উপন্যাস         :         শরম 
লেখিকা          :         তসলিমা নাসরিন
গ্রন্থ               :         শরম 
প্রকাশকাল      :       

জনপ্রিয় লেখিকা তসলিমা নাসরিনের বহুল আলোচিত উপন্যাস 'লজ্জা'। ১৯৯৩ সালে এটি বাংলাদেশে প্রথম প্রকাশিত হয়। প্রকাশের প্রথম ছয় মাসেই বইটি পঞ্চাশ হাজারেরও বেশি বৈধ কপি বিক্রি হয়। এরপর ধর্মীয় মৌলিবাদিদের একতরফা বিতর্কের মুখে উপন্যাসটি নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তৎকালিন বাংলাদেশ সরকার। পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসটি বিভিন্ন ভাষায় বিভিন্ন দেশে প্রকাশিত হয়। উপন্যাসটি লেখার কারণে দেশ ছাড়তে হয়েছিল লেখিকা তসলিমা নাসরিনকে। 

পরবর্তীতে 'লজ্জা' উপন্যাসের নায়কের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গে দেখা হয়েছিলো লেখিকা তসলিমা নাসরিনের। সেই অনুভূতিকে পুজি করে তিনি লিখলেন নতুন উপন্যাস 'শরম'। এ উপন্যাসটি কবিয়াল পাঠকদের জন্য ধারাবাহিকভাবে তুলে ধরা হলো।
শরম || তসলিমা নাসরিন
শরম || তসলিমা নাসরিন

11111111111111111111111111111

১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

শরম || তসলিমা নাসরিন (পর্ব - ১৮)

সুরঞ্জন পুরুষ মানুষ। নিজের খেয়ালে চলে। যা ইচ্ছে তা করার সুযোগ আছে তার। আজ চাকরি করলো, কাল ছেড়ে দিল। আজ কিছু করতে ইচ্ছে করছে না, করবে না। মা আছে তার নিরাপত্তায়, শাড়ি কাপড় বিক্রি করে সংসার চালিয়ে নিতে পারে। মা দেখাশোনা করে, সার্ট প্যান্টটা কাচা পায়, বালিশ বিছানা পরিস্কার পায়, ক্ষিধে লাগলে খাবার পায়, তার আর অসুবিধে কী! কিরণময়ীও এরকম ভালো আছেন। স্বামী নেই। স্বচ্ছলতা আগের চেয়ে কম। কিন্তু ছেলে তো সঙ্গে আছে। বুকের ধন তো আছে পাশে। বউ নেই। ছেলের মনোযোগ বউএর সঙ্গে ভাগাভাগি করতে হয় না কিরণময়ীর। যখন সুদেষ্ণা ছিল, সুরঞ্জন সুদেষ্ণাকে নিয়েই ব্যস্ত থাকতো, মার কাছে একটু বসার, মার কিসে ভালো লাগবে না লাগবে, তা খোঁজ করার সময়ও তার ছিল না। বউকে নিয়ে বেরিয়ে যেত কলেজে, ফিরতো একসঙ্গে। সন্ধেয় বাইরেও বেরোতো দুজন। কিরণময়ীর খুব একা লাগতো। ছেলের সংসার হল না তা ঠিক, বাচ্চা কাচ্চা থাকলে ঘর ভরে থাকতো আনন্দে, কিন্তু তা না থেকেই বা কী এমন খারাপ! এখন সুরঞ্জন সম্পূর্ণই তার। তার কথা ভেবেই সুরঞ্জন ঘরে ফেরে। ঘরে ঢুকেই মা মা বলে ডাকে। কিরণময়ীর মন ভরে যায়। ছেলে কখনও তাকে দুঃখ দিয়ে কথা বলেনি। অসুখ হলে দৌড়ে দৌড়ে গিয়ে ডাক্তার নিয়ে আসে। জ্বর হলে সারারাত পাশে বসে থাকে। অসুখ হলেও কিরণময়ীর আনন্দ হয়। ছেলেকে আরও বেশি কাছে পাওয়া যায়। ছেলেকে কাছে পাওয়ার ভাগ্য কজনের থাকে এই বয়সে। আজকাল তো বিয়ে করে ছেলেরা আলাদা থাকে, বিদেশে চলে যায়, নয়তো বউ এমন আগলে রাখে যে ছেলের সাহস হয় না কাছে আসার। সুরঞ্জন হাতে করে আম আপেল, কলা কমলা মাঝে মাঝে নিয়ে আসে মার জন্য। মা এসব খাও তো। শরীর ভালো থাকবে। কিরণময়ীর ওতেই শান্তি হয়, ছেলে যে এনেছে। ছেলে যে বলেছে। নিজে সে ফলফলান্তি ছেলেকেই কেটে কেটে খাওয়ায়। টিউশনি করে সামান্য কিছু নিজের কাছে রেখে বাকিটা কিরণময়ীর হাতে দেয়, সংসার চালানোর জন্য। টাকার অংক বিরাট নয়, কিন্তু কিরণময়ীর শান্তিটা অনেক। ছেলের ভালোবাসা পেতে পেতেই যেন তার মৃত্যু হয়।

সুরঞ্জন বা কিরণময়ীকে নিয়ে নয়, আমার ভাবনা মায়াকে নিয়ে। মেয়েরা তো ভালো থাকে না। মেয়েদের তো এই সমাজটা ভালো থাকতে দেয় না। মায়া নিশ্চয়ই ভালো নেই। মায়ার জন্য ভেতর আমার রক্তাক্ত হতে থাকে। একদিন ফোনে সুরঞ্জন আর কিরণময়ী দুজনের সঙ্গেই কথা বলি। জিজ্ঞেস করি, মায়া কেমন আছে, মায়ার সঙ্গে দেখা করতে চাই। হয় মায়া সুরঞ্জনের বাড়িতে আসুক, গিয়ে দেখা করবো, নয়তো আমার বাড়ি চলে আসুক। আর তা যদি না হয়, আমি ওর শ্বশুরবাড়িতে যাবো।

কিরণময়ী আমার ইচ্ছের উত্তরে কিছু না জানালেও সুরঞ্জন বললো সে পরে আমাকে ফোন করবে, আমার সঙ্গে মায়ার বিষয়ে কথা বলবে। সারাদিন অপেক্ষা করি, সুরঞ্জনের কোনও সাড়া শব্দ নেই। পরদিনও একই অবস্থা। আশ্চর্য, কী নিয়ে ব্যস্ত সে, কিছুই আমি অনুমান করতে পারি না। এরপর একটা এসএমএস করলাম, তোমার তো জানানোর কথা ছিল। এরও কোনও উত্তর নেই।

নাহ, পুরুষ মানুষে বিশ্বাস নেই। কিরণময়ীর তো ফোন নেই, থাকলে তার সঙ্গেই কথা বলতে পারতাম। সুরঞ্জনকে ফোনটা কিরণময়ীই কিনে দিয়েছেন, নিজের একটা ফোনের প্রয়োজন অনুভব করেননি। মায়ার জন্য মায়ায় নাকি পুরো পরিবারটার জন্য মায়ায় আমি গড়িয়াহাটের ট্রেজার আইল্যান্ড থেকে কিরণময়ীর জন্য দুটো, মায়ার জন্য চারটে শাড়ি আর সুরঞ্জনের জন্য একটা পাঞ্জাবি, সব মিলিয়ে সাত হাজার টাকার উপহার কেনা হল। এবার গাড়িতে ওঠা, তরুণকে বলা পার্ক সার্কাসের সেই বাড়িতে যাও। গেলে সোজা সুরঞ্জনের বাড়িতে ওঠা। সুরঞ্জন ছিল না, কিরণময়ী ছিল। তার হাতে উপহারগুলো দিয়ে চলে আসব, কিরণময়ী হাত ধরে বাধা দিলেন। কিছু না কিছু খেয়ে যেতেই হবে। কবে আমি ও বাড়িতে ভাত খাবো তার জন্য পিড়াপিড়ি। খাওয়া মাত্র শেষ করেছেন কিরণময়ী, না হলে তার সঙ্গে খেতে পারতাম। অবশ্য ওসব দিয়ে আমি বোধহয় খেতেই পারবো না। আমার জন্য একদিন ভালো মাছ টাছ কিনে রান্না করবেন, এই তার আশা। খুব আশা।

মায়ার কথা যখন আমি জিজ্ঞেস করি, কিরণময়ী কেঁদে উঠে বলে, ওর কথা আর বোলো না মা, ওর মাথার ঠিক নেই। ওর মাথাটাই শেষ হয়ে গেছে। কী আর দেখবে ওকে। ওকে দেখে তোমার ভালো লাগবে না।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলি, আপনাদের এই অবস্থা দেখেও কি আমার ভালো লাগছে? মায়া ভালো নেই, আমার মন বলছে, তাই তো মায়াকে দেখতে চাইছি।

কিরণময়ী বলতে থাকেন, ওকে আমি বুঝিয়ে বলবো। বলবো তোমার সঙ্গে একবার দেখা করতে। ওর কোনও বন্ধু নেই। ও কোনও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে না। বাংলাদেশের ছেলেরা ওকে যে অত্যাচার করেছে, ওর তো বাঁচারই কথা ছিল না। ওসব কী করে যাবে ওর মাথা থেকে। এখনও ওসব ওর কাছে দুঃস্বপ্নের মতো। ও জোর করে একটা নরমাল লাইফ পেতে চেয়েছে। পেতে চাইলেই কি পাওয়া যায়! তবে মন্দের ভালো একটা চাকরি এখনও করতে পারছে। ভয় হয়, কখন ওর চাকরিটা চলে যায়। চাকরির জায়গায়ও নাকি চিৎকার করে। বাংলাদেশের প্রসঙ্গ এলেই করে। ও দেশের কাউকে দেখলেই অনাস্থা করে। গোটা একটা দেশের ওপর ওর রাগ। ওকে অনেক বুঝিয়েছি, বলেছি, কিছু ভালো লোকও তো ছিল ওই দেশে। মায়া কিছুতেই মানতে চায় না।

আমি চুপ হয়ে শুনি। মায়ার ক্রোধের কারণ বুঝতে চেষ্টা করি। মায়ার জন্য আগের চেয়ে বেশি আমার মায়া হতে থাকে।

আমি তো তারপরও ওর সঙ্গে দেখা করতে চাই, মাসিমা। কণ্ঠে আমার আবেগ। কিন্তু বুঝি আমার আবেগ আর মায়ার আবেগ দুটো দুরকম। কিরণময়ী বলেন না, কিন্তু বেশ বুঝতে পারি, আমার ওপর ভীষণ ক্রুদ্ধ মায়া। সম্ভবত লজ্জায় ওকে ধরে নিয়ে যাওয়ার কথা লিখেছিলাম বলে। আমি তো জানতাম, মায়াকে ওরা মেরে ফেলেছে। কিন্তু মায়া শেষ অবধি বেঁচে আছে। বেঁচে আছে বলেই হয়তো ওকে মৃত্যুর যন্ত্রণা সইতে হয়েছে। সত্যিকার বেঁচে যেত ও যদি মরে যেত। মেয়েদের তো না মরে মুক্তি নেই। মায়ার জন্য আমার চোখ ভিজে ওঠে জলে।

চা পড়ে থাকে। কিরণময়ী বসে থাকেন। আমি দ্রুত বেরিয়ে যাই। সিদ্ধান্ত নিই, যারা আমাকে ভুল বুঝে আমার মুখদর্শন করতে চায় না, তাদের দ্বারে বারবার কড়া নাড়ার আমার দরকার নেই। আমার মতো আমি থাকবো। নিজের জীবন নিয়ে যথেষ্ট দুশ্চিন্তা আমার কাছে। কলকাতায় থাকতে এসেছি, পুরো একটা সংসার সাজিয়ে ফেলেছি। এখনও জানি না আমার এখানে বাস করা সম্ভব হবে কি না। যে কোনও সময় আমাকে পাততাড়ি গুটিয়ে চলে যেতে হবে। কোথায় যাবো, তার কিছু জানি না। কলকাতায় থাকা শুরু করার পর অনেকে বেশ বন্ধু হয়েছে। কিন্তু তাদের বেশির ভাগই সত্যিকার বন্ধু নয়। বুঝি। টের পাই।

ছিলাম নিজের কাজ নিয়ে। অভিমান কিছুটা ছিল সুরঞ্জনের ওপর। সেই যে ফোন করবে বলেও করলো না, এসএমএসএর উত্তর দিল না। এত ভালো একটা পাঞ্জাবি উপহার দিলাম, একটা ধন্যবাদ জানালো না পর্যন্ত। আর পনেরোদিন কেটে যাওয়ার পর কি না একটা ফোন। কী, দেখা করবো। আহ মামার বাড়ির আবদার। ভেবেছিলাম বলবো যে আমি ব্যস্ত আছি, দেখা হবে না। পরে কখনো ফোন করো। না। পারিনি বলতে। এই এক জিনিস। কৃত্রিমতা একদমই পারি না রপ্ত করতে। যা ইচ্ছে করে, তা করি। অভিমান যতদিন থাকে, ততদিন আবেগের রশি টেনে রাখি। কিন্তু অভিমানই বা আমার কদিন থাকে!

সুরঞ্জন যে আসতে চাইলো! আমার মনে হয়, ও বোধহয় চারটে শাড়ি আর পাঞ্জাবির যে প্যাকেটটা দিয়ে এসেছিলাম, ওগুলো ফেরত দিতে আসবে। ফেরতের জন্য প্রস্তুত হয়েও ছিলাম। ভেবে নিই, তাহলে নিজের বন্ধুদের মধ্যে বিলি করে দেব ওগুলো। আর কীইবা করার আছে। কিন্তু সুরঞ্জন যখন আসে, প্যাকেট হাতে নেই। হাতে টিফিন ক্যারিয়ার। কী এতে, খাবার, কিরণময়ী আজই সব নিজের হাতে রান্না করে পাঠিয়েছেন।

এসব আবার কী দিয়েছে, খাবারের আবার কী দরকার, আমার ফ্রিজ ভর্তি খাবার, খেয়ে শেষ করা যায় না, সব ফেলতে হয়। এর মধ্যে আবার খাবার। উফ। এসব বলতে বলতে রান্নাঘরে নিয়ে টিফিন ক্যারিয়ার খুলে মিনতিকে বলি, এগুলো খালি করে বাটিগুলো ধুয়ে দিয়ে দাও। বলি এবং কী রান্না করে দিয়েছেন, দেখতে গিয়ে দেখি ওগুলো। পাঁচ ফোড়ন দেওয়া মুশুরির ডাল, মাছের মাথা দিয়ে কচুর লতি, মুড়িঘন্ট, লটে মাছের শুটকি, কুমড়ো পাতা পেঁচিয়ে মাছ ভাজা। অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকি বাটিগুলো সামনে নিয়ে। অনেকক্ষণ তাকিয়ে থাকি খাবারগুলোর দিকে। চোখে জল উপচে উঠতে থাকে। চোখ ভেসে যায় জলে। একটা ছোট্ট চিরকুট টিফিন ক্যারিয়ারের বাটির ওপর আটকে দেওয়া। চিরকুটটি পড়ি।

"মা তসলিমা, আমার ভালোবাসা নিও। খাবারগুলো খেও। নিজের হাতে সামান্য কিছু রান্না করেছি তোমার জন্য। এই খাবারগুলো কে তোমাকে রান্না করে খাওয়াবে। তোমার কথা ভেবে একা একা চোখের জল ফেলি আমি। সাবধানে থেকো মা। সাহস রেখো।"

কাগজটা আমার হাতে ধরা থাকে। লেখাগুলোর ওপর টুপটুপ করে জল পড়ে ঝাপসা হয়ে যায় লেখা। আমি ঠিক তক্ষুনি ড্রইংরুমে সুরঞ্জনের সামনে যেতে পারি না। আমাকে আরও কিছুক্ষণ ওখানে থাকতে হয় চোখের জল মোছার জন্য, আরও কিছুক্ষণ গলার স্বর শুকনো করার জন্য।

সুরঞ্জন তার সঙ্গে যে মেয়েটাকে নিয়ে এসেছে, একে প্রথম দিন যেদিন ওর বাড়িতে গিয়েছিলাম, দেখেছিলাম ঢুকেছে। সেই মেয়েই তো। চুল পেছনে বেণি করে বাঁধা। হলুদ ব্লাউজ আর হালকা সবুজ শাড়ি। মেয়েটার মুখে স্নিগ্ধ একটা হাসি আছে। বড় বড় চোখ। মুখশ্রী মিষ্টি। খুব ছিপছিপে নয়, মেদ জমতে চাওয়া শরীর। এখনও জমে উঠতে পারেনি খুব। সুরঞ্জন পাশে দাঁড়ানো। কোঁকড়া চুল। প্রশস্ত কপাল। গভীর চোখ। নাক অত টিকোলো নয়, কিন্তু মুখে মানিয়ে যায় অদ্ভুত। সবচেয়ে সুন্দর ওর ঠোঁট আর চিবুক। কিরণময়ীর ঠোঁট চিবুক যেন বসিয়ে দেওয়া। আর গালে সেই তিল। একটা তিলই মুখটাকে কী রকম যেন বদলে দিয়েছে। সুরঞ্জন আজ পাঞ্জাবিটা পরতে পারতো, পরেনি। পরেছে সাদা সার্ট আর কালো প্যান্ট। সাদা শার্ট পরলে ছেলেদের, লক্ষ্য করেছি, অদ্ভুত সুন্দর লাগে। ডা. সুব্রত মালাকার যখন তার নানা রঙের শার্ট রেখে সাদা শার্ট পরে, সবচেয়ে ভালো লাগে দেখতে। মালাকার আমার শ্বেতির ডাক্তার। কিছুদিন হল, হঠাৎ হাতে আমার সাদা দাগ দেখা দিচ্ছে। হাতের পিঠেই আছে এখনও দাগগুলো। ছড়ায়নি। মালাকারের চিকিৎসায় আছি, সারার লক্ষণ নেই। কিন্তু ডাক্তারের সঙ্গে এর মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে। ভালো মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব খুব বেশ দ্রুতই হয়। অবশ্য খারাপের সঙ্গেও হয়। খারাপ কী ভালো তা বুঝতে বুঝতে অনেক সময় বছর কেটে যায়।

- জুলেখার সঙ্গে তো পরিচয় হয়েছে আপনার। সুরঞ্জন বলে।
বলি - হ্যাঁ হয়েছে।
- বসুন। জুলেখার উদ্দেশে বলি।
- ওকে তুমি বলুন। ও আপনার থেকে অনেক ছোট।
- বয়সে ছোট হলেই আমি তুমি বলতে পারি না সুরঞ্জন। হঠাৎ করে কোনও অচেনা কাউকে আমি তুমি ডাকতে পারি না। ভীষণ অস্বস্তি হয়, তাছাড়া কণ্ঠটি রুক্ষ শোনায়।
- পাঞ্জাবি পছন্দ হয়েছে? সুরঞ্জনকে জিজ্ঞাসা।
- হ্যাঁ। ছোট্ট উত্তর।
- পরলে না যে।
- অত দামি পাঞ্জাবি পরে আমার অভ্যেস নেই। ভাবছি ওটা পাল্টে কিছু কম দামের নিয়ে নেব কিন্নরি থেকে।
- কেন? যেটা দিয়েছি সেটাই থাকুক। মাঝে মাঝে পরো।
- তাহলে বিয়ের দিন পরতে হয়।
বলে সুরঞ্জন জুলেখার দিকে তাকিয়ে হাসলো। জুলেখাও ঠোঁট টিপে হাসলো।

সুরঞ্জনের এই ব্যবহারের আমি অনুবাদ জানি না। সে কি বলতে চাইছে যে জুলেখাকে সে ভালোবাসে, বিয়ে করবে! নিজের চোখকে আমার বিশ্বাস হয় না। সুরঞ্জন আর যাই করুক জীবনে, মুসলমান কোনও মেয়ের প্রেমে সে পড়বে না, মুসলমান কাউকে বিয়ে করবে না, এর চেয়ে কঠিন সত্য তো আর কিছু ছিল না। হঠাৎ সব পাল্টে গেল কেন?


চলবে.......

১৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ: 
জনপ্রিয় প্রথাবিরোধী লেখিকা তসলিমা নাসরিন ১৯৬২ সালের ২৫ আগষ্ট ময়মনসিংহ শহরে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৭৬ সালে ময়মনসিংহ রেসিডেন্সিয়াল স্কুল থেকে মাধ্যমিক ও ১৯৭৮ সালে আনন্দ মোহন কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক সম্পন্ন করেন তিনি। এরপর ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ থেকে ১৯৮৪ সালে এমবিবিএস পাস করেন। তসলিমা নাসরিন ১৯৯৪ সাল অবদি চিকিৎসক হিসেবে ঢাকা মেডিকেলে কর্মরত ছিলেন। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাকে লেখালেখি নয়তো চাকুরি ছাড়তে বললে তিনি লেখালেখি ছাড়েন নি। বরং সরকারি চিকিৎসকের চাকুরিটিই ছেড়ে দেন তিনি। তখন এই লেখিকাকে কেন্দ্র করে উগ্র মৌলবাদীদের আন্দোলনে উত্তাল ছিলো পুরো দেশ। বেশ কিছু মামলাও হয়েছিলো তার বিরুদ্ধে। শেষে এককথায় বাধ্য হয়েই দেশত্যাগ করেন নারীমুক্তির অন্যতম অগ্রপথিক তসলিমা নাসরিন। এরপর তিনি নির্বাসিত অবস্থায় বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন দেশে আশ্রয় নিয়েছেন। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন