উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২২)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২৩)

এক প্লেট আপেল নিয়ে হসপিটালের বেডের পাশে রাখা টুলে বসে অতুল। এক টুকরো আপেল বোনের মুখের সামনে ধরে অতুল বললো
- নে হা কর।
বেডে বসে থাকা তিথি বললো
- আমি তো নিজে নিজেই খেতে পারবো। তুই শুধু শুধু ,,,,,, 
অতুল বোনের মুখে এক টুকরো আপেল ঢুকিয়ে দিয়ে বললো
- চুপচাপ খা তো।
মুখে থাকা আপেলের পিসটা খেয়ে তিথি জিজ্ঞেস করল
- পড়াতে যাবি না?
অতুল আরও একটুকরো আপেল তিথির মুখে দিয়ে বললো
- না। ফোন করে বলে দিয়েছি এই সপ্তাহে যাবো না।
আপেলের টুকরোটা মুখে নিয়েই তিথি প্রশ্ন করল
- কেন?
- তোকে হসপিটালের রেখে আমি পড়াতে যাবো?
- দেখ পড়াতে না গেলে না যা। কিন্তু রেস্ট তো নিবি। বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নে। সামনে তোর এযাম। ভার্সিটিতে তে যা। আমি তো একা একা সব করতে পারি৷ সমস্যা হবে না। হলেও নার্সরা তো আছেই।
এদিকে, সাদা হসপিটালের বেডে বসে থাকা তিথি দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে আয়ান। স্কুলে সব সময় বেনি করে যায় তিথি। এই প্রথম তাকে খোলাচুলে দেখছে আয়ান। এই বাধন মুক্ত চুলগুলো যেন মেয়েটার সৌন্দর্য বাড়িতে দিয়েছে আরো কয়েকগুল। আরও কাছ থেকে দেখতে ইচ্ছে করছে তার ভালোবাসাকে। তাই কেবিনের দরজায় নক করে জিজ্ঞেস করল
- আসবো?
অতুল দরজা দিকে তাকিয়ে, আয়ানকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে ঠোঁট দুটো প্রসারিত করে বললো
- আয়ান ভাইয়া আসুন, আসুন।
আয়ান কেবিনে ঢুকতে ঢুকতে বললো
- তোমার আপু ঠিকই বলেছে। বাসায় গিয়ে একটু রেস্ট নেও। বিকেলের দিকে এসো। রাতে এখানে থেকে। আমি তো আছি। আমাকে ভরসা করতে পারো।
এই কয়েকদিনে আয়ানকে দেখে অতুল বুঝেছে যে, এই লোকটা তার বোনকে পাগলের মতো ভালোবাসে। আর তার বোনও এই লোকটাকে খুব ভালোবাসে। তার মিনে হলো এদের দুজনকে একটু একা কথা বলতে দেওয়া উচিত। তাই সে বললো
- আচ্ছা আমি বাসায় যাচ্ছি বিকেলের দিকে আসবো।
বলেই হাতের খালি প্লেটটা টেবিলের উপর রেখে অতুল উঠে দাঁড়ায়। তিথি হাসি মুখে বললো
- সাবধানে যাস।
- আচ্ছা।
বলেই অতুল কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। অতুলের যায়গায় আয়ান এসে বসে। তিথি আয়ানের মুখের দিকে তাকায়। তার ভায়ের মুখের মতো আয়ানের চোখ মুখও এই কয়দিনে বেশ শুকিয়ে গিয়েছে। চোখ নামিয়ে অপরাধীর কন্ঠে বললো
- সরি। সেদিন আপনাকে একটু বেশি বাজে কথা বলে ফেলেছি।
আয়ান শান্ত কন্ঠে বললো
- একজন মানুষকে তার ফ্যামিলির ফাইনান্সিয়াল কন্ডিশন দেখে বিচার করা যায় না। ফ্যামিলির ভালো শিক্ষা, ভালো মানুষ বানায়। সেই ফ্যামিলি গরীব হোক বা ধনী, তাতে কিছু যায় আসে না।
একটু থেমে আবার বললো
- তবে ভালোই হয়েছে, তুমি যদি আমাকে এই কথাগুলো না বলতে তাহলে, আমি রাগও করতাম না। আর জানতেও পারতাম না তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো। শুধু গুলিটা না লাগলেই হতো। খুব কষ্ট হয় না তোমার।
মুখটা মলিন করে তিথি দিকে তাকিয়ে থাকে সে। তিথি আয়ানের সেই মলিন হয়ে থাকা মুখের দিকে তাকিয়ে বললো
- প্রিয় মানুষগুলোর এতো ভালবাসায় কষ্টগুলো পালিয়ে গিয়েছে।

সরি দা নাম্বার ,,,,,,,
কতোটুকু শোনার পরই চন্দ্রা একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে ফোন কেটে দিল। কাঠের টেবিলের উপর তিন কাপ চা থেকে এক কাপ চা হাতে তুলতে তুলতে শুভ্র বললো
- ফোন না করে কোন মাঠে যা। গিয়ে দেখ তোর ব্যা ব্যা করা বেড়া, মাঠে গিয়ে ব্যা ব্যা করছে আর ঘাস খাচ্ছে।
চন্দ্রা টেবিলের উপর থেকে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে রাগী কন্ঠে বললো
- আর একবার আহানকে ব্যা ব্যা করা বেড়া বলে দেখ তোর মাথায় আমি এই গরম চা ঢালবো।
শুভ্র ভাব নিয়ে বললো
- হাজার মেয়ের ক্রাশের মাথায় তুই গরম চা ঢাললে তোর কি মনে হয় তোর মাথার চুল একটাও থাকবে।
চন্দ্রা দ্বিগুণ ভাব নিয়ে বলল
- হাজার মেয়ে তোর পিছে ঘুরে আমার জন্য।
শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- তোর জন্য কিভাবে?
চন্দ্রা তার ভাব বজায় রেখে উত্তর দিল 
- তুই আমার মতন সুন্দরী মেয়ের বেস্টু তাই।
শুভ্র দাত কেলিয়ে বলল
- তুই সুন্দরী হলে, পেত্নী বলে কেউ পৃথিবীতে কেউ নেয়।
চন্দ্রা রেগে কটমট করে শুভ্রের দিকে তাকিয়ে বলল
- আজ তোর খবর আছে।
বলেই উঠে শুভ্রকে মারতে উদ্ধত হলে, শুভ্র তাড়াতাড়ি করে বলল
- এই! এই থাম! থাম, গরম চা পরবে।
দীপ্তি সাধুদের ভঙ্গি করে বললো
- বৎসরা এভাবে ঝগরা করে না। কাউকে শিক্ষা দিতে চাইলে আমার মতো চুপচাপ দেও।
শুভ্র বাকা হেসে বলল
- হ তারপর বাড়ি গিয়ে সরি বল।
কিছুক্ষণ আগে পরস্পরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা চন্দ্র আর শুভ্র সহমত প্রকাশ করে হাইফাই করল। তা দেখে দীপ্তি চোখ পাকিয়ে বললো
- এই কুদ্দুস আলী যে এতো কম্পিউটারে এক্সপার্ট। তা কে জানতো।
চন্দ্রা মুখ কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কুদ্দুস আলী কে?
দীপ্তি চায়ের কাপে চুপুক দিয়ে বললো
- ওহ ওইটা আমার খবিশ ক্রাশের নিউ নেম।
শুভ্র চায়ের কাপটা মুখের সামনে ধরে সেদিকে তাকিয়ে বললো
- তবে যাই বলিস। আই থিংক আমাদের রোদ স্যারের সম্পর্কে এখনো অনেক কিছু জানা বাকি আছে।
চন্দ্রা শুভ্রবের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করল
- তোর এমন মনে হওয়ার কারণ? আমরা তো ওনার ফেসবুক আইডি থেকে শুরু করে মেইল এড্রেস পর্যন্ত সব কিছুই হ্যাক করে দেখেছি। কিছুই তো পেলাম না।
শুভ্র চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিয়ে বললো
- এগজ্যাক্টলি, এটাই আমার সন্ধেহের কারণ। উনি ক্যালিফোর্নিয়া ইনস্টিটিউট অব টেকনোলজি এর স্টুডেন্ট। তাও আবার কম্পিউটার সাইন্স এর। তার আইডি, মেইল এতো সহজে আমরা হ্যাক করে ফেলেছি! বিষয়টা হজম হচ্ছে না। মনে হচ্ছে উনি এগুলো হ্যাকারদের জন্য ইচ্ছে করেই রেখে দিয়েছে। নে বাবারা তোরা হ্যাক কর। আর তাছাড়া এতো বড় একটা বিজনেসম্যান এর ছেলে। সে বিজনেসের সাথে যুক্ত থাকবেই। কিন্তু সেই সম্পর্কেও কিছু পেলাম না!
দীপ্তি চায়ের খালি কাপটা কাঠের টেবিলের উপর রেখে বললো
- হুম, আমার কাছেও তাই মনে হচ্ছে। তবে আমি ওনার সম্পর্কে সব জেনেই ছাড়বো। এখন থেকে আমার দুটোই লক্ষ। এক, "মিষ্টার ই" কে তা জানা। আর দুই, রোদ চৌধুরী সম্পর্কে ফুল ডিটেলস জানা।

মরিয়ম হসপিটালের সামনে তূবাদের গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি ব্রেক করলে, পিছনে থাকা দোলা আর কুহুর প্যাসেঞ্জার বিহীন গাড়িও থামে। তূবাদের গাড়ি থেকে তূবাকে ধরে নিয়ে নামে দোলা আর কুহু। তূবার মুখ ফ্যাকাসে। তাকে একপাশ থেকে কুহু আর অন্যপাশ থেকে দোলা ধরে রেখেছে। তিনজনের গায়েই কলেজ ড্রেস। দেখেই যে কেউ বলে দিতে পারবে তারা ডাইরেক্ট কলেজ থেকে এখানে এসেছে। তিনজন চলে যায় হসপিটালের ভিতরে। হসপিটালের প্রায় সবাই তূবাকে চেনে আর ভালোও বাসে। তাই তারা তূবাকে এমন অবস্থায় আসতে দেখে, ছুটে তূবার কাছে আসে। একজন নার্স প্রশ্ন করে
- ম্যাম কি হয়েছে আপনার?
অন্য একজন একজন নার্স জিজ্ঞেস করল
- ম্যাম আমরা কি ধরবো?
একজন ওয়ার্ডবয় জিজ্ঞেস করল
- স্ট্রেচার নিয়ে আসবো ম্যাম?
তূবা মিষ্টি হেসে বললো
- কিছু লাগবে না। আমি ঠিক আছি।
অন্য আরও একজন নার্স আমতা-আমতা করে বললো
- কিন্তু ম্যাম ,,,,,,
কুহু খুব সাবধানে পিছনের দিকে তাকিয়ে দেখে তাদের গাড়ি বা ড্রাইভারদের দেখা যাচ্ছে না কি? যখন দেখল যে তাদের গাড়ি আর দেখা যাচ্ছে না। তখন তূবাকে উদ্দেশ্য করে নিচু কন্ঠে বললো
- এভরিথিং ওকে।
কুহুর কথা শুনে তূবা সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে হাসি মুখে বললো
- এই দেখ আমি একদম ঠিক আছি।
তারপর জিজ্ঞেস করল
- তোমরা শুধু আমাদের বল কালকে এডমিট হওয়া পেসেন্ট মিস তাবরিয়া ইসলাম তিথি কোন কেবিনে আছে?
তিথির ফ্লোরের একজন নার্স সেখানে উপস্থিত ছিল। সে উত্তর দিল
- ম্যাম উনি তিনশো এক নং কেবিনে আছেন।
- থ্যাংক ইউ।
বলেই তূবা, কুহু আর দোলা লিফটে উঠে থার্ড ফ্লোরে চলে যায়। কেবিনের বাহিরে দাড়াতেই দোলা তার দুই বান্ধবী কুহু আর তূবার হাত টেনে ধরে। তারা দুজনেই দোলার দিকে তাকায়। তূবা স্বাভাবিক ভাবেই জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে?
দোলা মলিন মুখ করে বললো
- ভয় করছে।
কুহু চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো
- এখন তোর সাথে দুটো এক্সট্রা কলিজা আছে। তাও তোর ভয় করছে!
দোলা মিষ্টি হেসে বললো
- না, এখন আর ভয় করছে না।
তূবা আঙুল উঁচিয়ে সামনে দেখিয়ে বললো
- তাহলে চল।
- হুম্ম।
বলেই কেবিনের দরজায় নক করে দোলা পুনরায় বলল
- আসতে পারি।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৪)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন