উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪৭)


তরু নিজের সংসারের প্রথম রান্না করলো ভাত,ডাল আর আলু ভর্তা।তরুর নিজের কাছে কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে সব এখনো। সত্যি সত্যি তার নিজের একটা সংসার আছে?
সে বলতে পারবে এখন এই সংসার আমার?
নিজের সংসার হলে কি এরকম মিশ্র অনুভূতি সবারই হয়?
কেমন বুকে চাপা ব্যথা লাগছে আবার খুশি ও লাগছে।
কিচেন রুমের জানালা খুলে তরু বড় করে নিশ্বাস নিলো।ফাইজান গেছে পানি আনতে।এখনো বাজার সদাই কিছু করা হয় নি।তরু মা'কে কল দিলো।কল দিয়ে কথা বলতে গিয়ে বুঝতে পারলো তরুর কেমন গলা বুঁজে আসছে কান্নায়।
মা'কে ছেড়ে যে সত্যি সত্যি একটা সময় চলে যাবে তরু এখনো বিশ্বাস করতে পারছে না।
রাবেয়া ভিডিও কলে তরুর রান্নার আয়োজন দেখে কষ্ট পেলো।তাদের বাড়িতে এতো খাবার অথচ মেয়ে কি-না ভাত ডাল আলু ভর্তা দিয়ে ভাত খাবে!
কতো বার বলেছিলেন বক্সে করে খাবার নিয়ে আসতে।ফাইজান,তরু কেউ-ই রাজি হয় নি।
এখন এই খাবার খাবে মেয়েটা!
রাবেয়ার কেমন বুক ভারী হয়ে আসে।তরু সংসার সামলাতে পারবে তো!
কোনো ভুল করলেন না তো এতো দ্রুত মেয়ের বিয়ে দিয়ে?
মেয়ের খুশির জন্যই তো দিয়েছেন বিয়ে তবুও কেনো মন মানে না।কেনো এতো কষ্ট হয়।
তরু মা'য়ের শুকনো মুখের দিকে তাকিয়ে বললো, "মা,তুমি আমার জন্য দোয়া করো মা।আমি সব পারবো।তুমি চিন্তা করো না।"
রাবেয়া কল রেখে নাজিয়া কে ডাকে।নাজিয়ার হাত ধরে থম মেরে বসে থাকে।নাজিয়া বারবার জিজ্ঞেস করতে লাগলো কি হয়েছে।
রাবেয়া কিছুক্ষণ পর বললো, "তোকে আমি কিছুতেই তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না।তরু চলে যাওয়ায় আমার দম আটকে আসছে যেনো।তোর বিয়ে হয়ে গেলে তুই চলে গেলে মা তো মরে যাবো।"
নাজিয়া মা'কে জড়িয়ে ধরে হাসে।সৎ মা কেমন হয় নাজিয়া জানে না।রাবেয়াকে কখনো সে সৎ মা ভাবে নি।নাজিয়া জানে নাজিয়া যদি সামান্য একটা ব্যাপার নিয়ে ও মিথ্যাই উফ করে, পুরো সমাজ রাবেয়াকে দোষী বলবে।
নাজিয়ার দোষ হলেও মানুষ বলবে সৎ মা দেখে মেয়ের অপরাধ মানতে পারে না নিজের মা হলে তো এমন হতো না।বিশেষ করে নাজিয়ার দাদী,ফুফুরা,চাচা চাচী সবাই। সবাই শুধু উৎ পেতে আছে। সুযোগ পেলেই রাবেয়াকে আঁচড়ে দিবে।
তাছাড়া রাবেয়া নাজিয়াকে বেশি যত্ন করে। নিজের এই অসুস্থ শরীরে ও মেয়ের চুলে তেল দিয়ে বেনি করে দিতে রাবেয়ার ভুল হয় না।
মেয়ের পড়ার টেবিল গুছিয়ে রাখে।জামা কাপড় ভাঁজ করে রাখে।
নাজিয়া আল্লাহর কাছে দোয়া করে কখনো যাতে তার মনে হিংসা না আসে।
তরু অপেক্ষা করছে ফাইজানের জন্য। দুপুরে উৎকণ্ঠার জন্য ভালো করে খেতে পারে নি। এখন ভীষণ ক্ষিধে পেয়েছে তরুর।ফাইজান এখনো আসছে না।
ফাইজান ফিরলো আরো ১৫ মিনিট পর।হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে এলো।
তরুর নাকে গরুর মাংসের ঘ্রাণ এলো।ফাইজানের দিকে তাকাতেই হেসে বললো, "তুমি নিজের সংসারে প্রথম বার এসেছো।এসেই যদি ডাল ভাত খাও তাহলে আমার কষ্ট লাগবে।মনে হবে আমি ব্যর্থ তোমাকে ভালো রাখতে।"
তরু কিছু বলে না।মনে মনে ভাবে, এই মানুষটা যদি আজীবন এভাবে আমার খেয়াল রাখে তাহলে আমার আর কোনো কষ্ট থাকবে না।
খেতে বসলো দুজন। ফাইজান দুটো পার্সেল এনেছে। তরু দেখলো একটা গরুর মাংসের আরেকটা মাছের।
দুজন মিলে ভাগ করে খাবার খেলো।
ডাল পাতে নিয়ে ফাইজান হেসে ফেললো। তরু নিজেও বুঝতে পারলো ডালটা ভালো হয় নি।হলুদের গুড়ো বেশি দিয়ে ফেলেছে।হলুদের গন্ধ আর হালকা তিতকুটে ও লাগছে।
তরু ফাইজানের দিকে লজ্জিত ভঙ্গিতে তাকায়।ফাইজান হেসে বলে, "লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।প্রথম প্রথম এরকম হয়।এটা তোমার এক্সপেরিমেন্ট হিসেবে ভেবে নাও।একটু লেবু দিয়ে খেলে আর বুঝা যাবে না।"
হোটেল থেকে পার্সেলের সাথে লেবু,শসা দিয়েছিলো।
একটু লেবু চিপে নিতেই তরু দেখলো অনেকটা বুঝা যাচ্ছে না আর।
খাবার শেষে তরু সব গুছিয়ে রাখতে গেলো।ফাইজান বিছানা ঝেরে নিলো।বিছানায় শুতেই ফাইজানের ফোন বাজতে থাকে।
মা কল দিয়েছে।মা বাবার কল মানেই ফাইজানের কাছে আতংক মনে হয়।
তবুও ফাইজান কল রিসিভ করে। সাজেদা ক্ষিপ্ত হয়ে বললো, "তোর বউ কোথায় রে?"
ফাইজান বুঝতে পারলো না সত্যি বলবে না-কি মিথ্যে।ফাইজান চেয়েছিলো বাবা মা'কে না জানাতে তরুকে তার কাছে নিয়ে আসার কথা।
জানতে পারলে বাবা মা আবারও ঝামেলা করবে।কিন্তু মায়ের কথার ধরনেই মনে হচ্ছে মা জানেন তরু ফাইজানের সাথে। তাই কোনোটাই না বলে ফাইজান বললো, "কেনো মা?কি হয়েছে? তরু আছে তো।"
"কোথায় আছে?ওই মাইয়ারে তুই তোর কাছে নিয়ে গেছস?"
ফাইজান এবার নিশ্চিত হলো মা জানে।তাই আর লুকোচুরি না করে বললো, "হ্যাঁ মা,এনেছি আজকে।আমি কল দিতাম তোমাদের একটু পর।এখন তো তুমি দিলে।কি হয়েছে? "
সাজেদার পায়ের তালু থেকে মাথা পর্যন্ত তেঁতে উঠে। তার ছেলে এরকম বেহায়া হলো কবে?
তার বউ দুই ছেলের বউ থাকে না তাদের কাছে? ছেলেরা যে ৫-৬ বছর দেশের বাহিরে তারা তো থাকে বউ ছাড়া। এরকম পাগল হয়ে বউয়ের কাছে আসার জন্য তো উতলা হয় না ওরা।অথচ এই ছেলে বিয়ে করতে না করতেই বউ নিজের কাছে নিয়ে গেলো।
কোথায় বউকে বাবা মা'র কাছে রাখবে তাদের সেবা যত্ন করার জন্য। তা করে নি।
কালাম হোসেন ফোন টান দিয়ে নিয়ে কল কেটে দিলো।স্ত্রীকে ধমক দিয়ে বললো, "এইভাবে কথা কইতে কইছি?"
সাজেদা মুখ কালো করে বললো, "তাইলে? "
"কথা কইতেই হইবো না তোর।যা করনের আমি করমু।বউ নিছে তাও ঢাকায়। ভালা করছে।এবার বুঝবো তোর পোলা কোন বাপের ঘরে জন্ম নিছে ও,বাপের লগে টেক্কা লওনের মজা বুঝামু।কয়দিন যাক,দুইজনের মিল মোহাব্বত আরো বাড়ুক।তারপর দুইটারে আলগা করনের ব্যবস্থা করমু আমি।"
সাজেদা উৎফুল্ল হয়ে উঠে শুনে।ছেলে বউয়ের বশ হয়ে যাবে এটা কিছুতেই সাজেদার মন মেনে নিতে পারছে না।সাজেদা চায় ছেলে আজীবন তার আঁচলে বাঁধা থাক।তরুকে মনে হয় তার বিপরীত পক্ষ।যেনো তরু তার বিপক্ষের মানুষ।
এতো কষ্ট করে ছেলে জন্ম দিয়েছেন, বড় করেছেন। এখন ছেলে কামাই রুজি করছে আর কি-না ছেলের বউ এসে সব দখল করছে?
সাজেদার উপর ছড়ি ঘুরাবে?
এতো সোজা?

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৪৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন