উপন্যাস : কেয়া পাতার নৌকা
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২২ই ফেব্রুয়ারী, ২০২৪ ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “কেয়া পাতার নৌকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২৪ সালের ২২ই ফেব্রুয়ারী থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান |
৫২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
কেয়া পাতার নৌকা || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ৫৩)
রেজাল্টের এক সপ্তাহ পর কালাম হোসেন কল দিলেন ফাইজানকে। ফাইজান অফিসে যাওয়ার জন্য তৈরি হচ্ছে। তরু পাশেই দাঁড়িয়ে আছে ফাইজানের জন্য লাঞ্চ নিয়ে। ফাইজান এখন আর অফিসে লাঞ্চ করে না।নিজের বউয়ের রান্না করা নুন কম,ঝাল বেশি রান্না খেতেই ভালো লাগে তার।
ভালোবাসা ব্যাপারটা এমনই। যাকে ভালোবাসে মানুষ তার সবকিছুতেই মুগ্ধতা খুঁজে পায়।
ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা বিস্কুটের গুড়োগুলো ফাইজান ভীষণ যত্ন নিয়ে মুছে দিলো যেনো একটু জোরে লাগলেই টলমল হয়ে যাবে দুই আঁখি।
চোখের ওই কাজলকে ফাইজানের নেশা মনে হয়। ইচ্ছে করে তরুকে বুকের সাথে পিষে ফেলতে পরম ভালোবাসায়।
ফোন বেজে উঠতেই ফাইজান তরুর দিকে তাকায়। আব্বা মা'র কল ফাইজান এড়িয়ে যেতে চায়।তরু বললো, "ইগনোর করবে না,রিসিভ করো।"
ফাইজান কাতর সুরে বললো, "প্লিইইজ তরু,জানোই তো একটা না একটা ঝামেলার কথা বলবেই।অযথা প্যারা নিতে ইচ্ছে করছে না।"
তরু বললো, "না,রিসিভ করুন। তুমি ওনাদের ছেলে।তুমি ওনাদের সাথে কথা না বললে ওনারা কষ্ট পাবেন।তাছাড়া ভাবতে পারেন তুমি কথা না বলার পেছনে ও আমার হাত আছে।"
ফাইজান গোমড়া হয়ে কল রিসিভ করে।
কালাম হোসেন উচ্ছ্বসিত হয়ে বললো, "ফাইজান,আগামী কালকে বউরে নিয়া বাড়িতে চলে আসো।তোমার বড় বোনের মেয়ের বিয়ে ঠিক করছি। শুক্রবার বিয়ে।"
ফাইজান ইতস্তত করে বললো, "আব্বা,আগামীকাল কেমনে যাবো আমি?আমার এমনিতে নতুন চাকরি,তার উপর তরুর ভর্তি হতে হবে।আমি বৃহস্পতিবার আসবো।"
কালাম হোসেন বিরক্ত হলেন।এই ছেলেটা এরকম ভেড়া হয়ে গেলো কেনো কে জানে!
তার ছেলে হয়ে এরকম বউয়ের আঁচল ধরে ঘুরে এটা কালাম হোসেনের পছন্দ না।তাছাড়া মাথায় অন্য প্ল্যান ও আছে। এখন মাথা গরম করা চলবে না।
তাই শান্ত সুরে বললো, "কি কস তুই? তুই কি দূরের মানুষ যে বিয়ের এসে দাওয়াত খাবি শুধু। তোর বোনঝির বিয়ে, তোর কোনো দায়িত্ব নেই?তোর বড় ভাইয়েরা দেশের বাহিরে,একমাত্র মামা তুই এখন ওর।ওর কোনো ভাই আছে?
তুই যদি না থাকস তাহলে কে সবকিছুর আয়োজন করবো?আমার পক্ষে কি সম্ভব এই বয়সে দৌড়ঝাঁপ করা?তোর দুলাভাইরে চিনস না কেমন হাবাগোবা লোক।উত্তরে বললে দক্ষিণে যায়।ওই লোকের উপর ভরসা করা যাইবো?"
ফাইজান ইতস্তত করে বলে, "আব্বা,আমাকে ছুটি দিবে না এখন।"
কালাম হোসেনের কন্ঠে হতাশা ফুটে উঠলো।কালাম হোসেন বললেন, "ঠিক আছে।না পারলে তো জোরাজোরি নাই।ওগো কপালে যা আছে তাই হইবো।আমার পক্ষে আর কতদূর করা সম্ভব। আমার মাইয়ার মুখ ছোট হইলে হইবো।তোরা এখন বিয়া সাদী করছস,এখন আর বোইনের জন্য আগের মায়া মোহাব্বত থাকবো না এইটা পুরান কথা। "
ফাইজান বিরক্ত হয়ে বললো, "সব কিছুতে আমার বিয়ে,আমার বউকে টানবেন না আব্বা।এসব আমার পছন্দ না।"
"এখন তো আমার তোগো পছন্দ মতো চলতে হবে।তোরা এখন কামাই রুজি করস বাপেরে আর লাগে না।বাপেরা যখন কামাই করে তখনও পোলাপাইনদের কথা শুনতে হয়,তাদের খুশি করতে হয়।আবার বাপ যখন বেকার ঘরে বসে থাকে তখনও পোলাপাইনদের কথা শুনতে হয় তাগো টাকা পয়সা পাইতে হইলে।"
ফাইজানের ভীষণ রাগ লাগে এরকম ফালতু সেন্টিমেন্ট দেখালে।ফাইজান জানে বাবা মা'য়ের একটা অস্ত্র এই ধরনের কথাবার্তা।
একটা সময় ফাইজান ও এই ফাঁদে পা দিতো।
কিন্তু এখন আর দেয় না।ধোঁকা খেতে খেতে সতর্ক হয়ে গেছে। তাই বললো, "আব্বা,আমি এখানে অন্যের অফিসে কামলা দিই।আমার বাপের অফিস না যে আমার কথামতো চলতে পারবো।আমি জয়েন করেছি এখনো ৬ মাস হয় নি।সব কিছুর একটা নিয়ম থাকে আব্বা।আবেগ দিয়ে সব চলে না। "
কালাম হোসেন রাগ করে কল কেটে দিলেন।
ফাইজান তরুকে বললো, "সাবধানে থেকো।আমি আসছি।"
তরু ফাইজানকে বিদায় দিয়ে নিজের কাজ নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যায়।
কালাম হোসেন ভেবেছিলেন ফাইজান বিয়ের আগে আসবে মুখে যতই না বলুক।তার কথা ফেলতে পারবে না।কিন্তু ফাইজান এলো না।বৃহস্পতিবার লাঞ্চের পর অফিস ছুটি হয়।বৃহস্পতিবার রাত ৭ টায় ফাইজান তরুকে নিয়ে বাড়িতে এলো।
তরুর কেমন ভয় লাগছে।মন ভীষণ কু ডাকছে।যেনো কোনো আসন্ন বিপদের মুখে পড়তে চলেছে সে।
ফাইজান শক্ত করে তরুর হাত চেপে ধরে।
তরুর হাত ধরে রাখতে দেখে সাজেদা তার বড় বোনকে দেখিয়ে ফিসফিস করে বললো, "দেখলেন আপা,কেমন খিঁচ মাইরা ধইরা রাখছে বউরে?যেনো রানী এলিজাবেথ ওর বউ।সারাদিন বউরে নিয়া এরকম করে। এরকম বেহায়া বেলাজ মাইয়া,আমার পোলারে এক মুহুর্তের জন্য ও ছাড়ে না।পোলারে হাতের মুঠায় ঢুকাই রাখছে।"
সাজেদা বড় বোন রাশেদা বললো, "তাবিজ করছে রে বোইন।আমার ছোট পোলাটাও।সারাদিন বউ বউ করে। তাবিজ না করলে এরকম হইতো না।"
সাজেদা বললো, "তাবিজ কাটাইয়া,উলটা তাবিজ করলে কেমন হইবো আপা?"
রাশেদা গলার স্বর খাদে নামিয়ে বললো, "শুধু তাবিজ না,বান মারন লাগবো।আপদ একেবারে বিদায় হইবো তাইলে।আমি করছি ছোট পোলার বউয়ের লাইগা সপ্তাহ খানেক আগে।বান মার।দেখবি খেলা তাইলে।"
সাজেদা সিদ্ধান্ত নেয় তাই করবে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
Follow Now Our Google News
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৫৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
রাজিয়া রহমান’র গল্প ও উপন্যাস:
- শালুক ফুলের লাজ নাই
- তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর
- তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
- তুমি অপরূপা
- কেয়া পাতার নৌকা
- শালুক ফুল
- চন্দ্রাণী
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন