উপন্যাস : অধ্যায়টা তুমিময়
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ অক্টোবর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “অধ্যায়টা তুমিময়” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের অক্টোবরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
1111111111111111111111111111111
১৫ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
অধ্যায়টা তুমিময় || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ১৬)
আহসানঃকত দিন আর এই হ্যাং করা ফোনটা চালাবে?আমরা এখানে নতুন ফোন কিনতে এসেছি।
সিমরানঃকিহহ!!সত্যিইই!!
আহসানঃহুম। তিন সত্যিই।দেখো তো কোনটা পচ্ছন্দ হয়?
সিমরানঃএখানে তো অনেক দামি ফোন।এত টাকা।
আহসানঃটাকার কথা ভাবতে হবে না।তোমার স্বামীর এতটুক সামর্থ্য আছে যে নিজের স্ত্রীর দেনমোহর পরিশোধ করতে পারে।এটা তোমার দেনমোহর।
সিমরানঃআমিতো দেনমোহর দাবি করি নেই।ক্ষমা করে দিয়েছি তাহলে?
আহসানঃদেনমোহর হলো একজন স্ত্রীর অধিকার।যা স্বামীর পরিশোধ করা ফরজ।তুমি মাফ করে দিয়েছো এটা তোমার উদারতা।কিন্তু এটা হলো একপ্রকার সম্মানি যা একজন স্বামী তার স্ত্রীকে দেয়।আমি তোমাকে এটা থেকে বঞ্চিত করতে পারি না।
আমাদের সমাজে দেনমোহর পরিশোধ করলে ভাবা হয় স্ত্রীকে কিনে নেয়া হয়েছে।দেনমোহর পরিশোধ করা মাত্রই স্ত্রীর উপর শারীরিক অধিকার অর্জন করে ফেলে। কিন্তু দেনমোহর শুধুই একটা সম্মানি মাত্র।কোনো স্বামীরই অধিকার নেই তার স্ত্রীকে বিনা অনুমতিতে স্পর্শ করা।
হাদিসে বলা হয়েছে যে দেনমোহর পরিশোধ ব্যতীত কোনো স্বামী তার স্ত্রীকে স্পর্শ করতে পারবে না।কিন্তু এই কথার উদ্দেশ্য এটা নয় যে দেনমোহর পরিশোধ করলেই শারিরীক অধিকার লাভ এই কথাটা দ্বারা কেবল দেনমোহর এর উপর গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে।
দেনমোহর ২ প্রকারের হয়।তাৎক্ষণিক আর বিলম্বিত।
তাৎক্ষনিক দেনমোহর স্ত্রীর চাহিবা মাত্র পরিশোধ করতে হয়।
আর বিলম্বিত দেনমোহর স্বামীর সাথে তালাক হলে,স্বামী মৃত্যু বরণ করলে বা একাধিক বিয়ে করলে পরিশোধ করতে হয়।
কোনো স্বামী যদি দেনমোহর পরিশোধ না করে থাকে তাহলে তাকে গুনাহগার হতে হবে।আর আল্লাহর কাছে জবাবদিহী হতে হবে।
সিমরানঃআচ্ছা।ঠিক আছে।আমি আমার দেনমোহর নিবো।চলুন ফোন পচ্ছন্দ করি।
আহসানঃহুম।চলো।
সিমরানঃএটা পচ্ছন্দ হয়েছে।
আহসানঃশিউর?এটাই। অন্য গুলো দেখবে না?
সিমরানঃনা।
আহসানঃএটার প্রাইজ কতো?ডিসপ্লে প্লেটে লিখা আসে দেখো।
সিমরানঃ১০ হাজার ৯৯০ টাকা!!
আহসানঃহুম।
সিমরানঃনা না। এটা লাগবে না।অন্যটা দেখি।
আহসানঃকালার দেখানতো আমার ওয়াইফকে।
ছেলেটা বিভিন্ন কালার বের করলো।
আহসানঃকোনটা ভালো লাগে?
সিমরানঃআমি এটা নিবো না তো। আপনি জানেন ১১ হাজার টাকায় আমাদের তিন মাসের সংসার চলে যাবে।এত টাকা এখানে অপচয় করাটা বোকামী ছাড়া কিছুই না।
আহসানঃআজকে বিয়ে করে এখনই সংসার নিয়ে ভাবতে হবে না।স্বামীর আদেশ পালন করো।তুমি কিন্তু আমার অবাধ্য হচ্ছো।কথাটা কিছুটা রাগ দেখিয়ে বলে।
সিমরানঃনা।না।আমি অবাধ্য হই নাই তো।এভাবে বলছেন কেন?আমারতো আর জান্নাতে যাওয়া হবে না।আমি নিচ্ছি এখনই নিচ্ছি।
সিমরান কালার দেখতে লাগলো।
আহসান সিমরান এর দিকে তাকিয়ে কিছু ভাবতে লাগলো।
আহসানঃযে যুগে মেয়েরা কি করে স্বামীর পকেট এর টাকা খরচ করতে হবে,নিজের অযাচিত প্রয়োজন গুলো পূরন করে আনন্দ উল্লাস করতে হবে তা নিয়ে মেতে থাকে সে যুগে জন্মেও তুমি আমার টাকার কথা ভাবছো।মাত্র ১১ হাজার টাকা দিয়ে দুই মিনিটে তিন মাসের সংসার খরচ গুছিয়ে নিলে আর তোমাকে আমার মা সাংসারিক না বলে দাবী করে।
আমি গর্ব করে বলতে পারি আমার ঢাকাইয়া বউ যথেষ্ট সাংসারিক।
সব মেয়েরা এক হয় না।ঢাকাইয়া হলেই তাকে অগোছালো উচ্ছিন্ন হতে হবে না।ঢাকাইয়া মেয়েরাও সহজ সরল আর স্বামি প্রিয় হয়।
যার প্রমান আমার নিজের স্ত্রী। আফসোস মা তুমি হিরে চিনলে না।
আহসান প্রাপ্তির হাসি হাসলো।
সিমরানঃশুনেন। আমার এটা পচ্ছন্দ হয়েছে।
আহসানঃপ্যাক করে দিন।এটা।
একটা মেয়ে সেলসম্যান বললো এখানে না আমাদের দোকানে এটা প্যাক করে দেয়া হয়।আমাদের দোকানটা ওখানে আপনারা আসুন আমার সাথে।
আহসান সিমরান মেয়েটার পিছনে হাটতে লাগলো।মেয়েটা বার বার পিছনে তাকিয়ে আহসানকে দেখে মুচকি হাসছে।
সিমরান এর ব্যাপারটা একটুও ভালো লাগে নাই।একতো একটা ব্লাক টিশার্ট আর জিন্স পরে আছে।তারপর আবার আহসান এর দিকে বার বার তাকাচ্ছে।
সিমরানঃএই মেন্ডাক।
আহসানঃকি ফড়িং।
সিমরানঃআপনি বার বার ওই মেয়ের দিকে কেন তাকাচ্ছেন?
আহসানঃনা তাকালে তো ওই মেয়ে তোমার মোবাইল নিয়ে হারিয়ে যাবে। পরে মোবাইলটা কই পাবো?
সিমরানঃমোবাইল চুলায় যাক। আপনি তাকাবেন না ওর দিকে।
আহসানঃআমার ১১ হাজার টাকাও ওই মেয়ের কাছেই!
সিমরানঃদিয়েছেন কেন আগে আগে।সব সময় এমন বোকামী করেন।
আহসানঃআজব তো।তুমি এমন রেগে যাচ্ছো কেন?
সিমরানঃরাগবো না ওই মেয়ে আপনার দিকে এমন করে তাকায় কেন?চোখ দিয়ে গিলে খাবে?
আহসানঃআমি কি জানি ওই এমনে তাকায় কেন!!
সিমরানঃআপনি কালো হইলেই ভালো হইতো এতো ফর্সা হতে কে বলেছে?প্রথমে লামিয়া এখন এই মেয়ে।মনটা চাচ্ছে আমার নিকাব খুলে আপনাকে পড়িয়ে দেই।
আহসানঃহ্যা। দাও।আর সবাই আমার দিকে তাকিয়ে হাসুক।
সিমরানঃআপনি আমার বউ হলে ভালো হতো। বোরখা পরিয়ে রাখতাম।কঠিন পর্দা করতেন।
আহসান হাসতে লাগলো।
কথা বলতে বলতে দোকানে এসে পরলো মেয়েটা রিসিপ্ট সহ মোবাইলটা প্যাক করে আহসান এর দিকে এগিয়ে দিলো।আহসান নেয়ার আগেই সিমরান সেটা নিয়ে নিলো।আর আহসান এর হাত ধরে হাট ধরলো।
আহসানঃআর এ মেয়েটাকে থ্যাংক ইউ তো বলতে দাও।
সিমরানঃকিসের থ্যাংক ইউ। আপনি কি বুঝেন না সে সরাসরি আপনার উপর কুনজর দিচ্ছে।ব্যাগটা তো আমার হাতেও দিতে পারতো কিন্তু না আপনার কাছে দিলো সব আপনার হাত স্পর্শ করার ধান্দা।
আহসানঃতোমার মনে হয় না তুমি একটু বেশীই ভাবছো?
সিমরানঃও। হ্যা।এখনতো আমাকে ভালো লাগবে না।নতুন চড়ুই পাখি দেখছেন।এখনতো বউ ভালো লাগবে না।
আহসানঃআমি এটা কবে বললাম।
সিমরানঃবলবেন কেন?আমি দেখেছি না আপনি ওই মেয়ের দিকে বিনা পলক ফেলে তাকিয়ে ছিলেন।
আহসানঃআর ওই টাতো যাতে হারিয়ে না যায় তাই।
সিমরানঃওহ তাই না!!এক দম চোখ বের করে বিরিং খেলবো।একটু আগেই আমার নামে আপনাকে রেজিস্ট্রার করে নিয়েছি।এদিক ওদিকে তাকালে খবরই আছে।
আহসানঃবাপরে।!তুমি যে এতো ডেঞ্জেরেস আগে তো জানতাম না।বিয়ে হইতেই অধিকার জমানো শুরু করে দিলে?
সিমরানঃঅধিকার আছে তো জমাবো না?এতো দিন আমি প্রেমিকা ছিলাম আজ স্ত্রী। আপনার উপর আমার পুরো অধিকার আছে। আর শুধু আমার বুঝলেন?
আহসানঃএতোদিনতো কতো নম্র ভদ্র ছিলে এখন বিয়ে হইতেই আমাকে নির্যাতন করতে শুরু করে দিলে?
সিমরানঃকি বললেন আমি নির্যাতন করি?এই সত্যিই করে বলেন ওই মেয়েকে পচ্ছন্দ হয়েছে?
আহসানঃইয়া আল্লাহ!!আমি আর কিছুই বলবো না।এই যে চুপ করলাম।তুমি যা মন চায় করো আমাকে ফাসি দিয়ে দাও। ওই মেয়ের চুল ছিড়ে ফেলো আমি কিছুই বলবো না।
সিমরানঃহি হি হি।
আহসানঃইশশশ।স্বামীকে মারার অনুমতি পেয়ে কি খুশি।
হে অবিবাহিত পুরুষগন তোমরা জেনে রাখো।
বিয়ে করা সহজ বউ পালা বড্ড কঠিন।
বানীতে ~ আফিফ আহসান।
সিমরান খিল খিল করে হাসতে লাগলো।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
চলবে ...
১৭ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন