উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৪০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪১)

আরাফঃনবনি।তুমি কি তজবিরটা এনেছিলে?
নবনিঃনা।
আরাফঃচলো। নিয়ে আসি।
নবনিঃকি ভেবেছেন আরাফ!কি করবেন?
আরাফঃআপাতত বাচ্চাদেরকে তজবির গুলো পরাতে হবে।পরেরটা পরে দেখা যাবে।ওদের ২২ বছর হতে এখনো দেরি আছে।
নবনিঃহুম।আচ্ছা চলেন।
আরাফ আর নবনি ডায়রিটাকে সেখানে রেখে দিলো যেখান থেকে পেয়েছিল।আর তজবিরটা নিয়ে আসলো।নবনি তজবির এর মতিগুলো খুলে ছোট ছোট দুইটা মালা করে দুইজনের হাতে পরিয়ে দিতে নিলে আরাফ বাধা দেয়।
আরাফঃনবনি।বাচ্চারা কিন্তু আর কথা বলতে পারবে না।
নবনিঃকে বলছে কথা বলতে পারবে না।ওরা কথা বলবে হুট করে না একটু একটু করে কথা বলা শিখবে।বয়সের সাথে সাথে ওরা বড় হবে।
আরাফঃহুম।
আরাফ মেহরাব আদ্রিতাকে কোলে নিয়ে মন ভরে আদর করলো।আদরে ওরা উঠে পরে।
আদ্রিতাঃআব্বু।
মেহরাবঃআব্বু কি হয়েছে। ঘুম ভাংলে কেন।
আব্বু ডাকটায় আরাফ এ বুক ধক করে উঠলো।এই ডাকটা শোনার জন্য যে তার অনেক দিন অপেক্ষা করা লাগবে।আরাফ এর একটুও ইচ্ছে করছে না তাদের শক্তিটা কেড়ে নিতে।কিন্তু নবনির চোখ শীতল।আরাফ নবনির ধৈর্য্য দেখে আশ্চর্য হচ্ছে।আরাফ এর মতো নবনির ও কষ্ট হচ্ছে কিন্তু নবনি তা প্রকাশ করছে না।কারন এমনটা করাই লাগবে যাতে কেউ তার বাচ্চাদের ক্ষতি না করতে পারে।পর্যাপ্ত বয়স হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদেরকে লুকিয়ে রাখতে হবে।
মেহরাবঃআম্মু।খুদা লেগেছে।
আদ্রিতাঃআমি ও খাবো।আম্মু।
নবনির চোখ থেকে একফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।সে যে আম্মু ডাকটা শোনার অপেক্ষায় থাকবে।নবনি দুইজনের হাতে মালা পরিয়ে দিলো।মালা পরানোর সাথে সাথে মালা গুল অদৃশ্য হয়ে গেলো।বাবুরা কান্না করতে লাগলো।
আরাফঃনবনি।বাবুরা শক্তি হারিয়ে ফেলেছে।
নবনিঃকি করে বুঝলেন আরাফ?
আরাফঃওরা এতোক্ষন ক্ষুদার কথা মুখে বলছিল।এখন কান্না করছে।ওদেরকে খাওয়ায়।
আরাফ ওদের চোখে কাপড় বেধে দিলো।নবনি ওদের খাওয়ালো।বাচ্চারা খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।


নবনি দুইজনকে ঝুলনায় দিয়ে দিলো।আরাফ নবনিকে জড়িয়ে ধরলো।নবনিও আরাফ এর বুকে মাথা লুকালো।
নবনিঃওরা কবে কথা বলবে আরাফ!আমি আবার আম্মু ডাক কখন শুনবো?
আরাফঃশুনবা।নবনি পাখি।তুমিতো আমার শেরনী। এভাবে কাদলে হয় বলো।
নবনিঃহুম।
আরাফ নবনির মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।নবনি ঘুমিয়ে পড়ে।
আরাফঃআমরা কালকে থেকে নতুন এক জীবন শুরু করবো। আমাদের সুখের দিনগুলো আমাদের কাছে ধরা দিয়েছে।আরাফ নবনিকে বুকে নিয়ে স্বস্তিতে ঘুমিয়ে পরলো।
১ বছর পর~
আরাফ অফিস থেকে বাসায় ফিরেছে।নবনি রান্নাঘরে কাজ করছে।আরাফ নবনিকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলো।
আরাফঃকি করো বউ?
নবনিঃমেহরাব আদ্রিতার জন্য খাবার বানাই।
আরাফঃআচ্ছা।বানাও। আমি ওদের কাছে যাই।
আরাফ রুমে যেয়ে দেখে আদ্রিতা তার নানুর কোলে ঘুমিয়ে আছে।মেহরাব আদ্রিতার হওয়ার পর থেকে আসাদ খান এখানেই থাকেন।আদর চৌধুরী তাকে যেতে দেন নাই।আর রাজ বিদেশে চলে গিয়েছে পড়াশোনার জন্য।
মেহরাব তার দাদুর কোলে বসে জরুরি রাজনৈতিক আলাপ শুনছে।আদর চৌধুরী বলে যাচ্ছেন।আর মেহরাব মনোযোগ দিয়ে তা শুনছে।মেহরাব এর আবার তার দাদুর এসব কথা শুনতে খুব ভালো লাগে কিন্তু আদ্রিতা বোর হয়ে ঘুমিয়ে পরে।
আরাফঃবাবা।আমার ছেলে কি হাটা শিখলেই এলেকশনে দাড় করাবা।সবসময় এসব রাজনীতি ওর মাথায় ঢুকাতে থাকো।ওর ছোট্ট মাথায় এতো কিছু কেন দিচ্ছো?
আদর চৌধুরীঃওর ছোট মাথায় তোর থেকেও বেশি বুদ্ধি। তোর মাথায় সময়মতো এই কথাগুলো ঢুকাতে পারলে তুই আজকে রাজনীতিকে দেখলে দূর দূর করে পালাতি না।
মেহরাব আরাফকে দেখে আরাফ এর কোলে ঝাপিয়ে পড়ে।আবার আদ্রিতার দিকে ও তাকায়।আদ্রিতা জেগে থাকলে মেহরাবকে আরাফ এর ধারের কাছেও ঘেষতে দেয় না।বাবা পাগলী মেয়েটা। 
আরাফ মেহরাব এর কপালে কিস করলো।
আরাফঃএসে পরেছি আব্বুটা।
মেহরাবঃআ ব্বু তা।
আরাফ ফ্রিজ হয়ে গেলো।এক বছর ধরে অপেক্ষা করছে মেহরাব এর মুখে ডাকটা শোনার জন্য।আজ এক বছর পর মেহরাব আদো আদো করে আব্বু শব্দটা উচ্চারণ করলো।
আরাফঃবাবা শুনেছো?মেহরাব আব্বু বলেছে।
আদর চৌধুরীঃআমিতো শুনি নেই।
আরাফঃনবনি। নবনিইইইইই।
নবনি দৌড়াতে দৌড়াতে আসলো।
নবনিঃকি হয়েছে।এভাবে ডাকলেন কেন?
আরাফঃমেহরাব। আব্বু বলেছে।
নবনিঃকই! 
আরাফঃমেহরাব বলো আব্বু আব্বু বলো।
মেহরাব নিজে নিজে খেলতে লাগলো। নবনি আদর চৌধুরী আর আসাদ খান হা করে তাকিয়ে আছে।মেহরাব এর বলা প্রথম বুলি শোনার জন্য কিন্তু মেহরাব এতগুলো মানষকে ইগনোর করে নিজের মতো খেলছে।
আরাফঃবলো না আব্বুটা আমার।আর এক বার বলো।
নবনিঃধুর। আমার সবজি পুরে গেলো।নবনি চলে যেতে নেয়।
আরাফঃআব্বু দেখো আম্মু চলে যাচ্ছে।আব্বু না ভালো। তোমার আম্মু চলে গেলো কিন্তু আম্মুকে ডাকো।মেহরাব।তোমার আম্মু কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মেহরাব আদো আদো উচ্চারণ এ ডেকে উঠলো।


আ আ ম্মু।
নবনির পা থেমে গেলো।নবনি পিছনে ঘুরে দেখে মেহরাব হাসছে।
নবনিঃআরাফ শুনছেন?মেহরাব আম্মু বলছে না?
আরাফঃকই না তো! 
নবনিঃবলছে তো।
মেহরাবঃ আ আ ম্মু।
নবনিঃদেখছেন। বলছে।
আরাফঃবাহ বেটা।আমি বললাম আব্বু বলতে বললা না। এখন আম্মু আম্মু করছো।ঠিক আমি গেলাম আদ্রিতার কাছে।
আরাফ মেহরাবকে নবনির কোলে দিয়ে আদ্রিতাকে কোলে নেয়।এবার মেহরাব আ ব্বু আ ব্বু করে ডাকতে থাকে।
আরাফঃহিংসুটে। আদ্রিতাকে কোলে নেয়ায় এখন ভাব জমাচ্ছো।
আদর চৌধুরী আর আসাদ খান এবার মেহরাব এর পিছু পরে গেলো।
আদর চৌধুরীঃদাদু না আমার ভালো দাদু বলো দাদু।
আসাদ খানঃহ্যা।লক্ষীটা নানু বলো নানু।
নবনি আরাফ এর দিকে তাকায়।আরাফ ইশারায় নবনিকে রুমে যেতে বলে। নবনি আরাফকে পাত্তা না দিয়ে রান্নাঘরে চলে যায়।আরাফ আদ্রিতাকে আদর চৌধুরীর কাছে দিয়ে রুমে যেয়ে দেখে নবনি আসে নাই।
আরাফঃনবনিইইইই। নবনিইইইইইইই।
নবনি চুলা নিভিয়ে আরাফ এর কাছে ছুটে গেলো।
নবনিঃকি হয়েছে?এভাবে চেচাচ্ছেন কেন!বাকিরা কি বুঝবে?দুই বাচ্চার বাবা হয়ে ও বউ পাগল হলে হয়?
আরাফঃকোথায় লিখা আসে বাবা হয়ে গেলে বউয়ের প্রতি ভালোবাসা কমে যায়।হুম?
আরাফ নবনিকে ওয়ালের সাথে চেপে ধরলো।
নবনিঃকি হচ্ছেটা কি।ছাড়ুন আমাকে কি করছেন?
আরাফঃছাড়াছাড়ি হচ্ছে না।তোমার ছেলে তোমার দলে থাকে। আমার দলে থাকার জন্য আমার আরো একটা ছেলে লাগবে।
নবনিঃনা।সরুন। বাবুদের খাবার খাওয়াতে হবে।
আরাফ পকেট থেকে ফোন বের করলো।
আরাফঃবাবা। বাবুদের খাওয়াইয়ে আজকে তোমার কাছেই রাখো।নবনির শরিরটা ভালো না।
আদর চৌধুরীঃবেশি অসুস্থ? ডাক্টার আনবো? 
আরাফঃনা।আমি আছি।
আদর চৌধুরীঃআচ্ছা।
নবনিঃকত মিথ্যুক? আমি কই অসুস্থ? 
আরাফঃতুমিতো অসুস্থই বউ। আদর দিয়ে সুস্থ করতে হবে।
আরাফ নবনিকে বাহুডোরে আবদ্ধ করে নিলো।
নবনিঃভালোবাসি আরাফ পাখি।খুব খুব খুব করে ভালোবাসি।
আরাফঃআমিও অনেক ভালোবাসি।আমার নবনি পাখিকে।
আরাফ নবনিকে নিয়ে ভালোবাসার এক অতল সমুদ্রে ডুব দিলো।যেখান থেকে ফেরা নবনির পক্ষে কখনোই সম্ভব না।


এখানে এক দম্পত্তি সুখের রাত কাটালেও। আর একজনের জীবনে আধার নেমে এসেছে।ওয়ারদা অনেক চিকিৎসা করিও মা হতে পারছে না।নিলয় এর বুকে বাবা ডাক শোনার হাহাকার থাকলেও মুখে সে একটা টু শব্দও উচ্চারণ করে না।ওয়ারদা ভেতর থেকে অনেকটা ভেংগে পরেছে।তার কাছে মনে হয় নবনির সাথে করা অন্যায় গুলোর শাস্তি আল্লাহ তাকে এভাবে দিয়েছেন।ওয়ারদা আজও নিঃশব্দে কান্না করতে করতে নিলয়ের বুকে  ঘুমিয়ে পড়ে।আর নিলয় একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে ক্লান্ত চোখ গুলো বন্ধ করে নিল।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


৪২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন