উপন্যাস        :        দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা        :         তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
Bangla Golpo দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা

৪৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৪৬)


আজকে শুক্রবার। বাদ জুম্মা দোলা-নিশীথের বিয়ে পড়ানো হবে। সকাল থেকে মানুষে মানুষে ভরে গেছে বাড়ি। আজ দোলার চাচা-ফুফুরাও এসেছে বিয়ে খেতে। সকলের ঠাই হয়েছে দোলাদের বাসায়। ওদের বাসা থেকে মোটামুটি কাছে বলতে গেলে ভালোই এক কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের আয়োজন করেছেন পারভীন বেগম। নিজের এত বছরের সঞ্চয় দিয়ে যতটা পেরেছন, মেয়ের বিয়েতে উজার করে খরচ করেছেন। যদিও নিশীথ প্রথমে মানা করেছিল খরচ করতে, ও বলেছিলো যদি তারা ঘরোয়াভাবে বিয়ে পড়ায় তাতেও ওর আপত্তি নেই। কিন্তু পারভীন বেগম শুনেননি। নিশীথদের পরিবারের তো একটা অবস্থান আছে। সে অনুযায়ী নিজের পক্ষ থেকে যতটা হয়েছে উনি করছেন। কমিউনিটি সেন্টারে পৌঁছে গেছে কনেপক্ষের প্রায় সবাই। শুধু কামিনি, দোলার সাথে পার্লারে আছে। ওরাও রওনা দিয়েছে, পনেরো-বিশ মিনিট লাগবে পৌঁছাতে বড়জোর!
এরই মাঝে দোলার ছোট মামি এসে পারভীন বেগমকে বললেন,
---দোলার জন্য এত ভালো সম্বন্ধ কীভাবে পেলে গো, ভাবি? সত্যি করে বলো তো, এটা কি সম্পূর্ণ এরেঞ্জ নাকি প্রেমের বিয়ে?
পারভীন বেগম ইষত হেসে বললেন,
---এরেঞ্জই হোক আর প্রেমের বিয়েই হোক তাতে কি যায় আসে বলো তো, রুমা? ছেলেমেয়ের একে-অপরকে পছন্দ এটাই তো আসল, তাইনা!
রুমা মুখ বাকালেন। সূক্ষ্ম খোটা দিয়ে বললেন,
---তা ভুল বলোনি, ভাবি। কিন্তু আমি বেশ বুঝেছি এটা প্রেমের বিয়ে। নয়তো ছেলেদের স্ট্যাটাস দেখেছো? এত বড় ঘর থেকে কি এমনি এমনি দোলার জন্য সম্পর্ক আসে? এজন্যই আজকাল প্রেমের বিয়েই ভালো। তোমার দোলাকে দেখে বুঝা যায়না তবে ও ভালোই চালাক, ঠিক জায়গায় টোপ ফেলেছে কিন্তু। আমার মেয়েরাও যদি এমন পারতো!
পারভীন বেগম দাতে দাত চেপে রইলেন। বলতে গেলে ননাস হিসেবে রুমাকে অনেক কিছুই বলা যায় কিন্তু আজকে তার মেয়ের বিয়ে! আজকে তাকে ধৈর্য ধরতে হবে! এত শুভক্ষণে এসব মানুষের সাথে তর্কে লেগে নিজের মেজাজ হারাতে চান না তিনি! তাই মুখে জোর পূর্বক হাসি টেনে বললেন,
---কার কপালে কি আছে এটা তো কেউ আগে থেকে জানেনা, রুমা। টাকা-পয়সা দিয়ে ভালোমন্দের বিচার হয়না। নিশীথ অবশ্যই ভালো ছেলে, কিন্তু সব ছেলে তো আর নিশীথ না! তাই তোমার মেয়েদের চালাকি না শিখিয়ে ভালোগুণ শিখাও। কপালে না থাকলে হাজার চালাকি করেও লাভ হবেনা। আর কপালে ভালো কেউ থাকলে, কিছু না করলেও জুটে যাবে!
নিজের কথা শেষ করে পারভীন বেগম ওখান থেকে চলে এলেন। নিশীথের মায়ের কাছে একবার ফোন দিতে চেয়েও পরে আর দিলেন না। কেননা, তার মনে চলছে অন্য চিন্তা। আয়মান সাহেবকে নিয়ে চিন্তা। সেদিন ইংগেজমেন্টের দিন উনি আসেননি। নিশীথের পরিবারের চাচা-চাচি থেকে শুরু করে দাদা পর্যন্ত যেখানে উপস্থিত ছিলো সেখানে ওর নিজের বাপ কেন আসেনি এ নিয়ে মেয়ের মা হিসেবে পারভীন বেগমের দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তার কেন যেন মনে হয়, আয়মান সাহেব দোলাকে পছন্দ করেননি। নয়তো কেন আসবেন না নিজের ছেলের ইংগেজমেন্টে? এ নিয়ে সেদিন ইনিয়েবিনিয়ে আসমা বেগমকেও জিজ্ঞেস করেছিলেন। কিন্তু আসমা বেগম বেশ সযত্নে তার প্রশ্ন এড়িয়ে গেছেন। কোনো বাবা যত ব্যস্তই হোক না কেন, নিজের ছেলের বিয়ের চেয়ে কোনো ব্যস্ততা কি বেশি বড় হবে? অবশ্যই না। তবে নিশীথের পরিবারের অন্দরমহলে ঠিক কি চলছে এ বিয়ে নিয়ে তা পারভীন বেগম বুঝতে পারেন না! এরই মাঝে ছেলেপক্ষের লোকজন চলে এলো। নিশীথের মা, দাদু, চাচা-চাচি এসেছেন। নিশীথ এখনো আসেনি, ও আরেকটা গাড়িতে আসছে ওর বন্ধুদের সঙ্গে। বরযাত্রীকে আপ্যায়ন করতে মেয়েপক্ষের সবাই এগিয়ে গেলেন।
______________________
লাল টুকটুকে বেনারসি পড়ে বধূসাজে দোলাকে আজ অদ্ভুত রকম সুন্দর লাগছে। ওর থেকে দশ হাত দূরে অফ হোয়াইট রঙের শেরওয়ানী পড়ে বসে থাকা নিশীথ যেন আজ চোখ ফেরাতেই পারছেনা অন্য কোথাও! মন চাইছে এখনি গিয়ে দোলাকে জোরেসোরে জড়িয়ে ধরতে, বুকের মাঝে আগলে ধরে রাখতে। এ কয় মাসে যে স্বপ্ন নিশীথ রোজরাতে দেখেছে তা বাস্তবরুপ পাওয়ায় আবেগে নিজেকে সামলানো দুষ্কর হয়ে যাচ্ছে ওর পক্ষে! তবু নিশীথ ধৈর্য ধরলো। এখনো দোলা কাগজে-কলমে পুরোপুরি ওর হয়নি। এইতো কাজী সাহেব কাবিননামা পড়ছেন, কিছুক্ষণের মাঝেই দোলা ওর স্ত্রীরুপে কবুল বলবে! নিশীথ ঢিপঢিপ হৃদয়ে অপেক্ষা করলো ওর কণ্ঠে কবুল শুনার।
"আলহামদুলিল্লাহ! কবুল"
বেশ অনেকক্ষণ সময় নিয়ে ধীরেসুস্থে সব শুনেই দোলা কবুল বললো। বলার মাঝে একদফা কেদেও ফেলেছে বেচারি। এক মুহুর্তের জন্য তো নিশীথ নিজেই অধৈর্য হয়ে গেছিলো। ভাবছিলো, এত দেরি করছে কেন? কবুল বলছেনা কেন? কিন্তু ওর অশান্ত মনকে স্বস্তি দিতে, সময় নিয়ে হলেও দোলা ঠিকি সকলকে সাক্ষী রেখে ওকে স্বামী হিসেবে কবুল করেছে। খুশিতে নিশীথের হৃদয় ভরে উঠে। এবার ওর কবুল বলার পালা! কিন্তু শতখুশির মাঝেও হৃদয়ের এক কোণে ইষত চিনচিনে ব্যাথা করছে। আজ ওর খুশিতে সবাই শামিল থাকলেও যার সবার আগে অংশ নেয়ার কথা ছিলো,সে ব্যক্তিটি আজ নেই! ওর বাবা আসেননি ওর বিয়েতে। ওর প্রতি রাগের দরুন। কিন্তু নিশীথ বুঝেনা, কি এমন রাগ আয়মান সাহেবের ওর উপর? একটা বাবা যতই রাগ হোক না কেন, সন্তানের প্রতি যদি নূন্যতম ভালোবাসা না থাকে তবে কি তার জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মুহুর্তে না থেকে পারে? কিন্তু সব সন্তানের ভাগ্য ওমন হয়না। নিশীথের ভাগ্যেও হয়তো নেই। তাই নিজের ভাগ্যকে মেনে নিয়ে বড় এক দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে সে। এরই মাঝে কাজী সাহেব ওর কাছে চলে আসেন। নিশীথের আত্মীয়স্বজনরা ওকে ঘিরে ধরে। ওর চাচার হাতে মুঠোফোনে কানাডা থেকে নিশীথের বড়ভাই নিশানও ভিডিও কলে ছোট ভাইয়ের বিয়ে দেখছে। পারতপক্ষে, ও দেশে আসার জন্য ভিসা, ছুটি কোনোটাই পায়নি তাই এভাবে দেখা।
কাবিননামা পড়ার সময় পাত্রের বাবার নাম উচ্চারণের সাথে কাজী সাহেব জিজ্ঞেস করেন, ছেলের বাবা কই? নিশীথ চোখমুখ পাথর করে নিচের দিক চেয়ে থাকে। আসমা বেগম ছলছলে চোখে আঁচলে মুখ ঢাকেন। দাদু কিছু বলতে যাবেন এর মাঝেই ভীড়ের পেছনে কাউকে দেখে হাতের ইশারায় দেখিয়ে বলেন,
---ওইতো, আয়মান এসেছে। কাজী সাহেব, ওটাই আমার ছেলে। পাত্রের বাবা!
দাদুর কথায় নিশীথ অবাক হয়ে যায়। নজর তুলে তার হাত অনুসরণ করে বাবাকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত নজরে চায়! আসমা বেগম খুশিতে আপ্লুত হয়ে পড়েন। অন্যদিকে এতক্ষণ চিন্তিত থাকা পারভীন বেগমের চোখেমুখেও খানিকটা স্বস্তি দেখা মিলে! এরই মাঝে আয়মান সাহেব দ্রুতপায়ে ছেলের কাছে এগিয়ে আসেন। সবাই সরে ওনাকে জায়গা করে দেয়। নিশীথ তখনো অবাক নজরে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। আয়মান সাহেব ছেলের দৃষ্টি লক্ষ্য করলেও কিছু বললেন না। কাজী সাহেব ছেলের বাবাকে দেখে আর কিছু বললেন না। আবারো কাবিননামা পড়তে শুরু করলেন, দেনমোহরসহ সকল কিছু স্বীকার করে অবশেষে নিশীথ পরিপূর্ণ হৃদয়ে নিজের দোলনচাঁপাকে স্ত্রী রুপে কবুল করলো। বরকনে দুজনের তরফ থেকেই তিন কবুল উচ্চারিত হওয়ায় চারদিকে আলহামদুলিল্লাহ ধ্বনি শোনা গেলো। নিশীথ চোখ টিপ দিতেই দোলা মুখ ভেংচি দিয়ে ফিরিয়ে নিলো৷ নিশীথ থতমত খেয়ে গেলো!
অবশেষে খাওয়াদাওয়া, ছবি তোলার পাট চুকিয়ে বিদাইয়ের মুহুর্তে ঘনিয়ে এলো। দোলার মা-বোনের কান্নার রোল পড়ে গেলো। দোলা হাউমাউ করে কাদছে। পারভীন বেগম তো কাদছেনই, সাথে কামিনি-শিমুল দুজনেই আপু আপু বলে কাদছে। সব মিলিয়ে নাজেহাল অবস্থা ওদের৷ নিশ্চয় নিশীথ ও পরিবার দোলাদের পরিবারের অবস্থা বুঝলো। ওদের ধাতস্থ হওয়ার সময় দিলো। এরপর যখন চলে যাওয়ায় মুহুর্ত এলো, পারভীন বেগম কান্নার মাঝেই দোলার হাত নিশীথের হাতে তুলে দিতে দিতে বললেন,
---আমার কলিজার টুকরা আজ থেকে তোমার সম্পদ, বাবা। এখন থেকে তুমিই ওর সব। যে ভরসায় ওকে তোমার হাতে তুলে দিচ্ছি, সে ভরসার মান রেখো!
নিশীথ তাকে আশ্বস্ত করে ক্রন্দনরত দোলার হাত ধরে সন্তপর্ণে এগিয়ে চলে গাড়ির দিকে। গাড়িতে বসার সাথে সাথেই এতক্ষণের কান্নার ফলস্বরূপ দোলার হিচকি উঠে গেলো। নিশীথ নিজেই ড্রাইভ করবে বিধায় গাড়িতে ওরা দুজন বাদে আর কেউ নেই! নিশীথ বিরক্ত হয়ে সামনে থেকে পানির বোতল এগিয়ে দিলো। আড়চোখে ওর বিরক্ত চোখমুখ লক্ষ্য করে দোলার কান্না আরও বেড়ে গেলো। নিশীথ গাড়ি স্টার্ট করে বামহাত কপালে ঘষতে ঘষতে বললো,
---উফ, দোলনচাঁপা! কি শুরু করেছো? আল্লাহর ওয়াস্তে এবার থামো৷ প্লিজ!
নিশীথের ধমকে দোলা বিস্ময়ে-অভিমানে চুপ হয়ে গেলো। আপন মনে বিড়বিড়িয়ে বললো,
---বিয়ে না হতেই এভাবে ধমক দেওয়া শুরু করেছে। এখনো তো দিন পরেই আছে। এখনি এই অবস্থা হলে পরে কি হবে?
---পরে আদর হবে! ডোন্ট ওরি!
নিশীথ হাসতে হাসতে জবাব দিলো। প্রচন্ড লজ্জায়-বিস্ময়ে দোলা সিটের সাথে চুপসে গেলো। মনে মনে ভাবলো, নিশীথ শুনলো কিভাবে?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন