উপন্যাস : দোলনচাঁপার সুবাস
লেখিকা : তাসফিয়া হাসান তুরফা
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১১ই সেপ্টেম্বর, ২০২৩ ইং
লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফার “দোলনচাঁপার সুবাস” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৩ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা |
৫৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
দোলনচাঁপার সুবাস || তাসফিয়া হাসান তুরফা (পর্ব - ৫৬)
নিশীথরা মাত্র বাসায় ফিরেছে ছাদ থেকে। কারেন্ট এসেছে মিনিট পাঁচেক হবে! নিশীথ মেইন দরজা লাগানোর ফাঁকে ঘরে ঢুকলো দোলা। তখনই ওর হাতে থাকা নিশীথের ফোন বেজে উঠলো সজোরে। দোলা স্ক্রিন দেখে চিল্লিয়ে বললো,
---আপনার ফোন এসেছে। সেভ করা নেই। বিদেশি নাম্বার মনে হচ্ছে!
নিশীথ দ্রুত চলে এলো রুমে। দোলার হাত থেকে ফোন নিয়ে রিসিভ করতেই ও খেয়াল করলো, নিশীথের চোখমুখ নিমিষেই যেন উজ্জ্বল হয়ে উঠলো। সশব্দে গর্জে উঠলো অপরজনের উদ্দেশ্যে,
---ভাইয়া, তুমি??
দোলা বুঝলো, নিশীথের ভাই ফোন দিয়েছে। তাই ও চুপচাপ খাটে গিয়ে বসলো। নিশীথকে বাড়ি ছাড়ার পর এত খুশি এ প্রথম দেখলো সে! স্বাভাবিকভাবেই দোলারও মন ভালো হয়ে এলো ওকে আবারো আগেকার ন্যায় দেখে। ভাইয়ের সাথে ফোনে কথা বলতে বলতেই দোলার কাছে হাতের ইশারায় পানি চাইলো নিশীথ। দোলা মাথা নাড়িয়ে পানি আনতে চলে গেলো। এদিকে নিশীথ তো মহাখুশি ভাইয়ের ফোন পেয়ে। মহা উৎসাহে বলতে লাগলো,
---ভাইয়া, ফোনে কল দিলে কেন? তুমি তো কখনোই নাম্বারে ফোন দাওনা। তাই তোমার নাম্বারও সেভ করা ছিলোনা আমার কাছে!
নিশীথ খানিকটা বিস্ময় নিয়েই শুধালো। অপর পাশ হতে নিশান জবাব দিলো,
---তোকে যে নেটে কল দিবো, কল-ই তো যাচ্ছেনা। তোকে অফলাইন দেখাচ্ছে। এজন্যই বাধ্য হয়ে নাম্বারে কল দিলাম আজকে!
ভাইয়ের কথা শুনে নিশীথ মনে মনে মাথা চাপড়ালো। জিব কেটে বললো,
---ওহ, সরি ভাইয়া। আমার এমবির মেয়াদ ফুরিয়েছে। আর তোলাই হয়নি। এখানে ওয়াইফাই নেই তো, এজন্য অফলাইন দেখাচ্ছিলো। বাই দ্যা ওয়ে, ব্যস্ততায় তোমাকে জানানোই হয়নি যে আমি আর দোলা নতু...
---তুই আর দোলা নতুন বাসায় উঠেছিস বাবার উপর রাগ করে, তাইতো?
নিশীথের কথা কে'টে নিশান পালটা প্রশ্ন করলো। ওর কথায় নিশীথ মনে মনে খানিকটা বিস্ময় হতে নিয়েও হলোনা। খানিকটা মাথা ঘামিয়ে শুধালো,
---তুমি কিভাবে জানলে? মা বলেছে?
---হুম। মা ছাড়া আর কে বলবে? বাবার সাথে কথা হলেও তিনি তোর ব্যাপারে কিছু বলেননি। পরশুরাতে মাকে ফোন দিয়েছিলাম। তোর প্রসঙ্গ আসায় এক পর্যায়ে মা কাদতে শুরু করে। এরপর শুনি তোর বাড়ি ছেড়ে যাওয়ার কথা।
মায়ের কান্নার কথা শুনে নিশীথ বড়সড় এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে, যা ফোনের ওপাশ থেকে কর্ণগোচর হলো নিশানের। ও হতাশ স্বরে বললো,
---বাবার উপর রাগ করে যে বাড়ি ছাড়লি, একবারও কি মায়ের কথা ভাবলিনা? এমনিতেই আমি দেশে নেই। এখন তুইও চলে গেলি, মা কিভাবে আছে? তার কান্নার কথা মনে পড়তেই আমার খারাপ লাগছে!
ভাইয়ের কথায় নিশীথ চুপ রয়। কিছুক্ষণ অতিক্রমের পরেও নিশীথের তরফ থেকে জবাব না আসায় নিশান ফের বলে,
---কি ব্যাপার? কোনো কথাই বলছিস না যে? আমি কিন্তু ফোনে কল দিয়েছি, নিশীথ। টাইম ওয়েস্ট করিস না।
নিশীথ এবার মুখ খুলে। যথাসম্ভব শান্ত কণ্ঠে বলে,
---দেখো ভাইয়া, আমি যা করেছি তা খুব বুঝেশুনে ঠান্ডা মাথায় ডিসিশন নিয়েই করেছি। যদি তুমি এখানে থাকতে, আমার পরিস্থিতি দেখতে তবে আমার কিছুই বুঝানোর দরকার পড়তোনা। তুমি নিজেই আমাকে বাড়ি ছাড়তে বলতে।
---আমি তোর সিচুয়েশন বুঝেছি, বাবা যা করেছে আমি সেটার পক্ষে নেই। আমি তো শুধু মায়ের কথা চিন্তা করেই তোকে ফোন...
---আমি জানি মা ভালো নেই। আমার প্রতি একটু বেশিই দূর্বল কিনা? তবে তুমি চিন্তা করোনা। আমারও মায়ের কথা খেয়াল আছে। আমি ভাবছিলাম কাল মা-কে বাসায় আনবো!
দোলা পানি নিয়ে ফিরে আসতেই নিশীথের মুখে মা-কে নিয়ে আসার কথা শুনে। আসমা বেগমের আসার কথা শুনে ও খুশি হয়ে যায়। নিশীথ পানির গ্লাস হাতে নিয়ে নিশানের উদ্দেশ্যে বলে,
---ভাইয়া, আমি কাল এমবি তুলে রাখবো। এরপর থেকে তুমি নেটেই ফোন দিও। অলরেডি অনেক টাকা কাটলো তোমার। আজ রাখছি, পরে কথা হবে তোমার সাথে। দেশে কবে আসবে? তোমায় ভীষণ মিস করি।
---আমি তো আসতে চাইছিলাম তোর বিয়েতেই। ভিসা পাচ্ছিনা বুঝলি? দেখি কবে যাওয়া হয়! আচ্ছা তোরা ভালো থাক তবে, ফোন রাখছি।
নিশান ফোন কাটতেই নিশীথ ফোন রেখে দেয়। পানির গ্লাস থেকে ঢকঢক করে এক নিশ্বাসে পানি খেয়ে গ্লাস রাখতেই দোলা বলে ওঠে,
---নিশান ভাইয়া ফোন দিয়েছিলো তাইনা?
---হ্যাঁ! ও সবসময় নেটে কল দেয় তো, এজন্য ফোনে ওর নাম্বার সেভ করা নাই!
---ওহ। এত রাতে ফোন দিলো ভাইয়া? ওদের ওখানে তো আরও রাত হবে তাইনা?
দোলার বোকা প্রশ্নে নিশীথের হাসি পায়। ওর মাথায় হালকা করে চাটি মেরে বলে,
---কানাডার সাথে বাংলাদেশের সময় দূরত্ব ১০ ঘণ্টা পিছিয়ে, বোকা মেয়ে। অর্থাৎ এখানে এখন রাত ১১টা বাজে মানে ওদের ওখানে এখন দুপুর! লাঞ্চ ব্রেকে ফোন দিয়েছে, ভাইয়া।
---ওহ। আমি জানতাম না এটা!
দোলা বিব্রত হেসে বলে।
---ইটস ওকে। সব যে জানতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। এখন তো জেনেছো, তাহলেই হলো!
নিশীথের কথায় দোলা মাথা নাড়ে। প্রসঙ্গ পাল্টিয়ে বলে,
---আচ্ছা এসব বাদ দিন। ভাইয়াকে যে বললেন মা-কে আনবেন বাসায়, এর জন্য কিছু বাজারও তো করতে হবে নাকি? দাদুও তো আসবে সাথে! কি খাওয়াবো তাদের?
দোলার কথা শুনে নিশীথের টনক নড়ে। ও মাথা নেড়ে বলে,
---এটা তো আমি ভেবেই দেখিনি! একদম ঠিক বলেছো তুমি। কিন্তু আমি বাসায় ফিরতে ফিরতে তো সন্ধ্যে হয়ে যায়। ততক্ষণে ফ্রেশ শাকসবজী পাবো কিনা বুঝতে পারছিনা!
---এক কাজ করা যাক, কাল অফিসে যাওয়ার পথে আপনি আমায় বাজারে নামিয়ে দিয়েন? আমি বাজার করে আনবোনি। কাল এমনিতেও ক্লাস নেই আমার। বাসায়ই থাকবো সারাদিন। আমার মা, শিমুল-কামিনিকেও ডাকবো ভাবছিলাম। অনেকদিন গল্প করিনা ওদের সাথে!
---বাহ এটা তো দারুন প্ল্যান। কিন্তু তুমি একা সব বাজার করে আনতে পারবে? ইউ শিওর?
---আরে হ্যাঁ, বিয়ের আগে আমার বাসার বাজার প্রায় সময় আমিই করতাম। আমার অভ্যাস আছে, চিন্তা করবেন না!
দোলার কথায় নিশ্চিত হয়ে নিশীথ ঘুমোতে চলে গেলো। এদিকে দোলার মনে ঘুরছে আরেক কথা। অনেক ভেবেও নিশীথকে বলবে কি বলবেনা ভাবতে ভাবতে ও নিজেও বিছানায় শুয়ে পড়লো। বেশ অনেকক্ষণ এদিক-ওদিক করেও যখন ঘুম এলোনা তখন দোলা উশখুশ করতে লাগলো। উঠে বসে উল্টোদিকে পাশ ফিরে ঘুমানো নিশীথের দিকে ঝুকে দেখার চেষ্টা করলো, ও আদৌ ঘুমিয়ে গেছে কিনা?
এদিকে দোলা ঝুকে দেখার মাঝেই নিশীথ আচমকা পাশ ফিরলো, ফলশ্রুতিতে দোলা চমকে উঠলো। নিশীথ সেটার সুযোগ নিয়ে ওকে দুই বাহুতে আগলে ধরে নিজের কাছে টানলো। পুরো ঘটনা এত দ্রুত ঘটে গেলো যে দোলা কোনোকিছু করার বা বুঝার সুযোগই পেলোনা। চুপচাপ নিশীথের চওড়া বাহুদ্বয়ের মাঝে আবদ্ধ হয়ে ওর প্রশস্ত বুকের ওপর পড়ে রইলো। গোলগোল অক্ষিদ্বয় বিস্ময়ে টইটম্বুর হয়ে চেয়ে আছে নিশীথের পানে। তা দেখে নিশীথের মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি এলো। টুপ করে আকস্মাৎ চুমু খেয়ে নিলো ওর পুরু ঠোঁটে। দুষ্টু গলায় বললো,
---উঁকি মেরে কি দেখছিলে হুম? ঘুমোতে ইচ্ছে করছেনা বুঝি? হবে নাকি ত..
---ইশ! খালি বেশি বুঝে। চুপ করুন।
দোলা ডানহাতে মুখ চেপে ধরে নিশীথের। বেচারা বউয়ের ধমক শুনে অবাক হয়ে যায়। নিশীথের চাহনি দেখে দোলা আস্তে করে ওর মুখের উপর থেকে নিজের হাত সরায়। নিশীথ চুপচাপ চেয়ে অপেক্ষা করে ও কি বলে তা শুনার। এরই মাঝে দোলা মিনমিনিয়ে বলে,
---আপনাকে একটা কথা বলবো ভাবছিলাম। তবে ভয় হচ্ছে, আপনি রাগ করবেন না তো?
---কি কথা
নিশীথ এবার সিরিয়াস হয়ে শুধায়। ওর মুখভঙ্গির এমন গম্ভীর পরিবর্তনে দোলা আরেকটু নার্ভাস হয়। তবু নিজেকে সামলে ধীর গলায় বলে,
---বলছিলাম যে মা ও দাদুকে যেদিন আসতে বলবেন এখানে, বাবাকেও না হয় আসতে বললেন একবার?
---দোলনচাঁপা!
নিশীথ অবিশ্বাস্য কণ্ঠে ওকে থামায়! মুখে বলে,
---তুমি জানো আমি বাবাকে একবার কেন হাজারবার বল্লেও উনি এখানে আসবেন না। তাহলে তাকে বলে কি লাভ? অযথা ইনসাল্ট করবেন!
নিশীথ থমথমে মুখে বলে। দোলা সবটা বুঝে তবু ওর মন মানতে নারাজ। ওর কেন যেন মনে হয়, এবার হয়তো আয়মান সাহেব শুনবেন নিশীথের কথা! হয়তো উনার মন একটু নরম হবে ওদের প্রতি! কিন্তু নিশীথকে তা কিভাবে বুঝাবে? দোলা ভেবে পায়না। নাছোড়বান্দা ভংগিতে বলে,
---আমি এসব জানিনা। আমার মন বলছে আপনি এবার বাবাকে বললে উনি মানা করবেন না! এ বাসায় আপনাকে দেখতে আসার অধিকার যেমন আপনার মা ও দাদুর আছে, ঠিক তেমনি আপনার বাবারও আছে। তাকে এ অধিকার থেকে বঞ্চিত করবেন না, নিশীথ! আমার ভালো লাগবেনা।
দোলার কথায় নিশীথ চকিত দৃষ্টিতে চেয়ে রয়। মনে মনে ভাবে, আসলেই কি একবার বাবাকে বলে দেখা উচিত? সত্যিই কি উনি আসবে ওদের এই ছোট্ট বাসায়? নাকি নিজের ইগো ধরে রেখে আবারো ওকে অপমান করবেন কোনো ছলছুতায়?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা তাসফিয়া হাসান তুরফা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন