উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৯)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১০)

ডুপ্লেক্স বাড়ির দুই তলায় দোলার নিজের রুমের পাশেই তার স্টাডি রুম। বড় রুমের ডান আর বাম পাশের পুরো দেয়াল জুড়ে বুক শেল্ফ। পুরো বুক শেল্ফ ভর্তি বিভিন্ন একাডেমিক ননএকাডেমিক বই। দরজা বরাবর সামনের পুরো দেওয়ালটায় থাই গ্লাসের বড় জানালা। জানালার দুই পাশে ঝুলছে হালকা গোলাপি রঙের পাতলা পর্দা। জানালার ঠিক মাঝ বরাবর উপরে এসি আর নিচে একটা ডিভান। আর ডিভানের সামনে একটা ছোট আয়তাকার টেবিল। টেবিলের উপরে একটা ল্যাপটপ। রুমের মাঝ বরাবর সিলিং এ জুলছে ঝাড় বাতি। তার ঠিক নিচে একটা মোটামুটি বড় গোল কাঠের উপর কারুকার্য করা খুব সুন্দর একটা টেবিল। যার উপর বই খাতা কলম আছে। আর পাশে টেবিলের সাথে মিল রেখে খুব সুন্দর কারুকার্য করা তিনটা চেয়ার। তার মধ্যে একটা চেয়ারে বসে চোখ মুখ কালো করে খাতায় একটার পর একটা ম্যাথ করে যাচ্ছে দোলা। রাগে দুঃখে চোখ দুটো ছলছল করছে তার। বান্ধবীদের কথা মতো অতুলের সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে আজকে সব হোমওয়ার্ক ভালো করে করেছে। ম্যাথ সব ভালো করে শিখে রেখেছে। যাতে অতুল তাকে ম্যাথ করতে দিলে, সাথে সাথে করে দিতে পারে। কোনো ভুল যেন না হয়। এমন কি আজ নতুন যে ম্যাথগুলো করিয়েছে সেগুলোও খুব মনোযোগ দিয়ে বুঝেছে। যাতে বার বার বুঝাতে গিয়ে সময় নষ্ট না হয়। মোট কথা দুই ঘন্টার পড়া যাতে এক ঘন্টায় শেষ হয় সে তাই চেষ্টা করেছে। হয়েছেও তাই কিন্তু তার পরিকল্পনা অনুযায়ী বাকি এক ঘন্টা স্যারের সাথে গল্প করাটা হয়নি। দুই ঘন্টার পড়া এক ঘন্টায় শেষ হলে অতুল এক নজর ঘড়ি দেখে তাকে কিছু না জিজ্ঞেস করে পুরোনো ম্যাথ করতে দেয়। আর দোলা মুখটা কালো করে সেই ম্যাথগুলো করতে থাকে। ম্যাথ করা শেষ হলে দোলা খাতাটা তার থেকে কিছুটা দূরে বসে থাকা অতুলের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- স্যার শেষ।
অতুল দোলার ম্যাথ বইটায়ের পরের চাপ্টার গুলো ম্যাথ দেখছিল। দোলার কথা কানে জেতেই বইটা থেকে চোখ সরিয়ে দোলার দিকে একপলক তাকিয়ে খাতাটা টেনে নিজের কাছে নেয়। তারপর টেবিলের উপর থেকে লাল কালির কলমটা নিয়ে ম্যাথ গুলো দেখতে থাকে। দোলা অতুলের এতোক্ষণের কর্মকাণ্ড থেকে এটা বুঝে, যে সে যতো আগেই পড়া শেষ করুক না কেন অতুল তার সাথে বসে বসে গল্প কখনোই করবে না। বরং একটা ম্যাথ শেষ করলে আর একটা দিবে। তাই দোলা ঠিক করে অতুলকে সে তার খাতা দেখা অবস্থায়ই তার সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবে। কথাটা ভেবেই দোলা অতুলের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- স্যার আপনি কোন ডিপার্টমেন্টে পরেন?
অতুল খাতা দেখতে দেখতে উত্তর দিল
- আর্কিটেকচার।
দোলা আবার জিজ্ঞেস করল
- কোন ইয়ার?
অতুল খাতা দেখতে দেখতে আবার উত্তর দিল
- থার্ড ইয়ার।
সাহস পেয়ে দোলা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- স্যার, আপনার পুরো নাম কি?
অতুল এবার খাতা দেখা বন্ধ করে খাতা থেকে চোখ সরিয়ে দোলার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুমি আমার সম্পর্কে এতো প্রশ্ন করছ কেন?
দোলা আমতা-আমতা করে বলল
- আসলে আমি ক্লাসটেস্টে ফুল মার্ক পেয়েছি, তখন আমার ক্লাসমেটরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি এতো ভালো কি করে করলাম? তখন আমি বলি আমার নতুন টিচার অনেক ভালো পড়ায়। তার কাছে পড়েই আমি এতো ভালো রেজাল্ট করেছি। তখন তারা জিজ্ঞেস করে আমার নতুন টিচার কিসে পড়ে? নাম কি? আমি তখন কিছুই বলতে পারিনি। তাই জিজ্ঞেস করছি।


অতুল চোখ নামিয়ে আবার খাতা দেখতে দেখতে বললো
- আইয়িদ ইসলাম অতুল।
দোলা খুশি হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল
- ওইদিন যে ভাইয়াটা আপনার সাথে ছিল উনি কি আপনার ফ্রেন্ড?
অতুল খাতা দেখতে দেখতে উত্তর দিল
- হুম্ম
দোলা পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- আপনার কি এই একজনই ফ্রেন্ড?
অতুল উত্তর দিল
- হুম্ম
দোলা আরো সাহস পেয়ে জিজ্ঞেস করল
- আপনার কি কোনো গালফ্রেন্ড আছে?
কথাটা কানে যেতেই অতুল রাগী চোখে দোলার দিকে তাকায়। তারপর হাতের কলমটা ঠাস করে শব্দ করে টেবিলের উপর রাখে। ভয়ে দোলা মাথা নিচু করে ফেলে। অতুল রাগী কন্ঠে বললো
- সেদিন তোমাকে সরি বলে আমি ভুল করেছে। আসলে ভুলটা আমার না। আমি মনে করেছিলাম আমার স্যার যেহেতু তোমার এতো প্রসংশা করেছে সেহেতু তুমি ভালোই হবে। আমি হয়তো তোমাকে ভুল বুঝছিলাম। কিন্তু না। আমি না আমার স্যার তোমাকে চিনতে ভুল করেছে। তুমি একটা বেয়াদব মেয়ে। শুরু বেয়াদব না চরম বেয়াদব মেয়ে।
কথাটা কানে যেতেই দোলা মাথা তুলে অতুলের দিকে তাকায়। তার চোখ দিকে পানি পড়ছে। অতি ধনী পরিবারের আদরের দুলালি সে। মা ছাড়া কেউ কখনো তার সাথে কোনদিন জোরে কথা পর্যন্ত বলেনি। বকাজকা তো দূরের কথা।
দোলা মাথা তুললে অতুলের চোখ পরে দোলার কান্নামাখা মুখটার দিকে। কিছুক্ষণ দোলার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে অতুল রুম থেকে বের হয়ে চলে যায়। দোলা কান্না করতে করতে একবার ভাবে, অতুল তাকে খারাপ ভাবে! না আর অতুলকে এই ভালোবাসা সম্পর্কে কিছু বলবে না সে। এতে যদি অতুল তাকে আরো খারাপ ভাবে। তার থেকে দূরে চলে যায়। সব ভালোবাসার তো আর হ্যাপি এন্ডিং হয় না। তারটাও না হয় না হলো। কিন্তু পরক্ষণেই তার তূবার কথা মনে পরে। তূবাকেও তো অভ্র ভাইয়া রিজেক্ট করেছে। একবার না কয়েকবার রিজেক্ট করেছে। থাপ্পড় পর্যন্ত দিয়েছে। কিন্তু তূবা হাল ছাড়েনি। তাহলে সে কেন সামান্য দুটো কথা শুনে হার মেনে যাবে? নিজের ডান হাতের পিঠ দিয়ে দু'চোখের পানি মুছে দোলা নিজেকে নিজে বললো
- নাহ দোলা, তোকে এতোটুকুতেই হার মানলে চলবে না। তোকে আরো স্ট্রিং হতে হবে। সামনে যে তোকে এর থেকেও বেশি অপমান সয্য করতে হবে।


ভার্সিটিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। ফর্সা গায়ে গাঢ় নীল রঙের শাড়ি, সাথে মেচিং জুয়েলারি। মুখে হালকা মেকাপ। ঠোঁটে লাল লিপস্টিক। পিঠ পর্যন্ত লম্বা চুল গুলো সোজা সিঁথি করে ছাড়া। অনুষ্ঠানের সব দায়িত্ব প্রতিবারই থাকে মাস্টার্সের স্টুডেন্ট এর উপর, সেই হিসেবে এবারের সব দায়িত্ব এবার দীপ্তিদের উপর। তবে অন্যবারের থেকে এইবারের অনুষ্ঠান আরও জাঁকজমক পূর্ণ ভাবে হচ্ছে। কারণ চেয়ারম্যান স্যারের একমাত্র ছেলে রোদ চৌধুরী। আমেরিকা থেকে লেখাপড়া শেষ করে কিছুদিন আগেই দেশে এসেছে সে। আর এখন থেকে ভার্সিটির সব দায়িত্ব তার উপরই উপর। তাই তাকে অভ্যর্থনা দেওয়া হবে আজ। দীপ্তি বেক স্টেজে যারা যারা আজকে পারফরম করবে তাদের সবাই এসেছে কি না, তাদের প্রয়োজনীয় সব কিছু ঠিক আছে কি না, এগুলো দেখছিল। কিছুক্ষণ পর অনুষ্ঠান শুরু হয়। আগের চেয়ারম্যান স্যার আরো কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তিরা বক্তৃতা রাখার পর। রোদ চৌধুরীকে স্টেজে ডাকা হয়। আর দীপ্তিকে বলা হয় রোদের হাতে ফুলের তোড়া তুলে দিতে। দীপ্তি হাতে ফুলের তোড়া নিয়ে বেক স্টেজ থেকে সামনে এসে সিঁড়ি দিয়ে উঠে রোদ চৌধুরীর দিকে অবাক চোখে চেয়ে থাকে সে। ফর্সা গায়ে সাদা রঙের শার্ট সাথে কালো রঙের কোড, প্যান্ট। গলায় সাদা-কালো কম্বিনেশনের টাই। হাতে রিচ ওয়াচ। চোখে রিমলেস চশমা। সেট করা চুল। হা করে তাকিয়ে থাকে রোদের দিকে। দীপ্তিকে এভাবে ভরা স্টেজে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে যায় রোদ। কি করবে ভেবে না পেয়ে, নিজেই হাত বাড়িয়ে দীপ্তির হাত থেকে ফুলের তোড়াটা নেয়। হাতে ধরে রাখা ফুলের তোড়াতে টান অনুভব করতেই দীপ্তির হুস ফেরে। হুস ফিরতেই লজ্জায় পড়ে যায় সে। রোদের দিকে তাকিয়ে কোনো রকমে হালকা ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে হাসি দিয়ে একপ্রকার দৌড়ে বেক স্টেজে চলে যায়। বেক স্টেজে যেতেই চন্দ্রা দীপ্তির কাছে এসে দাত কেলিয়ে জিজ্ঞেস করল
- জানু আবার ক্রাশ খাইছিস? তবে তোকে এর আগে তোর কোন ক্রাশের দিকে এমন হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখি নাই। অবশ্য তোর আগের সব ক্রাশ থেকে এটা দেখতে হাজার গুণ বেশি হ্যান্ডসাম।
দীপ্তি চন্দ্রা দিকে তাকিয়ে বলল
- প্রথম দেখা না জানু, দ্বিতীয় দেখা।
চন্দ্রা অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- দ্বিতীয় দেখা মানে! এর আগে একে তুই কোথায় দেখেছিস?
দীপ্তি উত্তর দিল
- ওই যে মার্কেটে লিফটে একটা ছেলেকে দেখে ক্রাশ খেয়েছিলাম না কালকে। এটাই সেই ছেলে।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১১)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন