উপন্যাস : শকুন
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৫ সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “শকুন” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
শকুন || আরশি আয়াত |
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
শকুন || আরশি আয়াত (পর্ব - ৮)
তান্ত্রিকের বাড়ি থেকে শ্মশানের গেটে পর্যন্ত শামীমের জান বের হবার জোগাড়!কি ভয়ানক নিস্তব্ধতা জায়গাটা জুড়ে।বের হবার সময় তান্ত্রিক ওকে একটা পাথরখন্ড দিয়ে বলেছিলেন এটা হাতের মুঠোয় নিয়ে সোজা নাক বরাবর হেঁটে যেতে।এদিকে সেদিক ভূলেও তাকাতে না।শামীম তাই করেছিলো।এছাড়াও ওর চারপাশে তাকিয়ে দেখার মত সাহস অবশিষ্ট নেই।
শ্মশান থেকে কিছুটা দূর হেঁটে এসে একটা সিএনজি পেলো ও।উঠেই রুপার বাসার এড্রেস বলল।সিএনজি ওয়ালা হয়ত আপত্তি করতো কিন্তু তার আগেই শামীম অসহায় কন্ঠে বলল,'ভাই,প্লিজ না করবেন না।অনেক বড় বিপদে পড়েছি।পৌঁছাতে না পারলে মা'রা যাবো।'
শামীমের কাকুতি মিনতি শুনে চালক আর না করতে পারলো না তবে ভাড়া চাইলো দ্বিগুণ।শামীম বিনাবাক্যে মেনে নিলো।আসলে এখন যদি দশগুণও চাইতো তবুও বোধহয় মেনে নিতো ও।সময় তো বেশি নেই।এখন রাত একটা।শামীম রুপাকে ফোন করলো কিন্তু ওর ফোন বন্ধ বলছে বারবার।বিপদ যখন আসে সবদিক থেকেই আসে।কি করবে ভেবে পেলো না শামীম।অথচ এমুহূর্তে রুপার সাথে যোগাযোগ ভীষণ জরুরি।ও এবার উপায় না পেয়ে রুপার খোঁজ জানার জন্য ওর নতুন সীম থেকে হিমানীকে ফোন করলো।আগের নাম্বারগুলো হিমানী ব্লকলিস্টে ফেলে রেখেছে।প্রথমবারে কল ধরে নি,দ্বিতীয়বারে ধরলো।শামীম প্রথমেই বলল,'কল কাটবে না।আমার রুপাকে জরুরি দরকার।ওকে ফোনে পাচ্ছি না।তুমি কি বলতে পারবে ও কোথায়?'
হিমানী চিনলো ওর গলা।উত্তর না দিয়ে পাল্টা প্রশ্ন করলো,'কেন?ওকে দিয়ে কি কাজ?'
'সেটা তো তোমাকে বলব না।'
'তাহলে আমিও বলব না রুপা কোথায়।'
আচ্ছা মুশকিল তো!শামীমের মেজাজ খারাপ হলো।মনে মনে বিশ্রী একটা গালি দিলো হিমানীকে।পরে নিজেকে শান্ত করে বলল,'রুপা একটা জব খুঁজছিল।আমাকে বলেছিলো ওকে একটা জব দেওয়ার জন্য।আমি অনেক চেষ্টা করে ওর জন্য একটা পার্টটাইম জব খুঁজেছি।সেটা জানানোর জন্যই ওকে দরকার।'
'তো এটা এত রাতে কেনো?'
'এক্সাইটমেন্ট!রুপার এক্সাইটমেন্ট দেখার জন্য।'
'ও আচ্ছা কিন্তু রুপা তো বাসায় নেই।ও হাসপাতালে ভর্তি।'
'কেনো?'শামীমের কপালে চিন্তার ভাজ পড়ে গেলো।
'রুপা সুইসাইড এটেম্পট করেছিলো কিন্তু একটুর জন্য বেঁচে গিয়েছে।'
'এখন কেমন আছে?'
'জ্ঞান ফিরেছে তবে ওঠর মত শক্তি নেই।অনেক র'ক্ত বেরিয়েছে।ডাক্তার একসপ্তাহ বেড রেস্ট দিয়েছে।'
'ও আচ্ছা।'এটা বলেই ফোন কেটে দিলো শামীম।চূড়ান্ত রকমের অসহায় মনে হচ্ছে নিজেকে।আর কি কিছুই করার নেই?বাসায় ফিরতেও ভয় লাগছে ওর।শামীম সিএনজিওয়ালাকে রুপার বাসার দিকে যেতে না করে এক বন্ধুর বাসার এড্রেস দিলো।আজ আর বাসায় ফিরবে না।প্রচন্ড ক্লান্ত লাগছে।বাসায় ফিরলে আতঙ্কে ঘুম আসবে না।
বন্ধুর বাসায় এসেই ঘুমিয়ে পড়লো শামীম।মাঝরাতে হঠাৎ কালকের মত পঁচা র'ক্তের গন্ধে জেগে উঠলো ও।পাশেই বন্ধ ইফতি নির্ভার হয়ে ঘুমাচ্ছে।ওর কি গন্ধ লাগছে না?শামীম ওকে ধাক্কা দিয়ে তুলল ঘুম থেকে।আতঙ্কিত স্বরে বলল,'গন্ধ'টা পাচ্ছিস?'
ইফতি বিরক্ত হয়ে বলল,'কিসের গন্ধ?মাঝরাতে কি আবোলতাবোল বকছিস?'
'না সত্যি বলছি।পঁচা র'ক্তের গন্ধ পাচ্ছি।'
'কোত্থেকে আসবে গন্ধ?আজ কি উল্টাপাল্টা খেয়েছিস বলতো?'
'বিশ্বাস কর।অনেক গন্ধ!আমি থাকতে পারব না।ম'রে যাব।গন্ধটা বাড়ছে।'
শামীম বিলাপ বকা শুরু করলো।উঠে দৌড়ে ঘর থেকে বেরিয়ে রাস্তায় দৌড়াতে শুরু করলো।ইফতিও ওর পেছন পেছন আসছে।থামতে বলছে কিন্তু শামীম যেন বদ্ধ উন্মাদ!ওর কোনো জ্ঞান বুদ্ধি নেই।দৌড়াচ্ছে তো দৌড়াচ্ছেই!
মাথার বারো ফুট ওপরে শকুনটা গোল গোল ঘুরছে।সামনে আগুন জ্বলছে ধাউ ধাউ করে।দু'ঠোটের মাঝ দিয়ে একমনে মন্ত্র জপ চলছে।অবশেষে দীর্ঘ মন্ত্র পাঠ শেষে শকুনটা নিচে নেমে এলো।মন্ত্র পাঠকারী নিজের চোখদ্বয় খুলে ক্রুর হেসে বলল,'এত সহজে তো আমি আমার জিনিস ছাড়বো না।যে আমার রাস্তায় আসবে তাকেই উপড়ে ফেলবো আমি।হিমানী আমার বহু আরাধ্য।শত বছর পর এমন কাউকে পাওয়া যায়।আমিও শত বছর অপেক্ষা করেছি ওকে পাওয়ার জন্য।'
শামীম দৌড়াতে দৌড়াতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিলো গতরাতে পরে ইফতি বাসায় ফোন করে নিজের বড় ভাইকে ডাকলো।দু'ভাই মিলে শামীমকে বাসায় নিয়ে চলল।ফজরের পর জ্ঞান ফিরলো শামীমের।জ্ঞান ফিরতেই স্বাভাবিক উঠে বসলো।ইফতি উদ্বিগ্ন স্বরে প্রশ্ন করলো,'এখন ঠিকাছিস?গন্ধ লাগছে না তো?'
'না।কালকে রাতে আমার কি হয়েছিলো রে?'
'তুই দৌড়াতে দৌড়াতে জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিস।পরে ভাইকে ফোন করে এনে দু'জনে মিলে তোকে বাসায় আনলাম।'
শামীম ভয়ে কেঁদে ফেললো।ইফতি অভয় দিয়ে বলল,'কি হয়েছে সব খুলে বল।'
প্রথম থেকে সব বলল ও।ইফতি সব শুনে কিছুক্ষণ চিন্তা করে বলল,'তুই ওই প্যাডটা কারো মাধ্যমে আজকেই হিমানীর বাসায় রেখে আয়।'
'কিভাবে?'
'ওদের বাসার কাজের লোককে কিছু ঘুষ দিলেই হয়ে যাবে।'
'কিন্তু এভাবে কিছু হবে?তান্ত্রিকটা বলেছিলো গতকাল রাত তিনটার মধ্যে করতে হবে।'
'আগে চেষ্টা করে দেখ।আর আমি তোর ব্যাপারে আমার দাদা ভাইয়ের সাথে আলাপ করবো।উনিও এরকম জাদুবিদ্যা পারে।অবশ্য বয়স হয়ে যাওয়ায় এখন করে না।'
শামীমও ভাবলো এভাবে বসে থাকলে হবে না কিছু তো করতেই হবে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন