উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৪)
ফাইজান এক মুহুর্তের জন্য তরুকে হাতছাড়া করতে চাচ্ছে না।সাজেদা এগিয়ে এসে তরুকে জড়িয়ে ধরে। কাঁদো কাঁদো হয়ে বলে, "তোমার লগে রাগের মাথায় অনেক খারাপ ব্যবহার করছি মা।মনে কিছু রাইখো না।আমি তোমার নিজের মা হইলে কি এরকম রাগ করে থাকতে পারতা?"
তরু ফাইজানের দিকে তাকায়। ফাইজান তরুর দিকে তাকিয়ে ইশারা করে। তরু ইশারার মানে বুঝে।আসার আগে পথে ফাইজান তাকে ব্রিফ করেছিলো।
সাজেদা তরুকে হাত ধরে টেনে নিয়ে গেলেন সবার মাঝে।নিজের মেয়ে,বউ, বোন,বোনঝি সবার মাঝে নিয়ে গেলো।
ফাইজান দেরি না করে নিজেও ভিড়লো মহিলাদের আসরে।
ফাইজানের বড় ভাবী,মেজো ভাবী দুজনেই তরুকে দেখে মনে মনে বিরক্ত হয়।এতো বছর বিয়ে হয়ে আসার পরেও শ্বশুর শাশুড়ীর ভয়ে একটা টুঁশব্দ করতে পারে না।
না পায়ে হাজব্যান্ডদের কাছে,আর না পায় হাজব্যান্ডদের ভালো ব্যবহার। দুজনের স্বামীই স্ত্রীর সাথে কথা বলে তিন চার দিন পর পর।
দুই ভাই-ই দেশের বাহিরে দীর্ঘ সময় ধরে আছে।কেউ-ই দেশে আসতে চাচ্ছে না।আবার মাঝেমধ্যে তারা চাইলেও কালাম হোসেন স্পষ্ট নিষেধ করে দেন।
সেখানে তরুর কি ভীষণ শান্তিতে আছে।
তাকে তার স্বামী চোখে হারায়।বউকে শহরে নিয়ে রাখছে নিজের কাছে রাখার জন্য।
তরুকে কোনো কষ্ট ছুঁতে পারে না আর তারা দুই জা বাবার বাড়ি ও যেতে পারে না।৩ মাস পর গিয়ে ১ সপ্তাহ বেড়িয়ে আসে।
ভীষণ রাগ হয়।
তরুর বড় ননদ তরুকে কিছু বলার আগেই সাজেদা মেয়েকে চোখ রাঙায় সবার অলক্ষ্যে।
যা করার এবার থেকে সাবধানে করতে হবে।আর ভুল চাল দিবেন না বোকার মতো।
তাই সবাই তরুর সাথে হাসিমুখে কথা বলে। ফাইজান এসে একটা চেয়ারে বসে পড়ে। ফাইজানের খালাতো বোন বললো, "কিরে তুই মহিলাদের মাঝখানে বসে আছিস কেনো?"
ফাইজান হেসে বললো, "আমার নিজের মহিলা এখানেব্যে,তাই আমি ও এখানে।"
সবাই হেসে উঠে শুনে।সাজেদা হেসে বলে, "আমার এই পোলাডা এতো বউ পাগলা হইছে রে।আল্লাহ মানিকজোড় সারাজীবন যাতে এই রকমই রাখে।বড় দুই পোলা বউগো লগে খারাপ ব্যবহার করে, তবুও ছোট পোলা আর বউয়ের মিল মোহাব্বত দেখলে মনে শান্তি পাই।"
তরু চমকে উঠে শাশুড়ীর কথা শুনে ।ফাইজান বিরক্ত হয়।এরা এতো অভিনয় কেনো করে কে জানে!
ফাইজানের খালা বললো, "কতো কাজ পইরা আছে তুই কাজ না কইরা এইখানে বইসা থাকবি?"
ফাইজান বললো, "খালা,তরু তো এইখানে কাউরে তেমন চেনে না,ওর একা একা লাগবে আমি না থাকলে।ও অস্বস্তিতে পড়বে।। তাই আমি যাচ্ছি না কোথাও।"
ফাইজানের বড় বোন পান্না বললো, "আমরা এতো গুলো মানুষ আছি,আমরা বুঝি আমার ভাইয়ের বউয়ের খেয়াল রাখতে পারবো না?তুই ছাড়া ওরে কি আমরা কেউ ভালোবাসি না?"
তরুর ভীষণ অস্বস্তি হচ্ছে এসব কথাবার্তা শুনে। তাছাড়া ফাইজানের দুই ভাবী তরুকে দেখেই মুখ অন্ধকার করে ফেলেছে।তরু ফাইজানের থেকে অনেক কিছুই শুনেছে।মনে মনে তাদের জন্য তরুর ভীষণ খারাপ লাগা কাজ করে। তরুর এখানে আসার বড় কারণ ছিলো এই দুইজনের সাথে কথা বলা।তারা কেমন মুখ গোমড়া করে রেখেছে। ফাইজানের এসব কথা তাদের কষ্ট আরো বাড়িয়ে দিচ্ছে তরু বুঝতে পারছে।
তাই তরু বললো, "তুমি যাও,আমি মা,আপা,ভাবীদের সাথে থাকি।আমার অসুবিধা হবে না।"
ফাইজান বিরক্ত হয়ে বললো, "তোমার সুবিধা অসুবিধা যদি তুমি নিজে বুঝতে তাহলে তো তোমাকে আমার পাজরের হাড় দিয়ে তৈরি করতো না।আমার পাজরের হাড় দিয়ে তৈরি করেছে মানে,দায়িত্ব আমার। "
তরু আর কথা বাড়ায় না।এই লোকটা কি থেকে কি বলে বসে কে জানে!
ছাদে গায়ে হলুদের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবাই মিলে ফল কাটছে হলুদের জন্য। তরুও বসে পড়লো একটা ছোট পাতলা চা কু খুঁজে নিয়ে।সবাই কাজ করবে সে বসে থাকবে ব্যাপারটা ভালো লাগে না।
একটা লাউ দিয়ে ফ্রুট কার্ভিং করতে লাগলো তরু নিখুঁতভাবে।
ফাইজান অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করতে লাগলো। তরু মাথা নিচে করে এক নাগাড়ে বসে রইলো।প্রায় দুই ঘন্টা পর তরু মাথা উপরে তোলে।ততক্ষণে লাউটা একটা ফুলের ঝুড়ির রূপ নিয়েছে।
সবাই অবাক হয়ে গেছে দেখে। পান্না একটা তরমুজ এগিয়ে দিয়ে বললো, "তরু,এটাকেও এরকম করে দাও।"
তরু হাত পেতে তরমুজ নিতে যেতেই ফাইজান ধমকে উঠে বললো, "মাথা খারাপ নাকি আপা?এটা করতে তরুর দুই ঘন্টা লাগছে।ওর ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। এখন আর ও পারবে না।"
তরুর আসলেও ঘাড় ব্যথা হয়ে গেছে। কিন্তু কে কি মনে করবে এই ভেবে কথা বললো না।
পান্নার মুখের রঙ বদলে গেলো মুহুর্তেই।ফাইজান তরুকে উঠিয়ে নিয়ে আসে পান্নার শাশুড়ীর রুমে।এই রুমে ভীড় নেই।তরুর ঘাড়ে বাম মালিশ করে দেয় পান্নার শাশুড়ীর থেকে নিয়ে।
তরুর হুট করেই কেমন বুকের ভেতর মোচড় দিয়ে উঠে। রাগ করে যদি এই মানুষটাকে সে হারিয়ে ফেলতো,এই ভালোবাসা, এই যত্ন ও কোথায় পেতো?
ফাইজান মালিশ করছে আর তরুকে বকাবকি করছে কেনো এতো সময় ধরে এই কাজ করতে গেলো।
ফাইজান তরুকে নিয়ে উঠে যেতেই সাজেদা পান্নাকে ফিসফিস করে বললো, "একটু কষ্ট করে কয়েকটা দিন অভিনয় কর।এই মাইয়ারে আমি দুনিয়া থাইকাই বিদায় করমু।এখন একটু ভালো মানুষের ভাব ধরে চলা লাগবো আমাদের। "
পান্না বিরক্ত হয়ে বললো, "তোমার পোলা বেশি বাড়াবাড়ি করে আম্মা।আর এই মাইয়ার অতীত কি আমরা জানি না?ওর মারে তো ওর চাচী কামের বেটি কইরাই রাখছে তাদের বাড়িতে।সেই ঘরের মাইয়া ও,এইটুকু কাজ করলে কি হাত খসে পরতো?"
পান্নার ছোট বোন রুনা বললো, "আপা,এই মাইয়ারে তুই এরকম আলাভোলা ভাবিস না।ওর মারে ওর ছোট চাচী কামের বেটি বানালেও ওরে পারে নাই।উল্টো ও ওর চাচীরে চাপে রাখতো ওর মা'র বিয়ে হয়ে যাওনের পর থেকে।
মেয়েটা পাক্কা শয়তান। দেখস না আসছে থেকে আমি একটা ও কথা বলি নি,আমার তো সম্পর্কে মামাতো ননদ হয়।"
সাজেদা বললো, "যতোই চালাক হোক,আমার লগে টেক্কা দেওন এতো সোজা না বুঝলি।দেখিস আমি এই তরুর কি হাল করি এবার। "
তরু শাশুড়ী ননদের কাছে আসতে যাচ্ছিলো। দরজার বাহিরে দাঁড়িয়ে এই কথাটা শুনে থমকে দাঁড়ায়। পরমুহূর্তে হেসে উঠে। ওরা ও তরুকে চেনে না।তরু সিদ্ধান্ত নিলো ওরা কি করতে চায় তরু দেখে ছাড়বে।
তরু আপাতত এদিকে না ঢুকে নিজের জা দের খুঁজতে গেলো।বিয়ে বাড়িতে এসেও যদি ফাইজানের সাথে চিপকে থাকা লাগে তাহলে আর বিয়ে বাড়ির আনন্দ করবে কখন!
ফাইজান তো সারাদিন থাকে।এদেরকে কি সবসময় পাবে!
ফাইজান তরুর পিছনে ছুটলো নিঃশব্দে, অলক্ষ্যে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন