উপন্যাস        :         কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা        :          রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং

লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি  ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন। 
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান


৪৮ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৪৯)


তরু আগ্রহী হয়ে এগিয়ে যায় ফাইজানের দিকে। ফাইজান চেয়ারে বসে উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছে তরুকে।ফাইজানের এই চাহনির সামনে তরু টিকতে পারলো না।
বাহিরে বারান্দায় একটা কাক কা কা করে ডাকছে।সেসব কিছুই তরুর কর্ণপাত হলো না।
ফাইজান হাত ধরে টেনে তরুকে কোলে বসিয়ে নিলো।
তরুর কোমর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে এক হাত দিয়ে। অন্য হাত দিয়ে তরুর ব্লাউজের বোতাম গুলো ছুঁয়ে দেয়।
ভীষণ আবেশে তরু চোখ বন্ধ করে ফেলে।আবারও একটা দীর্ঘ চুমু খায় দুজন।
এতো ভালোবাসা,এতো আদর পেয়ে তরুর মন কেমন করে উঠে। ফাইজানের সাথে মিশে যেতে ইচ্ছে করে তরুর।
ফাইজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তরু।এই মানুষটাকে যদি জিদ করে হারিয়ে ফেলতো তাহলে এতো সুখ তরু কই পেতো!
অন্য কাউকে স্বামী হিসেবে পেলে কি তরু এতো সহজে এই অন্তরঙ্গতা মেনে নিতে পারতো?
ভালোবাসার মানুষকে স্বামী হিসেবে পাওয়ার এই একটা সুবিধা, অন্তরঙ্গ মুহূর্তে অন্য কাউকে মনে পড়ে না।
তা না হলে অন্য কারো সাথে বিয়ে হলে এই সময়টায় ভালোবাসার মানুষকে ঠিকই মনে পড়ে।
ফাইজানের উপর জন্মানো সব রাগ,অভিমান হারিয়ে যায় তরুর।
ফিসফিস করে ফাইজানকে বলে, "নাশতা খেতে যেতে হবে না?"
"না সোনা,চুমু খেয়ে পেট ভরিয়ে নিবো। "
"আমার তো চুমুতে পেট ভরছে না।"
তরুর কানের লতিতে হালকা কামড় দিয়ে ফাইজান বললো, "তোমার কি অন্য কিছু চাই তাহলে? আরেকটু গভীর আদর লাগবে সোনা?যেই আদরে মানুষ মাতাল হয়ে যায়।ডুবে যায় একে অন্যের মাঝে?"
তরুর নিশ্বাস ভারী হয়ে আসছে।দম আটকে আসছে যেনো। তরু কথা বলতে পারলো না আবেশে।
কোনো মতে বললো, "আমার কেমন অস্থির লাগছে।"
ফাইজান হেসে হাত সরিয়ে নিয়ে ব্লাউজ ঠিক করে দেয় তরুর।এলোমেলো চুল শাড়ির দিকে তাকিয়ে বললো, "তোমাকে আমি পাগল করে দিবো জান।"
তরু লজ্জায় কথা বলতে পারলো না। দুজন যখন বের হলো নাশতা করতে তখন প্রায় ১০ টা বেজে গেছে।
নাশতা করে কেনাকাটা করতে বের হলো। নিজের সংসারের জন্য নিজের হাতে কেনাকাটা করতে তরুর ভীষণ আনন্দ হচ্ছে। বারবার কৃতজ্ঞ দৃষ্টিতে ফাইজানের দিকে তাকায় তরু।মনে মনে বলে, "আমাকে এতো সুখী করার জন্য তোমার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ ফাইজান।তুমি আমার জন্য যখন এতো কিছু করতে পারছো আমি তোমার জন্য তোমার বাবা মা'য়ের সবকিছু নির্দ্বিধায় মেনে নিতে পারবো।দিন শেষে তোমার ভালোবাসাটা যেনো পাই।"
বাসার জন্য লুসনি কিনে তরু হাসতে লাগলো। কি আশ্চর্য, কখনো কি ভেবেছে এগুলো ও জরুরি হতে পারে। অথচ এখন তরুর কেনার কথা ছিলো মেকাপ,লিপস্টিক, চুড়ি,থ্রিপিস সেখানে তরু কিনছে লুসনি,ছোট বড় বক্স,কন্টেইনার।কিনতে কিনতে অনেক কিছু কিনতে হলো।একটা সংসার ছোট হোক বা বড়, সব কিছুই লাগে।তরু একটা বটিও কিনলো।ছু রি দিয়ে কা টা কু টো করতে তরুর অভ্যস্ত না।
সব কিনে ফিরতে ফিরতে বিকেল হয়ে গেলো। দুপুরের খাবার ও দুজন বাহিরে খেয়েছে।
বাসায় ফিরে ফাইজান বসলো ল্যাপটপ নিয়ে। অফিসের কিছু কাজ পড়ে আছে। ফাইলগুলো আগামীকাল সাবমিট করতে হবে।
তরু সব গোছাতে লাগলো।
কেমন অবিশ্বাস্য লাগছে তরুর এখনো।এখন থেকে এই সংসারে সবকিছু তরুর পছন্দমতো হবে।কোন প্লেটে ভাত খানে,কোন কাপে চা খাবে,কোন তরকারি রান্না হবে,ঝাল বেশি হবে না-কি কম হবে সবকিছুর ক্ষমতা তরুর হাতে।
নতুন কেনা চায়ের কাপ থেকে দুটো কাপ বের করে তরু।মশলা দিয়ে দুই কাপ রঙ চা বানায়।
তারপর একটু আদা কুচি করে চায়ে মিশায় এক্সট্রা।চায়ের মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসতেই ফাইজান ল্যাপটপের স্ক্রিন থেকে চোখ তুলে তাকায়।
তরু জিজ্ঞেস করলো, "রাতের জন্য কি রান্না করবো?"
ফাইজান চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো, "আপনার যা ইচ্ছে মহারানী। "
তরু খিলখিল করে হাসে।বাবা মারা যাওয়ার পর তরু কখনো ভাবে নি কোনো দিন সুখ এসে তার কাছে ধরা দিবে।তরু ভেবেই নিয়েছিলো আজীবন এভাবেই কাটবে তরুর।
এই মানুষটা তরুর জীবনে না এলে এতো সুখ তরু কখনো পেতো না।
তরু উঠে যায়।চাল ডাল মিশিয়ে খিচুড়ি বানাবে,সাথে ডিম ভাজি, পেঁয়াজ মরিচ ভর্তা আর মা'য়ের বানানো রসুনের আচার।
তরু এখনো রান্না পারে না ভালো করে। তাই ইউটিউব দেখেই করছে সব।রান্না করতে করতে তরু ভাবে একদিন সব রান্না শিখবে।ফাইজানের পছন্দের সব খাবার বানাবে ফাইজানের জন্য।
রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে তরু শুনতে পায় ফাইজানের কল এসেছে। ফাইজানের কথা শুনে তরু বুঝতে পারে ফাইজানের বাবা কল করেছে। হঠাৎ করেই তরুর দুই চোখ ভিজে উঠে।
ফাইজানের বাবা মা কেনো এমন করে তরুর সাথে তরু জানে না।অথচ তরু ভেবেছিলো, তার বাবা নেই যেহেতু ফাইজানের বাবা-ই তার বাবা হবে।ফাইজানের মা'কে নিজের মায়ের মতো ভালোবাসবে।
দুজনকে তরু মন ভরে সেবাযত্ন করবে।তাহলে হয়তো বাবার আদর পাবে একটু।একটু পিতৃ স্নেহের জন্য তরুর বুকটা খাঁ খাঁ করে।
মন ভরে যদি একটু বাবা বলে ডাকতে পারতো তরু!
ফাইজানের বাবা মা তরুর সাথে কথা-ই বলে না। তরু কল দিলে রিসিভ করে না।শেষ বার কল দিয়েছিলো তরু তার এসএসসি পরীক্ষার দিন। শ্বশুর শাশুড়ীর থেকে দোয়া চাইতে কল করেছে।
কেউ-ই তরুর কল রিসিভ করে নি। ৬ বার কল করেছে তরু।ভীষণ কষ্ট পেয়েছে সেদিন। বারবার মনে হয়েছে বাবা থাকলে তাও বাবা নিজেই কল করে মেয়েকে ভরসা দিতেন,সাহস দিতেন।
নজরুল আংকেল যদিও কল করেছেন, তরুর জন্য সিএনজি রিজার্ভ করে দিয়েছেন।
দ্বিতীয় পরীক্ষার দিন তরুর হলের বাহিরে এসে অপেক্ষা ও করেছেন। তরুকে বাড়িতে পৌঁছে দিয়েছেন।
তবুও তাকে তো তরু বাবা বলতে পারে না।
তরুর এসব ভাবনার মধ্যে শুনতে পেলো ফাইজান বলছে,"আব্বা,আমার বউকে আমি আমার কাছেই রাখবো।এতে ভাবীরা কি মনে করলো,কি ভাবলো তাতে আমার কিছু আসে যায় না।"
তরু ভয় পায়।এই বুঝি আবারও ফাইজান বাবা মা'য়ের সাথে তাকে নিয়ে ঝগড়ায় লেগে গেলো!
ভয়ে তরুর গলা শুকিয়ে আসে।
কালাম হোসেন বললো, "দেখ বাবা,আমি ও চাই তোর বউ তোর কাছে থাকুক।স্বামী স্ত্রী একসঙ্গে থাকলে দুজনের মধ্যে মিল মোহাব্বত বাড়ে।কিন্তু বাবা জানসই তো,মহিলা মানুষের মনে কতো প্যাচ।তোর মা'কে আজকে রানতে হইছে।তোর ভাইয়ের বউয়েরা কেউ না-কি রানবো না।ওরা কয় এতো বছর তাগো কামাই খাইছি এইবার ছোট পোলার বউয়ের কামাই খাইতে।"
ফাইজান বললো, "আপনারা ঢাকায় চলে আসেন এখানে থাকেন।তাহলে তরু সব করতে পারবে।কিন্তু আমি এখানে,তরুকে বাড়িতে একা কিছুতেই রাখবো না।তরুর এক চুল পরিমাণ ক্ষতি হলে আমি কাউকে ছাড়বো না।"
কালাম হোসেন বললেন, "না রে বাপ,ঢাকা শহরে আমাগো মন টিকবো না।কষ্ট হইলেও আমরা গেরামেই থাকমু তিন পুত, পুতের বউ থাকনের পরেও আমার গিন্নির এই বয়সে রান্দাবাড়া করে খাওন লাগে তাইলে খাইবো।আমি তো পারলাম না আমার গিন্নিরে কোনো দিন শান্তি দিতে।পোলাগোরে দেখলে এখন আফসোস হয়।পোলারা বউগো লগে যেমন ব্যবহার করে কোনো দিন তো আমি এভাবে আমার গিন্নির লগে ব্যবহার করি নাই।একটা মানুষ আমার কাছে আইসা শুধু কষ্ট পাইছে।এখনো আমার লাইগা তারে কষ্ট কইরা রানতে হয়।যাক বাবা,তাওরা সুখে থাক।যার পোলা নাই তাগো কি দিন যায় না?"
কালাম হোসেন কল কেটে দিলেন।সাজেদা স্বামীর পাশে বসে পান খাচ্ছে আর হাসছে।দুই ছেলের বউ রান্নাঘরে। রাতের রান্না করছে।
কালাম হোসেন বললো, "টেকনিক খাটাই কথা কইতে হইবো বুঝলা।"
ফোন রাখার পর ফাইজানের মন খারাপ হয়ে যায়।বাবার কথাগুলো আজকে কেমন নিষ্প্রাণ লাগছে।অথচ সবসময় কেমন রাগ রাগ হয়ে কথা বলতেন।সেই মানুষটার এরকম অসহায় স্বর ফাইজানের বুকে এসে লাগে।
নিজের সুখের কথা ভেবে কি ফাইজান খুব বেশি স্বার্থপর হয়ে গেলো!
কোনটা করবে তাহলে সে!
কেমন হেল্পলেস লাগছে ফাইজানের।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

 Follow Now Our Google News

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৫০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন