উপন্যাস : কপোত কপোতীদের গল্প
লেখিকা : আনআমতা হাসান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১০ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আনআমতা হাসানের “কপোত কপোতীদের গল্প” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বর মাসের ১০ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান |
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৭)
কপোত কপোতীদের গল্প || আনআমতা হাসান (পর্ব - ০৮)
চোখে গোল ফ্রেমের চশমা। মাথার চুল গুলো বাম দিকে সিঁথি করা। উজ্জ্বল ফর্সা গায়ে সাদা চেকের শার্ট আর কালো প্যান্ট। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে আছে। সহজ সরল মুখটা কালো করে দাঁড়িয়ে আছে সিফাত। সামনে একটা বেঞ্জে বসে আছে শুভ্র। পড়নে কালো টি-শার্টের উপর কালো জেকেট আর কালো প্যান্ট। হাতে মোটা চেনের সিলবার কালারের বেসলেট। গলায় সোনার মোটা চেইন। হাতে জ্বলন্ত সিগারেট। দেখে মনে হচ্ছে সে অনেক বড় মাপের কোন মাস্তান। শুভ্র মুখে রাগী রাগী ভাব নিয়ে বললো
- তোর সাহস তো কম না। তুই আমার গালফ্রেন্ডকে বিয়ে করতে চাস।
সিফাত ভয়ে ভয়ে বললো
- সরি ভাই। আমি জানতাম না যে উনি আপনার গালফ্রেন্ড হয়।
শুভ্র কপাল কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- জানতি না মানে কি হ্যাঁ? মেয়ে সম্পর্কে না জেনেই, মেয়ের মতামত না নিয়েই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য লাফাচ্ছিস?
সিফাত মাথা নিচু করে বললো
- সরি ভাই ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না।
শুভ্র রাগী ভাব করে বললো
- চুপ একদম চুপ। আর একবার যদি সরি ভাই, সরি ভাই করেছিস তো মেরে বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেব।
শুভ্র হাতের সিগারেটে একটা টান দিয়ে ধোঁয়া ছেড়ে বললো
- দীপ্তির বাবাকে এখন ফোন করে না করে দে।
সিফাত পকেট থেকে ফোন করে। শুভ্র জিজ্ঞেস করল
- এই দ্বারা ফোন করে কি বলবি?
সিফাত স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- বলব আপনার মেয়ের বয়ফ্রেন্ড আছে, আমি তাকে বিয়ে করবো না।
শুভ্র বড় বড় চোখ করে একটা ধমক দিয়ে বলল
- দইরা একটা কষায়ে চটকনা দিব তোরে। তুই এই কথা বলবি! তোর সাহস তো কম না।
সিফাত শুভ্রের ধমক শুনে ভয়ে ভয়ে জিজ্ঞেস করল
- তাহলে কি বলব ভাই?
শুভ্র নিজেকে শান্ত করে বললো
- বলবি তোর গালফ্রেন্ড আছে। তাই এই মেয়েকে তুই বিয়ে করতে পারবি না।
সিফাত অসহায় আর ভয় মিশ্রিত কন্ঠে বলল
- কিন্তু আমার তো কোনো গালফ্রেন্ড নেই ভাই।
শুভ্র এবার চরম বিরক্তি নিয়ে বলল
- শালা জীবনে কি করছিস? একটা প্রেমও করতে পারিস নাই! তোর তো ইদুরের বিষ খেয়ে মরা উচিত। তা পরে মরিস, আগে দীপ্তির বাপ রে ফোন দে। দিয়ে যা শিক্ষিয়ে দিয়েছি তা বল।
সিফাত মাথা নেড়ে বললো
- আচ্ছা ভাই।
বলেই ফোন আনলকড করে, ফোন লিস্টে গিয়ে থেমে গেল। সিফাতকে থেকে যেতে দেখে শুভ্র ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল
- কি হলো ফোন কর?
সিফাত মাথা নিচু করে আস্তে করে বললো
- ভাই ফোন নাম্বার তো নেই।
শুভ্র বিরক্ত নিয়ে বললো
- দাড়া দিচ্ছি।
বলেই শুভ্র পকেট থেকে ফোন বের করে দীপ্তির বাবার ফোন নাম্বার বের করে বললো
- তোর ফোন দে।
সিফাত তার ফোনটা শুভ্রর দিকে এগিয়ে দিলে শুভ্র সিফাতের ফোনে দীপ্তির বাবার ফোন নাম্বারটা তুলে কল করে লাউডস্পিকারে দিয়ে ফোনটা সিফাতের দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো
- নে কথা বল।
সিফাত ফোনটা শুভ্রের কাজ থেকে নিয়ে মুখের সামনে রাখে। দুইবার রিং হওয়ার পর মিষ্টার আরফান ফোনটা রিসিভ করে বললো
- হ্যালো, কে বলছেন?
সিফাত ফোনের এপাশ থেকে বললো
- হ্যালো অংকেল আমি সিফাত
ফোনের ওপাশ থেকে মিষ্টার আফরান আবার জিজ্ঞেস করল
- কোন সিফাত?
সিফাত উত্তর দিল
- আংকেল আপনার মেয়েকে যে দেখতে গিয়েছিলাম, আমি সেই সিফাত।
মিষ্টার আরফান বললো
- ওহ সিফাত। ভালো আছো?
সিফাত স্বাভাবিক ভাবেই বললো
- হ্যাঁ আংকেল, আপনি ভালো আছেন?
মিষ্টার আরফান ছোট করে উত্তর দিল
- হ্যাঁ।
মিষ্টার আরফান আর কিছু জিজ্ঞেস করার আগেই সিফাত বললো
- আংকেল একটা কথা বলার ছিল।
মিষ্টার আরফান কৌতুহল নিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কি কথা?
সিফাত শুভ্রের শিক্ষিয়ে দেওয়া কথা গুলো তোতাপাখির মতন বলতে শুরু করল
- আমার গালফ্রেন্ড আছে আমি আপনার মেয়েকে বিয়ে করতে পারবো না।
মিষ্টার আরফান রেগে গিয়ে বলল
- হয়াট! তাহলে দেখতে এসেছিলে কেন?
সিফাত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। শুভ্র তো তাকে আর কিছু শিক্ষিয়ে দেয় নি। সে শুভ্রের দিকে তাকাতেই শুভ্র আস্তে করে বলল
- বল সরি আংকেল।
সিফাতও বাদ্য ছেলের মতো বলল
- সরি আংকেল।
কতোটুকু কথা বলা হলেই শুভ্র সিফাতের কান থেকে ফোনটা নিয়ে কেটে দিয়ে দীপ্তির বাবার নাম্বারটা ব্লাক লিস্টে দিয়ে দেয়। তারপর ফোনটা সিফাতকে দিয়ে বললো
- আর কখনো যেন ওই বাড়ির কারো সাথে তোকে যোগাযোগ করতে না দেখি। বুঝেছিস?
সিফাত মাথা ঝাকিয়ে হ্যাঁ বলে। হাতের সিগারেটটা ফেলে দিয়ে শুভ্র বললো
- গুড এবার যা। আর কোনদিন যেন তোর এই চেহারা না দেখি।
ছেলেটি এক প্রকার দৌড়ে সেখান থেকে চলে গেল। তারপর পরই হাতে ফোন নিয়ে গাছের আড়াল বেরিয়ে এলো চন্দ্রা। ভিডিও কলে থাকা দীপ্তির দিকে তাকিয়ে হাসতে হাসতে বলল
- লাইক সিরিয়াসলি। ফুপা শেষমেশ তোর মতো মেয়ের জন্য এই আবুল মার্কা ছেলে ধরে এনেছে।
দীপ্তি আফসোসের সুরে বললো
- আব্বু যদি একবার রেস্টুরেন্টে এই আবুলের সাথে আমাকে একা কথা বলতে দিত তাহলে ওকে আমি বুঝিয়ে দিতাম এই দীপ্তি কি।
শুভ্র দাত কেলিয়ে বলল
- হুম্ম। তখন ও নিজেই পাঁচ টাকা ফকিরকে দিয়ে কেটে পড়তো। আমার আর কষ্ট করতে হতো না।
তিন বন্ধু আবার আট্টহাসিতে মেতে উঠলো।
মাঠের কোণে আজ আবার গল্পের আসর বসালো তিন বান্ধবী। কথোপকথনে চলছে কুহুর আফসোস। আজ এক সপ্তাহ ধরে কাব্যের দেখা পাচ্ছে না সে। কাব্য এখন বেশিরভাগ সময় তার সেই বন্ধুর বাসায় থাকে। মাঝে মাঝে বাসায় ফিরে তাও অনেক রাতে। আবার সকাল সকাল বের হয়ে যায়। দেখা সাক্ষাৎ হচ্ছে না। বাদ্য হয়ে পরশুদিন ফোন করেছিল সে। প্রথমবার রিসিভ হয়নি। দ্বিতীয়বার রিসিভ করে, "কেমন আছ?"," লেখাপড়ার খবর কি?" এমন টুকটাক দু'একটা কথা বলে "এখন রাখি একটু কাজ আছে, পরে কথা বলি।" বলেই ফোনটা কেটে দেয় কাব্য। কাব্য আর কুহুকে ফোন করেনি। কুহুও অভিমান করে আর ফোন দেয়নি। দুঃখে কুহুর এখন বনবাসে যাওয়ার মতো অবস্থা। তূবা কুহুকে সান্ত্বনা দিতে দিতে খেয়াল করে দোলা কুহুকে সান্ত্বনা দিচ্ছে না। কুহুর কথা শুনছে পর্যন্ত না। অন্যমনস্ক হয়ে কি যেন ভাবছে। তূবা ভ্রু কুঁচকে দোলার দিকে তাকিয়ে বললো
- কিরে তোর কি হয়েছে? এমন অন্যমনষ্ক হয়ে কি ভাবছিস?
তূবার কথা শুনে কুহুও দোলার দিকে তাকিয়ে বললো
- হ্যাঁ রে তোর আবার কি হলো? তোর তো এখন খুশিতে উড়ে মেঘের উপর লাফালাফি করে, বৃষ্টি নামিয়ে। সেই বৃষ্টিতে ভিজে নাচার কথা।
দোলা বিরস মুখে নিয়ে বললো
- বৃষ্টিতে নাচতে না। বৃষ্টির পানিতে পা পিছলে পরে ঠ্যাং ভেঙে, বিছানায় পরে থাকতে ইচ্ছা করছে।
তূবা অবাক হয়ে বললো
- ক্রাশকে কাছে পাওয়ার আনন্দে মানুষ নাচে, তা জানতাম। কিন্তু কেউ ক্রাশকে পাওয়ার আনন্দে পা ভেঙে বিছানায় পরে থাকতে চায়, তা জীবনের প্রথম শুনলাম! অভ্রের মতো ডাক্তার হলে না হয় পা ভাঙতি। সেবা যত্ন পাওয়া লোভে। কিন্তু ভাইয়া তো ডাক্তার না তাহলে?
কুহু তূবার দিকে তাকিয়ে ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করল
- তুই কয়বার পা ভাঙছিস?
তূবা কুহুর দিকে তাকিয়ে বললো
- একবারও না। তবে, স্কুল ফাকি দেওয়ার জন্য পেট ব্যথার অভিনয় করেছি।
তারপর দোলার দিকে তাকিয়ে ভ্রু উঁচু করে জিজ্ঞেস করল
- বাট তোর কাহিনীটা কি বল তো।
দোলা মুখ ভার করে বললো
- আমার কাহিনী ক্রাশের অপর নাম বাঁশ।
কুহু বড় বড় চোখ করে জিজ্ঞেস করল
- তো তোর ক্রাশ তোকে বাঁশ দিছে কিভাবে? আবার চড় খাইছিস?
দোলা মাছি তাড়ানোর ভঙ্গিতে হাত নাড়িয়ে বললো
- না।
কুহু পুনরায় জিজ্ঞেস করল
- তাহলে?
দোলা প্রথমদিন অতুল পড়াতে এসে যা যা করেছে, বলেছে এক এক করে সব বলে। সব শোনার পর তূবা বললো
- আমরা ওইদিন ভাইয়াকে ভুল বুঝেছিলাম। ভাইয়া আসলে ভালো মানুষ। ভালোই তো হলো। পটিয়ে নে ভাইয়াকে।
দোলা অসহায় কন্ঠে বললো
- উনি যেই পরিমাণ গম্ভীর আর রাগী। আমি বলতে পারবো না ওনার দাত হলুদ না সাদা। ইভেব ওনার ঠোঁট দুটো প্রসারিত করলে গালটা কতটুকু উঁচু হয় তার মাপটাও জানি না।
তারপর একটা নিশ্বাস ফেলে আবার বলল
- তোদের লাভ স্টোরিতে তো মরিচ বাতির মতো আশার আলো আছে। আর আমারটায় তো বাচ্চা জোনাকির আলো পর্যন্ত নেই।
কুহু সান্ত্বনা দিয়ে বলল
- এখনি এতো ভেঙে পরিস না। ভাগ্য যেহেতু তোর সেই অচেনা ক্রাশকে তোর এতো কাছে এনে দিয়েছে সেহেতু তুই চেস্টা করলে নিশ্চয়ই তাকে পাবি।
দোলা অসহায় কন্ঠে কুহুর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করল
- কিন্তু কি করবো?
কুহু উত্তর দিল
- অনাকে ইমপ্রেস কর।
দোলা আবার জিজ্ঞেস করল
- কিভাবে?
তূবা অবাক হয়ে উত্তর দিল
- কিভাবে মানে! উনি যা যা পছন্দ করে তা কর।
দোলা অসহায় সুরে বলল
- সেটাই তো সমস্যা। আমি গুনে গুনে ওনার সম্পর্কে পাঁচটা লাইন জানি। তাও আম্মুর কাছ থেকে শুনেছি ১) ওনার নাম অতুল, ২) উনি বুয়েটে পড়ে, ৩) ওনার বাবা-মা দুই বছর আগে মারা গেছে, ৪) ওনার একটা বড় বোন আছে, ৫) উনি আমার স্যার এর স্টুডেন্ট ছিল। ওনার সম্পর্কে আর কিছু জানি না।
কুহু চট করে বলল
- অতুল ভাইয়া বুয়েটে পড়ে। কাব্যও তো বুয়েটে পড়ে। তুই এক কাজ কর। কোন ভাবে শুধু ভাইয়ার থেকে কতোটুকু জেনে নে, যে ভাইয়া কোন ইয়ারের কোন ডিপার্টমেন্টে পড়ে। বাকিটা আমি কাব্যকে দিয়ে ইনফরমেশন এনে দিব। যদি তার দেখা পাই।
তূবা কুহুকে সান্ত্বনা দিতে বলল
- ভাইয়া কাজে ব্যস্ত আছে বললোই তো। তুই এখনি এমন দেবদাসীনি হয়ে যাচ্ছিস কেন?
কুহু আহত কন্ঠে তূবাকে জিজ্ঞেস করল
- অভ্র ভাইয়াও তো কতো ব্যস্ত থাকে। তাই বলে কি কখনো তোর সাথে ব্যস্ততা দেখিয়ে কথা না বলে, বল?
তূবা কাতর কন্ঠে বলল
- কথা বলেই বা লাভ কি বল। সে তো আর আমার কথা শুনে না।
তিন বান্ধবী একটা দীর্ঘনিশ্বাস ফেলে। তারা এমন এমন মানুষের প্রেমে পড়েছে যাদের একজন বুঝেনা। একজন বুঝেও, বুঝতে চায় না। আর একজন বুঝানোর সুযোগটাই দেয় না।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
এখানে ক্লিক করে পড়ুন কপোত কপোতীদের গল্প (পর্ব- ০৯)
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আনআমতা হাসান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন