উপন্যাস       :         তোমায় ঘিরে
লেখিকা        :         জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ০৬ অক্টোবর, ২০২২ ইং

লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ৬ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান

৫৯তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

তোমায় ঘিরে || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৬০)

তানভীর নিলয় আর ওয়ারদাকে নিয়ে সেখানে পৌছালো। 
নিলয়ঃআরায়ায়াফ।
আরাফঃনিলয়। বাবা নবনি পাখি।
নিলয় দুই জন এর পালস চেক করলো।
নিলয়ঃআরাফ শ্বাস নিচ্ছে।তাড়াতাড়ি হাসপাতালে নিতে হবে।
আরাফ যেন শক্তি ফিরে পেলো।
আরাফঃহ্যায়া।
তানভীর আর নিলয় আদর চৌধুরীকে তুলি নিলো। আরাফ নবনিকে কোলে নেয়।ওয়ারদা বাচ্চাদের বুকের সাথে মিশিয়ে নিলো।
বিথি আসতে নিলে তানভীর চোখ গরম করে তার দিকে তাকায়।আজকে বোকা সোকা তানভীরকে ভয় করছে বিথির। সে ভয়ে পিছিয়ে গেলো।
এক গাড়িতে আরাফ নবনি আর তানভীর। 


আর এক গাড়িতে আদর চৌধুরী নিলয় ওয়ারদা। 
আরাফ হাসপাতালে কল দিয়ে সব রেডি করতে বলছে।গাড়ি খুব দ্রুত ঢাকা ক্লিনিক প্রবেশ করলো।
আরাফ নবনিকে কোলে নিয়ে স্ট্রেচার দিয়ে দিলো।ডাক্টাররা তাকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলো।আরাফ ছুটে তার বাবার কাছে গেলো।উনাকেও ডাক্টাররা এমারজেন্সি ওর্য়াডে নিয়ে যান।দুই জনের অবস্থা সিরিয়াস।
আরাফঃতানভীর বাসায় মা। মা একা। বরফ এর ব্যবস্থা করো।
নিলয়ঃআমি যাচ্ছি আরাফ। আমি দেখছি।
আরাফঃহুম।
নিলয় আর তানভীর বেরিয়ে গেলো।ওয়ারদা বাচ্চাদেরকে খাওয়ালো। সকালে থেকে না খেয়ে ছিলো।আরাফ বাচ্চাদের ওয়ারদার কাছ থেকে নিয়ে বুকের সাথে মিশিয়ে এক জায়গা থেকে আর এক জায়গা হাটা হাটি করছে।
বাচ্চারা আরাফ এর বুকে ঘুমিয়ে পরে।
ওয়ারদাঃভাইয়া ওদেরকে দিন।ঘুমিয়ে পরেছে ওরা।
আরাফঃনা।ওরা আমার কাছেই থাকবে।
ওয়ারদা আরাফ এর চোখে স্পষ্ট ভয় দেখছে।ওয়ারদা চোখ দিয়ে টুপ করে এক ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
কে বলে পুরুষ মানুষ কাদে না।তারা আমাদের থেকে ও বেশি কাদে।তাদের কান্না এতো যন্ত্রণাদায়ক যে চোখের পানি বের হওয়ার আগেই শুকিয়ে যায়।
আরাফ এতো কিছু হারিয়েছে যে এখন বাচ্চাদেরকে নিজের একটু দূর করতে চাচ্ছে না।
ডাক্টার বের হয়ে আসলো।
আরাফঃডক্টর। 
ডাক্টারঃসরি। আপনার বাবাকে বাচাতে পারি নাই।
আরাফ মাটিতে বসে পরলো।
ওয়ারদাঃনবনিইইই?
ডাক্টারঃএখন কিছু বলতে পারছি না।নিশ্বাস নিচ্ছে কিন্তু গুলি হার্ট এ লেগেছে। বাচার চান্স ১০%।
ডাক্টার কথাটা বলেই নবনির অপারেশন রুমে ঢুকে পরলো।
আরাফ উঠে আদর চৌধুরীর কেবিনটাতে গেলো।
মেহরাব নবনিকে আদর চৌধুরীর পাশে নামিয়ে দিলো।বাচ্চারা আদর চৌধুরীর বুকে যেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।
আরাফঃবাবা।তুমি এত জেদি কেনো? চলেই গেলে??আমাকে অনাথ এতিম করে দিলে।আমি এখন কার কাছে যেয়ে কাদবো?!কার কাছে আবদার করবো?আমার কষ্টগুলো কার কাধে দিয়ে শান্তির ঘুন দিবো?

আমাকে কে দেখবে বাবা।ও বাবা বলো না।বাবা। বাবা।উঠো না।যেয়ো না বাবা।প্লিজ উঠে পড়ো।আমি সব ছেড়ে দিবো। আমি রাজনীতিই করবো।তোমার সব কথা শুনবো।উঠো আমার লক্ষি বাবাটা।
আমাকে উঠে বলো এই হতচ্ছারা তোকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না বলো নায়ায়ায়ায়ায়া।আমার সন্তান এর সামনেও তুমি এই নামে ডেকো আমি একটু রাগ করবো না। উঠো না বাবায়া।বাবায়ায়ায়ায়।
আরাফ তার বাবার বুকে মাথা রাখলো।এই বুকটা আমি আর পাবো না।আর পাবো না আমি আমার বাবাকে। আর কেউ আমাকে হেলিকপ্টার পাঠাবে না।আর কেউ আমার ছেলেমেয়েকে খবর পড়ে শুনাবে না।বাবায়ায়ায়ায়া।
আমি আর  তোমাদের দেখতে পারবো না।কথা বলতে পারবো না।
আরাফ বাচ্চাদের মতো কাদতে লাগলো।আরাফ এর কান্না দেখে মেহরাব আদ্রিতাও কাদতে লাগলো।
আরাফ এর মাথায় কেউ হাত রাখলো।
আমি আছি তো আরাফ।কে বলছে তোমার আবদার পূরন এর কেউ নেই।আমি এখনো বেচে আছি।
আরাফ তাকিয়ে দেখলো আসাদ খান দাঁড়িয়ে আছে।
আরাফ আসাদ খানকে জড়িয়ে ধরে।
আসাদ খানঃকাদে না।আরাফ। সবাইকে একদিন না একদিন এই দুনিয়ার মায়া ত্যাগ করতে হয়।কেউ আগে কেউ পরে।দুনিয়া ক্ষনস্থায়ী আর পরকাল চিরস্থায়ী। আর কে বলছে তুমি তোমার বাবা মাকে দেখতে পারবে না?
জান্নাতে তোমার তোমার বাবা মার সাথে দেখা হবে।তখন কেউ তোমাকে তাদের থেকে আলাদা করবে না।তুমি মন ভরে তাদেরকে দেখতে পারবে।তার জন্য তোমাকে অপেক্ষা করতে হবে।কাদলেতো তোমার বাবা মা কষ্ট পাবে।
উনারা বেচে থাকতে কখনো তোমাকে কাদতে দিয়েছে!!এখন কেদে উনাদের কেন কষ্ট দিচ্ছো।এমন করলেতো আল্লাহ তাদেরকে জান্নাতে রাখলেও তারা শান্তিতে থাকতে পারবেন না।
আরাফ শান্ত হয়ে গেলো।
ওয়ারদা নিলয়কে কল দিয়ে সবটা বললো।
নিলয়ঃকিহহহ।ইয়া আল্লাহ এটা কেমন পরীক্ষা। একদিন  এ আমার বন্ধু এতো কিছু কি করে নিবে।এখন নবনি ভাবিকে যাতে আল্লাহ বাচিয়ে রাখেন।না হলে আরাফ কার জন্য বাঁচবে!!
বাচ্চাগুলোর দিকে তাকিয়ে আল্লাহ তুমি নবনি ভাবিকে বাচিয়ে রেখো।
আরাফ বেরিয়ে আসলো।আদর চৌধুরীকে এম্বুলেন্স এ তোলা হলো।
আসাদ খানঃআরাফ বাসায় চলো।উনাদেরকে বেশিক্ষন এভাবে রাখাটা ঠিক হবে না।উনাদেরকে দাফন এ ব্যবস্থা করতে হবে।
আরাফঃকিন্তু নবনি পাখি।
আসাদ খানঃওয়ারদা আর রাজ আছে এখানে।তুমি চলো।
আরাফঃআচ্ছা।
আরাফ মেহরাবকে সাথে নিয়ে নিলো।
আরাফঃআদ্রিতাকে দেখে রেখো ওয়ারদা।
ওয়ারদাঃহ্যা ভাইয়া।আমি আছি। 
রাজঃআমিও আছি AV.তুমি যাও।
আরাফ বেরিয়ে পড়লো।
নিলয় সব ব্যবস্থা করে রেখেছিলো।
জানাযার নামাজ শেষে আদর চৌধুরী আর নিলীমা চৌধুরীকে এক সাথে কবর দেয়া হলো।পুরোটা সময় জুড়ে মেহরাব আরাফ এর কোলে ছিলো।
মেহরাব এর ছোট ছোট হাত দিয়ে আরাফ তারা দাদা দাদির কবরে মাটি দেয়ায়।তারপর মেহরাব এর ছোট ছোট হাত গুলো নিজের হাতের মাঝে নিয়ে মোনাজাত করে।
আরাফঃরাব্বির হাম হুমা কামা রাব্বা ইয়ানী সাগীরা।


আল্লাহ তুমি আমার বাবা মাকে কবরের কঠিন আযাব থেকে নাযাত দান করো।তাদেরকে শাস্তি হাত থেকে রক্ষা করো।ইয়া আল্লাহ তুমি তাদেরকে জান্নাতি করো।
তুমি এই এতিম এর দোয়া কবুল করো আল্লাহ।আমাকে খালি হাতে ফিরিয়ো না।
আরাফ সেখান থেকে হাসপাতালে চলে আসে। সাথে আসাদ খান নিলয় আর তানভীর ও।
আরাফঃরাজ।ডক্টর কিছু বলেছে?
রাজঃনা।
সবাই স্থির হয়ে বসে আছে।চোখ নবনির কেবিন এর দিকে।
আরাফ একদম চুপচাপ হয়ে গিয়েছে।যেনো সে একটা রোবট।
সবাই এই চুপচাপ থাকা আরাফ এর ভিতরে চলা তুফান ঠিকই আন্দাজ করতে পারছে।
ডাক্টার বেরিয়া আসলো।
আরাফ কিছুই বললো না শুধু চোখ তুলে তাকালো।
আরাফ এর বুকটা খুব ব্যাথা করছে।একটু আগে এই ডাক্টারটাই আদর চৌধুরীর মৃত্যুর খবর দিয়েছিলো।আরাফ ভয়ে কিছু জিজ্ঞেস করতে পারছে না।তার মধ্যে আর শক্তি নেই। এখন মনে হচ্ছে একটু পর সে নিজেও মারা যাবে।
ডক্টরঃআলহামদুলিল্লাহ।উনি এখন সুস্থ আছেন।কিন্তু তার হার্ট খুব দুর্বল।তাকে এমন কিছু বলবেন না যেটা উনি না নিতে পারেন।আপনারা দেখা করতে পারেন।ঘুমের ইঞ্জেকশন দিয়েছি।২৪ ঘন্টা পর জ্ঞান ফিরবে।
আরাফঃআলহামদুলিল্লাহ। 
আরাফ নবনির কেবিনে ছুটে গেলো।মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো।চেহারা শুকিয়ে গিয়েছে।
আরাফ নবনির বুকে মাথা রেখে তাকে চেপে ধরলো।
আরাফঃধন্যবাদ নবনিপাখি। তুমি আমাকে ছেড়ে যাও নাই।তুমি আমার কাছেই আছো।বিশ্বাস করো তুমি না থাকলে আমি আত্মহত্যা করতাম।আমি এক মুহুর্ত ও তোমাকে ছাড়া বাচতে পারবো না।তুমি পৃথিবী ছাড়লে আমি ও এখানে থাকবো না।আমি তোমার সাথেই যাবো।
আরাফ নবনির বুকে মাথা রেখে ক্লান্ত চোখগুলো বুঝে নিলো।
নিলয়ঃসবাই বাসায় চলে যান।একটু পর রাত হয়ে যাবে।আমি আর তানভীর আছি এখানে।
আসাদ খানঃহ্যা।ওয়ারদা বাচ্চাদের এখানে রাখা ঠিক হবে না।বাসায় চলো।
রাজঃআমিই থাকি??
নিলয়ঃনা রাজ।তুমি আমেরিকা থেকে ডিরেক্ট এখানে এসেছো। তোমার রেস্ট এর দরকার। বাসায় যেয়ে রেস্ট নাও।সকালে এসে পরো।
তুমি সকালে থেকে আমরা তখন বাসায় যেয়ে রেস্ট নিবো।
রাজঃআচ্ছা।
নিলয় আর তানভীর বাদে সবাই চলে গেলো।
তানভীরঃস্যার নবনি ম্যামকে অনেক ভালোবাসেন।
নিলয়ঃএটা তুমি আজকে বুঝলে?
তানভীরঃহুম।আর এটাও বুঝলাম সত্যিইকার এর ভালোবাসা কি হয়!তানভীর এর মাথায় বিথির চিন্তা ঘুরপাক খাচ্ছে।সে যে কবে বিথিকে ভালোবেসে ফেলেছে সে তা নিজেও বুঝতে পারে নেই।আজ বিথির করা অন্যায় গুলোতো বুকটা অনেক জ্বালাপোড়া করছে।



আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 


চলবে ...


৬১তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন