উপন্যাস : শকুন
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “শকুন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
শকুন || আরশি আয়াত |
৬ষ্ঠ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
শকুন || আরশি আয়াত (পর্ব -৭ )
আজানের আগ পর্যন্ত আর ঘরে আসে নি শামীম।বাকি রাতটুকু বাড়ির দারোয়ানের সাথে কথা বলে কাটিয়েছে।যদিও দারোয়ান জানতে চেয়েছিলো তার না ঘুমানোর কারণ কিন্তু শামীম আসল কারণ বলল না।আজানের পর ভয়ে ভয়ে ঘরে ঢুকতেই বুঝতে পারলো র'ক্তের পঁচা গন্ধটা নেই।জানালা আর বারান্দার দরজাটা খুলে দিতেই সকালের মিষ্টি বাতাসে ঘর ভরে উঠলো।ক্লান্ত দেহে শুয়ে পড়লো বিছানায়।কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নেবে ভাবলো।
পুরো দু'টো দিন কাটিয়ে আজ সকালে জ্ঞান ফিরলো রুপার।শরীর ভীষণ দুর্বল।কারো সাথে কথাও বলতে পারছে না।এখন বেশ কিছুদিন পূর্ণ বিশ্রামে থাকতে হবে ওর।হিমানী ভয় পাচ্ছিলো,ভেবেছিলো রুপা হয়তো ওর সাথে দেখা করতে চাইবে না কিন্তু সামনে গিয়ে দাঁড়াতেই ওর চোখ বেয়ে গরম জল নামলো কপল গড়িয়ে।স্পষ্ট অনুতাপ সেই দৃষ্টিতে।হিমানী ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,'তাড়াতাড়ি সুস্থ হ।তোকে এভাবে দেখে ভালো লাগছে না।'
রুপা ক্ষীণ মাথা নাড়ালো।হিমানী আরও কিছুক্ষণ থাকলো ওর পাশে।এরপর ঔষধ ওর নেওয়ার সময় হওয়ায় বেরিয়ে গেলো কেবিন থেকে।
ভারতের অন্যতম প্রাচীন ও পবিত্র তীর্থক্ষেত্র কামাখ্যা মন্দির থেকে সিদ্ধিলাভ করা তান্ত্রিক তিনি।নাম রাঘব চন্দ্র।বেশিদিন নির্দিষ্ট স্থানে পাওয়া যায় না তাকে।অনেক কষ্টে তার ঠিকানা জোগাড় করেছে শামীম।আজ অফিস শেষে দেখা করতে যাবে।এই কয়েকদিনের এমন অদ্ভুত ঘটনায় ওর মনটা বাজে ভাবে বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে।তাই অফিস শেষ করেই বেরিয়ে পড়লো।ঠিকানা অনুযায়ী এটা শ্মশানের পেছনে।সন্ধ্যার পর ওইদিকে রিকশাওয়ালারা যেতেই চায় না।গেলেও ভাড়া দ্বিগুণ,তিনগুণ চায়।আর শ্বশানের গেটে সামনে নামতে হয়।বাকি রাস্তাটুকু পায়ে হেঁটে পাড়ি দিতে হবে।শামীম বহুকষ্টে এক রিকশাওয়ালাকে রাজি করিয়ে নিয়ে এলো।শ্মশানের গেটের সামনে রিকশা থামিয়ে রিকশাওয়ালা বলল,'স্যার,এবার নামেন।আইসা পড়ছি।'
'বাকি রাস্তাটুকুও চলেন না।পঞ্চাশ টাকা বেশি দিব।'
'না,স্যার।আমি আর যামু না।'
'যাও না,আচ্ছা একশ টাকা দিব।রাজি হও।'
'না স্যার আপনি এক কোটি দিলেও যামু না।'
অগত্যা শামীম রিকশা থেকে নেমে ভাড়া মিটিয়ে দিলো।এবার বাকি রাস্তাটুকু ফোনের ফ্ল্যাশের সাহায্যে হেঁটে চলল।একটু গা ছমছম করছে।শামীম নিজেকে আশ্বাস দিয়ে এগিয়ে গেলো।শ্মশানের পেছনে একটা ছনের কুঁড়েঘর।সেখানে টিমটিমে একটা সোডিয়াম লাইট জ্বলছে।শামীম দুয়ারের সামনে এসে হাঁক ছাড়লো,'কেউ আছেন?'
কোনো জবাব এলো না।ও আবারও চেঁচাল,'কেউ আছেন?আমি তান্ত্রিক রাঘব পাশার সাথে দেখা করতে এসেছি।'
ওর কথা শেষ হওয়ার আধ সেকেন্ড পরই ভেতর থেকে মধ্য বয়সী এক লোক এসে বলল,'গুরু জি এখন ধ্যানে।তার ধ্যান ভাঙলে তিনি দেখা করবেন আপনার সাথে।'
শামীম খুব অনুনয় করে বলল,'আমার ওনার সাথে দেখা করাটা জরুরি।প্লিজ,বোঝার চেষ্টা করুন।'
'গুরু জি,ধ্যানের সময় কারো সাথে দেখা করেন না।আপনি অপেক্ষা করুন।'
শামীম হতাশ হয়ে কুঁড়েঘরের বাইরের একটা মাচার ওপর বসপ অপেক্ষা করতে লাগলো।কিন্তু অপেক্ষার প্রহর যেন শেষই হচ্ছে না।এদিকে মশার কামড়ে বেহাল দশা।অতিষ্ঠ হয়ে শামীম যখন উঠে দাঁড়ালো তখনই তান্ত্রিকের শাগরেদ এসে বলল,'ভেতরে আসুন।'
শামীমের বেশ রাগ হচ্ছিল।তবুও সে সামলে নিলো।এখন রাগ করার সময় নয়।ভেতরে যেতেই সে দেখলো সুটকো এবং বুড়ো চেহারার এক লোক।পরনে ময়লা,রঙচটা ধূতি,মুখভর্তি জঙ্গলের মত গোঁফ,দাড়ি।লোকটা শামীমকে ইশারায় বসতে বলল মেঝেতে।অবশ্য মেঝেতে বসা ছাড়া উপায় কোথায়!ঘরে একটা কাঠের চৌকি ছাড়া আসবাব তেমন কিছুই নেই।লোকটা নিজের চৌকির ওপর বসে দরাজ গলায় বলল,'তোর হাতটা দে।'
শামীম ভয়ে ভয়ে বাঁ হাত এগিয়ে দিলো।লোকটা ওর হাত ধরে কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে রাখলো।একটা সময় পর চোখ খুলে বলল,'তোর ঘরে অপবিত্র কিছু আছে।সেটা সরালেই আর কোনো সমস্যা হবে না।কিন্তু আজ রাতের মধ্যেই যা করা করতে হবে।'
শামীম মনের ঘরে আতিপাতি করে খুঁজে কিছু পেলো না।কি এমন অপবিত্র কিছু আছে?শামীমের মনের কথা তান্ত্রিক হয়তো বুঝতে পেরেছে।তিনি বললেন,'তোর ঘরে মেয়েদের মাসিক ঋতুস্রাবের র'ক্ত আছে।যেটা তুই একটা মেয়েকে বশ করার জন্য এনেছিলি কিন্তু যাকে দিয়ে এটা করিয়েছিস তার মন্ত্রে ভূল ছিলো তাই বশীকরণ হয় নি।আরও ভয়ানক কিছু হয়েছে।'
শামীম ভীত স্বরে বলল,'কি?'
'কালোজাদু।'
এবার ভয়ে জমে গেলো শামীম।তান্ত্রিক আরও বলল,'আর সেটা তোর ওপরেই হয়েছে।ভূল মন্ত্র জপ করার কারণে ওই তান্ত্রিক ম'রেছে।'
'এখন আমি কি করব?'
'আজ রাত তিনটের মধ্যে ওই অপবিত্র র'ক্ত টা যাকে দিয়ে আনিয়েছিস তাকে দিয়েই রেখে আসতে হবে ওই মেয়ের ঘরে।তাহলেই সব সমাধান।'
'আর কোনো উপায় নেই?'
'এটাই সবচেয়ে সহজ উপায়।'
তান্ত্রিকের ঘর থেকে বের হতে রাত বারোটা বাজলো।এবার যাবে কিভাবে?সব অন্ধকার,শুনশান কিন্তু তার থেকেও বড় চিন্তা এখন রুপাকে কিভাবে পাবে?এত রাতে ওর বাড়ি যাওয়া ঠিক হবে?কিন্তু যা করার আজকেই করতে হবে!
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৮ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন