উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
11111111111111111111111111111111111
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৪৯)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ৫০)
নীলা দীপকের দিকে একটা পেপার এগিয়ে দিতেই দীপক ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- এটা কিসের এপ্লিকেশন?
- স্যার আমার সাতদিনের ছুটি লাগবে, এটা তারই এপ্লিকেশন।
দীপক আশেপাশে চোখ ঘুরিয়ে কলম খুঁজতে খুঁজতে জিজ্ঞেস করল
- সাত দিন তোমাকে না দেখে থাকবো কিভাবে? না মানে অফিসের কাজ হবে কিভাবে? সাত দিন ছুটি নিয়ে কি করবে? কোথাও ঘুরতে যাবে?
দীপক তার ডান হাতের পাশে রাখা ফাইলটা উঠাতেই তার নিচ থেকে কলম বের হয়। ফাইলটা অন্যপাশে রেখে কলমের দিকে হাত বাড়াতেই নীলা বললো
- নাহ স্যার আমার বিয়ে।
কথাটা কানে যেতেই দীপক হাতটা কলমের দিকে বাড়ানো অবস্থাই অবাক চোখে নীলার দিকে তাকায়। নীলা একটা কার্ড দীপকের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- এটা আমার বিয়ের কার্ড স্যার। ফ্রাইডে আমার বিয়ে। আসবেন কিন্তু।
দীপক রাগে কার্ডটা নীলার হাত থেকে নিয়ে এক টানে মাঝ বরাবর ছিরে টেবিলের উপরে ছুড়ে ফেলে বললো
- মেয়েরা নাকি ছেলেদের দেখেই বলে দিতে পারে, কোন ছেলে তার দিকে ঠিক কি নজরে তাকাচ্ছে। সেই হিসেবে তোমার প্রতি আমার ফিলিংস গুলোও তোমার অজানা না। তাহলে ,,,,,,
দীপকে আর বলতে না দিয়ে নীলা চোখে মুখে বিরক্তির ভাব ফুটিয়ে বললো
- তাহলে কি? আপনি আমাকে ভালোবাসেন বলে আমাকেও যে আপনাকে ভালোবাসাতে হবে, এমন তো কোন কথা নেই।
দীপক নিজের ডানহাতটা নীলার মাথার পিছনে চুলের ভাঁজে দিয়ে নীলার মাথা তার দিকে এগিয়ে এনে দাতে দাত চেপে বললো
- আমি তোমাকে অন্য কারোর হতে দিব না। প্রয়োজন হলে আমি তোমাকে জোর করে বিয়ে করবো।
নীলা নিজের মাথা থেকে দীপকের হাত সরিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো
- স্যার আপনি যদি আমাকে জোর করেন, তাহলে আমি আমি আত্মহত্যা করবো।
দীপক ধমকে বললো
- নীলা!
কিন্তু নীলার কোন হেলদুল নেই। সে আগের মতোই দাঁড়িয়ে আছে। দীপক করুন চোখে নীলার দিকে তাকিয়ে বললো
- আমাকে তোমার এতো অপছন্দ!
নীলা বিরক্ত ভাব নিয়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বললো
- আমি তো কোনদিন আপনাকে বলিনি, যে আমি আপনাকে ভালোবাসি। উল্টো আমি তো আপনার ফ্রেন্ডশিপের ওফারও একসেপ্ট করিনি।
দীপক অসহায় কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- কি নেই আমার মাঝে যার জন্য তুমি আমাকে পছন্দ করো না?
- আমার থেকে অনেক সুন্দরী মেয়ে আছে। তা আপনি আমাকে কেন পছন্দ করেন?
- আমার কাছে তুমিই পৃথিবীর সব থেকে সুন্দরী মেয়ে। তোমার চেহারা যদি নষ্ট হয়ে যায়, তাহলেও তুমি আমার কাছে পৃথিবীর সব থেজে সুন্দরী থাকবে। কারণ আমি তোমাকে ভালোবাসি।
- ঠিক তেমনি আমিও আমার ফ্রেয়ন্সিকে ভালোবাসি। তাই আপনার কি আছে, না আছে সেগুলো কখনো দেখিনি। দেখার প্রয়োজন বোধও করিনি।
স্থীর চোখে নীলার দিকে কিছুক্ষণ একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো দীপক। তারপর কলম নিয়ে এপ্লিকেশনে সাইন করে নীলার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- ঠিক আছে যাও। আমি আর কখনোই তোমার কাছে ভালোবাসা নিয়ে আসবো না। শুধু একটা রিকুয়েষ্ট, প্লিজ জবটা কন্টিনিউ করো। তোমাকে নিজের করে না পাই। দিনের কিছু সময় অন্তত তোমাকে দু'চোখ ভরে দেখার অধিকারটা দিও প্লিজ।
নীলা কোন উত্তর দেয় না। এপ্লিকেশনটা নিয়ে বের হয়ে চলে যায়। নীলা যেতেই দীপক ধপাস করে চেয়ারে বসে পড়ে। মনে মনে একটা কথাই ভেবে চলে, নীলাকে খুঁজে না পেলেই কি ভালো হতো? কষ্টটা কি তখন কম হতো?
রিশানকে স্বচ্ছ কাচের দরজা ঠেলে রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকতে দেখে তোয়া ছোট একটা নিশ্বাস ফেলে মনে মনে বলল, "সরি দোস্ত।" তারপর উঠে দাঁড়িয়ে হাত নেড়ে রিশানকে ইশারা করলে রিশান তোয়ার কাছে আসে। রিশান টেবিলের কাছে আসলে তোয়া মিষ্টি হেসে বললো
- আসসালামু আলাইকুম স্যার।
রিশান বসতে বসতে বললো
- ওয়ালাইকুম আসসালামু। বস, বস।
তোয়া বসলো। রিশান চোখ ঘুরিয়ে তার মায়াবিনীকে খুঁজতে থাকে। যদিও সে জানে তার মায়াবিনীর এখানে আসার সম্ভবনা নেই। তারপরও অবাধ্য চোখ আর মন যে সারাক্ষণ তাকেই খুঁজে বেরায়। তোয়া তাকে ফোন করে রিকয়েস্ট করে বলেছে একা তার সাথে দেখা করতে চায়। আর কেউ যেন তাদের এই দেখা করার কথাটা না জানে। কেন বলেছে, তা সে যানে না। তার স্টুডেন্ট হিসাবে আর তার মায়াবিনীর বেস্টফ্রেন্ড হিসাবে তোয়াকে যথেষ্ট সম্মান আর স্নেহ করে। তাই তোয়ার রিকয়েস্ট মতো সে কাউকে কিছু বলেনি। তোয়ার দিকে তাকিয়ে হালকা হেসে বললো
- বল কি খাবা ওডার দেই।
যেহেতু তাড়া দেখা করার জন্য রেস্টুরেন্টে এসেছে তাই ইচ্ছা না থাকায়ও কিছু তো খেতে হবেই। তোয়া ঠোঁট দুটো হালকা প্রসারিত করে বললো
- স্যার আপনার ইচ্ছা।
- নেক্সট টাইম আমি আমার ইচ্ছায় ওডার দিব এবার তুমি দেও।
- ব্লাক কফি।
- শুধু ব্লাক কফি!
- হুম।
- সাথে আর কিছু একটা নেও।
- প্লিজ স্যার আজকে শুধু কফিই খাই। পরে অন্য একদিন অনেক কিছু খাবো, প্রমিজ।
- ওকে।
বলেই রিশান পাশে তাকিয়ে হাত উঠিয়ে ওয়েটাকে ডাক দেয়। ওয়েটার কাছে এসে বললো
- জ্বি স্যার
রিশান ওয়েটারকে উদ্দেশ্য করে বললো
- দুইটা ব্লাক কফি।
ওয়েটার মাথা নেড়ে বললো
- ওকে স্যার।
ওয়েটার চলে গেলে রিশান তোয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তোমার এক্সাম কেমন হয়েছে?
- জ্বি স্যার ভালো।
এদিকে,
রেস্টুরেন্টে এ মিটিং, লাঞ্চ করে সিঁড়ি দিয়ে দোতলা থেকে নিচে নেমে, এমন একটা দৃশ্য দেখবে তা কখনো ভাবতে পারেনি অভি। দৃশ্যটা দেখেই মাথা গরম হয়ে যায় অভির। তোয়া এক ছেলের সাথে কফিশপে বসে হেসে হেসে কথা বলছে। আজকে সকালের ফ্লাইটে থাইল্যান্ড থেকে ঢাকা এসেছে অভি। এক সপ্তাহ পর কাজ শেষ করে দেশে ফেরার কথা থাকলেও কাজ শেষ হতে হতে একমাস লেগে যায়। আজকে সকাল এগারোটার ফ্লাইটে দেশে ফিরে সে। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়েই তোয়াকে ফোন করে। প্রথম কয়েকবার রিং হয় রিসিভ করে না। অভি জানে তোয়ার এখন ভার্সিটি বন্ধ। এক্সাম শেষ এ ছুটি চলছে। এখন তার বাসায় বসে বই পড়ার কথা। তাহলে ফোন রিসিভ করছে না কেন। অভি চিন্তায় পরে যায়। দুপুর দুইটায় আবার একটা ইম্পটেন্ট মিটিং আছে। তাই তোয়াদের বাসায় গিয়ে তার সাথে দেখাও করতে পারে না। চিন্তিত হয়ে দীপককে ফোন করে জানতে পারে তোয়া ঠিক আছে হয়তো ব্যস্ত আছে তাই রিসিভ করে না। ঠিক করে মিটিং শেষ হলে বিকেলে তার তোয়ার সাথে দেখা করবে। কিন্তু তার আগে যে এখানে এভাবে তার দেখা পাবে, তা তার চিন্তার বাহিরে ছিল। ছোটকাল থেকে দীপক আর অভি ফ্রেন্ড হওয়ার সুবাদে তোয়ার সব আত্নীয়-স্বজন বন্ধু-বান্ধব সবাইকে অভি চিনে। কিন্তু এই ছেলেকে সে চিনে না। কে এই ছেলে? যার সাথে এমন হেসে হেসে কথা বলছে। অচেনা কোন ছেলের সাথে তো কথা বলার মেয়ে তোয়া না। তার উপর এতো হেসে হেসে তো কখনোই না। এদিকে সে তার চিন্তা করে মরছে আর ওদিকে সে অন্য একটা ছেলের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। তোয়ার টেবিলের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়ে অভি রাগী কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তোয়া এ কে?
অভির কন্ঠ শুনে তোয়া পাশে তাকায়। অভিকে দেখে অবাক হয়ে বলল
- অভি ভাইয়া তুমি এখানে! তুমি কবে ,,,,,,
অভি শক্ত কন্ঠে জিজ্ঞেস করল
- তোমাকে যা জিজ্ঞেস করেছি তার উত্তর দেও।
তোয়া স্বাভাবিক কন্ঠেই উত্তর দিল
- রিশান স্যার। আমার ভার্সিটি টিচার।
"রিশান" নামটা অভির শোনা শোনা মনে হয়। মনে পড়ে দীপ্তির বিয়ের দিন তোয়া আর নিশা রিশার স্যার অনেক হ্যান্ডসাম, অনেক মেয়ের ক্রাশ এমন নানান কথা বলছিল আর হাসাহাসি করছিল। সে ভেবেছিল রিশান হয়তো কোন গল্পের ক্যারেক্টারের নাম। তাই বিষয়টাকে এতো গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু এখন তো দেখে এ জলজ্যান্ত মানুষ। রিশান অভিকে আপাদমস্তক দেখে তোয়ার দিকে তাকিয়ে তোয়াকে জিজ্ঞেস করল
- তোয়া এ কি তোমার ভাইয়া?
তোয়া স্বাভাবিক ভাবে বললো
- না। ঠিক ভাইয়া না। তবে ভাইয়ের মতো। আমার ভাইয়ার বন্ধু। অভি ভাইয়া।
তোয়ার এমন উত্তরে অভির রাগ আরও বেরে যায়। এতোদিন ধরে পিছে পিছে ঘুরে সে ভাইয়ের মতো আর দু'দিনের পরিচিত এই স্যার ক্রাশ। রাগে তোয়ার হাত ধরে তোয়াকে টেনে তুলে বাহিরের দিকে হাটা লাগায় সে। তোয়া অভির সাথে তাল মিলিয়ে হাটতে হাটতে জিজ্ঞেস করল
- অভি ভাইয়া আমাকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছ?
অভি কিছু না বলে তোয়াকে নিয়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভ করতে থাকে। তোয়া আবার জিজ্ঞেস করল
- ভাইয়া কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
অভি এবারও কোন কথা বলে না। তোয়া অনুনয় কন্ঠে বললো
- কফিশপে চলো না। প্লিজ ভাইয়া প্লিজ। স্যার একা বসে আছে।
অভি গাড়ি জোড়ে ব্রেক করে রাগী কন্ঠে বললো
- চুপ একদম চুপ। ভাইয়া ভাইয়া ভাইয়া। এতো বছর ধরে তোমার পিছে পরে আছি, তোমার মুখ থেকে দমে দমে ভাইয়া ডাক শোনার জন্য। জিজ্ঞেস করছিলে না কোথায় নিয়ে যাচ্ছি। তুমি আমাকে আর কখনো যাতে ভাইয়া ডাকতে না পার তার ব্যবস্থা করতে নিয়ে যাচ্ছি।
তোয়া অভির কথার মানে না বুঝতে পেরে জিজ্ঞেস করল
- মানে?
অভি একটা বাকা হাসি দিয়ে বললো
- মানে আমরা বিয়ে করতে যাচ্ছি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ৫১)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন