উপন্যাস       :         রোদেলা আকাশে বৃষ্টি
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “রোদেলা আকাশে বৃষ্টি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান
রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান

11111111111111111111111

১২ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

রোদেলা আকাশে বৃষ্টি || আনআমতা হাসান (পর্ব - ১৩)


  চার বছরের বেশি সময় হয়ে গিয়েছে ইতি নিজের জন্মস্থান ছেড়ে ঢাকা থাকছে। এই গত চার বছরে অনেক পরিবর্তন হয়েছে এই গ্রামের। পাকা বড় রাস্তা হয়েছে, নতুন দুটো স্কুল হয়েছে, একটা নতুন কলেজ হয়েছে, একটা হসপিটাল হয়েছে, উঠেছে অনেক পাকা বাড়িও। কিন্তু এতো এতো পরিবর্তনের মধ্যেও পরিবর্তনের ছোঁয়া পায়নি নিশিরদের বাড়ি। সেই টিনের চাল দেওয়া মাটির ঘর এখনো তেমনই আছে। আসলে, ইচ্ছা থাকলেও এখন এই মাটির বাড়ি ভেঙে, পাকা বাড়ি বানানোর মতো টাকা নিশিরের কাছে নেই। ঢাকা শহরের উত্তরার মতো জায়গায় বত্রিশো স্কোয়ার ফিটের ফ্ল্যাট, টয়োটার গাড়ি কিনতে গিয়েই অনেক টাকা খরচ হয়েগিয়েছে। তার উপর সামনে আবার পরিবারের নতুন সদস্য আসছে। তার জন্যও কিছু টাকা জমিয়ে রেখেছে। তাই আপাতত বাড়ির কাজ ধরেনি নিশির। তবে, ইতি মন থেকে চায় না, এই বাড়ি ভেঙে এখানে নতুন বাড়ি হোক। কত স্মৃতি আছে এই বাড়িকে ঘিরে। বিশেষ করে এই রুমে। এখানেই কেটেছে তার বিয়ের প্রথম রজনী। আজ থেকে ঠিক সারে চার বছর আগের সেই দিনের কথা ইতির চোখে এখনো ভাসে। সেদিন সে শ্যামা গায়ে টকটকে লাল রঙের বিয়ের বেনারসি শাড়ি, গা ভর্তি সোনার গহনা পরে, সাদা রজনীগন্ধা আর লাল গোলাপ দিয়ে সাজানো এই খাটের মধ্যে বসে অপেক্ষা করেছিল। জীবনের সেই বিশেষ দিনের বিশেষ মূহুর্তে তার ঠিক খুশি হওয়ার উচিত, না কষ্ট পাওয়া উচিত তা সে বুঝতে পারেনি। সে নিজের ভালোবাসার মানুষকে নিজের করে পেয়েছে, যাকে একসময় নিজের করে পাবার কথা সে ভাবতেও পারেনি। সেই হিসেবে তার খুশি হওয়ার কথা। কিন্তু ভালোবাসার মানুষটির সামাজিক বা ধর্মীয় ভাবে পেলেও, পছন্দের মানুষটির ভালোবাসার পায়নি সে। সেই হিসেব মতো তার এখন কষ্ট পাওয়ার কথা। এমন দোটানা অনুভুতি নিয়েই সেদিন বসেছিল ইতি। তার মায়ের মৃত্যুর পর ইতিকে নিজের বাসায় নিয়ে আসে মিসেস সাবনাজ। যদিও ইতির চাচিরা বলেছিল তারা ইতিকে তাদের সাথে রাখতে চায়। কিন্তু মিসেস সাবনাজ রাজি হয় না। নিজেদের ছেলে নেই বলে এই শান্ত-শিষ্ট, লক্ষী মেয়ে ইতিকে মিষ্টার শওকত আর মিসেস সাবনাজ ছোট থেকেই নিজের মেয়ের মতো ভালোবাসে আর ফুল বানু তো ইতির কিশোরী বয়সেই তাকে নিজের একমাত্র নাতির জন্য পছন্দ করে রেখেছিল। তাছাড়া মেয়েটাও যে তার নাতিকে পছন্দ করে তা এই প্রবীণ মহিলাটির বুঝতে বাকি থাকে নেই। কিন্তু নাতি অন্য একটা মেয়েকে পছন্দ করে বলে তিনি আর জোর করেনি। তবে যখন তিনি জানতে পারে যে তার নাতি ছ্যাকা খেয়ে বাঁকা হয়ে আছে আর এদিকে মা মারা যাওয়াও ফলে ইতিও একা হয়ে যায়। তখন উনি এক প্রকার জোর করেই নিশির আর ইতির বিয়ে দেয়। যদিও জোরটা শুধু করতে হয়েছিল নিশিত আর ইতিকে। মিষ্টার শওকত আর মিসেস সাবনাজ যেহেতু ইতি নিজেদের মেয়ের মতো আদর করতো, তাই তাদের এই বিয়েতে কোন আপত্তি তো থাকেই না, উল্টো তাদের পছন্দের মেয়েকে নিজের ছেলের বউ করবে ভেবে তারা খুশি হয়। দাদী আর মায়ের চাপে পড়ে নিশির রাজি হয়। তবে সে ইতির সাথে একা কিছু কথা বলতে চায়। বিয়ের তিনদিন আগে এই রুমেই ইতি নিশিরের সাথে কথা বলেছিল, সেদিন নিশির ইতিকে কোন ভণিতা না করেই বলেছিল, সে ইতিকে বিয়ে করতে পারবে, তার দ্বায়িত্বশীল স্বামী হতে পারবে। কিন্তু কখনো তার প্রেমিক হতে পারবে না। সে তার মনে একজনকে বসিয়ে রেখেছে। তাকে সরিয়ে অন্য কাউকে সে বসাতে পারবে না। এইসব জেনেও যদি ইতি তাকে বিয়ে করতে চায়, তাহলে তার কোন সমস্যা নেই। সে নিজের সবটুকু দিয়েই তার দ্বায়িত্ব পালন করবে। সব শুনে ইতির কি করা উচিত তা সে বুঝতে পারছিল না। সে নিশিরকে ভালোবাসে। অন্য সবার মতো সেও ভালোবাসার মানুষটাকে পেতে চায়। কিন্তু তাই বলে সে ভালোবাসার মানুষটির সাথে জোর করে কোন সম্পর্ক গড়তে চায় না। পরে অবশ্য সে রাজি হয় মিসেস সাবনাজ আর ফুল বানুর বুঝানোর ফলে। ফুল বানু আর মিসেস সাবনাজ ইতিকে অনুরোধের সুরে বুঝালে, তার মনে আশার অঙ্কুরের সৃষ্টি হয়। যদি সময় সাথে সাথে নিশির তার ভালোবাসাকে ভুলে গিয়ে তাকে ভালোবাসে। তাছাড়া তাকে এতো ভালোবাসে যে মানুষগুলো তাদের কথা ফেলতেও পারছিল না সে। তাই সবদিক ভেবে বিয়েতে রাজি হয় সে।
অন্ধকার আকাশে সাদা মেঘের পিছনে থাকা উজ্জ্বল চাঁদটা নিজের সর্বত্র দিয়ে চেষ্টা করছে নিজের আলো দিয়ে রাতের এই অন্ধকার পৃথিবীকে আলোকিত করতে। কিন্তু মেঘের আড়ালে থাকার কারণে তা আর সম্ভব হচ্ছে না। জানালার পাশে দাঁড়িয়ে ব্যর্থ চাঁদের দিকে একমনে তাকিয়ে থাকতে থাকতে হঠাৎ ইতির মনে হলো সেই ব্যর্থ চাঁদটা যেন সে নিজে আর এই পৃথিবীটা হচ্ছে নিশির। সে নিজের সবটা দিয়ে নিশিরকে আলোকিত করতে চাইছে কিন্তু অন্ধকার আকাশে ভাসতে থাকা মেঘের মতো নিশিরের অতীত কারণে সেও ব্যর্থ।
- ইতি! এই মাঝরাতে তুমি না ঘুমিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেন?
নিশিরের কন্ঠস্বর শুনে চাঁদের থেকে ঘুরে বিছানার দিকে তাকায় ইতি। বিছানার উপর বসে আছে নিশির। চাঁদের আলোতে ঘুম ঘুম মুখের নিশিরকে কি অপরূপ লাগছে। মুগ্ধ নয়নে সেদিকে তাকিয়ে থাকে ইতি। হঠাৎ তার মধ্যে থাকা দোটানাটা কেটে যায়। না সে আজ যেমনি আছে সুখিই আছে। ভালোবাসার মানুষটার ভালোবাসা না পেলেও, সঙ্গ পেয়েছে, যখন ইচ্ছে তখন তাকে দেখতে পারছে, ইচ্ছে হলেই ছুয়ে দিতে পারছে। এই বা কয়জনের কপালে জুটে। নিশির বিছানা থেকে নেমে ইতির কাছে আসতে আসতে চিন্তিত কন্ঠে পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে কথা বলছো না যে?
ইতির কাছে এসে চাঁদের সিগ্ধ আলোতে ইতির চিকচিক করা চোখের জল দেখে নিশির বিচলিত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি হয়েছে ইতি? কষ্ট হচ্ছে কোথাও? আমাকে ডাক দেওনি কেন? কোথায় কষ্ট হচ্ছে বল? আমি কি গাড়ি বের করবো, ডাক্তারের কাছে যাবে?
নিশিরের উদ্বিগ্ন মুখের দিকে তাকিয়ে ইতি মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল
- আমি খুব ভাগ্যবান তোমাকে নিজের স্বামী হিসেবে পেয়েছি।
ইতির কথা শুনে নিশির বুঝতে পারে ইতির কষ্টটা শরীরে না, মনে হচ্ছে। ঠোঁটে তাচ্ছিল্যের হাসি টেনে নিশির বলল
- দাদী ঠিকই বললেছিল, তোমার মতো বউ পাওয়া ভাগ্যের বেপার। স্বামী হিসেবে যেখানে আমার তোমাকে ভালোবাসার কথা, সেখানে যে মেয়ে আমাকে অপমান করল তাকে এখন ভালোবাসি। স্বামীর দ্বায়িত্ব পালন ছাড়া এখনও তোমাকে ভালোবাসতে পারিনি।
যদিও নিশিরের মুখে এই কথা শুনে ইতির কষ্ট হচ্ছে তবুও মুখে মিষ্টি একটা হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল
- তাও আমি তোমার থেকে, তোমার মতো আরও অনেকের থেকেই ভাগ্যবান। কারণ আমি আমার ভালোবাসার মানুষটার নিজের স্বামী হিসেবে পেয়েছি। তার ভালোবাসা না পেলেও শ্রদ্ধা, সম্মান, যত্ন সব পেয়েছি। যেখান তুমি নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে চোখের দেখা দেখ না আজ কত বছর যাবত।
নিশির কিছুক্ষণ স্থীর দৃষ্টিতে ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে। তারপর মলিন কন্ঠে প্রশ্ন করল
- কিভাবে পারো তুমি এতো নিঃস্বার্থ ভাবে আমাকে ভালোবাসতে?
ইতি মুখে মিষ্টি হাসির রেখা ফুটিয়ে রেখেই উত্তর দিল
- তুমি যেখানে এতো অপমানের পরও নিজের ভালোবাসাকে এখনো ভালোবাসো, সেখানে আমি তোমার স্ত্রী হয়ে, তোমার থেকে এতো যত্ন, সম্মান পেয়ে কিভাবে তোমাকে ভালো না বেসে থাকতে পারি।
নিশির প্রাণ খোলা হাসি হেসে বলল
- হাটু পর্যন্ত লম্বা ফ্রক পরে পিছু ঘুরে ঘুরে নিশির ভাইয়া বলে ডাকা মেয়েটা কতো বড় হয়ে গিয়েছে ভাবা যায়।
ইতি নিশিরের দিকে গোল গোল চোখ করে তাকায়। নিশির মুখে হাসির রেখা বজায় রেখেই বলল
- চল অনেক রাত হয়েছে গিয়েছে ঘুমাবে চল। এখন রাত জাগলে তোমার আর বেবি দুজনেরই ক্ষতি হবে।
ইতি শান্ত কন্ঠে বলল
- কিন্তু আমার যে ঘুম পাচ্ছে না।
নিশির ডান হাতে ইতির কাধ জড়িয়ে ধরে, তাকে বিছানার দিকে নিয়ে যেতে যেতে বলল
- আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিব। দেখবে খুব সহজেই তোমার ঘুম এসে পড়বে।


আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


১৪ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন