উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৫)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ২৬)

হসপিটাল থেকে বাসায় ফিরেছে অভ্র। গলার ঝুলানো নীল রঙের টাইয়ের নটটা ডান হাত দিয়ে খুলতে খুলতে ড্রয়িংরুমে আসে সে। ড্রয়িংরুমে পা রাখতেই রাগে চোখ মুখ শক্ত হয়ে যায় তার। তখন ড্রয়িং রুমের সোফায় বসে টিভি দেখছিল আর হাসাহাসি করছিল তূবা আর বিশাল। অভ্র রাগী কন্ঠে বললো
- তূবা তোর না সামনে টেস্ট এক্সাম। তুই পড়া রেখে বসে বসে টিভি দেখছিস। যা গিয়ে পড়তে বস।
তূবা অভ্রের দিকে তাকিয়ে বললো
- তুমি এসে পড়েছ। 
অভ্র তূবার কথায় পাত্তা না দিয়ে, আগের মতো রাগী কন্ঠে বললো
- পড়তে যা।
তূবা মিষ্টি করে বললো
- আর একটু বাক ,,,,,,,,,,,,,
তূবার কথা শেষ করতে না দিয়ে অভ্র ধমক দিয়ে বললো
- এখন যা।
তূবার মনটা খারাপ হয়ে যায়। অভ্র তাকে ধমক দেক, শাসন করুক। প্রয়োজনে তার গায়ে হাত তুলুক। কিন্তু বিশালের মতো বাহিরের একজন মানুষের সামনে কেন তাকে শুধু শুধু ধমকাবে। খুব অভিমান হয় তার। অভিমানে অভ্রকে কিছু না বলে উঠে দাঁড়ায়। তূবা উঠে দাড়াতেই বিশাল বললো
- ভাইয়া বকছো কেন। ও তো এতোক্ষণ পড়ছিলই। এই একটু আগেই তো উঠে এলো। একটু রিফ্রেশমেন্ট এর তো দরকার আছে। সারাদিন পড়লে তো নিজেকে পাগল পাগল লাগবে।
অভ্র রাগী কন্ঠে বললো
- আমি যখন স্টুডেন্ট ছিলাম তখন সারাদিন পড়তাম। কোথায় আমার তো পাগল পাগল লাগেনি। 
বিশাল হেসে বললো
- তুমি তো এক্সেপশনাল।
অভ্র বিরক্ত নিয়ে বললো
- এক্সেপশনাল বলতে কিছু নেই। তূবা এখনো দাঁড়িয়ে আছিস কেন? যা পড়তে যা।
 তূবা পা বাড়ানোর আগেই বিশাল দাঁড়িয়ে বললো
- চলো তূবা আমি আজকে তোমাকে পড়ায় হেল্প করি।
অভ্র গম্ভীর কন্ঠে বললো
- না। তুই গেলে পড়া হবে না।
তূবা আর দাঁড়ায় না। চুপচাপ রুমের দিকে চলে যায়। অভ্রও নিজের রুমে চলে যায়। আর বেচারা বিশাল একা একা টিভির সামনে বসে থাকে।

রাত দশটা পনেরো বাজে পড়ার টেবিল বসে মনোযোগ দিয়ে পড়ছে তোয়া। হঠাৎ পাশে রাখা ফোনটা বেজে উঠলো। বইয়ের দিকেই স্থির দৃষ্টি রেখে পাশে হাত বাড়িয়ে ফোনটা নেয় সে। স্কিনের দিকে না তাকিয়েই কল রিসিভ করে সে। কানে দিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?
ফোনের ওপাশ থেকে অভি বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালাম। ফোনের স্কিনের নাম দেখার সময় হল না। এই অধমের সাথে কথা বলার সময় কি হবে রানী সাহেবার।
তোয়া মুখে মিষ্টি হাসি খেলে গেল। মিষ্টি কন্ঠে বললো
- অবশ্যই হবে।
অভি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- ধন্য এই অধম রানী সাহেবা।
তোয়া হালকা শব্দ করে হেসে ফেললো। অভি তোয়ার হাসির শব্দ শুনে বললো
- এমন করে হেসো না গো মেয়ে। বুকে ব্যথা করে। এই ব্যথার ওষুধ কিন্তু তুমিতে ছাড়া আর নেই।
তোয়া হাসি মুখেই বললো
- কি যে বল না তুমি অভি ভাইয়া।
তোয়ার মুখের এই ভাইয়া ডাকটা অভির কানে খুব বাজে। কে যে ভাইয়ের বন্ধুকে ভাই ডাকা আবিষ্কার করল? সে কি জানে, তার এই আবিষ্কারের ফলে কতো কতো গোপন প্রেমিকরা বুক ব্যথার রুগী হয়ে যাচ্ছে। একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে, শান্ত কন্ঠে বললো
- এই অধমের জন্য একটু কষ্ট করে বারান্দায় আসতে পারবে রানী সাহেবা।
তোয়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- বারান্দায় কেন?
অভি উত্তর দিল
- কারণ এই অধম তোমাকে এক প্রলক দেখার জন্য, তোমার বাসার সামনের রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে।
তোয়া অবাক হয়ে বললো
- হোয়াট!
তারপর দৌড়ে বারান্দায় গিয়ে দেখে অভি রাস্তার পাশে গাড়ি পার্ক করে, গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ফর্সা গায়ে কালো প্যান্টের উপর ইন করা সাদা শার্ট। শার্টের হাতা কনুই পর্যন্ত ভাঁজ করা। গলার সাদা-কালো কম্বিনেশনের টাইটার নট লুজ করা। মাথার চুলগুলো কিছুটা এলোমেলো। ডান হাতে ফোন কানে ধরে দোতলায় তোয়ার বারান্দার দিকে তাকিয়ে আছে সে। মুখে ক্লান্তির ছাপ, ঠোঁটে মিষ্টি হাসির রেখা। তোয়া জিজ্ঞেস করল
- এতো রাতে তুমি এখানে কেন ভাইয়া?
বারান্দায় দাঁড়ানো তোয়ার দিকে তাকিয়ে অভি বললো
- নিউ প্রোজেক্টের কাজের চাপে, তোমার সাথে গত এক সপ্তাহ দেখা করতে পারিনি। তাই আজ প্রোজেক্টের কাজটা শেষ করে, সোজা তোমাকে দেখতে চলে এলাম।
তোয়া আবার জিজ্ঞেস করল
- কেন? আমার সাথে প্রতি সপ্তাহে দেখা করতে হবে কেন? না করলে কি হয়?
অভি বাম হাতটা নিজের বুকের বামপাশে রেখে বললো
- এইখানে খুব কষ্ট হয়।
ঠিক তখনি দমকা হাওয়ার সাথে গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি শুরু হয়ে গেল। তোয়া অস্থির হয়ে বললো
- এই! এই! বৃষ্টি পরছে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে উঠে পড়ো, না হলে ঠান্ডা লেগে যাবে।
অভি গাড়িতে উঠলো না, সোজা হয়ে দাঁড়ালো না। আগের অবস্থায় থেকেই মিষ্টি হেসে বললো
- “এই বৃষ্টির নেশা তে,
চাই মন হারা তে।
সব সীমা ছাড়িয়ে,
মন চাই শুধু তোমাকে।” (সংগৃহীত)

হোয়াইট বোর্ডে কিছু ইম্পটেন্ট কোশ্চেন লিখছে রিশান। লেখা শেষ হলে, ক্লাসরুমে টিচারদের জন্য বরাদ্দকৃত চেয়ার টেবিলের চেয়ারটা টেনে তাতে বসে সে। আড় চোখে একবার তার মায়াবিনীর দিকে তাকায়। তার মায়াবিনীর নজর এখন হোয়াইট বোর্ড টু খাতা, আবার খাতা টু হোয়াইট বোর্ডের দিকে। মায়াবিনী থেকে নজর সরিয়ে টেবিলের উপরে খুলে রাখা বইটা কাছে টেনে নিয়ে পাতা উল্টে-পাল্টে আরো কয়েকটা ইম্পটেন্ট কোশ্চেন দাগায় সে। তারপর টেবিলের উপর থেকে ডাস্টার নিয়ে দাঁড়িয়ে সবার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল
- সবার লেখা শেষ? মুছে ফেলবো?
তখনি তার মায়াবিনী তার দিকে তাকিয়ে ব্যস্ত কন্ঠে অনুরোধ করে বললো
- না স্যার আর একটু বাকি আছে। আর দুই মিনিট প্লিজ।
প্রচন্ড গরমে ঠান্ডা একগ্লাস পানি খেলে যেমন শরিরটা শীতল হয়ে যায়। রিশানের মনটাও যেন ঠিক তেমনি শীতল হয়ে গিয়েছে, তার মায়াবিনীর এমন আহ্লাদী কন্ঠে করা অনুরোধ শুনে। রিশান হালকা হেসে বললো
- এতো স্লো হলে হবে। একটু তাড়াতাড়ি করো আরো কুশ্চেইন দেওয়া বাকি আছে তো।
তার মায়াবিনী কোন উত্তর না দিয়ে শুধু মাথাটা হালকা হ্যাঁ সূচক নেড়ে, আরও দ্রুত গতিতে তার হাতের নীল রঙের কলমটা দিয়ে দবদবে সাদা পাতাতে গোটা গোটা অক্ষর বসাতে থাকলো।

কোন প্রকাশ অনুমতি ছাড়াই ঠাস করে রোদের কেবিনের দরজা খুলে ভিতরে ঢুকে দীপ্তি। দীপ্তিকে এভাবে তার কেবিনে ঢুকতে দেখে ভ্রু কুঁচকে ফেলে রোদ। দীপ্তি রোদের সামনে থাকা টেবিলের উপর জোরে নিজের দুই হাত রেখে বললো
- কান খুলে শুনে রাখুন আমি আপনাকে জীবনেও বিয়ে করবো না।
রোদ কুঞ্চিত ভ্রু যুগল আরও কুঁচকে বললো
- এক্সকিউজ মি! নিজেকে কি ভাবো তুমি, ক্যাটরিনা কাইফ? তোমাকে বিয়ে করার কোন শখ নেই আমার।
দীপ্তি কপালে ভাঁজ ফেলে বললো
- তাহলে করছেন কেন?
রোদ মুখে জোর পূর্বক হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- তোমার পন্ডিতির জন্য। 
দীপ্তি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- আমার পণ্ডিতির জন্য মানে! কি বলতে চান আপনি? 
রোদ বিরক্তি নিয়ে বললো
- কে বলেছিল আমার বউ সেজে মাকে ফোন করতে। না তুমি মাকে ফোন করে মিথ্যে বিয়ে কথা বলতে, না আমি সত্য প্রমানের জন্য তোমাকে মার কাছে নিয়ে যেতাম। আর না মা তোমাকে পছন্দ করে ছেলের বউ করতে চাইতো।
- আন্টিকে কিছু একটা বলে বিয়েটা আটকান। আপনার মতো বজ্জাত লোকের সাথে সংসার করার কথা আমি কল্পনাও করতে পারিনা।
- এক্সকিউজ মি মিস দুধে ধোয়া তুলসি পাতা। তোমার সাথে সংসার করারও আমার শখ নেই।
দীপ্তি চোখ দুটো ছোট ছোট করে বললো
- তাহলে বিয়েটা আটকাচ্ছেন না কেন?
রোদ বাঁকা হেসে বললো
- রোমানা সরকার আমার মায়ের নাম। বাহিরে সে প্রেসিডেন্ট না হলেও, বাসায় তার পাওয়ার প্রেসিডেন্টের চেয়ে কম না।
দীপ্তি জিজ্ঞেস করল
- আপনি বাবাকে ওই ভিডিওটা দেখিয়েছেন কেন?
রোদ সোজাসাপ্টা উত্তর দিল
- আমি দেখাইনি।
দীপ্তি পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- তাহলে বাবা কিভাবে জানল?
- দেশের টপ বিজনেসম্যানদের মধ্যে তোমার বাবা একজন। তোমার কি মনে হয় ,,,,,,,
এতোটুকু বললেই থেমে যায় রোদ। সে জানে, দীপ্তি বুদ্ধিমতী মেয়ে। বাকিটা সে বুঝে যাবে। তাই কথাটা শেষ না করেই, চুপ করে যায় সে। রোদকে কিছু বলে লাভ হবেনা দেখে, দীপ্তি যেভাবে এসেছিল সেভাবেই হন হন করে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ২৭)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন