উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫২)
আজকে তরুর পরীক্ষার ফলাফল জানাবে।বাহিরে ঝকঝকে নীল আকাশে সাদা মেঘেরা ছুটোছুটি করছে।আজ যেনো পুরো পৃথিবী জুড়ে নিরবতা। তরুর দুই চোখে উৎকণ্ঠার ছায়া।থেকে থেকে চমকে উঠছে আপনমনেই।
একটু পর পর গিয়ে পানি খাচ্ছে। হাত পা যেনো অবশ হয়ে আসছে।বুকের ভেতরের ধুকধুকানি স্পষ্ট শুনতে পাচ্ছে তরু।
এতো ভয় লাগছে কেনো তরু বুঝতে পারছে না।এই মুহূর্তে ফাইজান থাকলে তরু ফাইজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখতো।ফাইজান নিশ্চয় তরুর সব ভয় দূর করে দিতে পারতো।এতো দিনে তরু এটুকু ঠিকই বুঝেছে যে ফাইজান তার জাদুর কাঠি। যাকে ছুঁলেই তরুর সব সমস্যা সমাধান হয়ে যায়।
ফাইজান লাঞ্চের সময় ছুটি নিয়ে চলে এলো।তরুর রেজাল্ট পেয়েছে মাত্রই।তরু ৪.৬৭ পেয়েছে। বউয়ের পরীক্ষার ফলাফল দিয়েছে, মিষ্টি খাওয়াবে না বউকে তা তো হয় না।
মিষ্টি কিনতে গিয়ে ফাইজানের মন খারাপ হয়।তরুর পরীক্ষার সময় তরুর উপর দিয়ে অনেক ঝড় গিয়েছিলো।ফাইজানের জন্যই তো তরু পুরোপুরি ভেঙে পড়েছিলো সেই সময়। ফাইজান যদি সেই সময় তরুর সাথেই থাকতো তাহলে তরুর রেজাল্ট আরো ভালো হতে পারতো।
অপরাধবোধে ফাইজানের ভীষণ অনুতাপ হতে লাগলো। নিজের উপর প্রচন্ড ক্ষোভ জন্মায় হুট করেই।তরু কি ফাইজান কে কখনো ক্ষমা করতে পারবে?
এক্সট্রা চাবি দিয়ে ফাইজান ভেতরে ঢুকে।ইচ্ছে করেই তরুকে ডাকে নি।তরুকে চমকে দিতে চেয়েছিলো।
ভেতরে এসে দেখে তরু ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে আছে।ফাইজানের কেমন মায়া হলো হঠাৎ করে। একটা মানুষ তাকে ভালোবেসে সব ছেড়ে এসেছে। তাকে ভালোবেসে সব বাদ দিয়ে দিয়েছে।তাকে ভালোবেসে পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে।
ফাইজান কি করে সেই মানুষকে কষ্ট দিবে?
তরুর চুলে হাত বুলিয়ে দিতেই তরু লাফিয়ে উঠে। ভীষণ ভয় পায় তরু ফাইজানের এই আচমকা আগমনে।
হুট করে ফাইজানকে দেখে বুকের ভেতরের ঝড় যেনো আরো মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। ফাইজানকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে তরু।কেঁদে ফেলে অজানা কষ্টে।
ফাইজান কপালে চুমু খেয়ে বললো, "তুমি পাশ করেছো তরু,৪.৬৭ পেয়েছো।"
তরুর বুকের ভেতর কোথায় যেনো অদৃশ্য কাঁটার খোঁচা লাগে। লতার কথা মনে পড়ে যায়। লতার রেজাল্ট কি?
ফাইজানকে বলে লতার রেজাল্ট দেখতে।
লতার রেজাল্ট ৩.০০.
তবুও তরুর স্বস্তি লাগে।লতা যে ফেইল করে নি এতেই তরুর শান্তি।
লতা যদি ফেইল করতো তরুর চাইতে কষ্ট কারো বেশি হতো না।তরু নিজেই নিজের কাছে অপরাধের হয়ে থাকতো তাহলে।
তরু মা'কে কল করে রেজাল্ট জানায়।রাবেয়ার সাথে কথা বলার পর তরু নজরুলকে ও কল করে।
নজরুল তরুর কল পেয়ে ভীষণ আনন্দিত হয়।
তারপর শ্বশুর বাড়ি কল করে ফলাফল জানায়।কালাম হোসেন থমথমে সুরে বললো, "পাশ করছো ভালো লাগছে শুনে।এবার সংসারে মন দাও।"
সাজেদা ফোন কেড়ে নিয়ে বললো, "শুনো তরু,পড়ালেখা যা করনের বাপ মা'র কাছে করছো।এখন শ্বশুর বাড়ি আইছো,কাম কাইজ করবা।মাইয়া মাইনসের এতো পড়নের কাম নাই।পইড়া তো আর হাতি ঘোড়া হই যাইবা না তুমি, সেই পাতিল মাজবা,পোলাপাইনের পটি পরিস্কার করবা।তোমারে তো আমরা চাকরি করামু না।অযথা আমার পোলার টেকা পয়সা নষ্ট করিও না ওইখানে থাইকা।"
অপমানের সূঁচ তীব্র খোঁচা দিলো তরুকে।সহ্য হলো না এই ধরনের অহেতুক খবরদারি। নিজের আসল রূপ যেনো বের হয়ে আসতে চাইলো।তরু দাঁত দিয়ে ঠোঁট কামড়ে ধরে ও নিজের মুখটা সামলাতে পারলো না।তাই হেসে বললো, "আম্মা,আমাকে চাকরি করাবেন না আপনি, এইটা তো আপনার সিদ্ধান্ত না।এটা পুরো আমার সিদ্ধান্ত। আমি চাকরি করবো না ঘরে বসে থাকবো আমি ঠিক করবো।আর পড়ালেখা, তা তো আমি করবোই আম্মা।পড়ালেখা করে পাতিল মাজার আর অশিক্ষিত হয়ে পাতিল মাজার মধ্যে পার্থক্য আছে। সেই পার্থক্য মূর্খ মানুষ বুঝে না।
বাচ্চার পটি পরিস্কার করার জন্য আজকাল মানুষ যে-ই ন্যানী রাখে না আম্মা,তাদের ও শিক্ষিত হতে হয়।আপনি হয়তো জানেন না, নেপোলিয়ন বলেছিলো।যদিও আপনি নেপোলিয়নকে চিনবেন না।আপনার কাছে নেপোলিয়ন যা আমার শ্বশুর আব্বা ও তা।তবুও বলি,নেপোলিয়ন বলেছে, আমাকে শিক্ষিত মা দাও আমি তোমাকে শিক্ষিত জাতি দিবো।
আর আপনার ছেলের টাকা পয়সার উপর আমার হক সবার আগে।আমার জন্য যা খরচ করবে তা সদকা হিসেবে গন্য হবে।তাই হিংসা না করে আব্বাকে বলুন নিজের সওয়াব পেতে চাইলে আপনার জন্য ও যাতে খরচ করে একটু।"
সাজেদা বজ্রাহতের ন্যায় তাকিয়ে রইলো স্বামীর দিকে।কালাম হোসেন সব শুনলেন।এই মেয়েটাকে তিনি বোকাসোকা ভেবেছেন,ভীতু ভেবেছেন।এখন মনে হচ্ছে তার ভুল ভেবেছেন।এই মেয়ে ভালোই প্রতিবাদ করতে জানে।
এর সাথে অন্যভাবে খেলতে হবে।
ফাইজান মিটিমিটি হাসছে তরুর দিকে তাকিয়ে। তরু ঠোঁট কামড়ে বললো, "সরি।আমি জানি আমার এই ব্যবহার করাটা উচিত হয় নি।তবুও করে ফেললাম।আমার আসলে ভেতর থেকে বের হয়ে আসছে। "
ফাইজান বললো, "বসো,এবার মিষ্টি মুখ করবে না?"
ফাইজান তরুকে প্রথম মিষ্টি খাওয়ালো।তরু ফাইজানকে মিষ্টি খাওয়াতে গেলে ফাইজান মুখ সরিয়ে নেয়। দুষ্ট হাসি দিয়ে বলে, "এই মিষ্টি যে আমার হবে না জান,আমি অন্য কিছু চাই।"
তরুর হাত পা কেঁপে উঠে শুনে। এগিয়ে যায় ফাইজানের দিকে। ফাইজানের ঠোঁটের কাছে নিজের ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে ফিসফিস করে বলে, "সময় হোক তারপর। "
ফাইজান চট করে চুষে নেয় প্রিয়তমার দুই ঠোঁট।তরু কিছু বলার বা প্রতিবাদ করার সুযোগ পায় না।কিংবা ইচ্ছে করেই প্রতিবাদ করে না।
এই মানুষটা তার।একান্ত তার নিজের একটা মানুষ। কিসের রাখঢাক তার কাছে?
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন