উপন্যাস       :         অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

1111111111111111111111111111111

১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ১৫)

২৪ ঘন্টা পুরো হয়ে গেলো আহসান এর সাথে আর যোগাযোগ হয় নেই।সিমরান বুকে কষ্ট চেপে হাসিমুখে সব কিছু করছে।তাকে দেখে বোঝা দায় ভিতরে কি চলছে।
হঠাৎ শব্দ করে মোবাইলটা বেজে উঠলো।সিমরান কলটা রিসিভ করতেই অপরপাশ থেকে সুমধুর সালাম এর কন্ঠ শোনা গেল।
ওয়ালাইকুম আসসালাম।ভালো আছেন?
থাকতে দিলে কই?
দুই জন এর মাঝে কঠিন নিরবতা।
_বিয়ে করবে আমাকে?জান?
সিমরান কথাটা শোনা মাত্র ফ্রিজ হয়ে গেলো।কি বলবে ভাষা হারিয়ে ফেললো।
_থাকতে পারছি না তোমাকে ছাড়া।এক মুহূর্ত ও থাকা সম্ভব না।বিয়ে করবে আমাকে বলো।তোমার অনুমতি ছাড়া আমি কখনো তোমার কাছেও যাবো না।করবে আমাকে বিয়ে?
_কিন্তু আপনি তো চাকরি পান নেই।আব্বুকে 
_আমি কাজী সাক্ষী সব রেডি করেছি।বিয়েটা শুধু ইসলামিক ভাবে হবে। আইনগত ভাবে দুই ফ্যামিলিকে নিয়েই বিয়ে করবো আমরা।এখন গোপনে বিয়েটা করে রাখি।যাতে আমাদের সর্ম্পকটাকে বৈধতা দিতে পারি।আর তোমার বয়স ও মাত্র ১৬।এখন আইনী ভাবে ও বিয়ে করা সম্ভব না।
সিমরান কি সিধান্ত নিবে ভাবতে পারছে না।শুধু মাথায় একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে যে মা বা হয়তো একটা সময় পর মেনে নিবে কিন্তু আহসানকে একবার হারালে আর পাওয়া যাবে না।বিয়ে করে রাখলে কখনো নিজের মাঝে হারাম নামক অনুশোচনা কাজ করবে না।আর আল্লাহর কাছে কালকে সবটা ছেড়ে দিয়েছিলাম।আল্লাহই হয়তো এমন একটা রাস্তা বের করেছেন।
সিমরানঃআমি রাজি।কবে করবেন বিয়ে?
আহসানঃতুমি যখন বলো।
সিমরানঃকালকেই করি?
আহসানঃআচ্ছা। তাহলে আমি রাখি সব কিছু ম্যানেজ করতে হবে।
সিমরান কল রেখে তার বেস্ট ফ্রেন্ডকে কল দেয়।আর সবকিছু খুলে বলে।
_দোস্ত। ভাইয়া অনেক ভালোবাসে রে তোকে।তুই ঠিক সিধান্তই নিয়েছিস।মা বাবা রেগে থাকলেও মেনে যায় কিন্তু ভালোবাসার মানুষটাকে হারিয়ে গেলে অনুশোচনায় সারা জীবন চলে যায়।
প্রথম ভালোবাসা এমন একটা জিনিস যে তুমি যতই চাও কখনো এটা ভোলা সম্ভব না।জীবনে যত মানুষই আসুক তার মতো করে ভালো রাখতে পারবে না।যদি ভালোবাসার মানুষটা সঠিক হয় তাকে আকড়ে ধরে রাখা খুব প্রয়োজন।জীবনে বার বার এমন মানুষ আসে না।আর আমি দেখেছি ভাইয়া তোকে চোখে হারায়।
ধন্যবাদ। দোস্ত।তোর মতো ফ্রেন্ড সবারই থাকা উচিত।
ধুরো।তুই মেহেদী লাগা। কালকে তোর বিয়ে। আর ভাইয়া কিছু দিবে না।চুড়ি?সাজ এর জিনিস?
আমি জানি না রে।
আচ্ছা দাড়া। আমি দেখছি।
আচ্ছা।
সিমরান এতোক্ষন মিতুর সাথে কথা বলছিলো।মিতু সিমরান এর ফ্রেন্ড। 
মিতু আহসানকে কল দিলো।
_আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া।
_ওয়ালাইকুম আসসালাম।
_ভাইয়া কিছু বলার ছিলো। 
_হ্যা।বলো।আপু। কি বলবা?
_সিমরান এর বিয়ের জন্য নতুন কিছুতো পরতে হবে।তুমি ওরে চুড়িই কিনে দিতে।
_ওহ। ধন্যবাদ আপু মনে করিয়ে দেয়ার জন্য।আমি এতকিছুর মাঝে ভুলে গিয়েছিলাম।আমি নিয়ে আসছি।
_আচ্ছা।
আহসান সাথে সাথে বেরিয়ে পড়লো।পুরো মার্কেট ঘুরে একটা চুড়িও পচ্ছন্দ হয় নেই আহসান এর।তখনই গোলাপি রংয়ের একটা চুড়ি চোখে পড়লো।
আহসানঃমামা।এই চুড়িটা প্যাক করে দিন। 
দোকানদারঃএটার দাম ২০০ টাকা মামা।
আহসানঃআরে আপনার টাকার কথা ভাবতে হবে না।আমার বউয়ের হাতে মানাবে মানে আমি এটা নিবোই এখন যত টাকাই নেক।সমস্যা নেই।
দোকানদারঃসাইজ ঠিক আসে দেখেনতো।
আহসান চুড়িটাকে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দেখলো। তারপর বললো হ্যা ঠিক আছে প্যাক করে দেন।
চুড়ির পাশেই বউরা বিয়েতে পরে ঝুমকোর মতো ঝুলানো চুড়িও চোখে পড়লো।
আহসানঃমামা।মামা। এটাও প্যাক করে দেন।
আহসান চুড়ির পিক তুলে সিমরানকে পাঠিয়ে দিলো। 
সিমরান চুড়ি দেখে অনেক খুশি হলো।
আহসান কল দিলো সিমরানকে। 
_কেমন লাগলো জান পাখি?
_খুব সুন্দর।কত নিয়েছে?
_২০০ টাকা। 
_কিহ!!এতো দাম। আপনাকে ঠকিয়ে ফেলেছে।দামাদামি করবেন না!!ধুর আপনি পারেন না।আমাকে নিয়ে গেলেই হতো।এতো দাম নিয়ে নিয়েছে।
_উফফ।বেশি কথা বলো।জীবনে প্রথম বিয়ে করছি। মন খুলে খরচ করতে দিবে তো। নাকি!
_মানুষ জীবন এ কয় বার বিয়ে করে?
_অনেক বার।
_কি বললেন!!কয়টা বিয়ে করতে চান!!একটা দিয়ে হয় না?
_আরে আমি কি বলছি নাকি অন্য কাউকে বিয়ে করবো?আমি তোমাকেই অনেক বার বার বিয়ে করবো।আমার মিষ্টি বউটা। 
সিমরান লজ্জা পেয়ে কলটা কেটে দিলো।
পরের দিন আহসান এর এক বন্ধুর বাসায় সিমরান আর আহসান বিয়ের আয়োজন করা হয়।বিয়ের সময় যখন কবুল বলতে বলা হয় সিমরান অনেক সময় নেয়।
সিমরানঃসবসময় দেখতাম বিয়ের সময় আপুরা কান্না করে।আমি ভাবতাম হয়তো পরিবার ছেড়ে চলে যাবে।তাই কান্না করে কিন্তু না আজ বুঝলাম কান্না কারনটা এটা না।কেননা আমিতো এখান থেকে আমার বাসায়ই যাবো তারপর আমার মুখ থেকে কবুল নামক ছোট্ট শব্দটার উচ্চারণ হচ্ছে না।
আজ থেকে আমার বাবার পরিচয়ের জায়গা স্বামী নামক পরিচয় জুড়ে যাবে।আমার সব দায়িত্ব উনাকে বহন করতে হবে।শুধু তাই নয় কবুল বলার পর থেকে আমার করা গুনাহের দায় ভার ও উনার উপর ন্যস্ত হবে।কারন উনি আমার স্বামী।
একটা মেয়ে জন্মের পর তার সকল গুনাহর জবাব তার বাবাকে দিতে হয়।কারন উনি ঠিক ভাবে গাইড করতে পারেন নাই।আর বিয়ের পর স্বামী।কারন সে তার স্ত্রীকে সঠিক নির্দেশনা দিতে পারে নাই।
এমনই অনেক অনেক  কথা মনে পড়ে গেলো এই মুহূর্তটাতে। মনে পরে গেলো আব্বু আম্মু চেহারাটা।একবার মনে হলো ছুটে পালিয়ে যাই তাদের কাছে আবার মনে হলো না কোরওয়ান সামনে রেখে আজ আমাকে এই মানুষটাকে কবুল করতেই হবে।এটাই যে আমার ভালোবাসার পরীক্ষা।
হালাল হারাম এর মধ্যে নিরব যুদ্ধ।
আহসানঃচলে যাবো?বলবে না কবুল?মন না সায় দিলে বলতে হবে না। আমি তোমাকে দিয়ে আসি বাসায়।
সিমরানঃকবুল কবুল কবুল।
চোখ দিয়ে পানি নিচে পড়ার আগেই আহসান পানিটা নিজের হাতের তালুতে আবদ্ধ করে নিলো।
আস্তে করে কানের কাছে এসে বললো।
আজকে কেদেছো।এটাই যেন শেষ কান্না হয়।আমার মৃত্যুর আগে আর কখনো এভাবে কাদবে না।বুঝেছো।আমি আজ তোমার চোখের পানির ও জিম্মা নিলাম।আর কখনো এক ফোটা পানিও জমতে দিবো না আমার বউয়ের সুন্দর সুন্দর অক্ষিগোলকে।
আমি অবাক নয়নে তাকালাম উনার দিকে।আসলে আমি খুব ভাগ্যবতি যে এমন স্বামী পেলাম।নিকাব এর আড়ালে হারিয়ে যাওয়া চোখের পানি গুলোও তার নজরে পরলো।একটা মানুষ কতটা মনোযোগ দিয়ে ভালোবাসলে সব কিছু নিখুত ভাবে অবসার্ভ করতে পারে।
এমন কাউকে পেলে প্রতিটা মেয়েই তাকে হারাতে ভয় পাবে।পুরুষতান্ত্রিক সমাজে বউকে ভালোবেসে পাগলামী করবে এমন কয়জন পুরুষই বা আছে।
বিয়ের কাজ শেষে বের হবো তখন মনে পড়লো।
সিমরানঃআমার চুড়িটা কই?
আহসানঃআমার পকেটে।
সিমরানঃবিয়ে শেষ।এখন আপনি এই চুড়ি পকেটে করেই নিয়ে যান।কথাটা বলে বেরিয়ে রাস্তায় হাটতে লাগলাম।
আহসানঃআর এ আমি ভুলে গিয়েছিলাম তো। এতোকিছু কি মনে থাকে বলো।ও বউ শুনো না।ভুল হয়ে গিয়েছে।
কে শুনে কার কথা। সিমরান হাটতে লাগলো।
আহসান হুট করে রিকশা নিয়ে নিলো।
আহসানঃউঠো।আমাকে রাগায়ো না।তুমি জানো রাস্তা সিন ক্রিয়েটা করা আমার একটুও পচ্ছন্দ না।
আহসানকে রেগে যেতে দেখে সিমরান রিকশায় উঠে গেলো।আহসান চুপচাপ বসে আছে।
সিমরানঃএমনিতে সারাক্ষন হাত ধরতো। যখন তখন আদর করতো। এখন বউ হয়ে গিয়েছি তো রুচি উঠে গিয়েছে।এখনতো আমাকে ভালো লাগে না।বিয়ের পর পরই পল্টি মারছে।ইনার সাথে সারাটা জীবন কি করে কাটাবো (মনে মনে)।
আহসান নিজের মতো করে বসে রাস্তা দেখছে।
সিমরান আহসান এর হাতে পাচ আংগুলে মাঝে নিজের হাত গুজে দিতেই আহসান তা আকড়ে ধরলো।
আহসানঃরাগ ঠান্ডা হয়েছে?
সিমরানঃনা।
আহসানঃতো হাত ধরছো কেন?
সিমরানঃকোথায় লিখা আছে রেগে থাকলে হাত ধরা যায় না।
আহসানঃএতো রাগ কেন তোমার।নাক এ সব সময় রাগ নিয়েই ঘুরো।একটু একটুতে রেগে লাল হয়ে যাও।আমার টমেটো বউ।
সিমরানঃকি বললেন?!!এখন কিন্তু ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিবো রিকশা থেকে। 
আহসানঃহ্যা। দাও। দাও না।ফেলেই তো দিবে।এখন স্বামী হয়ে গিয়েছি না।এখন কি আর আমাকে পাত্তা দিবা। এখন তো আমাকে আংগুলে করে নাচাবে।
সিমরান হেসে দিলো।
আহসানঃহেসো না।এই হাসি দিয়েই আমাকে খুন করছো।
সিমরান আবারো হাসতে লাগলো।
আহসান চুড়িগুলো বের করে সিমরান এর হাতে পরিয়ে দিচ্ছে।
আহসানঃব্যাথা পাচ্ছো?ব্যাথা পেলে কিন্তু বইলো।
সিমরানঃআপনি যেভাবে হাতটা ধরেছেন।মনে হচ্ছে হাত না কাচ। একটু চাপ লাগলেই ভেংগে যাবে।
আহসানঃহুম।তো তুমি ব্যাথা পাবে না বেশি জোরে ধরলে।
আহসান সুন্দর করে ৩ টা ৩ টা করে আস্তে আস্তে করে কাচের চুড়িগুলো সিমরান এর হাতে পড়িয়ে দিলো।
সিমরানঃআমার হাতে মাপ কি করে জানেন?
আহসানঃতোমার সবকিছুই আমি জানি।আমার বউ এর টা আমি জানবো না তো কে জানবে।
সিমরানঃআমি তো জীবনেও ছেলেদের কিছু কিনতে পারতাম না।আর আপনি কি সুন্দর ঠিক মাপের কিনে ফেললেন।ইম্প্রেসিভ।
আহসান মুচকি হাসলো।
সিমরানঃআপনি জানেন আমি নিজেও জানিনা আমার হাতের পায়ের মাপ কি!!
আহসানঃআমার থেকে জেনে নিও। আমি জানি। 
সিমরান অবাক নয়নে তাকালো।
আহসানঃঅবাক হওয়ার কিছুই নেই।সব স্ত্রীরই যা যা লাগে এগুলো মাপ গঠন তার থেকে ভালো তার স্বামীই বলতে পারে।এটা আমাদের ছেলেদের স্বামীগত গুণ।
সিমরানঃকিন্তু কিভাবে?
আহসানঃআজকেই তো বিয়ে হলো।আস্তে আস্তে বুঝে যাবে কি করে জানি।
সিমরান কিছুই বুঝতে পারলো না।
আহসান সিমরানকে নিয়ে বসুন্ধরা মার্কেটে এসেছে।
সিমরানঃআমরা এখানে কেন এসেছি?
আহসানঃভিতরে চলো জানতে পারবে।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...

১৬ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন