ে করার প্রশ্নই আসে না।এখন শুধু প্রতিশোধ নেওয়ার সময়।
শামীম আজ রাত একটায় হিমানীদের বাড়ির গলিতে এসে দাঁড়াবে।ওই বশীকরণের তাবিজ'টা কাজ করবে মধ্যরাতের পর।তখন সবাই ঘুমিয়ে থাকবে আর হিমানীর চিন্তা চেতনা লোপ পাবে।সম্মোহিতের মত এক অমোঘ অভিশপ্ত টানে বেরিয়ে আসবে বাইরে।এরপরই শুরু হবে আসল খেলা।ওদের বাড়ির দারোয়ানকে আগেই হাত করে রেখেছে শামীম।তাই হিমানীর বের হতো কোনো অসুবিধা হবে না।আজ রাতের পরই পাল্টে যাবে হিমানীর জীবন।যে রুপ,শরীর নিয়ে অহংকার করে সেটাই দুমড়ে মুচড়ে যাবে।
রাতের খাবার শেষে হিমানী নিজের ঘরে এসে দরজা বন্ধ করে দিলো।এখন সারারাত রবিনের সাথে প্রেমালাপ চলবে।কালকে ওদের কোথাও ঘুরতে যাবারও প্ল্যান আছে।বোঝাই যাচ্ছে রবিন ছেলেটা প্রচুর পয়সা ঢালবে ওর পেছনে।সেই হিসেবে ছেলেটাকে একটু কেয়ার তো করাই যায়।
হিমানীদের বাড়ির গলিতে এসে একটা সিগারেট ধরালো শামীম।এখান থেকেই ওদের দোতলা বাড়িটা দেখা যাচ্ছে।দোতলার কোণার রুমটা হিমানীর।সাথে লাগোয়া বারান্দায় হিমানী দাড়িয়ে আছে।ওর রুম বাদে সব রুমের লাইট বন্ধ।শামীম সিগারেট সুখটান দিতে দিতে একদৃষ্টিতে চেয়ে রইলো ওই বারান্দায়।ওই দৃষ্টিতে ভালোবাসার কোনো ছিটাফোঁটাও দেখা গেলো না।শুধু দেখা গেলো দাউদাউ করে জ্বলে ওঠা প্রতিশোধের অনল।
শামীম হিমানীদের গলিতে দাঁড়ানোর পাঁচ মিনিটের মধ্যে হিমানী ঘরে চলে গেলো।আর তখনই ওর ঘরের লাইট বন্ধ হলো।এবার অপেক্ষা বেরিয়ে আসার।কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় হলো পাঁচ মিনিট,দশ মিনিট,পনেরো মিনিট করে পুরো একঘন্টা দাঁড়িয়ে রইলো শামীম।হিমানীর বেরিয়ে আসার কোনো খবরই নেই।হাফ প্যাকেট সিগারেট এখন আর একটাও বাকি নেই।সব অর্ধেক খেয়ে ফেলে দিয়েছে ও।ভীষণ রাগ উঠছে রুপার ওপর।মুখটাকে বিকৃত করে 'চ' বর্গীয় গালি দিতে দিতে বাড়ির পথ ধরলো।কালকে ওর খবর আছে।পাঁচ হাজার টাকার শোধ তুলবেই।নিশ্চিত তাবিজটা পরায় নি।তা নাহলে এতক্ষণে তো বেরিয়ে আসতোই।মনে মনে রুপার ওপর প্রচন্ড রাগ পুষে বাড়ির দিকে হেঁটে চলল ও।
সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠতেই শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা অনুভব করলো হিমানী।মনে হচ্ছে প্রত্যেকটা শিরা,উপশিরায় তারকাঁটা গেঁথে দেওয়া হয়েছে।এত জঘন্য ব্যাথা এই জীবনে হয় নি।ব্যাথায় মুখ দিয়ে কথা পর্যন্ত বের হচ্ছে না।অথচ কাল রাতে তো দিব্যি সুস্থ ছিলো।হঠাৎ এখন কি হলো?কিছুক্ষণ সেভাবেই শুয়ে থাকলো হিমানী।শরীরে যখন ব্যাথাটা কিছুটা সয়ে এলো তখন আস্তে আস্তে বালিশে হেলান দিয়ে বসলো।দুর্বল গলায় মা'কে ডাকলো।মিসেস জেবা মেয়ের রুমের সামনে দিয়েই যাচ্ছিলেন।মেয়ের ক্ষীণ গলার আওয়াজ শুনে ঘরে প্রবেশ করে দেখলেন খাটে হেলান দিয়ে বসে তাকেই ডাকছে।তিনি মেয়ে পাশে এসে বসে বললেন,'কি হয়েছে তোর?'
'মা,আমার সারা শরীর অসহ্য ব্যাথা করছে।'বহুকষ্টে কথাটা শেষ করলো হিমানী।মিসেস জেবা চিন্তিত হলেন।হঠাৎ সারা শরীর ব্যাথা হওয়ার কারণ কি?কাল রাতেও তো সুস্থই ছিলো।তিনি মেয়ের কপালে হাতের তালু রেখে বোঝার চেষ্টা করলেন জ্বর এসেছে কি না!মায়ের স্পর্শ পেতেই অদ্ভুত এক ঘটনা ঘটলো।সারা শরীরে সেই অসহ্য ব্যাথা মুহুর্তের মধ্যেই গায়েব হয়ে গেলো।হিমানী অবাক চোখে মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,'মা,আমার শরীরের ব্যাথা চলে গেছে।'
'কি বলছিস!হঠাৎই চলে গেলো!'
'হ্যাঁ মা,তুমি ছুঁতেই যেনো ম্যাজিকের মত ভালো হয়ে গেলো ব্যাথা।'
মিসেস জেবা এবার চোখ পাকালেন।হাত দিয়ে মেয়ের কান টেনে বললেন,'বাঁদরামি করার আর জায়গা পাস না?আমাকে বলদ বানাচ্ছিলি?'
'না,মা সত্যি বলছি আমি।'
'হয়েছে।আমি কি চিন্তায় পড়ে গিয়েছিলাম!এখন আর নাটক করতে হবে না।উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে আয়।পরে রেডি হয়ে বের হবি।'
হিমানী মা'কে কিছুতেই বোঝাতে পারলো না ও সত্যি বলছে।কিন্তু হঠাৎ করেই হলোটা কি বুঝতে পারলো না।এই বিষয়ে আরও কিছু ভাবার আগেই ফোনটা বেজে উঠলো ওর।রবিন ফোন করেছে।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে ঘুম জড়ানো কন্ঠে বলল,'গুডমর্নিং জানপাখি।'
হিমানী মুচকি হেসে বলল,'গুডমর্নিং জান।উঠেছো?'
'না,ঘুম ভাঙতেই তোমাকে মিস করছি তাই কল করলাম।'
'বাব্বাহ!এত মিস করছো!'
'হ্যাঁ।তুমি আমাকে মিস করো নি?'
'করি তো বাবু।সবসময়ই তো তোমাকে মিস করি।'অবলীলায় মিথ্যাটা বলে ফেললো হিমানী।কল আসার আগে একমুহূর্তের জন্যও রবিনের ভাবনা মাথায় আসে নি ওর।কিন্তু সম্পর্কে একটু আট্টু মিথ্যা বলতেই হয়।বিশেষ করে টাকাওয়ালা হলে তো আরও তেল দিতে হয়।হিমানীর বাবার অঢেল টাকা না থাকলেও অর্থকষ্টে থাকতে হয় এমনও নয়।কিন্তু হিমানী চায় রাণীর মত থাকতে।উচ্চবিত্তদের মত জীবনযাপন করতে।আর এই জীবন পাওয়ার শর্টকাট হলো একটাই।টাকাওয়ালা কারো গলায় ঝুলে পড়া।এতদিন যারা ছিলো তাদের কারোই উচ্চবিত্ত জীবন দেওয়ার মত সামর্থ্য ছিলো না।তাই সম্পর্কও বেশিদিন রাখে নি হিমানী।তবে রবিনের সাথে এটা হবে না।হয়তো বিয়ে পর্যন্তও গড়াতে পারে।এমন সোনার ডিম পাড়া হাস তো আর এমনি এমনি হাত ছাড়া করা যায় না।
রবিনের সাথে এভাবেই কিছুক্ষণ প্রেমালাপ চলল।তারপর বিছানা ছেড়ে ফ্রেশ হয়ে,খেয়ে,রেডি হয়ে বেরিয়ে গেলো।আজও ওরা ঘুরতে যাবে কোথাও।
শামীম কালকের মত আজ সকালেও রুপাদের বাসার গলিতে দাঁড়ালো।কিন্তু ও জানতো না আজ রুপা ছুটি নিয়েছে।তাই পড়াতে যাবে না।একেবারে আট'টায় বের হবে কলেজে যাবার জন্য।কিন্তু সেই পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবে না ও।অফিসে যেতে হবে।কিছুক্ষণ অপেক্ষা করে মনের রাগ মনে পুষে রেখে চলে গেলো।
আন্টিদের বাসা থেকে সন্ধ্যার সময় ফিরছিলো রুপা।হঠাৎ ওদের গলিতে আসতেই চুল টান পড়লো জোরেশোরে।গলিতে এখন কেউ নেই সন্ধ্যার সময় হওয়ায়।রুপা আর্তনাদ করে বলল,'কে রে!'
'কি রে,বাওর!আমার কাজ হয় নি কেন?পাঁচ হাজার তো ঠিকই নিয়েছিলি।'
রুপা ভয় পেয়ে গেলো।ভীতু স্বরে বলল,'শামীম ভাই,আমি ওর হাতে মাদুলীটা পরিয়ে দিয়েছিলাম কাল সন্ধ্যায়।'
শামীম ওর চুলের মুঠি ধরে কষিয়ে থাপ্পড় মেরে বলল,'মিথ্যা কথা বলছিস কেন কু'ত্তার বাচ্চা!তুই বাঁধলে কাজ হলো না কেন?'
'আমি জানি না।'রুপা কাঁদো কাঁদো গলায় বলল।
'আজকের টাইম দিলাম।এখন বাসায় গিয়ে বাঁধবি নয়তো কাল তোর এমন হাল করব যে কাউকে মুখ দেখাতে পারবি না।'
এই বলে শামীম ওর চুল ছেড়ে দিয়ে চলে গেলো।রুপা কাঁদতে কাঁদতে হিমানীদের বাসার দিলে হাঁটা ধরলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন