উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৮)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৯)

ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে অতীতের একটা ঘটনা মনে পড়ে যায় চন্দ্রার।
তখন সে ফিফথ সেমিস্টারে পড়ত ------
ক্যানটিনে একটা টেবিলে বসে আড্ডা দিচ্ছিল দীপ্তি আর শুভ্রর সাথে। আর আড় চোখে দেখছিল তাদের থেকে কিছুটা দূরে বসে থাকা আহানকে। আকাশী রঙের শার্ট আর সাদা জিন্সের প্যান্ট। হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। বন্ধুদের সাথে বসে আড্ডা দিচ্ছে সেও। কথার মাঝে কোন একটা বিষয় নিয়ে হাসতে হাসতে আহান তার পাশে বসা বন্ধুর কাধে হাত রাখে। তখন কোথা থেকে যেন আহানের ক্লাসমেট ইভা এসে ইচ্ছা করে আহানের ঘড়িতে তার মাথার লম্বা চুল আটকায়। তারপর "আহ" করে আস্তে করে চিৎকার দেয়। হাতের ঘড়িতে টান অনুভব করতেই আহান ঘাড় ঘুড়িয়ে পিছনের দিকে তাকায়। ইভা নিজের চুল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আর ইভার চুলের শেষ অংশ আটকে আছে তার ঘড়িতে। আহান ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতেই ইভা নেকামির সুরে বললো
- ওহ আহান সরি! জানি না কিভাবে আমার লম্বা চুলগুলো তোমার ঘড়িতে আটকে গিয়েছে। একটু ছাড়িয়ে দেবে প্লিজ।
আহান বিরক্ত নিয়ে উঠে দাঁড়ায়। গম্ভীর মুখ করে কিছু বলতে গিয়েও থেমে যায়। পরক্ষণেই মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- ওকে।


বলেই আস্তে ধীরে ইভার চুলগুলো তার ঘড়ির থেকে ছাড়িয়ে দেয়। নিজের ক্রাশকে অন্য মেয়ের চুলে হাত দিতে দেখে রাগে দুঃখে হনহন করে ক্যানটিন থেকে বের হয়ে যায় চন্দ্রা। দীপ্তি আর শুভ্র চন্দ্রার পিছন পিছন যেতে যেতে তাকে দাড়াতে বলে। কিন্তু চন্দ্রা তাদের কথা না শুনে হনহন করে হাটতেই থাকে। শুভ্র একপ্রকার দৌড়ে গিয়ে চন্দ্রার হাত ধরে তাকে থামিয়ে বললো
- এই চান্দ্রের বুড়ি তোরে দাড়াতে বলছি না।
চন্দ্রা রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- দাঁড়িয়ে কি করবো? দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ওই ইভা সাতচুন্নির ঢং দেখবো?
দীপ্তি বিরক্ত নিয়ে জিজ্ঞেস করলো
- তাই বলে হার মেনে ওখান থেকে চলে আসবি?
চন্দ্রা মলিন মুখে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো
- তো কি করবো?
দীপ্তি রহস্যময় হাসি হেসে বললো
- করবো তো অনেক কিছুই।
এর দশ - বারো দিন পর ভার্সিটিতে আসে ইভা। কিন্তু তার মাথার সেই লম্বা চুলগুলো আর নেই। কোমড় দুলানো চুল এখন কাধ ছুঁই ছুঁই করছে। কেউ জিজ্ঞেস করতেই সে বলে, এতো বড় চুল সামলাতে অনেক ঝামেলা হয় তাই কেটে ফেলেছে। কিন্তু আসল কাহিনী তো আর কেউ জানে না। যে ইভার ফেসবুক থেকে শুরু করে মেইল আইডি পর্যন্ত সবকিছু দীপ্তি, চন্দ্রা আর শুভ্র হ্যাক করে, ওকে থ্রেড দিয়ে এই কাজ করিয়েছে।
বর্তমানে ----------------
হঠাৎ ফোনের রিংটোন এর শব্দে অতীতের ভাবনা থেকে বর্তমানে চলে আসে চন্দ্রা। টেবিল উপর থেকে ফোনটা হাতে নিয়ে স্কিনে ভেসে উঠা বাংলা ফর্মেটে লেখা  "তিরিং বিরিং" এ চোখ বুলায়। ঠোঁটে হাসির রেখা ফুটিয়ে ফোনটা রিসিভ করে সে।
💞
ইদানীং আকাশের মুড সুইং হয় খুব বেশি। এই দাত বের করে হাসছে। তো এই কান্নাকাটি করে সব ভাসিয়ে দিচ্ছে। আর বিপদে ফেলছে ছাতা বিহিন বাহিয়ে বের হওয়া মানুষদের। স্কুলের বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে তিথি। স্কুল ছুটি হয়েছে প্রায় তিরিশ মিনিট আগে। কিন্তু বৃষ্টির জন্য বের হতে পারছে না সে। চল্লিশ-পঞ্চাশ মিনিট আগে শুরু হয়েছে এই বৃষ্টি। এখনো থামার নামই নেই। থামবে কি, আরও জোরে পড়ছে যেন। এদিকে এখন তার বাসায় যাওয়া খুব প্রয়োজন। ছোট ভাইটা বাসায় এসে দুপুরের খাবার খাবে। তাই তাকে বাসায় গিয়ে রান্না বসাতে হবে। খাবার খেয়ে একটু জিরিয়ে ছেলেটা আবার বের হবে, ছাএ পড়াতে। এখন যদি তার যেতে দেরি হয়ে যায় তাহলে ভাইটার আর খাওয়া হবে না। না তাকে এখনি বের হবে। ভেবে ব্যাগ থেকে প্লাস্টিকের নীল রঙের একটা ফাইল বের করে। ফাইলের ভিতরের কাগজগুলো খুলে ব্যাগের মধ্যে রাখে। ফাইলটা মাথায় ধরে স্কুলের বারান্দায় থেকে নেমে গেইটে এসে রিকশা খুঁজতে থাকে সে। বৃষ্টির জন্য আশেপাশের যারা হেটে বাসায় যেত, তারাও আজকে রিকশা করে বাসায় গিয়েছে। ফলে রিকশা তেমন নেই। যে কয়টা আছে তারাও এতো বৃষ্টি মধ্যে যেতে চাচ্ছে না। বেশি ভাড়া দিলেও না। মাথার ভিতরে চিন্তা আর উপরে ফাইল নিয়ে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে সে। কি করবে এখন? কি করে বাসায় যাবে সে? ভাইকে কি বলবে তাকে এসে নিয়ে যেতে। ছেলেটা কলেজ থেকে বাসার সামনে দিয়ে আবার এতোখানি রাস্তা আসবে। রাতদিন এমনেই অনেক পরিশ্রম করে ছেলেটা। না থাক সে একাই একটু কষ্ট করে চলে যাবে। তিথির ভাবনার মাঝেই তার সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। তিথি গাড়িটা দেখেই চিনে ফেলে যে এটা আয়ানের গাড়ি। গাড়ির গ্লাস নামিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসা আয়ান মিষ্টি হেসে বললো
- হায় তিথি মিস। গাড়িতে উঠে বস। তোমাকে দিয়ে আসি। এই বৃষ্টির মধ্যে রিকশা পাবে না।


তিথি কপাল কুঁচকে কঠিন সরে বললো
- না।
আয়ান কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি না?
তিথি মুখ ঘুড়িয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো
- আমি কোনো অপরিচিত মানুষের গাড়িতে উঠবো না।
- প্রতিদিন তোমার সাথে আমার দেখা হচ্ছে। কথা হচ্ছে। তারপর আমি তোমার কাছে অপরিচিত মানুষ!
তিথি বিরক্ত নিয়ে বললো
- হে। কতোটুকু কথা বলাতে কেউ কারো পরিচিত হয়ে যায় না।
আয়ান দুষ্ট হেসে বললো
- তাহলে চলো আজকে অনেক কথা বলে একে অপরের সঙ্গে পরিচিত হয়ে যাই।
এমনেই চিন্তা হচ্ছে বাসায় যাবে কিভাবে। তার উপর আয়ানের এমন কথা শুনে আর দুষ্ট হাসি দেখে তিথি রেগে গেল। রাগি কন্ঠে বললো
- দেখুন আপনার সাথে কথা বলার, কিংবা পরিচিত হওয়ার নূন্যতম ইচ্ছা আমার নেই।
আয়ান তার মুখের সেই দুষ্ট হাসি বজায় রেখে বললো
- কিন্তু আমার তো প্রচুর আছে।
তিথি কোনো কথা না বলে। হেটে কিছুটা সামনে গিয়ে আবার রিকশা খুঁজতে থাকে। আয়ানকে কোন কিছু বলে কখনোও কোন লাভ হয়নি। আজও হওয়ার সম্ভাবনা নেই। তাই সে আর আয়ানের সাথে কথা বাড়ালো না। এদিকে ফাইটের ফলে তার মাথা না ভিজলেও, শরীর ভিজে যাচ্ছে। ভিজা গায়ে দাঁড়িয়ে থাকতেও তার বেশ অস্বস্তি হচ্ছে। আয়ান গাড়ি থেকে নেমে তিথির পাশে দাঁড়িয়ে নরম কন্ঠে বলল
- গাড়িতে উঠো। এতো বৃষ্টির মধ্যে একা যাওয়াটাও সেভ না।
তিথি চোখ দুটো ছোট ছোট করে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে আপনার সাথে যাওয়া কিভাবে সেভ হল?
আয়ান অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুমি আমাকে এতো খারাপ ভাবো?
তিথি সরল ভাবে উত্তর দিল
- আপনাকে ভাল ভাবার কোন কারণ নেই।


আয়ান রেগে গিয়ে বললো
- এই মেয়ে শোন, তোমার সাথে খারাপ কিছু করার ইচ্ছা থাকলে অনেক আগেই করতাম। এখনো বসে থাকতাম না।
কথাটা বলেই আয়ান তিথির হাত ধরে তাকে জোর করে গাড়িতে বসিয়ে দেয়। নিজে গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে কোন কথা না বলে চোখ মুখ শক্ত করে সামনে দিকে তাকিয়ে গাড়ি চালাতে থাকে। আয়ানকে এর আগে সবসময় হাসি মুখেই দেখেছে তিথি। এই প্রথম আয়ানকে এতো রাগতে দেখে ভয় পেয়ে যায় সে। ভয়ের সাথে সাথে কিছুটা আপরাধ বোধ নিয়ে চুপ করে বসে থাকে সে। তিন মাস আগে স্কুলের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠানে আয়ানের সাথে তার প্রথম দেখা হয়। সেই থেকেই প্রতিদিন স্কুল ছুটির পরে তার সাথে দেখা করে, দু'চারটা কথা বলে আয়ান। যদিও আয়ান তাকে কখনো খারাপ কিছু বলেনি। তার সাথে খারাপ বা অভদ্রের মতন কোন আচরণ করেনি। শুধু প্রতিদিন একটা কথাই তাকে বুঝাতে চায় আয়ান। যে সে তাকে শুধু তাকে ভালোবাসে। আয়ানের এই কথাটা বিশ্বাস হয় না তার। মন্ত্রী মিষ্টার আব্রাহাম খানের বড় ছেলে আয়ান তার মতো একটা মেয়েকে ভালোবাসে! এটা হতে পারে না। নিশ্চয়ই আয়ান তার সাথে ফান করছে। তা না হয় তার সৌন্দর্যের মোহে পড়ে তার পিছু পিছু ঘুড়ছে। যা কালের সাথে সাথে বা অন্য কোন সুন্দরী চোখে পড়লে কেটে যাবে। দেশে তোও আর সুন্দরী মেয়ের অভাব নেই। কয়দিন পর ঠিক ,,,,,,,, তিথির ভাবনার সুতো কাটে আয়ান গাড়ির ব্রেক করলে। আয়ান তিথিদের বাসার সামনে গিয়ে গাড়ি থামিয়ে সামনের দিকে তাকিয়েই গম্ভীর কন্ঠে বললো
- তোমার বাসার সামনে চলে এসেছি।
তিথি গাড়ি থেকে নেমে দাড়ানোর সাথে সাথেই আয়ান গাড়ি নিয়ে চলে যায়। তিথি অবাক হয়ে আয়ানের চলে যাওয়া গাড়ির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বিল্ডিং এর মধ্যে ঢুকে পরে।
💞
পরশুদিন ভার্সিটিতে প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর অনুষ্ঠান। তাই আজকে চন্দ্রা আর শুভ্রের সাথে শপিং করবে দীপ্তি। যেহেতু শুভ্র থাকে বসুন্ধরাতে, চন্দ্রা থাকে উত্তরা আর দীপ্তি থাকে ধানমন্ডিতে। আর তারা শপিং করতে যাবে যমুনা ফিউচার পার্কে, তাই তিনজন বাসা থেকে আলাদা আলাদা মলে গিয়ে একসাথে হবে। চন্দ্রা আর শুভ্র পৌঁছে গিয়েছে। আর দীপ্তিকে ফোন করে বলেছে তাড়াতাড়ি আসতে যমুনা ফিউচার পার্কের থার্ড ফ্লোরে আছে। তাড়াতাড়ি তাদের কাছে যাওয়ার জন্য দীপ্তি এক্সেলেটর লিফটে না উঠে ক্যাপসুল লিফটে উঠে। তাড়াতাড়ি করে লিফটে উঠে লিফটের বাটন চাপার জন্য পাশে তাকাতেই ক্রাশ খায় সে। ফর্সা গায়ে গোল্ডেন কালারের পাঞ্জাবি। চোখে চসমা পড়া যুবকের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে থাকে সে। ধ্যান ভাঙে যখন ছেলেটা ফিফথ ফ্লোরে লিফটে থেকে নেমে চোখের আড়াল হয়ে যায় তখন।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ১০)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন