উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫০ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫১)
ফাইজান এখনো রুমে আসে নি।তরু রাগ করে এসে বসে আছে। এই অহেতুক রাগ তরুর নিজের সাথে যায় না।তবুও তরু রাগ করে আছে।পরে তীক্ষ্ণ কথার বাণে এ ফোড় ও ফোড় হওয়ার চাইতে আগেই য ন্ত্র ণা সহ্য করা ভালো।
তরু জানে ফাইজানের বাবা মা সুবিধার মানুষ না বলেই ফাইজান তাদেরকে এখানে আনতে ভায় না।তরু জানে সে অযথা এসব নিয়ে কথা বাড়াচ্ছে। জেদ করছে।
পুরুষ মানুষ এই ভালো তো এই মন্দ।আজকে ফাইজানের তরুর প্রতি অগাধ ভালোবাসা, মায়া আছে।কোনো কারণে যদি তরুর সাথে ফাইজানের মতবিরোধ হয়,কথায় না বনে কিংবা তরুর কোনো ব্যবহার পছন্দ না হয় কখনো যাতে ফাইজান আফসোস করতে না পারে যে তরুর জন্য তার বাবা মাকে নিজের কাছে আনতে পারে নি।তরু তাদেরকে আনতে দেয় নি।কিংবা তরু চায় নি তারা আসুক এখানে।
এতো বড় অপবাদ তরু কখনোই মেনে নিবে না।তরু ফাইজানকে সেই সুযোগ দিতে চায় না কিছুতেই।তাই আগেই জেদ করছে তাদেরকে আনার জন্য। যাতে কখনো ঝামেলা হলেও ফাইজানের মনে হয় তরু চেয়েছিলো ওনারা আসুক,ফাইজান চায় নি।
ফাইজান রুমে এলো এক কাপ চা নিয়ে।
তরু বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। বাহিরে রিকশা,বাইকের আসা যাওয়ার শব্দ। তরু অপলক তাকিয়ে আছে সেদিকে।
ফাইজান চায়ের কাপ রেলিঙের উপর রেখে তরুকে কাছে টেনে নেয়।তরুর চুলে নাক ডুবিয়ে দিয়ে বলে, "তরু,কেনো এরকম জেদ করছো বলো?তুমি যদি ভেবে থাকো জেদ দেখালে সব আমি মেনে নিবো তাহলে প্লিজ এই ধারণা থেকে বের হয়ে আসো।আমি আগে তোমার সুরক্ষা নিশ্চিত করতে চাই।কোনো মানুষ অথবা কোনো জিনিস যদি তোমাকে কষ্ট দেয় আমি তাকে তোমার চৌহদ্দিতেও আসতে দিবো না তরু।আমার বাবা মা হোক আর যে-ই হোক।"
তরু মাথা নিচু করে রইলো।ফাইজান আবারও বললো, "এই শহরে অনেক মানুষ একাই থাকে তরু।হাজব্যান্ড অফিসে গেলে বাসায় তারা একা।যত একা থাকবে ভালো থাকবে তরু।তাছাড়া কিছুদিন পর তোমাকে কলেজে ভর্তি করিয়ে দিবো।তারপর পড়ালেখা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যাবা।তখন নতুন নতুন বন্ধুবান্ধব হবে।সময় কেগে যাবে।তুমি যদি চাও এখন এই সময়টা কাজে লাগাতে পারো।কোনো কম্পিউটার কোর্স কিংবা ফ্রিল্যান্সিং শিখতে পারো।
সেলাই শিখতে পারো, হাতের কাজ শিখতে পারো, রান্নার কোর্স করতে পারো,ব্লক বাটিক শিখতে পারো। সময় কাজে লাগানোর অনেক অপশন আছে তরু,কারো ফরমায়েশ শুনে, সেবা যত্ন করে, কটু কথা শুনে কেনো সময় কাটাতে হবে তোমার? "
তরু মনে মনে ভাবে এই মানুষটার চিন্তা ভাবনা কি সুন্দর অন্যরকম!
আসলেই তো,এই অলস সময়টাকে চাইলেই তো তরু উপযুক্ত কাজে লাগাতে পারে। তরু সিদ্ধান্ত নিলো রান্নার কোর্স শিখবে।ফাইজানকে জানাতেই ফাইজান বললো, "অনলাইনে অনেক কোর্স আছে,আমি কয়েকটা দেখে তোমাকে জানাচ্ছি। তুমি দেখো কোনটা ভালো লাগে তোমার। আর চা খেয়ে নাও,ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে। "
ফাইজান চলে যেতেই তরু চায়ের কাপে চুমুক দেয়।চা ভালো হয়েছে।
তরু জীবনের হিসেব-নিকেশের খাতা খুলে বসে।জীবন তাকে অনেক কিছু দিয়েছে, আবার অনেক কিছু কেড়ে ও নিয়েছে। তবুও তরু সন্তুষ্ট। জীবনের প্রতি কোনো অভিযোগ তরু করে না।যা হারিয়েছে তাতে হয়তো মঙ্গলের চাইতে অমঙ্গল হওয়ার আশংকা বেশি ছিলো। দূর থেকে যেটাকে সুন্দর বলে ভাবছে কাছে গেলে হয়তো তাই হতো জীবনের সবচেয়ে বড় অভিশাপ।
তরুর সবসময় প্রার্থনা এটাই যেটা তরুর জন্য সর্বোত্তম হবে তাই যেনো হয় জীবনে।
ফাইজানের ডাকে তরু ভাবনার জগৎ থেকে বের হয়।ফাইজান ডেকে তরুকে কয়েকটা কোর্স সম্পর্কে জানায়।তরু কিছুক্ষণ ডিটেইলস পড়ে কোর্সের।
সব দেখে সিদ্ধান্ত নেয় চাইনিজ এন্ড থাই কোর্স করার।
কিন্তু কোর্সের ফি দেখে তরুর মন খারাপ হয়ে যায়। প্রায় ২০ হাজার টাকা কোর্স ফি।
ফাইজান দ্রুত হিসেব করে। নতুন সংসার গোছাতে গিয়ে অনেক টাকাই খরচ করতে হয়েছে। হাতে নগদ টাকার টান পড়ে যাবে কিছুটা।
তরু কিছুক্ষণ ভেবে বললো, "আচ্ছা, এখন আপাতত বাদ দিই।আমি আগে একটা বেসিক কুকিং কোর্সে অংশ নিই।তারপর ডিটেইলে শিখা যাবে।শুরুতেই এতো বড় কিছু আমার মাথায় ঢুকবে না আসলে। "
ফাইজান তরুর দিকে তাকায়। তরু কি ফি এর কথা চিন্তা করে এই কথা বলছে?
ফাইজানের চোখের দিকে তাকিয়ে তরু বুঝতে পারে ফাইজানের ভাবনা।নিজেই বলে, "না না,তুমি ভেবো না ফি এর জন্য আমি এটা বলেছি।আমার তো রান্নার কিছুই জানা নেই বেসিক না জানলে আমি তো পুরোপুরি বুঝতে পারবো না ব্যাপারটা। অ আ না শিখে নি আমি শব্দ তৈরি করতে পারবো?হাতেখড়ি দিতে হবে তো আগে।"
ফাইজান হেসে বলে, "তরু,যা-ই বলো।আমি তোমার স্বামী। তোমাকে একটু হলেও বুঝি।সত্যি বলতে এই মুহূর্তে ২০ হাজার টাকা আমার জন্য একটু কষ্টকর হয়ে যেতো।আমি জানি তুমি ও এয়াতা ভেবেই না করেছো।আমাকে দুটো মাস সময় দাও,আমি দুই মাস পরেই তোমাকে এই কোর্সে এডমিট করিয়ে দিবো।"
তরু এগিয়ে গিয়ে ফাইজানের গলা জড়িয়ে ধরে বলে, "ফাইজান,আমাকে পর ভেবো না কখনো। তুমি আমার পর কেউ না,তুমি আর আমি দুজনেই এখন এক হয়ে গেছি।তোমার যেকোনো অসুবিধা, ফিন্যান্সিয়াল ক্রাইসিসের কথা যদি আমার কাছে বলতে তোমার দ্বিধা হয়,যদি তোমার মনে হয় তুমি বললে ছোট হয়ে যাবে তবে মনে রেখো আমি হয়তো তোমার আপন হতে পারি নি।আমাদের সব সমস্যা আমরা একসাথে সমাধান করবো।আমাকে নিশ্চিন্তে রাখতে গিয়ে সব চাপ তুমি মাথায় তুলে নিও না।আমি সাহায্য করতে না পারি,সমস্যার সমাধান করতে না পারি তোমাকে একটু ভরসা তো দিতে পারবো।"
ফাইজান বউয়ের গালে চুমু খেয়ে বলে, "তরু তুমি সারাজীবন এইভাবেই আমার পাশে থেকো।"
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন