উপন্যাস : তোমায় ঘিরে
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৬০তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৬১)
সকালবেলা~
নবনি চোখ খুলে আরাফকে নিজের বুকে ঘুমানো পায়।বাচ্চাদের মতো গুটিশুটি মেরে ঘুমাচ্ছে।নবনি আরাফ এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।আরাফ হুড়মুড় করে জেগে উঠে।
আরাফঃকি হয়েছে নবনি পাখি?তুমি ঠিক আসো?কোনো সমস্যা? কিছু লাগবে?!!
নবনি আরাফ এর মুখে হাত রাখে।
নবনিঃশিশসস।বেশী কথা বলেন।কিছুই হয় নেই আমার।আপনি এভাবে ঘুমাচ্ছিলেন কেন?কষ্ট হচ্ছিলো না বুঝি?
আরাফঃবউয়ের বুকে ঘুমাতে আবার কিসের কষ্ট! কি যে বলো না নবনি পাখি।
নবনিঃহি হি হি।বাবা কোথায় আরাফ?দেখছি না যে।
আরাফ এর কালকের সব ঘটনা মনে পরে গেলো। এতোক্ষন সব ভুলেই গিয়েছিলো।বুকে চিন চিন ব্যাথা হতে লাগলো।
নবনিঃকি হয়েছে?আরাফ। কোথায় উনি?
আরাফঃমেহরাব আদ্রিতা কথাতো আগে জিজ্ঞেস করবে?জ্ঞান ফিরতেই বাবা বাবা করছো।
নবনিঃবলেন না কোথায় উনি?
আরাফঃউনি কি করবেন এখানে?ছেলে মেয়ের রোমান্স দেখবে?উনি ঘুমাচ্ছেন।উনাকে ডিস্টার্ব করা যাবে না।
নবনিঃওহ।বাবুরা কোথায়?বাসায় যাবো কবে আমরা?
আরাফঃএই তো চলে যাবো।বাবুরা বাসায়। আমি ডাক্টার এর সাথে কথা বলে আসি।
আরাফ বের হয়ে গেলে নার্স প্রবেশ করে।
নার্সঃগুড মনিং ম্যাম।
নবনিঃগুড মনিং।
নার্সঃআপনি খুব লাকি ম্যাম। আপনার স্বামী আপনাকে অনেক ভালোবাসে।
নবনিঃহ্যা।নবনি মুচকি হাসলো।আমার স্বামীই না আমার শশুড় ও আমাকে অনেক ভালোবাসে।আমার স্বামী থেকে ও বেশী।
নার্সঃআহারে।এমন একটা মানুষ দুনিয়া থেকে চলে গেলো।
নবনিঃমানে! কি বলতে চাচ্ছেন আপনি?কি হয়েছে উনার?
নার্সঃউনাকেও আপনার সাথেই আনা হয়েছিল।অনেক চেষ্টা করেও তাকে আমরা বাচাতে পারি নাই।
নবনি কথাটা শুনে অনেক বড় শকড খেলো।
নবনিঃকিহ!!বাবা বাবা নেই!!আরাফ আমাকে মিথ্যা বললেন!! উনি যেতে পারে না। বাবায়া যেতা পারে না আমাকে ছেড়ে। বাবায়ায়ায়ায়া।
নবনি অক্সিজেন মাস্ক খুলে ফেলে দিলো।হাত লাগানো ক্যানেলা টান দিতেই হাত থেকে রক্ত পড়তে লাগলো।নবনির বুক এ ব্যাথা উঠে গেলো।শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে।
নার্স কোনো ভাবেই নবনিকে থামাতে পারছে না।
নার্সঃডক্টর ডক্টরর।
ডক্টর দৌড়ে আসলেন সাথে আরাফ ও ছুটে আসলো।আরাফ নবনিকে জড়িয়ে ধরলো।
নবনিঃআরায়াফ আরায়াফ।আমার বাবা কোথায়? বলেন কোথায় উনি?আপনি উনাকে মেরে ফেলেছেন?উনি নেই।
আরাফঃতোমাকে এই কথা কে বলেছে নবনিপাখি?কে বলেছে?
নবনিঃনার্স।আমাকে সব বলেছে।আপনি আমাকে মিথ্যা কথা বলেছেন।
আরাফ এর মাথায় সাথে সাথে রক্ত উঠে গেলো।কপালের রগগুলো ফুলে উঠলো।আরাফ রক্তাক্ত চোখে নার্স এর দিকে তাকাচ্ছে।
ডক্টরঃআর ইউ ম্যাড।একজন হাট এর পেশেন্টকে কেউ এভাবে বলে?
নার্স আবেগের বশে বলে ফেলেছিল।এখন ভয়ে সিটিয়ে গেলো।
আরাফঃগেট আউট।বের হয়ে যান আপনারা। আমি আজই নবনিকে নিয়ে চলে যাবো।
ডক্টর বের হয়ে যায়।নবনির কাদতে কাদতে হিচকি উঠে গিয়েছে।
আরাফঃনবনি পাখি।শান্ত হও।লক্ষিটা আমার। তুমি না আমার সব কথা শুনো।এমন করে না পাখি।এভাবে কাদলে তুমি অসুস্থ হয়ে পরবে।
নবনিকে আরাফ কোনো ভাবেই শান্ত করতে পারে না।আরাফ ও ভেঙে পড়ে। আরাফকে কাদতে দেখে নবনি চুপ হয়ে যায়।
আরাফঃতুমি এমন কেনো করছো। তোমার কিছু হলে আমি কি নিয়ে বাচবো?বাবা মা তো আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে।এখন তুমি চলে গেলে আমার কি হবে!! তোমরা কেউই আমাকে ভালোবাসো না।সবাই স্বার্থপর।সবাই নিজেরটাই দেখে আমারটা কেউই বুঝতে চায় না।
আরাফ এর কান্না দেখে নবনির আরাফ এর মায়ের বলা কথাগুলো মনে পরে গেলো।নবনি আরাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
নবনিঃআই এম সরি আরাফ।আই এম সরি।দেখেন আমি একটুও কাদবো না।আমি একদম ঠিক আছি।আমি বাচবো আপনার জন্য বাঁচবো।আপনাকে নিয়ে বাঁচবো।
এখন থেকে আমার পুরো পৃথিবী হয়ে উঠবে তোমায় ঘিরে।❤️আমরা একে অপরকে নিয়ে বাচবো।
রাজ মেহরাব আদ্রিতাকে নিয়ে কেবিনে ঢুকলো।তাদেরকে দেখে নবনি আরাফ নিজেদের শান্ত করে নিলো।বাবা মা হওয়াটা এত সহজ না।নিজের সন্তান এর দিকে তাকিয়ে হলেও সব ভুলে বাচতে হয়।
আরাফ নবনি মেহরাব আদ্রিতাকে কোলে তুলে নিলো।
রাজঃআপুনি। তুমি কেমন আছো এখন?
নবনিঃভালো আছি রে।বাসায় যেতে চাই গাড়ি রেডি কর।
রাজ আরাফ এর দিকে তাকায়।আরাফ ইশারায় সম্মতি জানাতেই রাজ চলে যায়।
আরাফ নবনি বাসায় এসে পৌছায়।বাসার চার কিনারে আদর চৌধুরী আর নিলীমা চৌধুরীর স্মৃতি গুলো মৌ মৌ করছে।আরাফ এর চোখ ঝাপসা হয়ে আসে।
ওয়ারদা নবনিকে নিয়ে সোফায় বসায়।আরাফ নিজের রুমে যেয়ে দরজা আটকে দেয়।নবনি আরাফ এর কান্ডে ভয় পেয়ে যায়।নবনিও উঠে আরাফ এর পিছনে যায়।
আরাফ সিক্রেট রুমটাতে যেয়ে ফাইলটা খুজতে থাকে।তখন চোখ ড্রাগসগুলোর উপরে পরে।ড্রাগস এর নিচে ফাইল ছিল। আরাফ সেটা দেখে স্বস্তি পেল।তারপর বের হতেই নবনির মুখোমুখি হলো।
নবনিঃআপনি ঠিক আছেন?
আরাফঃহ্যা।আমার কি হবে?
নবনি আরাফকে জড়িয়ে ধরলো।আরাফ কিছুই বুঝতে পারলো না।আরাফ ও নবনিকে জড়িয়ে ধরলো।
তানভীর এর ফোনটা বেজেই যাচ্ছে।তানভীর কল ধরছে না।
নিলয়ঃকলটা ধরো।দেখো কে কল দিয়েছে?
তানভীর বাধ্য হয়ে কলটা রিসিভ করে।
তানভীরঃহ্যা।বলো।
আমি তানিয়ার আম্মু।তুমি কি আমাদের বাসায় আসতে পারবে?
তানভীরঃকেন? কি হয়েছে?
তানিয়া সুইসাইড করার চেষ্টা করেছে।
কথাটা শোনামাত্র তানভীর বুকটা কেপে উঠলো।তানভীরঃঠিকানাটা দিন।
তানভীর কল রেখে দিলো।
নিলয়ঃকি হয়েছে??
তানভীরঃআচ্ছা যাকে আমরা ভালোবেসে ফেলি তার করা অন্যায় কি মাফ করা যায়?
নিলয়ঃকেন যায় না?অবশ্যই যায়।যদি না সে অন্যায়টা জেনে বুঝে করেছে।সে কি ইচ্ছে করে এই কাজ করেছে নাকি তাকে বাধ্য করা হয়েছে?
তানভীরঃআমি জানি না।আমি শুধু জানি আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। বুকের বা পাশটা ব্যাথা করছে।
নিলয়ঃতাহলে দৌড় দাও তার কাছে। বাকি সব বাদ। ভালোবাসা আগে।
আরাফ সিড়ে দিয়ে নামার সময় সব শুনতে পেলো।
আরাফঃহ্যা।দৌড় দাও।
তানভীরঃস্যার আপনিও।
আরাফঃহুম।ও যা করছে বাবার জন্য করেছে।যেখানে বাবাকে আমরা দোষী ভাবছি না সেখানে ওকে কেন দোষী করে রাখবো।তুমি এখন না গেলে চাকরেটা আর পাবে না বলে দিলাম।
নবনিঃআমিও দিবো না চাকরি।পরে অসহায় পেট চালাতে বিথির কাছে যেতে হবে।
তানভীরঃকখনোই না।আমি ওর জন্য কাজ করবো না।
তানভীর দৌড় দিলো।
আরাফঃআমার গাড়িটা নিয়ে যাও।কথাটা চেচিয়ে বললো।
তানভীর ও চেচিয়ে বললো না বললেও নিয়ে যেতাম।
আরাফ হা হয়ে গেলো।
নিলয় আর নবনি জোরে হাসতে লাগলো।
আরাফঃএ কেমন এসিস্ট্যান্ট। আমাকে পাত্তাই দেয় না।
নিলয়ঃহা হা হা।
আরাফ রেগে মেহরাব আদ্রিতাকে নিয়ে ধুপ ধুপ করে পা ফেলে উপরে চলে গেলো।
নবনিঃযাই মহাশয়ে রেগে গিয়েছেন।যেয়ে উনার রাগ ভাংগাই। আপনি থাকেন।
নিলয়ঃআচ্ছা।
নবনি উপরে চলে গেলো।
নিলয়ঃআহায়া।আরাফ এর কি ভাগ্য!ভাবী কতো ভালোবাসে আরাফকে। একটু রাগ হতেই পিছু পিছু চলে গেলো রাগ ভাংগাতে।
ধুরু আমি আফসোস করি কেন!আমি তো আর সিংগেল না।আমার ও বউ আসে।
নিলয়ঃওয়ায়ায়ারদায়ায়া।ওয়ায়ায়ারদায়ায়া
ওয়ারদাঃকি হয়েছে?চেচাচ্ছেন কেন?
নিলয়ঃআমি রাগ করেছি।
ওয়ারদাঃকিহহহহ।কিন্তু কেন?
নিলয়ঃজানি না।কিন্তু আমি রাগ করেছি।
ওয়ারদাঃতাহলে করে থাকেন।
কথাটা বলে ওয়ারদা চলে যেতে নেয়।নিলয় হাত চেপে ধরে। নিলয় ভীষন ক্ষেপে গেলো।
নিলয়ঃএটা কেমন কথা? আমি রাগ করেছি আমাকে মানাবে না!!তুমি এমন করতে পারো না।
ওয়ারদা নিলয় পাত্তাই দিচ্ছে না।
নিলয়ঃএটা ঠিক না। তুমি আমার সাথে এমন করতে পারো না।
ওয়ারদাঃহা হা হা। কেমন করতে পারি না।কেমন
বলে নিলয়কে ক্যাতুকুতু দিতে লাগলো। নিলয় খিলখিল করে হাসতে লাগলো।
ওয়ারদাঃদেখি কোথায় কোথায় রাগ করেছেন। দেখি দেখি।
নিলয়ঃনা না।আমি রাগ করি নাই।মাফ করো।
ওয়ারদাঃহি হি হি।
তানভীর গাড়ি নিয়ে ওয়ারদা বাসায় পৌছালো।গেট নক করতেই তানভীর এর মা গেট খুলে দেয়।
তানভীরঃআমিই তানভীর যাকে কল করেছিলেন আপনি।
বিথির আম্মুঃতানিয়া ভিতরেই আছে।আসো।
তানভীর বিথির রুমে যেয়ে দেখলো বিথি বিছানায় শুয়ে আছে।
বিথির আম্মুঃতুমি বসো বাবা।আমি চা নাস্তা নিয়ে আসছি।
তানভীর বিথির পাশে বসে বিথির মাথায় হাত রাখলো।বিথি চোখ খুললো।
বিথিঃআপনি?
তানভীরঃঅন্য কাউকে আশা করেছিলে?
বিথিঃআপনিতো রেগে ছিলেন আমার উপর।
তানভীরঃসে জন্য মরতে হবে?
বিথিঃআই এম সরি। আমি আংকেল কথা মতো সব করেছিলাম। আমি জানতাম না এতো কিছু হয়ে যাবে।
তানভীরঃতা কেমন করে মরতে গেলে যে বেচে গেলে?
বিথি কাদো কাদো ফেস করে বললো।মরলে খুশি হতেন বুঝি?
তানভীর ঠাস করে একটা থাপ্পর লাগালো। বিথি হা করে তাকিয়ে রইলো।
তানভীরঃবেয়াদব মেয়ে।তুই কোন সাহসে মরতে গেলি?কে দিলো তোকে পারমিশন?আমি দিসি?
বিথিঃআপনি আমার কি হন যে আপনার পারমিশন নিয়ে মরতে হবে?
তানভীরঃতোর হবু জামাই। একবার বিয়েটা হতে দে।থাপড়ায়া সোজা বানায়া ফেলবো।
বিথিঃআমি ও।
তানভীরঃআমি ও কি?
বিথিঃভালোবাসিইই।
তানভীর বিথিকে জড়িয়ে ধরলো।ভালোবাসি গো।হবু বউ। আর কখনো এমন কাজ করবে না।
বিথিঃআর আপনিও আমাকে আর কখনো মারবেন না।
তানভীরঃ হা হা হা। আচ্ছা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
৬২তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন