উপন্যাস : ভাঙা বোতাম
লেখক : ঋক্ষ/এফ এ শাহেদ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
এফ এ শাহেদ (ঋক্ষ)র “ভাঙা বোতাম” শিরোনামের এই উপন্যাসটি তার অনুরোধক্রমে কবিয়াল ডট কমে প্রকাশ করা হল। আজ প্রকাশিত হলো এই উপন্যাসটির ৪র্থ পর্ব।
![]() |
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ (৪র্থ পর্ব) |
ভাঙা বোতাম || ঋক্ষ
৪র্থ পর্ব
স্টিমারটি এখন শান্তু জলে ঠাঁয় দাড়িয়ে আছে। পুরো জলযানটি জুড়ে ভায়োলিনের গভীর সুরে আছন্ন। অন্যদিকে রাতের গভীরতার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সমুদ্রের অপূর্ব সৌন্দর্য্য।
সুইমিংপুলের ধারের বেঞ্চে অর্কের কোলে মাথা রেখে জোৎন্সা বিলাশে ভেসে যাচ্ছে অপূর্ব সুন্দরী। তার পান পাতার মত মুখের উপর পটল চেরা নীল চোখ যেন গভীর সমুদ্রের মত সিমাহীন আবেগভরা। টিকালো নাকের সাথে, হাসলে যে টোল পড়ে তার গালে তা সমুদ্রের গভীর খাতের চেয়ে বেশি রহস্যময় সৌন্দয্য জড়ো করে। মাঝারি গড়নে লম্বা শরীরের নিটোল অবয়বের সাথে সুঢৌল বক্ষ, তার যৌবনের মাতাল প্রতিচ্ছবি মেলে ধরে। চাঁদের আলো তার আধখোলা দুধে-আলতা শরিরে পড়তেই, রুপ-যৌবন আরো শহস্র গুনে বেড়ে অর্কের চোখ ধাদিয়ে দিচ্ছে।
স্টিমারের ক্যাপ্টেনের কক্ষ থেকে ভেসে আসছে বহুলপ্রত্যাসিত সুন্দরী নয়ীকা ও ক্যাপ্টেনের সম্মিলিত হাসির আওয়াজ। বিশাল বঙ্গোপসাগরের বুকে স্টিমারটি এখন নারকেলের খোলের মত দেখাচ্ছে। সেটি যেন ভাবলেসহীন ভাবে ভেসে যাচ্ছে কোন এক অজানা গন্তব্যে। যেখানে পৃথিবীর ধরাবাধা কোন নিয়মনীতির বালাই নেয়।
স্টিমারটি মন্থর গতিতে এগিয়ে চলছে ছেড়া দ্বীপের উদ্দেশ্য। ওদের স্টিমারটি এখন যেখানে, সেখান থেকে আবছা দেখা যাচ্ছে সেন্ট মার্টিনের দক্ষিণ-পূর্বদিকের বিস্তৃত লেজের মতো অংশটি। শেষ রাতে যে জোয়ার উঠবে সেটাকি ঢাল করেই স্টিমারটি সেন্টমার্টিনের দক্ষিণে প্রায় ৪০০ বর্গমিটারের জনশূন্য ছেড়াদ্বীপটিতে নৌগর ফেলবে ওটা। সেন্টমার্টিন থেকে ভাটার সময় এই দ্বীপে হেটেই যাওয়া যায়, তবে জোয়ার এলে নৌকা প্রয়োজন হয়।
অর্ক অপলক চেয়ে আছে ওর কোলে শুয়ে থাকা নারীর দিকে। সে রহস্যময়ীর দাঁতে ইষৎ চেপে রাখা ঠোটের ইঙ্গিত-পূর্ণ হাসির মাদকতায় ধীরে ধীরে তলিয়ে যাচ্ছে। গভীর থেকে আরো গভীরে! প্রবল ঘোরে অর্কের মাতাল স্পর্শ অনুভব করছে তার উরু, নিতম্ব থেকে বক্ষ অবধী! মুহূর্তেই কেপে উঠা উষ্ঠযুগল স্পর্শ ওরা তড়িৎ গতিতে।
ক্যাপ্টেনের কক্ষের হাসির শন্দটাও আর শোনা যায় না ! স্টিমারের ইঞ্জিনের শব্দ ছাপিয়ে শুধু ভেষে আসে ছলাত ছলাত জল খেলার শব্দ। শুধু নিবিড় আলিঙ্গনে জ্যোৎস্নার আলোতে পৃষ্ঠার পর পৃষ্ঠা খচিত হচ্ছে নিষিদ্ধ প্রেমের উপ্যাখান।
এভাবে কেটে গেছে অনেকটা সময়। আকাশের সব তারারা ডুবে জেগে জাগতিক নিয়মে। পশ্চিম আকাশের সুখ তারাটি শুধু জেগে আছে তার দিক পরিবর্তন করে পূর্ব আকাশে, তাদের সাক্ষী হয়ে।
একটা মাঝারি ঝকুনিতে প্রায় বুক থেকে ছিটকে পড়া থেকে ধরে ফেলল অর্ক, ফারিয়াকে। নিজেকে ছাড়িয়ে বেঞ্চ থেকে উঠে দাঁড়ালো ফারিয়া। অর্কের কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম, ফারিয়া ওর মুখের দিকে তাকাতে পারছে না। মৃদু মাতাল করা হাসি দিয়ে অর্কের মুখে’র থেকে চোখ সরিয়ে কেবিনের দিকে চলল সে। সিড়িতে পা রেখে ঘাড় ফিরিয়ে অর্ককে উদ্দেশ্য করে বলল ডেকে এসো তাড়াতাড়ি।
সুন্দরী রহস্যময়ী নারীটির নাম ফারিয়া খন্দকার, ইতমধ্যেই বুঝতে পেরেছেন নিশ্চয়। চট্রগামের বিশাল ব্যবসায়ী খন্দকার স্টিল প্রুপের এমডি, আরিফ খন্দকারের স্ত্রী।
ভোরের আলো ফুটতে আর বেশি দেরি নেয়। জোয়ার শুরু হয়েছে। শান্ত সাগরের ডেউগুলো ফুলে ফেপে উঠেছে। মৃদু গর্জনে জানান দিচ্ছে তার বিশাল অস্তিত্ত্বকে। তার গর্জনে বোঝাতে চাচ্ছে, বিশাল জলের ঝাপটাই চায়লেই মুহূর্তে লন্ডভন্ড করে দিতে পৃথিবীর সকল নিয়ম-কানুন।
অর্ক এখন একা বসে আছে বেঞ্চে। তার মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে বিচিত্র জীবনের নানা রঙের হিসাব। ভাবছে বেচারী লাবু ও তার ছেলের কথা। ভাবছে, ফারিয়ার নামের এই রহস্যময়ীর কথা।
অর্ক ভাবে, আদিম যে নেশায় নিজেকে উজাড় করে দেয় মানুষ, তাতে আনন্দ আছে। যে সৃষ্টি করে তার যেমন আনন্দ, যাতে সৃষ্টির সুর ওঠে তারও সমান আনন্দ। যে স্বপ্ন সৃষ্টি হয় তাতো ক্ষনিকের। যতক্ষণ সৃষ্টি করা হয়, ততক্ষণই এর স্থিতি। তারপর তো বাস্তবের কষাঘাতে এর চিহ্নটুকুও থাকে না।
তবুও মাতাল সুরের আগুনে গগন ছেয়ে ফেলতে চায় মানুষ। পলে পলে নিজেকে উত্তপ্ত করতে চাই সে নিষিদ্ধ আগুনে। অনায়াসে মনুষ্যত্ব বিসর্জন দিয়ে পশুত্ব বরণ করে আগুনের আঁচে। তারপরও কি নির্লজ্জের মত নিজেকে মনুষ বলে দাবি করে নিজেকে!
তবে কি, এই নিরর্থক মায়া সৃষ্টি খেলা, নিত্যান্তই মোহ! নিজেকে প্রশ্ন করে অর্ক। ঘুমন্ত বিবেক যেন সাময়িক জেগে উঠতে চায় অর্কের।
কিন্তু ফারিয়ার ডাকে, সাময়িক জাগ্রত বিবেকের রশি ছিড়ে আরো গহিনে ডুবে যায় সে মণষত্ত্ব্য। সিড়িতে দাড়িয়ে আছে ফারিয়ে, অর্ককে ডাকছে উপর থেকে ডেকে যেতে। আদিম আর্কষণে মোহিত হয়ে চলছে ফারিয়ার পিছু পিছু ।
(চলবে)
লেখক সংক্ষেপ :
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন