উপন্যাস        :        দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা        :         তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং

লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
Bangla Golpo দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা

৪৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন 

দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৪৯)


(ক)

নিশীথ মনোযোগ দিয়ে দোলার চোখমুখ পরখ করে। তাতে ওর যা বুঝার বুঝে যায়। দোলার এ মন খারাপ এর পেছনের কারণ যে আয়মান সাহেবের করা কোনো দুর্ব্যবহার - এ বিষয়ে নিশীথের মনে কোনো সন্দেহ বাকি থাকেনা আর! বিষয়টা অনুধাবন করতেই নিশীথের চোয়াল শক্ত হয়ে আসে, শক্ত হয়ে আসে দোলার বাহু ধরে রাখা ওর হাত। নিশীথের এ পরিবর্তন দোলার নজর এড়ায় না। ও বুঝে পরিস্থিতি কোনদিকে যাচ্ছে! তাই নিশীথকে ঠান্ডা করতে বলে,
---আপনি যা ভাবছেন তা মোটেও সত্যি না। আমি বাবার কারণে মন খারাপ করিনি। উনি আমার সাথে কোনো খারাপ ব্যবহার করেননি!
---শাট আপ, দোলনচাঁপা। উনার জন্য তুমি আমার কাছে মিথ্যে কথা বলছো? সিরিয়াসলি? আমি কি উনাকে চিনিনা? নিশ্চয়ই এমন কিছু বলেছেন যা তোমায় কষ্ট দিয়েছে।
---আপনার বুঝতে সত্যিই ভুল হচ্ছে এবার। আমার কথাটা শুনুন প্লিজ। বাবা যেখানে আমার সাথে কোনো কথাই বলেন না, সেখানে দুর্ব্যবহার করবেন কিভাবে বলুন? আমি অযথাই কাদছিলাম।
---কিন্তু আমার তো বিশ্বাস হচ্ছেনা, দোলনচাঁপা। আমি তোমায় যতদূর চিনি, তুমি তো অযথা কাদার মতো মেয়ে নও!
নিশীথের কথায় দোলনচাঁপা হাসে। কেমন যেন এক মায়াভরা দৃষ্টিতে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে বলে,
---তাই? এ ক'দিনেই এতটা চিনে গেছেন আমায়?
দোলার কথায় এবার নিশীথও হাসে। এগিয়ে এসে মুহুর্তের মাঝেই ওকে বুকের মাঝে টানে। দু হাতে দোলার কোমড় জড়িয়ে ধরে চোখে চোখ রেখে বলে,
---চেনার মতো চেনার জন্য কয়েক মুহুর্তই যথেষ্ট! তোমার কোনো সন্দেহ আছে? নাকি প্রমাণ দেবো?
নিশীথের ইংগিত বুঝে দোলা লজ্জায় মাথা নামিয়ে নেয়। তাতে নিশীথ আরেকটু আশকারা পায়! ওর গলায় মুখ ডুবিয়ে দিতেই দোলা হাসফাস করে, ছাড়া পাওয়ার জন্য ছোটাছুটি করে। তবু নিশীথ থামেনা। নিজের মর্জি মোতাবেক কিছুক্ষণ ওভাবে থেকেই গলায় চুমু খায়। খানিকবাদে থেমে বলে,
---কাল রাতে আমি কষ্ট পেয়েছি, দোলনচাঁপা!
দোলা থমকায়। এতক্ষণ ছোটাছুটি করতে থাকা হাত-পা গুলো শিথিল হয়ে যায়। নিশীথ গলা থেকে মুখ তুলে দোলার দিকে তাকায়। ওর চাহনি দেখে দোলার খারাপ লাগে। সে জানে নিশীথের খারাপ লাগবে, কিন্তু এখানে তারও তো দোষ নেই! ওর চোখেমুখে উদাস ভাব বিরাজ করে।
মুখ ফুটে বলে,
---আমি ইচ্ছা করে ঘুমিয়ে পড়িনি, নিশীথ। বিশ্বাস করুন।
---আমি জানি তুমি ইচ্ছে করেই এমনটা করেছো। বিয়ের আগে ক'দিন তোমায় কাদিয়েছি তার বদলা নিতেই আমার সাথে এমনটা করেছো। সত্যিটা লুকিয়োনা। আমি সব বুঝি!
দোলার চেহারা দেখে নিশীথের মনে দুষ্টুমি চাপে। ও নিজের চোখমুখে সিরিয়াস ভাব এনে দোলাকে কথাগুলো বলে। এদিকে বোকা দোলা নিশীথের এ দুষ্টুমি ধরতে পারেনা। বেচারি পড়ে যায় মুসিবতে। নিশীথ যে ওর সাথে মজা করছে তা বুঝতে না পেরে অস্থির হয়ে বলে,
---আপনি কিছুই বুঝেন না! আমি কেন আপনার সাথে এমন করবো? বিয়ে হয়ে গেছে আমাদের। এখন তো এসব ছেলেমানুষী করার মানে হয়না। আমি সত্যি বলছি বিশ্বাস করুন। আপনি কষ্ট পেয়েন না, আই এম সরি।
এতক্ষণ সিরিয়াসভাবে তাকিয়ে থাকলেও এবার দোলার কথাগুলো শুনে নিশীথ গম্ভীর মুখে থাকতে পারেনা। ওর হাসি পায়। নিশীথের ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা দেখে দোলা বিস্মিত হয়। কিছু একটা ভেবে হঠাৎ রে'গে ভ্রু নাচিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে বলে,
---আপনি হাসছেন কেন? তার মানে আপনি এতক্ষণ আমার সাথে মজা করছিলেন?
নিশীথ জবাব না দিয়ে বেশ জোরেই হাসতে আরম্ভ করে। দোলা রে'গে চলে যেতে নিলেই ও পেছন থেকে হাত ধরে ওকে আটকায়। দোলা শক্তি প্রয়োগ করার চেষ্টা করলেও নিশীথের শক্তির সাথে পেরে উঠেনা আর! দোলা পেছন না ফিরেই বলে,
---ছাড়ুন তো। আপনি অনেক খারাপ।
---এতদিন পর জানলে?
নিশীথ আবারও মজা করে। দোলা চোখ পাকিয়ে পেছনে তাকায়, তা দেখে নিশীথ ভয় পাওয়ার অভিনয় করে। দোলা দ্রুত মুখ ফিরিয়ে হাসে, নিশীথকে হাসি দেখতে দেবেনা বলে। এরই মাঝে নিশীথ পেছন থেকে বলে,
---বাবার কথায় মন খারাপ করোনা, দোলনচাঁপা। তুমি তো কখনো বলবেনা তবুও আমি জানি তুমি পরোক্ষভাবে উনার ঠান্ডা ব্যবহারের জন্যই কাদছিলে।
এবার দোলা পেছন ফিরে তাকায়। নিশীথ মুখ অন্যদিক করে রেখেছে, ওর কণ্ঠ নরম। দোলা এগিয়ে নিশীথের হাত চেপে ধরে। নিশীথ তাকাতেই বলে,
---বিশ্বাস করুন, আমি কিছু মনে করিনি। বাবা আমাদের সম্পর্কটাকে এখনো মন থেকে মেনে নেননি তাই উনার পক্ষ থেকে ঠান্ডা ব্যবহার আশা করা অত্যন্ত স্বাভাবিক বিষয়। বরং উনি নরমাল ব্যবহার করলেই আমি অবাক হতাম। আর মিষ্টি খাবার অনেকেই খায়না তাই এটা আহামরি কোনো বিষয়ই না। আমি সত্যিই কিছু মনে করিনি তার কথায়। কিন্তু আমি কেদেছি অন্য এক কারণে!
দোলার প্রথমদিকের কথাগুলো শুনে নিশীথ রিল্যাক্স হলেও শেষের কথাটা শুনে ওর ভ্রুযুগলের মাঝে ভাজ পড়ে। ও প্রশ্ন করে,
---তবে কি জন্য কাদছিলে? অন্য কেউ কিছু বলেছে? কে কি বলেছে? আমায় নামটা একবার বলো শুধু!
নিশীথের কথাবার্তা শুনে দোলা হাসবে কিনা কাদবে বুঝে উঠতে পারেনা। এ লোকটা এত অস্থির কেন? নিশীথকে দেখলে দোলার মনে হয়, ওর কিছু হলেই যেন লোকটা দুনিয়া উল্টে ফেলবে! দোলা কিছু বলছেনা দেখে নিশীথ ওকে ঝাকিয়ে বলে,
---কি হলো? চুপ করে আছো কেন?
দোলা কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে একটি দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,
---আসলে বাবা মারা যাওয়ার এত বছর পর এই প্রথম কাউকে "বাবা" বলে সম্বোধন করলাম তো, তাই একটু ইমোশনাল হয়ে গেছিলাম!
নিশীথ কিছু বলতে যেয়েও থেমে যায়। হয়তো কি বলবে ভেবে পায়না। এমন পরিস্থিতির সাথে সে অবগত নয়। এটা এমন এক কষ্ট যেটা যার আছে শুধু সে-ই অনুভব করতে পারবে। যার নেই সে পাশে থেকে সান্ত্বনা দিতে পারবে শুধু! নিশীথও তাই করলো। মুখে কিছু না বলেও চুপচাপ দোলার দিকে হাত বাড়িয়ে দিলো৷ ওর ইশারা বুঝে দোলাও ঝাপিয়ে পড়লো ওর বুকে। যেন এতক্ষণ এটারই অপেক্ষায় ছিলো! কিছু না বলে, কিছু না করেও দুজনের মাঝে ভালোবাসা আদান-প্রদান হলো! নিশীথ এক হাতে ওকে জড়িয়ে ধরে আলতোভাবে দোলার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। এদিকে ওর বুকে মাথা পেতে দোলা চুপটি করে পড়ে থাকলো।
নিশীথের প্রশস্ত বুকে যে এত শান্তি, এত নিরাপত্তা ওর জন্য বরাদ্দ ছিলো- দোলা আগে কখনো উপলব্ধি করেনি। ভালোবাসা যে কত সুন্দর তা বিয়ের এ একদিনেই যেন একটু একটু করে অনুভব করতে পারছে সে!
দোলার ভাবনার মাঝেই নিশীথ বললো,
---রিসিপশনের কিন্তু বেশিক্ষণ নেই। তোমার তো রেডি হতে সময় লাগবে। এদিকে তোমার শশুড় অলরেডি একবার তাগাদা দিয়েছেন। তাই সময় নষ্ট না করে দ্রুত পার্লারে যেয়ো। আজকে দেরি হলে কিন্তু সত্যিই বকা খাবে!
দোলা মাথা নেড়ে সায় জানালো। অর্থাৎ, ও দেরি করবেনা! দোলা নিশীথকে ছাড়ছিলো। কিন্তু নিশীথ ওকে ছাড়লোনা। উল্টো মাথা নামিয়ে ওর কানের কাছে মুখ আনলো। ফিসফিসিয়ে বললো,
---কাল তোমায় ছাড় দিয়েছি। আজকে কিন্তু কোনোভাবেই ছাড়বোনা। বি রেডি ফর দ্যাট, দোলনচাঁপা!
নিশীথের কথায় লজ্জায় দোলার আত্মা উড়ে যায় যায় ভাব! কোনোমতে নিজেকে সামলে ওকে ধাক্কা দিয়ে রুম থেকে দৌড়ে বের হয়। দরজা খুলে বের হতে নিবে এ সময় পেছন থেকে নিশীথ আবারো বলে ওঠে,
---যত পালানোর এখনি পালিয়ে নাও। রাতে তোমায় ছা'ড়ছিনা!
______________________
রিসিপশনের প্রোগ্রাম শুরু হয়ে গেছে। নিশীথদের তরফ থেকে অনুষ্ঠান হওয়ায় আজকে সিংহভাগ অতিথি ওদেরই চেনাজানার মধ্যে! বর-বউ স্টেজে বসে আছে। আয়মান সাহেব নিজের করপোরেট গেস্টদের আর আসমা বেগম আত্মীয়-স্বজনদের আপ্যায়ন করছেন। একে একে সবার সাথে পালাক্রমে নিশীথ-দোলার পরিচয় করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রায় সবাই দুজনের জুটির প্রশংসা করছে, কেউবা ছবি তুলছে। একিসাথে, পারভীন বেগমের সাথেও নিজের দিকের আত্মীয়দের সাথে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন আসমা বেগম। মোটকথা, বেয়াই দিকের অতিথি হোক কিংবা নিজেদের দিকের -সবকিছু বেশ ভালোভাবেই চলছে। এত ব্যস্ততার মাঝেও সব ভালোভাবেই সম্পন্ন হয়ে যাচ্ছে। ইতিমধ্যে এক ব্যাচ অতিথি খেতে বসে গেছেন। আসমা বেগম মাত্রই ননাশদের টেবিলে বসিয়ে দিয়ে এলেন। এমন সময় তাকে পেছন থেকে কেউ ডাকলেন।
---আসমা!
পরিচিত গলায় নিজের নাম শুনে পেছন ফিরতেই তার হাসি হাসি মুখটা শুন্যে মিলিয়ে গেলো। নিশীথের বড়খালা এসেছেন। নিজের বড় বোনকে দেখে এ মুহুর্তে খুশি হওয়ার কথা থাকলেও, আসমা বেগমের মুখ দেখে তাকে ততটা খুশি মনে হলোনা! উল্টো, তার চেহারায় এক অদ্ভুত আ'তংকের রেখা দেখা গেলো!

(খ)

নিশীথের বড় খালা বেশ অহংকারী মানুষ। বংশ মর্যাদার দাপট ও অহমিকা তার শিরায় শিরায় বিদ্যমান। আত্মীয়দের মধ্যে নিশীথের সাথে দোলার বিয়েতে আয়মান সাহেব ব্যতিরেকে যদি আর কেউ বিরোধিতা করে থাকেন তবে সেটা নিঃসন্দেহে ওর বড় খালা, সালমা বেগম। ঠিক এ কারণেই আসমা বেগম তাকে দেখে আতংকিত হচ্ছিলেন। বিয়ে পড়ানোর দিনেও তিনি এ কারণেই উপস্থিত হোননি। তাই আজ রিসেপশনে সবার সামনে দোলাকে অথবা ওর পরিবারকে আবার কোনোভাবে যেন অপমান করে না বসেন, এ চিন্তায় ভরে যাচ্ছিলো মস্তিষ্ক। আসমা বেগম নিজের ভাবনাচিন্তা পাশে সরিয়ে আপাতত বোনকে স্বাগত জানাতে মন দিলেন। এগিয়ে এসে হাসিমুখে বললেন,
---আরে আপা, তুমি এত দেরিতে এলে যে? এসো এসো!
---বের হতে হতে একটু দেরি হয়ে গিয়েছিলো। কখন এসেছিস তোরা?
---আমরা এসেছি ঘণ্টাখানেকের বেশি পেরিয়েছে। কাল তুমি আসোনি, কষ্ট পেয়েছিলাম। তবে আজকে তোমায় দেখে ভীষণ খুশি হয়েছি, আপা!
আসমা বেগমের মন ভোলানো কথায় তার বোনের মন গললোনা। বরং উনি তাচ্ছিল্যের হাসি হেসে বললেন,
---যেমন বাড়ির মেয়ে পছন্দ করেছে তোর ছেলে, কোন মুখে বিয়ে খেতে আসি বল? হাজার হোক, আমাদের পরিবারের তো একটা মানসম্মান আছে!
আসমা বেগম জানতেন তার বোন অবশ্যই এমন কোনো কথা বলবেন! তাই তিনি বিশেষ অবাক হলেন না। এ মুহুর্তে অনুষ্ঠানের মাঝে কিছু না বলাই শ্রেয় বলে মনে করলেন। নয়তো হিতে বিপরীত হতে পারে। সালমা বেগমের বিশ্বাস নেই। সবার সামনে একবার মুখ খুললে কিসব বলবেন তার ইয়ত্তা নেই। আসমা বেগম নিজেকে শান্ত করে বললেন,
---যা হওয়ার হয়েই গেছে, আপা। ভাগ্যের উপর তো আমাদের কারো হাত নেই। আজকাল ছেলেমেয়েরা নিজেদের পছন্দেই বিয়ে করে, এ আর নতুন কি! আসো তোমার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেই।
এ দফায় সালমা বেগম কথা বাড়ালেন না। এগিয়ে গেলেন নিশীথ-দোলাকে দেখতে। সাক্ষাত বিনিময় স্বাভাবিকভাবেই হলো। সালমা বেগম বাকা চোখে দোলাকে বেশ কিছুক্ষণ দেখলেন! যেন বুঝার চেস্টা করছিলেন ওর মধ্যে এমন কি আছে যা দেখে তার বোনপো এভাবে গলে গিয়েছিলো। উনি মুখ খুলবেন সে সময় দাদু এলেন। তার পরিচিত ক'জনের সাথে নাতি-নাতবৌ এর পরিচয় করানোর ফলে সালমা বেগমকে স্টেজ থেকে নেমে যেতে হলো। আসমা বেগম হাফ ছেড়ে বাচলেন। পল পল নজর রাখলেন বোনের উপর যাতে উনি কোনোকিছু নিয়ে মেহমানদের সামনে কোনো কাহিনি না করতে পারেন। তার প্রয়াস সফল হলো। দেখা গেলো সবকিছু মিলিয়ে কোনো ঝামেলা ছাড়াই নিশীথ-দোলার রিসেপশন বেশ ভালোভাবেই সম্পন্ন হলো৷
____________________
বাড়ি ফেরার পর আজ রাতে নিশীথ আগেভাগেই রুমে ঢুকলো। দোলারও বুঝতে বাকি নেই কেন নিশীথের এহেন তাড়াহুড়ো। তবু ও লজ্জায় ঘাপটি মেরে বসে আছে। নিশীথ ডাকলেও উঠে আসছেনা। এক পর্যায়ে নিশীথ নিজেই এগিয়ে আসে। তা দেখে দোলা বিছানার চাদর খামচে ধরে বসে থাকে। কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে নিশীথ হুট করে এসে দোলাকে কোলে তুলে নিলো। লেহেঙ্গা পরিহিত দোলার মাথা থেকে নেটের ওড়নার আঁচল পড়ে গেলো। ভয়ে বিস্ময়ে নিশীথের কাধ খামচে ধরলো মেয়েটা। নিশীথ কোনো কথা না বলে ওকে নিয়ে বারান্দায় চলে যায়। দোলা তখনো একিভাবে ওর দিকে পলকহীন চেয়ে থাকে! নিশীথ সেদিকে না চেয়েই সামনের দিক তাকিয়ে বলে,
---আমায় দেখার জন্য জীবনভর সময় পাবে। আপাতত সামনে তাকাও!
দোলা লজ্জা পায়। চট করে চোখ সরিয়ে নিয়ে দৃষ্টি সামনের দিক ফেরায়। নিশীথ এর দৃষ্টি অনুসরণ করে সেদিকে তাকাতেই কিছুক্ষণের জন্য মুগ্ধ হয়ে যায়। হা করে তাকিয়ে থাকে রাতের আকাশের দিকে! পূর্ণিমা রাতের চন্দ্র সৌন্দর্যে দুজনেই ডুব দেয় মুহুর্তের জন্য। এরই ফাকে নিশীথ দোলাকে মাটিতে নামিয়ে দেয়। দোলা তখনো আকাশের দিক চেয়ে থাকলেও নিশীথের নজর এখন তার ব্যক্তিগত চাঁদের উপর। চাঁদের আলোয় দোলার চোখমুখ চকচক করছে। ওর চোখেমুখে আজ অন্যরকম খুশির আভা। নিশীথের ঘোর লেগে যায়। পেছন থেকে ঘোর লাগানো আওয়াজে ডাকে,
---দোলনচাঁপা!
দোলা একপলের জন্য শিউরে উঠে সে ডাকে। উত্তেজনায় পেছন ফিরতেও যেন ভয় পায়! নিশীথ খানিকটা এগোয়। কোমড় চেপে ধরে দোলার গালে গাল লাগাতেই ওর ছোট ছোট দাড়ির খোচায় দোলার সুড়সুড়ি লাগে। মেয়েটা নড়েচড়ে উঠে। নিশীথ সেদিকে পরোয়া করেনা। এখন ও আছে অন্য ধান্ধায়! বললো,
---এখন ভয় কমেছে একটু? বেটার ফিল করছো?
---হ্যাঁ, এখন ভালো লাগছে।
---তবে কি আমি এখন পারমিশন পাচ্ছি তোমার কাছে আসার? আই কান্ট ওয়েট, দোলনচাঁপা! মে আই?
নিশীথ কোনোরকম রাখঢাক না করে সরাসরিই বলে উঠে। লজ্জায় দোলার প্রাণ যায় যায় ভাব। একটা লোক এত অবলীলায় কিভাবে এসব বলছে ও ভেবে পায়না! ও পেছন ঘুরে ইনিয়েবিনিয়ে কিছু বলতে চায় কিন্তু শব্দগুলোও আজ যেন গলার কাছে দলা পেকে বসেছে ওর। চেয়েও কিছু বের করতে পারছেনা! দোলা কোনোমতে মাথা নেড়ে সম্মতি দিয়ে কিছু বলার জন্য মুখ তুলে, ওমনি নিশীথ এক টানে ওকে নিজের কাছে টেনে নেয়। দোলার কথা আবারও ওর কণ্ঠনালির মাঝেই সীমাবদ্ধ থেকে যায়, নিশীথ ওকে কথা বলার অবস্থায় রাখেনা! ওষ্ঠযুগুলের উষ্ণতার সামনে বাকি অনুভুতি ফিকে হয়ে যায়। বেশ অনেকক্ষণ লাগিয়ে নিশীথ ছেড়ে দিলে দোলা শ্বাস নেওয়ার অবকাশ পায়। নিজেকে একটু সামলে নিতেই নিশীথ আবারো ওকে কোলে তুলে নেয়। দোলা কিছু বুঝে উঠার আগেই ওকে বারান্দা ছেড়ে রুমে নিয়ে যায়। পূর্ণিমা চাঁদটাও যুগলের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে লাজুক হেসে মেঘের আড়ালে লুকিয়ে যায়!
_____________________
পরদিন সকালে গোসল শেষে লম্বা সময় নিয়ে দোলা বের হয়। ভেজা চুল ঝেড়ে মুছে চটজলদি মেরুন রঙের শাড়ি পেচিয়ে নেয় শরীরে! ওর শুভ্র বদনে শাড়িটা দারুণ ফুটে উঠে। দোলা আয়নায় তাকিয়ে নিজেকে দেখে নিজেই হাসে। একিসাথে মনে পড়ে গত রাতের ঘটনা! মুহুর্তেই শাড়ির রঙের সাথে পাল্লা দিয়ে দু গাল লাজরাঙা হয়ে যায়। লজ্জায় দু'হাতে মুখ ঢেকে ফেলতেই পেছন থেকে নিশীথ বলে,
---এমন দৃশ্য দেখবো বলেই তো এতদিন ধৈর্যের বাহিরে গিয়ে অপেক্ষা করেছি!
দোলা চমকে পেছন ফিরে তাকায়। বিছানায় খালি গায়ে শুয়ে থাকা নিশীথের ঘুমন্ত মুখে দুষ্টুমির আভাস দেখে ওর দিকে বালিশ ছুড়ে মারে! নিশীথ হেসে ওই বালিশ ক্যাচ ধরে আবারও ঘুমিয়ে পড়ে। দোলা সেদিক চেয়ে বোকার ন্যায় তাকিয়ে থেকে হেসে ফেলে! তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে মাথায় আঁচল চেপে রুমের বাহিরে বের হয়।
সকাল সকাল সালমা বেগম ড্রয়িংরুমে বসে একের পর এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছেন দোলাকে। তার প্রশ্নের তোপে পড়ে বেচারি দোলার নাজেহাল অবস্থা প্রায়! সালমা বেগমের প্রশ্নের ধরন ছিলো কিছুটা এরুপ-
---কি পড়ছো?
---অনার্স থার্ড ইয়ারে।
---তোমার ভাইবোন কয়জন?
---দুজন। একটা বোন, একটা ভাই!
---তোমার মা কি চাকরি করেন?
---স্কুলের শিক্ষিকা!
---নিশীথকে কতদিন ধরে চিনো?
---জি, মাস তিনেক হবে!
---কে আগে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিলো?
---উনিই দিয়েছিলেন।
---এত অল্প সময়ে কিভাবে প্রেম হলো তোমাদের?
ব্যস! দোলা হাফিয়ে উঠেছে তার শত শত প্রশ্নের ঝুলির জবাব দিতে দিতে। একটা মানুষ কিভাবে একটা নতুন বউকে প্রথম সাক্ষাতে এতগুলো প্রশ্ন করতে পারে দোলা ভেবে পায়না। ওর এক পর্যায়ে মনে হলো যেন ও ভাইভা বোর্ডে বসে আছে। অন্তত সেখানেও এর চেয়ে কম নার্ভাস লাগতো ওর! দোলার এসব ভাবনার মাঝে হঠাৎ করে সালমা বেগম হঠাৎ বললেন,
---তুমি কি জানতে তোমার আগে নিশীথের জন্য কতগুলো ভালো পরিবারের মেয়ের প্রস্তাব এসেছিলো?
দোলা বিব্রত হয়। তবু কোনোমতে মাথা নেড়ে হ্যাঁ সুচক উত্তর দেয়। তা দেখে সালমা বেগম তাচ্ছিল্যের সাথে হাসেন। দোলাকে আপাদমস্তক দেখে নিয়ে খোচা মেরে বললেন,
---তা নিশ্চয়ই এই রুপের জা'লেই ফাসিয়ে বিয়ে করেছো আমাদের নিশীথকে, তাই না? নয়তো এত ভালো ভালো বংশের মেয়েদের রেখে তো ওর তোমায় বিয়ে করার মতো কোনো কারণ চোখে পড়ছেনা আমার!
এবার দোলার মুখ থমথমে হয়। এতক্ষণ ধৈর্য ধরে সবকিছু শুনলেও এবার ধৈর্য ধরা কঠিন হয়ে যায়!


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন