উপন্যাস : শকুন
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “শকুন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
শকুন || আরশি আয়াত |
৩য় পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
শকুন || আরশি আয়াত (পর্ব -৪ )
তান্ত্রিকের আস্তানা থেকে উদ্ভ্রান্তের মত ফিরে এলো শামীম।কি হচ্ছে কিছুই বুঝতে পারছে না ও।কাল রাতের ওই ঘটনা আর আজ তান্ত্রিকের মৃত্যু সব কেমন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।শামীম বাসায় ফিরে শাওয়ার নিতে গেলো।ঠান্ডা পানির জলধারার নিচে দাঁড়িয়ে ভাবতে লাগলো সবকিছু।হঠাৎ করেই ওর মনে হলো ও খামোখাই সবকিছু জটিল করে ভাবছে।ওই তান্ত্রিক শা'লাটা আসলে ভন্ড।কারো থেকে টাকা খেয়ে ঠিকমতো কাজ করতে পারে নি বলে আত্মহত্যা করেছে।এই যেমন ওকেও তো ভুয়া তাবিজ দিয়েছে।কাল রাতে অর্ধেক পথ এসেই হিমানীর সম্মোহন কেটে যায় আর ও ফিরে যায়।ইশ!কাল যদি আরেকটু সম্মোহিত হয়ে থাকতো তাহলেই কেল্লাফতে!হিমানীর কপাল ভালো।
রবিন হিমানীর কলেজের সামনে দাড়িয়ে আছে।হাতে একগুচ্ছ তাজা লাল গোলাপ।হিমানীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই এই আয়োজন তার।রবিন এর আগেও অনেক মেয়ের সাথে প্রেম করেছে এমনকি শুয়েছেও কিন্তু কখনোই হিমানীর মত আকর্ষণ বোধ করে নি কারো জন্য।দেখা যাক শেষে কি হয়!
কলেজ গেট থেকে বেরিয়েই হিমানীর চোখ পড়লো রবিনের ওপর।আজকে একটু বেশিই সুপুরুষ লাগছে।হাতে আবার গোলাপও এনেছে দেখছি।হিমানী খুশিই হলো।পাশে দাঁড়ানো রুপাকে কনুই দিয়ে গুঁতা দিয়ে বলল,'ওই দেখ,তোর দুলাভাই।আমাকে সারপ্রাইজ দিতে এসেছে।'
থেমে আবারও বললো,'চল,আমার সাথে।পরিচয় করিয়ে দেই।আমি অবশ্য ওকে তোর কথা বলেছি।'
'না না,পরিচয় করানো লাগবে না।তুই যা।'
'আরে আয় না।এমন করছিস কেন?'হিমানী জোরাজোরি করতে লাগলো।না চাইতেও রুপাকে যেতে হলো হিমানীর সাথে।রবিনের সামনে এসে ও খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,'জান,তুমি আমার জন্য এসেছো।আমার যে কি খুশি লাগছে!'
রবিন গোলাপের তোড়াটা হিমানীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,'তোমাকে খুশি রাখাটাই তো আমার কাজ।'
হিমানী প্রসন্ন হাসলো।তারপর রুপার হাত ধরে বলল,'জান,তোমাকে রুপার কথা বলেছিলাম না?ও ই হচ্ছে রুপা।'
'হাই,রুপা।কেমন আছো?'
'আমি ভালো আছি ভাইয়া।আপনি কেমন আছেন?'
'আমিও ভালো আছি।'
'আচ্ছা,আপনারা দু'জন কথা বলেন।আমি আসছি।আমার একটা কাজ আছে।'
কাউকে কিছু না বলতে দিয়ে কোনরকম পালিয়েই এলো রুপা।ও যাওয়ার পর রবিন বলল,'তোমার এই বন্ধুটা একটু লজ্জা পায় মনে হয় তাই না?'
'হ্যাঁ ও একটু মুখচোরা স্বভাবের।তোমার সাথে পরিচয় করাতে চাইলাম তাতেও জোর করতে হলো।'
'ও আচ্ছা।'
'হ্যাঁ।আচ্ছা জান আজ কোথায় নিয়ে যাবে আমাকে।'
'চলো আগে লাঞ্চ করে নেই।পরে ভাববো কোথায় যাওয়া যায়।'
'চলো।'
হিমানী রবিনের হাত ধরে ওর বাইকে উঠলো।এভাবে একসময়ে শামীমের বাইকেও উঠেছিলো।সে সময়গুলোও মধুর ছিলো।আর এই সময়টা আরও বেশি মধুর।যার টাকা যতবেশি তার সাথে মধুর সময় তত বেশি।এই নীতিতেই চলে হিমানী।
কলেজ থেকে মোটামুটি দুরত্বে একটা ফাইভ স্টার হোটেলে খেতে বসলো ওরা।খেতে খেতেই রবিন বলল,'জান,একটা আইডিয়া এসেছে মাথায়।'
'কি আইডিয়া?'হিমানী আগ্রহী স্বরে প্রশ্ন করলো।
'আজকে তুমি আমার বাড়ি চলো।আমার বাড়িটা ঘুরে আসবে।'
হিমানী উৎফুল্ল হয়ে উঠলো।মনে মনে এই ইচ্ছাটা আগে থেকেই ছিলো কিন্তু নিজে থেকে বলাটা হ্যাংলামি।তাই অপেক্ষা করছিলো কবে রবিন নিজেই বলবে।আজ অবশেষে বলল!হিমানী নিজের খুশিটুকু আড়াল করে বলল,'কিন্তু তোমার বাড়ির লোক'কে কি বলবে?'
'বাবা,মা মালদ্বীপ গেছেন কাল।আসতে সপ্তাহ খানেক লাগতে পারে।বাড়িতে আমি আর কয়েকজন কাজের লোক ছাড়া আপাতত কেউ নেই।'
'তাই বলো!বাবা,মা নেই বলেই আমাকে নিয়ে যাচ্ছো।থাকলে তো নিয়ে যাওয়ার সাহসই হতো না।'হিমানী ইচ্ছা করেই খোঁচা দিয়ে বলল।
রবিনের ঠোঁটে মৃদু হাসির রেখা ফুটে উঠলো।অভ্যস্ত ভঙ্গিতে টিস্যুতে মুখ মুছে বলল,'আমি আমার বাবা-মায়ের সাথে বন্ধুর মত ফ্রী।কবে কার সাথে প্রেম করেছি।কার সাথে শুয়েছি সব জানে।এমনকি তোমার কথাও জানে।তারা দেশে আসলে তোমার সাথে দেখা করাব।আর তুমি তো জানোই অনুমতি ছাড়া আমি কোনো মেয়েকে ছুঁয়েও দেখি না।সো ডোন্ট ওরি,আজ আমি শুধু আমার বাড়িটাই দেখাব তোমাকে।'
'তাহলে চলো!আর বসে থেকে কি লাভ।'
'লেট'স গো হানি।'
সুবিশাল বাড়িটার সামনে এসে বাইক থামতেই বিষ্ময়ে কিছুক্ষণ 'হা' হয়ে রইলো হিমানী।এটা বাড়ি!প্রাসাদ বললে মোটেও ভূল হবে না।বরংচ না বললেই অন্যায় হবে।রবিন ওকে গেটের সামনে দাঁড়া করিয়ে বলল,'এক মিনিট অপেক্ষা করো।বাইকটা গ্যারেজে রেখে আসছি।'
হিমানী ঘাড় কাত করে সায় দিলো।রবিন স্বল্প স্পিডে বাইকটা চালু করে পাশেই তাদের বিশাল গ্যারেজের দিকে চলল।বাইক রেখে এসে রবিন হিমানী হাত ধরে গেটের দিকে এগিয়ে যেতে যেতেই বলল,'ওয়েলকাম টু মাই হোম।'
হিমানী তৃপ্তির হাসি দিলো।একবার রবিনের সাথে বিয়ে হলেই এই বাড়ির মালকিন হয়ে যাবে ও।ভাবতেই আনন্দে লাফাতে ইচ্ছা করছে।সারাজীবন যে লাক্সারির স্বপ্ন দেখেছে সে জীবনটাই হাতছানি দিচ্ছে।এর চেয়ে খুশি কি আর কিছু হতে পারে?
জমকালো গেট পেরিয়ে এসে ভেতরে পা পড়তেই আরও বিষ্মিত হলো হিমানী।সদর দরজ পর্যন্ত যে মূল ফটক'টি গিয়েছে সেটা পৃথিবী বিখ্যাত কালো মার্ভেল পাথর দিয়ে তৈরি।ফটকটির একপাশে বিশাল লন আর আরেকপাশে বিভিন্ন জাতের বিদেশি ফুলের বাগান।সদর দরজার সামনে পৌঁছে আরেকদফা অবাক হলো হিমানী।দেয়ালজুড়ে বিভিন্ন রকমের টেরাকোটার প্রাচীন ভাস্কর্য।মানবসভ্যতার বিকাশকাল হতেই পোড়ামাটির ভাস্কর্যের ব্যবহার পরিলক্ষিত হতো। সুমেরীয় সভ্যতা, ব্যাবীলনীয় সভ্যতা, মায়া সভ্যতায় এই শিল্পের প্রচলন ছিল।
সদর দরজা পর্যন্ত আসতেই যতোটা চমৎকৃত হয়েছে হিমানী তাতে সহজেই আন্দাজ করা যায় ভেতরটা কেমন হতে পারে।মানতেই হবে আসলে রবিনের পূর্ব- পুরুষেরা বেশ রুচিশীল মানুষ ছিলেন।সদর দরজা পেরুতেই বিশাল বড় লিভিং রুম।মাঝ দিয়ে প্রশস্ত সিঁড়ি খানা উঠে গেছে উপরের দিকে।লিভিং রুমের সাজসজ্জা আবার নতুন করে বলতে গেলে শব্দ ফুরিয়ে যাবে।তাই ওটা বরংচ থাক।রবিন হিমানীকে নিয়ে যাচ্ছে ওপরের তলায় ওর ঘরে।
রবিনের ঘরটা ছিমছাম।অত বেশি আসবাব নেই।একসাইডে পুরোটা জুড়ে খোলা বারান্দা।ও হিমানীকে নিজের বিছানায় বসতে বলল।তারপর একটা টি-শার্ট আর ট্রাউজার হাতে নিয়ে বলল,'গোসলটা সেরে আসি।বেশি না মাত্র দশ মিনিট বসো।'
'আচ্ছা,যাও।'
রবিন ওয়াশরুমে ঢোকার পর হিমানীর কৌতুহলী মন আস্কারা পেয়ে বারান্দায় চলে গেলো।এত সুন্দর আর বড় বারান্দা এর আগে দেখে নি ও।চোখ ঘুরিয়ে দেখতে দেখতে হঠাৎই কোণায় কালো জন্তুর মত কিছু একটা দেখে বিকট চিৎকার করে ওঠে ও।রবিন ওর চিৎকার শুনে ওয়াশরুম থেকে একপ্রকার দৌড়ে বের হয়।হিমানী বারান্দা থেকে একদৌড়ে ঘরে এসে বসে পড়ে।রবিন ওর সামনে হাঁটু গেড়ে বসে জিজ্ঞেস করে,'কি হয়েছে তোমার হিমানী?'
'তোমার বারান্দায় কালো ওটা কি?'হিমানী কাপা গলায় প্রশ্ন করে।
'কোনটা?'
'তুমি গিয়ে দেখে এসো।কি ভয়ানক!'
'চলো,দেখি তো কি!'
'আমি যাব না।'
'আরে আসো তো!কিচ্ছু হবে না আমি তো আছি।'
রবিনের ভরসায় উঠে দাঁড়ায় হিমানী।ওর হাত ধরে ভীত পায়ে এগোয় বারান্দার দিকে।ও হাত দিয়ে বারান্দার এক কোণে ইশারা করে দেখায় প্রাণীটাকে।রবিন সেদিকে খেয়াল করে হেসে ওঠে।হাসতে হাসতেই বলল,'এটা হলো শকুন।তুমি শকুন চেনো না?'
'না,দেখি নি কখনো।'
'ও আচ্ছা।ও হচ্ছে রাজ শকুন।ও আমার দাদার পোষা ছিলো।দাদা নেই যদিও কিন্তু ও আছে।'
'ওকে তাড়াও না কেনো?'
'ওকে তাড়ানো সাধ্যে নেই।দাদার পোষা ছিলো বলে বাবাও ওর প্রতি যথেষ্ট দুর্বল তাই তাড়ায় না।ও এই বাড়িতেই থাকে তবে দু'দিন ধরেই গায়েব হয়ে ছিলো।আজ হঠাৎ কোত্থেকে এসেছে কে জানে!'
থেমে আবারও রসিকতার সুরে রবিন বলে,'আমার মনে হয় কি জানো ব্যাটা গার্লফ্রেন্ডের সাথে দেখা করে এসেছে।'
'ছাড়ো তোমার উদ্ভট কথা।'হিমানী পাত্তাই দিলো না।মুখে ঝামটা মেরে ঘরে চলে এলো।পেছন পেছন রবিনও এলো।আবারও ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,'আমার গোসলের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছো।এখানে বসে থাকো ভদ্রমহিলার মতো।আমি আসছি।'
অন্যসময় হলে হিমানী চেচিয়ে উঠতো তাকে মহিলা বলায় কিন্তু এখন কিছুই বলল না।ওর ভাবনা গেঁথে আছে কিছুক্ষণ আগে দেখা শকুনটার ওপর।কি বিভৎস দেখতে!একটা পাখি এত কুৎসিত হয়!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন