উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৬)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৭)
এক হাতে জগ আর এক হাতে পানির গ্লাস নিয়ে হাটছে আর কিছুক্ষণ পর পর গজ থেকে গ্লাসে পানি ঢেলে পানি খাচ্ছে চন্দ্রা। ছোট থেকেই এক্সাম বা রেজাল্ট দেওয়ার আগে টেনশন হলে সে এমন হাটতে হাটতে পানি খায়। কিন্তু আজকে তার টেনশনের কারণ এক্সাম বা রেজাল্ট নয়। আজকের টেনশনের নাম হচ্ছে আহান। ও চড় দেওয়ার পর দিন থেকেই আহানের কোনো খোঁজ খবর পাচ্ছে না সে। অনলাইনে আসছে না ফোন নাম্বার বন্ধ। তার বন্ধু বান্ধবও বলছে তার কোনো খোঁজ খবর জানে না তারা। আচ্ছা, সে কি তার চড় খেয়ে কষ্টে সব ছেড়ে ছুড়ে ভবঘুরে হয়ে গেছে। হায়! হায়! তাহলে তার কি হবে? সে যে আহানকে বিয়ে করার জন্য বসে আছে সেই কবে থেকে। যদি আহান ভবঘুরে হয়, তাহলে তাকে কিভাবে বিয়ে করবে সে? খুঁজে বেরই বা করবে কিভাবে তাকে?শেষমেশ কি তাকে চিরকুমারী থাকতে হবে। তখন সবাই তাকে ডাকবে চিরকুমারী চন্দ্রা। চিরকুমারী চন্দ্রা নামটা ভালোই খারাপ না। তখনি বিছানার উপরে রাখা চন্দ্রার ফোনে টুট টুট করে একটা মেসেজ আসে। চন্দ্রা হাতের জগ আর মগটা খাটের পাশের বেড সাইড টেবিলে রেখে বিছানায় বসে। ফোনটা হাতে নিয়ে মেসেজটা ওপেন করতে গিয়ে কিছুটা অবাক হয়ে যায় সে। নাম্বারটা দেশের না। বাহিরের নাম্বার থেকে মেসেজটা এসেছে। কিন্তু বাহিরে থেকে তাকে কে মেসেজ পাঠাবে? তার তো এমন কেউ নেই যে দেশের বাহিরে থাকে আর তাকে মেসেজ পাঠাবে?কৌতুহল নিয়ে মেসেজটা ওপেন করে।
মেসেজে লেখা -
" শুনলাম আমাকে নাকি জানপ্রাণ বাজি রেখে খুঁজে চলেছ। শোন মেয়ে, এতো খোঁজার কোন প্রয়োজন নেই। সময়মত আমিই তোমাকে দেখা দেবো। আর টাইম মতো তুমি তোমার শাস্তিও পেয়ে যাবে। সো খোঁজাখুঁজি বাধ দিয়ে, পড়ালেখায় মন দেও।
ইতি
অকারণে তোমার হাতের চড় খাওয়া বেচারা।"
💞
পুরো রুম জুড়ে পাইচারি করে বেড়াচ্ছে কুহু। রুমের এপাশ থেকে ওপাশে হাটছে আর ভাবছে কিভাবে কি উপায়ে কাব্যদের বাসায় যাওয়া যায়। আজ তিনদিন ধরে কাব্যের সাথে দেখা হয় না তার। দূর কেন যে সেইদিন রাগ করে চলে এসেছিল? এখন গেলে কাব্য কি ভাববে? দূর ভালোবাসার মানুষের ভাবা না ভাবায় কিছু হয় না। ভেবেই কুহু বই খাতা নিয়ে রুম থেকে বের হলো।
মিসেস মায়া মেয়েকে বই খাতা নিয়ে রুম থেকে বের হতে দেখেই কপাল কুঁচকে বললো
- তুই আবার ছেলেটাকে জ্বালাতে যাচ্ছিস। ছেলেটার সামনে পরিক্ষা।
মায়ের কথা কানে যেতেই কুহুর এই পরীক্ষা নামক বস্তুর উপর চরম বিরক্ত হয়ে উঠে কুহু। এই পরীক্ষা নামক বস্তুটা না থাকলে কাব্যও সারাদিন লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকতো না। মার দিকে তাকিয়ে বললো
- জ্বালাতে যাচ্ছি না তোমার ছেলেকে। অল্প একটু পড়া বুঝেই চলে আসবো।
মিসেস মায়া আফসোসের সুরে বললো
- যদি আমার এমন ছেলে থাকতো তাহলে আর কিছু লাগতোনা।
কুহু ফট করে বলে উঠলো
- বানিয়ে ফেলো না নিজের ছেলে।
মিসেস মায়া ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- নিজের ছেলে বানানো কিভাবে?
মায়ের কথায় কুহুর টনক নড়ে। এমা! সে কি বলতে যাচ্ছিল এখনি! তারপর থতমত খেয়ে বললো
- কাব্য ভাইয়াকে বলবে তোমাকে মা ডাকতে তাহলেই তোমার তাকে ছেলে ছেলে ফিল হবে। ঠিক যেমন কিরণ আমাকে আপু ডাকে দেখে আমার কিরণকে ছোট ভাই ফিল হয়।
মিসেস মায়া বিরক্ত নিয়ে বললো
- তোর যতসব আজগুবি কথাবার্তা। এখন গেলে যা। আর ছেলেটাকে বেশি বিরক্ত করবি না। তাড়াতাড়ি চলে আসবি।
কুহু মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে বললো
- আচ্ছা মা। তুমি কোন চিন্তা করো না আমি তোমার ছেলেকে জ্বালাবো না আর তাড়াতাড়ি চলে আসবো।
বলেই দরজা খুলে লাফাতে লাফাতে সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠতে লাগলো। মিসেস মায়া পিছন থেকে ডেকে বললো
- এই আস্তে যা। পরে যাবি তোও।
কুহু সিঁড়ি দিয়ে উঠতে উঠতেই বললো
- কিছু হবে না তুমি দরজা লাগিয়ে দেও।
মিসেস মায়া দরজা লাগিয়ে দিলেন। কুহু লাফাতে লাফাতে গিয়ে কাব্যদের কলিং বেল চাপলো। কয়েক সেকেন্ডপর মিসেস কবিতা এসে দরজা খুলে, কুহুকে দেখে অভিমানী কন্ঠে বলল
- এতো দিনে আন্টির বাসায় আসার কথা মনে পড়লো।
কুহু অবাক কন্ঠে বললো
- কোথায় এতোদিনে আসলাম। প্রতিদিনই তো আসি।
মিসেস কবিতা ভ্রু কুঁচকে কুহুর দিকে তাকাতেই কুহু হেসে আবার বললো
- তবে মনে মনে।
মিসেস কবিতা হেসে বললো
- দুষ্ট মেয়ে। ভিতরে আয়। আলু পরটা বানাচ্ছি নিয়েই যেতাম তোদের বাসায়। তুই বস আমি বানিয়ে নিয়ে ,,,,,,,
এতটুকু বলে মিসেস কবিতার চোখ যায় কুহুর হাতের দিকে। হাতে বই খাতা দেখে আবার বললো
- তুই কাব্যের কাছে এসেছিলি ও তো বাসায় নেই।
কিছুক্ষণ আগে ফোন করে বলল প্রজেক্টের কাজের জন্য হৃদয়দের বাসায় থাকবে আজ।
তখনি রান্নাঘর থেকে কাজের মেয়ে হিরা ডেকে উঠলো
- খালাম্মা পরোটা তো বেলা হইয়া গেছে বাজবেন না।
মিসেস কবিতা বললো
- তুই বস আমি পরোটা কটা ভেজে নিয়ে আসি।
কথাটা বলেই মিসেস কবিতা রান্নাঘরে চলে গেল। কুহুর মনটা খারাপ হয়ে গেল। ভেবেছিল এতোদিন পর কাব্যের সাথে দেখা হবে তা আর হলো না। কোথাকার কোন হৃদয় না ফিদয়ের বাসায় চলে গেছে। আচ্ছা উনি তো আগে কখনো কারো বাসায় গিয়ে থাকেনি। তাহলে এখন কেন থাকছে? আর এই হৃদয়টাই বা কে? ছেলে মানুষদের অন্ধ বিশ্বাস করতে নেই। খোঁজ নিতে হবে। ছিঃ কি ভাবছিস এসব কুহু! উনি অন্য ছেলেদের মতো নাকি। কিন্তু এই হৃদয়ের যদি ছোট বোন থাকে, সে যদি কাব্যের প্রেমে পড়ে যায়। না না না এই হৃদয় সম্পর্কে খোঁজ নিতেই হবে। কিন্তু কার থেকে নেওয়া যায়। ভাবতে ভাবতেই চোখ যায় ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখতে থাকা কিরণের দিকে। কুহু মুখে হাসির রেখা ফুটিয়ে হেটে গিয়ে কিরণের পাশে বসতেই কিরণ বললো
- নো ফ্রী সার্ভিস।
কুহু কিরণের কথা শুনে তার দিকে কপাল কুঁচকে তাকায়। কিরণ টিভির দিকে তাকিয়ে টিভি দেখছে।
কুহু কিরণের কান টেনে ধরে বললো
- আবার বল।
কিরণ হাত দিয়ে নিজের কান থেকে কুহুর হাত ছাড়াতে ছাড়াতে বললো
- আহহহ। লাগছে তো ছাড়ো। এগুলো কিন্তু ঠিক না। সেই ছোট থেকে তোমার কাছে কোনো কিছু চাইলে বা কোনো সাহায্য চাইলে তুমি বল। আমাকে ভাবি ডাক, তোর ভাই এর ডেইলি রুটিন দে, তোর ভাই কার কার সাথে চলে তাদের লিস্ট দে, তোর ভাই কার কার সাথে ফোনে কথা বলে তার লিস্ট দে, তোর ভাই কোনো কোনো মেয়ের সাথে চলে তার লিস্ট দে, ইত্যাদি, ইত্যাদি। তাহলে আমি কেন পারবো না।
কুহু দাত কেলিয়ে বললো
- কারণ তুই গুনেগুনে আমার থেকে ছয় বছর পর দুনিয়ায় এসেছিস।
কিরণ মুখটা কতোটুকু করে বললো
- এটা কোন কারণ হলো।
কিরণের এমন মন খারাপ করে মুখটাকে এতোটুকু করতে দেখে কুহুর হাসি পায়। কুহু হেসে কিরণের মাথার কালো ঝাকড়া চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে আদর করে বললো
- আচ্ছা যা বল কি চাই।
কিরণের মুখ খুশিতে চকচক করে উঠলো। কিরণ হাসি মুখে বললো
- একটা ভিডিও গেমের সিডি লাগবে। মা বলেছে ফইনাল এক্সামের আগে দিবে না। কিন্তু এক্সামের তো অনেক দেরি। আর ভাইয়া তো সময় পাচ্ছে না।
কথাটা বলেই আবার মুখটা কালো করে ফেললো। কুহু হেসে বললো
- আচ্ছা নাম লিখে দিস। আমি কিনে দেব।
কিরণ খুশি হয়ে জিজ্ঞেস করল
- সত্যিই?
কুহু হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ালো। তারপর কিরণকে জিজ্ঞেস করল
- এখন বলতো তোর ভাইয়ার কাহিনীটা কি? উনি আজকাল এতো আড্ডা চাটে মজেছে কেন?
- ভাইয়া আড্ডা দিতে যায়নি। ভাইয়া ফাইনাল ইয়ারের প্রজেক্ট করছে। হৃদয় ভাইয়াদের বাসায়।
- কেন ওই হৃদয়দের বাসায় কেন?
- কারণ হৃদয় ভাইয়াদের বাসাটা ভার্সিটির কাছে। আর মানুষও কম। হৃদয় ভাইয়ার বাবা মা আর হৃদয় ভাইয়া।
- কোনো বোন নেই তো?
- না নেই।
কুহু একটা প্রশান্তির হাসি দিয়ে বললো
- শান্তি শান্তি।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৮)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন