উপন্যাস       :         কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা        :         আনআমতা হাসান
গ্রন্থ             :         
প্রকাশকাল    :         
রচনাকাল     :         ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান

এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৪)

কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৫)

রাজধানী বসুন্ধরার একটা সাততালা বাড়ির পাঁচতালার একটি রুম। সাউন্ড প্রুফ, দরজা-জানালা বিহীন রুমেটাতে ফার্নিচার বলতে তিন কর্ণারে তিনটে চেয়ার, টেবিল আর টেবিলের উপর রাখা তিনটা ল্যাপটপ। তিনটে চেয়ারে বসে সেই তিনটি ল্যাপটপে কাজ করছে শুভ্র, দীপ্তি আর চন্দ্রা। কাজ বলতে হ্যাকিং করছে। জার্মান শব্দ "লীস্থ" মানে "আলো" নামক এক হ্যাকার গ্রুপের সদস্য তারা। গ্রুপের সদস্য হয়েও এই গ্রুপ সম্পর্কে বেশি কিছু জানে না তারা। শুরু জানে এই গ্রুপের প্রধান বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় হ্যাকার " মিষ্টার ই" । আর এই গ্রুপে তাদের মতোই পুরো বাংলাদেশ জুড়ে উনএিশ জন হ্যাকার কাজ করে। কিন্তু তারা কারা, বা কোথায় থেকে কাজ করে সেই সম্পর্কে তারা কিছুই জানে না। এই গ্রুপের সদস্যরা বেআইনি কোন কাজ করে না। তারা মূলত দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে সাহায্য করে। "মিষ্টার ই" এর কথা মতো তারা কোন ব্যাক্তি বা প্রতিষ্ঠানের ফোন, ল্যাপটপ ইত্যাদি হ্যাক করে তথ্য জোগাড় করে। তেমনি আজকেও "সহজ কেনাবেচা ডট কম" নামক একটা অনলাইনে পণ্য কেনাবেচার প্রতিষ্ঠানকে হ্যাক করে ইনফর্মেশন জোগাড় করছে। মিনিট দশেক পর দীপ্তির কাজ শেষ হয়ে যায়। সে ল্যাপটপ থেকে চোখে সরিয়ে শুভ্র আর চন্দ্রার দিকে তাকায়। দুজনে এখনও কাজ করছে। এক মিনিট পর শুভ্রের আর দেড় মিনিট পর চন্দ্রার কাজ শেষ হয়। তিন জনের মুখের হাসি। যা বলে দিচ্ছে তাদের কাজ সাকসেসফুল। তখনই তিন জনের ল্যাপটপে একসাথে "মিষ্টার ই" এর মেইল আসে। তিনজনই মেইলটা ওপেন করে দেখে তাতে লেখা -
” Good job. "
💞
মাথায় সাদা টুপি। কালো গায়ে সাদা পাঞ্জাবি-পায়জোমা। আছরের নামাজ পড়ে বিল্ডিংয়ের নিচে আসতেই কাব্য দেখলো মিষ্টার সফিক বড় বড় দুই ব্যাগ নিয়ে রিকশা থেকে নামছে। কাব্য গিয়ে মিষ্টার সফিককে বলল
- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।
মিষ্টার সফিক হেসে বলল
-  ওয়ালাইকুম আসসালাম কাব্য বাবা। কেমন আছো?
কাব্য হেসে বলল
- আলহামদুলিল্লাহ আংকেল। আপনার শরীরটা কেমন?
মিষ্টার সফিক উত্তর দিল
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো।


কাব্য মিষ্টার সফিকের দিকে হাত বাড়িয়ে বলল
- আংকেল ব্যাগগুলো দিন আমি নিয়ে যাচ্ছি।
মিষ্টার সফিক বাধা দিয়ে বলল
- না কাব্য বাবা আমি নিতে পারবো।
কাব্য বিনয়ের সাথে বলল
- প্লিজ আংকেল না করবেন না।
বলেই মিষ্টার সফিকের হাত থেকে ব্যাগ দুটো নিয়ে নিল। মিষ্টার সফিক বলল
- একটা ব্যাগ অন্তত আমাকে দেও বাবা।
কাব্য হেসে বলল
- এতো বড় একটা বাবা থাকতে ছেলে কষ্ট করবে তা কি হয়।
মিষ্টার সফিক হেসে কাব্যের পিঠে হাত রেখে বলল
- চল বাবা।
বিল্ডিংয়ের ভিতরে প্রবেশ করতেই গাঢ় নীল রঙের দারোয়ানদের পোশাক পড়া লতিফ মিয়া এসে কাব্যর দিকে হাত বাড়িয়ে বলল
- আমাকে দেও কাব্য বাবা। আমি দিয়ে আসি।
কাব্য মিষ্টি হেসে বলল
- না চাচা আমি তো বাসায় যাচ্ছি। তোমার কষ্ট করে যেতে হবে না।
লতিফ মিয়া আর কিছু বলে না। জানে বললেও লাভ হবে না। নয় বছর ধরে সে এই বাসায় কাজ করছে। এখানে যা বেতন পায় তার থেকে বেশি বেতনের চাকরির সে করতে পারে। কিন্তু করেনি। তার দুটো কারণ ১) অন্য যায়গায় বেতন বেশি পেলেও এতো ভালোবাসা পেত না। ২) কাব্য, এই মিষ্টি ছেলেটার মায়ায় পড়ে গিয়েছে সে। চালচুলোহীন লতিফ মিয়ার কেউ নেই। বাবা মারা যায় তার বুদ্ধি হওয়ার আগে। গ্রামে তাদের জমিজমা যা ছিল তাতে চাষবাস করে ভালোই চলছিল মা আর ছেলের সংসার। কিন্তু সুখ তার কপালে সইলো না। যখন তার বয়স ১৮ কি ২০ তখন তার মা অসুস্থ হয়ে পরে। তাদের জমিজমা যা ছিল সব বিক্রি করে, সব টাকা ঢালে মা'র চিকিৎসার পিছনে। কিন্তু কোনো লাভ হয় না। মারা যায় তার মা। সহায়সম্বলহীন লতিফ মিয়া গ্রামের এক বড় ভাইয়ের সাথে শহরে এসে দারোয়ানের চাকরি করা শুরু করে। তখনি তার জীবনে আসে মিনা। সে যেই বাসার দারোয়ান ছিল। সেই বাসার কাজের মেয়ে ছিল কিশোরী মিনা। সেই সুএেই তাদের পরিচয়। আস্তে আস্তে প্রেম ভালোবাসা। তারপর পালিয়ে বিয়ে। শুরু হয় তার মিনার সাথে ছোট স্বপ্নের সংসার। কিন্তু এবারও তার কপালে সুখ সয় না। বিয়ের ছয় মাস হতে না হতেই মিনা কেমন যেন পাল্টে যায়। কারণে অকারণে তার সাথে ঝগড়া করতো। তাকে দেখলে মিনার চোখে-মুখে বিরক্তের ছাপ ফুটে উঠতো। বিয়ের ঠিক এক বছর পর মিনা তাকে ছেড়ে এক রাজমিস্ত্রীর সাথে পালিয়ে যায়। তারপর সেও সেই এলাকা ছেড়ে এখানে এসে পরে। আর বিয়ে করেনি সে। আসলে, মিনাকে সে বড্ড ভালোবেসেতো। যার ফলে মিনার স্থান আর কাউকে দিতে পারিনি সে। বছর খানেক পর কাব্যদের বাসায় চাকরি নেয় সে। তখন কাব্য স্কুলে পড়ে। কিন্তু সে অন্য স্কুল পড়ুয়া ছেলেদের মতো ছিল না। শান্ত-শিষ্ট, নম্র-ভদ্র একটা ছেলে ছিল কাব্য। দেখা হলেই তার চাচা চাচা ডাক, মিষ্টি হাসি মুখে কথা বলা, অসুস্থ হলে তার দেখাশোনা করা। সব মিলিয়ে লতিফ মিয়াকে এক মায়ার জালে আটকে ফেলেছে কাব্য। যেই জাল ছিড়ে অন্য কোথাও যাওয়া সম্ভব হয়নি তার। মিষ্টার সফিকের আজ আবারো বন্ধুর ছেলের সামান্য একটা দারোয়ানের সাথে এমন মিষ্টি করে হেসে কথা বলা দেখে গর্বে বুকটা ভরে যায়। এই বয়সের ছেলেরা যেখানে আড্ডা চাট করে বেড়ায়, গুরুজনদের সম্মান করে কথা বলে না, কাজের লোকেদের অর্ডারের উপর রাখে। সেখানে এই ছেলে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ে, গুরুজনদের তো সম্মান করেই, কাজের লোকেদেরও যথেষ্ট সম্মান করে, স্নেহ করে। তার খুব আফসোস হয়, তার যদি এমন একটা ছেলে থাকতো। দুজনেই লিফটে উঠে মিষ্টার সফিক ফোর লিখা বাটনে চাপ দিতেই নিশব্দে কয়েক সেকেন্ড মধ্যে তা ফোর্থ ফ্লোরে পৌঁছে যায়। বাসার সামনে এসে কলিং বেলে চাপ দেয় মিষ্টার সফিক। কিছুক্ষণের মধ্যে মিসেস মায়া এসে দরজা খুলে দেয়। মিসেস মায়াকে দেখেই কাব্য মিষ্টি হেসে বলে
- আসসালামু আলাইকুম আন্টি।


মিসেস মায়া মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বলল
- ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সালাম নিতে নিতেই মিসেস মায়ার চোখ পরে কাব্যের হাতে থাকা বাজারের ব্যাগ দুটোর উপর। মিসেস মায়া ব্যাগ দুটো কাব্য হাত থেকে নিয়ে দরজার ভিতর রাখতে রাখতে বলে
- কাব্য বাবা তুমি এতো কষ্ট করতে গেলে কেন? লতিফকে বলতে তুলে দিত।
কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মিষ্টার সফিকের দিকে তাকিয়ে আবার বলল 
- আর তুমিই বা কেমন, ছেলেটার হাতে এতো বড় দুটো ব্যাগ দিয়ে দিলে।
মিষ্টার সফিক কিছু বলার আগেই কাব্য বলল
- না, না। আন্টি আংকেল দিতে চায়নি। আমি নিজেই জোড় করে নিয়েছি। আমি তো বাসায় যাচ্ছিলাম। তাই ভাবলাম শুধু শুধু লতিফ চাচার উঠার কি দরকার। আচ্ছা আন্টি আমি আসি।
মিসেস মায়া বলল
- সেকি কথা, দরজা থেকে কেউ চলে যায়। ভিতরে আসো। পায়েস বানিয়েছি তোমাদের বাসায় নিয়েই যেতাম কাজ শেষ হলে। তুমি খেয়ে যাও আর কিরণের জন্য নিয়ে যাও।
পাশ থেকে মিষ্টার সফিকও বলল
- হ্যাঁ ভিতরে চল। তোমার সাথে একটু গল্প করি। অনেকদিন তোমার সাথে গল্প করা হয় না।
কাব্য আর কিছু না বলে মিষ্টার শফিকের পিছু পিছু ড্রয়িং রুমে গিয়ে বসে। তখন কুহু ড্রয়িং রুমের সোফাতে বসে টিভি দেখছিল আর পায়েস খাচ্ছিল। দরজায় এতোক্ষণ তাদের কথোপকথন কুহু শুনেছে। তাই কাব্য ড্রয়িং রুমে ঢুকলে কে এসেছে তা দেখার জন্য কুহুকে আর মুখ ঘুড়িয়ে তাকাতে হয়নি।
মিষ্টার সফিক সোফাতে বসে কাব্যকে বলল
- বস বাবা।
কাব্য সোফাতে বসলে, মিষ্টার সফিক জিজ্ঞেস করল
- তা তোমার লেখাপড়ার খবর কি?
কাব্য মিষ্টি হেসে উত্তর দিল
- জি আংকেল ভালো।
মিষ্টার সফিক প্রশ্ন করল
- তোমার সি.জি.পিএ কেমন?
কাব্য শান্ত কন্ঠে বলল
- এখন পর্যন্ত ফাস্ট ক্লাস আছে।
মিষ্টার সফিক খুশি হয়ে বলল
- মাশাল্লাহ।
ঠিক তখনি মিসেস মায়া একটা ট্রে'তে করে দুই বাটি পায়েস আর দুই গ্লাস পানি নিয়ে আসতে আসতে বলল
- দেখেছ কাব্য বাবা যেমন ভালো ছেলে, তেমনি ভালো স্টুডেন্ট। 
মিসেস মায়ার মুখে তার এমন প্রসংশা শুনে কাব্য লজ্জা পায়। মিসেস মায়া মেয়ের দিকে তাকিয়ে আবার বলা শুরু করল
- আর এই মেয়েটাকে দেখ, সারাদিন আছে শুধু টিভি দেখার ধান্দায়। আমি নিশ্চিত এই মেয়ে পরীক্ষায় ফেল করবে। এইচ.এস.সি'র গন্ডি ওর আর পেরোনো হবে না।


মায়ের কথা শুনে বিরক্তি নিয়ে কাব্যের দিকে তাকায় কুহু। কাব্যও তার দিকেই তাকিয়ে ছিল। যার ফলে চোখাচোখি হয়ে যায়। দুজনের মধ্যে চোখাচোখি হতেই কুহু চোখ সরিয়ে আবার টিভির দিকে তাকায়। কুহুর এমন বিরক্তি মাখা চাহনি দেখে কাব্যের মনটা খারাপ হয়ে যায়। হঠাৎ তার সেদিনের কথাটা মাথায় আসতেই সে মনে মনে ভাবে, সে কালো বলে কুহু তাকে পছন্দ করে না। আর এদিকে কুহু টিভির দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলল, "এতো ভালো ছেলে। এতো ভালো ছেলে। কোথায় এতো ভালো ছেলের গলায় তার মেয়েকে ঝুলিয়ে দিবে, তা না। শুধু সারাদিন প্রসংশা করে গলা শুকাবে। এতো ভালো। এতো ভালো ছেলে। আর আমাকে বলবে পড় পড় পড়। আল্লাহ এদের মাথায় একটু বুদ্ধি শুদ্ধি দেও তো। যাতে এরা খুব তাড়াতাড়ি আমাকে কাব্যের গলায় ঝুলিয়ে দেয়।"

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...


এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৬)


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে। 

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন