উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111111111111111

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৩৯)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৪০)

অফ পিরিয়ডে ভার্সিটির পাশের একটা রেস্টুরেন্টে গিয়ে বসল দুই বান্ধবী তোয়া আর নিশা। চেয়ারে বসে নিজের ব্যাগটা টেবিলের উপর রেখে নিশা তোয়াকে জিজ্ঞেস করল
- এবার বল তোর কি ইম্পর্টেন্ট কথা আছে?
তোয়া নিজের ব্যাগটা টেবিলের উপর নিশার ব্যাগের পাশে রেখে উত্তর দিল
- ওয়েট কর বাবা, আগে খাবারের অর্ডারটা দিয়ে নেই।
তোয়া হাত নেড়ে ওয়েটারকে ডাক দিল। ওয়েটার এসে বললো
- জি ম্যাম।

তোয়া স্বাভাবিক কন্ঠে বললো
- একটা বার্গার আর কোক। 
তারপর নিশার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- আর তুই কি নিবি?
নিশা উত্তর দিল
- ওই বার্গার আর কোকই।
ওয়েটার মাথা নেড়ে বললো
- ওকে ম্যাম
তারপর চলে গেল। ওয়েটার চলে যেতেই নিশা বললো
- এবার বল।
তোয়া টেবিলের উপর রাখা তার ব্যাগ থেকে একটা খাম বের করে টেবিলে নিশার সামনে রাখল। নিশা একবার খামের দিকে পুনরায় তোয়ার দিকে তাকিয়ে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এটা কি?
তোয়া উত্তর দিল
- এটা হচ্ছে দীপ্তি আপুর আইডিয়া?
নিশা চোখ বড় বড় করে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুই দীপ্তি আপুকে কি বলেছিস?
তোয়া ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বললো
- সব কিছুই বলেছি।
নিশা অসহায় মুখ করে বললো
- কি শুধু করেছিস তুই ,,,,,,,, 
নিশা আর কিছু বলার আগেই তোয়া বললো
- আপাতত তোর কমপ্লেনটা বাদ দে। আর দীপ্তি আপু যা বলেছে তা কর। দীপ্তি আপুর প্ল্যান কখনো ফেল হয় না।
নিশা একটা নিশ্বাস নিয়ে খামটা হাতে নিল। সে জানে তোয়াকে এখন শত না করলেও সে শুনবে না। তার মাথায় একবার যা ঢুকে সে তাই করে। খামটা হাতে নিয়ে উল্টাতেই খামের অপর পাশে লেখা ”প্রেমপত্র" শব্দটা দেখেই নিশার ভ্রু কুঁচকে এলো। তোয়ার দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কার প্রেমপএ এটা?
তখনি ওয়েটার এসে তাদের বার্গার আর কোক দিয়ে যায়। তোয়া নিজের সামনে রাখা বার্গারটা হাতে নিয়ে বললো
- খুলে দেখ।
নিশা খামটা খুলে দেখলো, এর মধ্যে একটা চিঠি। নিশা চিঠিটা পড়া শুধু করলো। চিঠিতে লেখা -

"প্রিয় নিশা
চিঠি কিভাবে লিখতে হয়, জানি না। আগে কখনো লিখিনি। লেখার কথা ভাবিওনি। ভাবছ, তাহলে কেন লিখছি? আমি তোমাকে দুই বছর ধরে চিনিলেও তুমি আমাকে চিন না। হঠাৎ এই অচেনা ছেলেটা তোমার সামনে এসে তোমাকে প্রপোজ করলে, তুমি কি রিজেক্ট করে দিবে? করাটাই স্বাভাবিক। তাই ঠিক করেছি আগে তোমাকে কিছু চিঠি দিব। তোমার সাথে নিজের পরিচয় লুকিয়ে পরিচিত হব। নিজের স্বপ্নগুলোর কথা বলব। সময় অসময়ে চিঠি দিয়ে দিয়ে পাগলামো করবো। আমার পাগলামো দেখে তুমিও আমার প্রেমে পড়বে। তারপর হঠাৎ একদিন তোমার সামনে এসে তোমাকে প্রপোজ করব। আমার এই বিশাল প্ল্যানের এটাই সূচনা প্রেমপএ। তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম তোমার ভার্সিটি গেইটে। খোলা চুলে নীল থ্রিপিস পড়া তোমাকে দেখে সেদিন মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে ছিলাম। হারিয়েছি আমার রাতের ঘুম। জানো নিশু, যে ছেলেটা আগে সারারাত কুম্ভকর্ণের মতো ঘুমাতো। সে এখন রাত জেগে তোমার নিয়ে স্বপ্ন বুনে। সে কতশত স্বপ্ন। তোমার হাতে হাত রেখে, তোমার কাধে মাথা রেখে পূর্নিমা রাতে ছাদে বসে চন্দ্র বিলাশের স্বপ্ন। ঝুম বৃষ্টির সময় বাগানের সবুজ ঘাসের উপর পাশাপাশি দুজন বসে এক মগে ধোঁয়া উঠা চা খাওয়া আর বৃষ্টি বিলাশের স্বপ্ন। কি করবে তো আমার স্বপ্নগুলো পূরণ? জান নিশু সেদিন মার্কেটে গিয়ে একটা বড় সাইজের প্লেট দেখে সেটা কিনে নিয়ে এসেছি। আমি ঠিক করেছি বিয়ের পর মাঝে মাঝে এই থালাতে ভাত মেখে, তুমি আমাকে খায়িয়ে দিবে আর আমি তোমাকে খায়িয়ে দিব। এই নিশু তুমি জার্নি করতে পারো তো? আমরা কিন্তু ছুটি পেলেই বেড়াতে যাব। নতুন নতুন যায়গা ঘুরে দেখবো। তুমি বাসে না উঠতে পারলে, ট্রেনে যাবো। ট্রেনে না উঠতে পারলে, প্লেনে যাবো। তাও কিন্তু আমরা যাবোই, যাবো।
আজ এই পর্যন্তই। পরের চিঠিতে বাকি স্বপ্নগুলো বললো।
আমার কিন্তু তোমায় নিয়ে অনেক অনেক স্বপ্ন আছে।
ইতি
তোমার অচেনা প্রেমিক"

চিঠিটা পড়া শেষ হলে নিশা মাথা তুলে তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- এটা দীপ্তি আপু লিখেছে?
তোয়া বার্গার খেতে খেতে উত্তর দিল
- না।
নিশা অবাক হয়ে আবার জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কে লিখেছে?
তোয়া নিশার দিকে তাকিয়ে আবার উত্তর দিল
- খাওয়া শুরু কর বলছি।
নিশা অসহায় মুখ করে বললো
- আগে বল না। পরে খাচ্ছি।
তোয়া হাতের বার্গারটার দিকে স্থীর দৃষ্টি রেখে বললো
- খাওয়া না শুরু করলে বলবো না।
নিশা বিরক্তের সাথে চিঠি আর খামটা পাশে রাখে। প্লেট থেকে বার্গাটা তুলে এক কামড় খেয়ে বললো
- এবার তোও বল।
তোয়া মুখের খাবারটা শেষ করে বললো
- ভাইয়া লিখেছে।
কথা শুনা মাএই নিশার কাশি শুরু হয়ে যায়। তোয়া অস্থির হয়ে এক গ্লাস পানি নিশার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- আস্তে, আস্তে। নে পানি খা।
নিশা তোয়ার হাত থেকে পানির গ্লাসটা নিয়ে দুই ঢোক পানি গিলে জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া লিখেছে মানে?
তোয়া বার্গারের শেষ অংশটা মুখে দিয়ে উত্তর দিল
- মানে আইডিয়াটা দীপ্তি আপুর হলেও চিঠিটা হাতে লিখেছে ভাইয়া। আর চিঠির কথাগুলো বলেছে চন্দ্রা আপু।

নিশা করুন চোখে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুই আর কাকে কাকে বলেছিস?
তোয়া স্বাভাবিক ভাবেই বলল
- দীপ্তি আপু, চন্দ্রা আপু, ভাইয়া, তূবা আর শুভ্র ভাইয়া জানে। 
নিশা কপালে হাত দিয়ে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- মান সম্মান কিছু রাখলি না।
তোয়া হাত নেড়ে ওয়েটারকে ডাক দিল। ওয়েটার এসে বললো
- জ্বি ম্যাম।
তোয়া ওয়েটারের উদ্দেশ্যে বললো
- বিলটা নিয়ে এসো।
ওয়াটার নম্র ভাবে বললো
- ওকে ম্যাম।
ওয়েটার চলে গেলে তোয়া নিশাকে বললো
- আপুর মতে, মেয়েদের হাতের লিখা আর ছেলেদের হাতের লিখার মধ্যে একটা পার্থক্য আছে। মেয়েদের হাতের লিখা হয় গুছানো। আর ছেলেদের হাতের লিখা হয় অগুছালো। সাধারণ মানুষ এই পার্থক্য ধরতে না পারলেও টিচার্সরা এই পার্থক্য খুব সহজেই ধরতে পারে। তাই আপু ভাইয়াকে দিয়ে চিঠিটা লিখিয়েছে।
নিশা কৌতুহলী হয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু চিঠিটা লেখা হয়েছে কেন?
তোয়া টেবিলের উপর থেকে চিঠিটা নিয়ে ভাঁজ করে, পুনরায় খামের মধ্যে ঢুকিয়ে দেয়। খামটা নিশার ব্যাগের মধ্যে ঢুকাতে ঢুকাতে উত্তর দিল
- এটা রিশান স্যারকে দিব।
এই কথা শুনে নিশার আরো একবার কাশি উঠলো। কাশি এবার দুই ঢোক কোক গিলে আবাক হয়ে বললো
- কি! তোর মাথা ঠিক আছে! এটা আমি স্যারকে দিব! দেখ এই কাজ করিছ না। পরে যদি ,,,,,,, 

তোয়া নিশাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে বললো
- কিছু হবে না। তোর এতো চিন্তা করতে হবে না। তুই শুধু একটা কাজ করবি। আমি যখন স্যারের কাছে গিয়ে তোকে তোর খাতাটা বের করতে বলবো, তখন তুই তোর সব বই খাতা বের করে টেবিলের উপর রাখবি। সাথে এই খামটাও লুকিয়ে বের করে টেবিলের উপর রাখবি। পরে বই খাতা ব্যাগে ঢুকালেও এই খামটা ব্যাগে ঢুকাবি না।
নিশা অসহায় চোখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে বললো
- বাদ দে না, জানু।
ওয়েটার টেবিলের উপর বিল দিয়ে যায়। তোয়া টেবিলের উপর থেকে ব্যাগটা নিয়ে বিল পে করে হাতের ঘড়ির দিকে তাকিয়ে সময় দেখলো। তারপর তড়িঘড়ি করে উঠতে উঠতে বললো
- চল, চল স্যারের অফ পিরিয়ড শুরু হয়ে গিয়েছে।
নিশা তোয়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় বললো
- প্লিজ, জানু।
তোয়া কোন কথা শোনে না। নিশার হাত ধরে জোর করে তাকে নিয়ে রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে, রিশানের কেবিনের সামনে এনে দাঁড় করায়। তোয়া রিশানের কেবিনের দরজায় নক করলে, ভিতর থেকে রিশান বললো
- কাম ইন।

তোয়া আর নিশা দরজা ঠেলে কেবিনে ঢুকে। তোয়া আর নিশাকে দেখেই রিশানের মুখে হাসি ফুটে উঠে। হাসি হাসি মুখে জিজ্ঞেস করল
- আরে তোমার, বস। কোন সমস্যা?
তোয়া চেয়ার টেনে বসতে বসতে উত্তর দিল
- আসলে স্যার কালকে সেভেন নং চ্যাপ্টারের যে একটা ম্যাথ করিয়েছিলেন না। ওই ম্যাথটা না এখন বুঝতে একটু সমস্যা হচ্ছে। নিশারও বুঝতে সমস্যা হচ্ছে। এখন যদি আবার কষ্ট করে একটু বুঝিয়ে দিতেন।
নিশা তোয়ার দিকে তাকালো। তাদের মধ্যে তো এই ম্যাথ নিয়ে কোন কথাই হয়নি। ম্যাথটা যে তোয়া বুঝেনি তাও তাকে বলেনি? শুধু সকালে ফোন করে খাতাটা নিয়ে আসতে বলেছিল। কোনো কারণ বলেনি। রিশান তার সামনে খোলা বইটা বন্ধ করে বললো
- দেও বুঝিয়ে দিচ্ছি।

তোয়া ইশারা করে নিশাকে খাতা বের করতে বললো। নিশা অনিচ্ছা সত্ত্বেও কিছুটা ভয়ে ভয়ে ব্যাগ থেকে প্রথমে একটা চিকন বই বের করে, টেবিলের উপর রাখে। তারপর একটা মোটা বই এর নিচে সেই খামটা খুব সাবধানে টেবিলের উপর রাখে। তারপর পর পর দুইটা খাতা বের করে। আরো একটা বই বের করে টেবিলের উপর রাখলো। তারপর সেই খাতাটে বের করে রিশানের সামনে রাখলো। রিশান বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে খুব ভালো করে ম্যাথটা আবার বুঝিয়ে দেয়। বুঝা শেষ হলে নিশা তোয়ার কথা মতো খামটা ছাড়া বাকি সব গুলো বই খাতা ব্যাগে ভরে। তারপর তারা কেবিন থেকে বের হয়ে যায়।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪১)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন