উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
৩৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৪০)
মেহরাবঃআমি একটু বেশিই ভাবছি।একটা কফির বেসিসে কাউকে নূর মনে করা বোকামি ছাড়া কিছুই না।
মেহরাবের ফোনটা বেজে উঠলো।মেহরাব ফোন কানে দিয়ে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়।মেহরাব যেতেই নেহা মেহরাবের রুমে যেয়ে রুমটা লক করে দেয়।নতুন আনা জামাগুলো এক এক করে মেহরাবের আলমারীতে সাজিয়ে দেয়।আর কালো সাদা গুলো সব সরিয়ে ফেলে।
নেহাঃদেখলেন মেহরাব চৌধুরী নেহা কত ভালো?!!আপনি আমাকে মারতে চান আর আমি নিজের বেতনের টাকা দিয়ে আপনাকে গিফট করলাম।
আচ্ছা সাদা কালো গুলো কি করি!এখানে থাকলে তো আবার এটাই পড়বেন।আইডিয়া!
নেহা সাদা কালো সব জামা পানিতে ভিজিয়ে দিলো।
নেহাঃএইবার এগুলো পড়তে পারবেন না।
নেহা মোবাইলে আদ্রিতার কল আসে।
নেহাঃহ্যা ম্যাম।বলেন।
আদ্রিতাঃআমার একটু বাইরে যেতে হবে।আজকে রাতটা থাকতে পারবে আশমিনের কাছে?আমি কালকে সকালেই চলে আসবো।
নেহা কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না।
আদ্রিতাঃমানা করো না প্লিজ।এমারজেন্সি না হলে বলতাম না।
আর বাসায় তো কেউই থাকবে না।আরিয়ান আমার সাথে যাবেন।আর মেহরাব ভাই ভোরের দিকে বাসায় ফিরেন।থাকবে?
নেহাঃআচ্ছা।আপনি চিন্তা করবেন না।আমি আছি।
আদ্রিতাঃঅনেক অনেক ধন্যবাদ।
কল রাখতেই মেহরাব চলে আসে।গেট খোলার শব্দে নেহা মেহরাবের রুম থেকে বেড়িয়ে আসে।
মেহরাবঃহুট করে মিটিং ডাকলো।পাঞ্জাবিটা চেঞ্জ করেই বের হতে হবে।লেট করা যাবে না।আমি লেট করলেই রেদোয়ান সাহেব আমার নামে কটুক্তি করার সুযোগ পেয়ে যাবেন।না তাকে একটা সুযোগ ও দিবো না আমি।
মেহরাব রুমে যেয়ে আলমারি খুলে চমকে যায়।আলমারিতে সাদা কালো পাঞ্জাবির জায়গায় অন্য রংয়ের পাঞ্জাবি দিয়ে ভরা।মেহরাব এর কপালের রগ গুলো ফুলে উঠে।রাগে ফেটে পড়ে মেহরাব।
মেহরাবঃনেহায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া।
নেহা আশমিনের জন্য দুধ গরম করছিলো।মেহরাবের কন্ঠ শুনে গরম দুধ নেহার হাতে পড়ে যায়।
নেহাঃআহহহহহ!!
নেহা হাতটা সাথে সাথে পানির নিচে দেয়।তখনই মেহরাব ঝড়ের বেগে এসে মেহরাবের সেই পুড়ে যাওয়া হাতটা চেপে ধরে নিজের রুমের দিকে টেনে নিয়ে যায়।
নেহাঃআহহ।আমি ব্যাথা পাচ্ছি।কি করছেন!?ব্যাথা পাচ্ছি খুব। ছাড়ুন।
মেহরাব কোনো কথাই শুনছে না।নেহাকে নিজের রুমে নিয়ে যেয়ে আলমারির সামনে এনে দাড় করায়।
মেহরাবঃহাউ ডেয়ার ইউ?!আমার আলমারিতে হাত দেয়ার সাহস কোথ থেকে পেলেন?!!
নেহাঃআমি তো।আমিই....
মেহরাবঃআমি আমি কি?????নিষেধ করেছিলাম বাড়াবাড়ি করতে?কেন করলেন?
এতো সাহস পান কি করে!হা?আদ্রিয়ান আপনাকে বেতন দিয়ে চাকরিতে রেখেছে।আমার জীবনে অধিকার দিয়ে দেয় নাইইইই।আপনি শুধু একজন সাভেন্ট এর থেকে বেশি কিছুই না।কিছুইইইইই নায়ায়ায়ায়া।
২ টাকার বেতনে চাকরি পেয়ে নিজেকে এই বাড়ির মালকিন ভাবা শুরু করেছেন?যা ইচ্ছে করবেন?যেভাবে ইচ্ছে চলবেন!!?আপনি এখানে চাকরানী।নিজেকে রানী ভাবা বন্ধ করুন।
মেহরাব এক এক করে আলমারি থেকে সব বের করে মাটিতে ফেলে দিলো।তারপর পা দিয়ে নষ্ট করে দিলো সব জামা।
নেহার চোখ ছলছল করছে।নেহা সহ্য না করতে পারে কান্নাই করে দিলো।
নেহাঃআমি তো আমার কাজই করছিলাম।আমার কাজই তো আপনার খেয়াল রাখা।আমি নিজের প্রথম বেতন দিয়ে এগুলো এনেছিলাম।আপনি এভাবে না করলেও পারতেন।আমি বুঝতে পারি নাই আপনি এতো রেগে যাবেন।
আর আমি রানী কখনো ভাবি নাই নিজেকে আমি জানি আমি আপনার চাকরানীইই।
নেহা কাদতে কাদতে চলে যায়।
মেহরাবঃবেশিই বলে ফেললাম!?কিন্তু আমি তো এতকিছু বললাম নেহা নূর কি না দেখতে।নূর হলেতো কখনো এত কথা সহ্য করতো না আমার।উলটো জবাব দিতো।আমার নূর নেহার মতো এতোটা দুর্বল না।আমার নূর না নেহা।
কেন না?কেন নেহাই নূর না???
মেহরাব সাথে সাথে বেরিয়ে গেলো।
তিথি আসার পর থেকে রুম থেকে বের হচ্ছে না।আদ্রিয়ান ইচ্ছে করছে না তিথির সাথে কথা বলতে।আদ্রিয়ান একাই বাইরে চলে গেলো।
আদ্রিয়ান একাই সমুদ্রে পা ভিজিয়ে হাটছে।পাশ থেকে একটা পরিচিত কন্ঠ ভেসে আসলো।
এভাবে দেখা হবে একদমই ভাবি নাই ক্যাপ্টেন আদ্রিয়ান।
আদ্রিয়ান চমকে তাকালো মেয়েটার দিকে।
আদ্রিয়ানঃআপনিইই!!
_আমি তো ভেবেছিলাম খুশি হবেন দেখে।এখন মনে হচ্ছে হন নাই।
আদ্রিয়ানঃঠিক এমনটা না মিরা।আমার দিনকালটা আজকাল এমন চলছে হাসিটা হারিয়ে গিয়েছে।
মিরাঃআমি এসে পড়েছি তো আপনার জীবনে।এখন দেখবেন সব হুর হুর করে চলে আসবে।
আদ্রিয়ান হেসে দিলো।
আদ্রিয়ানঃফ্লার্ট ভালোই করেন মিস মিরা।
মিরা মুচকি হাসলো।
মিরাঃকিন্তু শুধুই আপনার সাথে।সত্যিইইই।
আদ্রিয়ান উচ্চ শব্দে হেসে দিলো।মিরা মুগ্ধ হয়ে আদ্রিয়ান এর হাসিটা দেখছে।
রাত ১ টায় মেহরাব বাসায় ফিরে। নেহা ড্রয়িং এ অপেক্ষা করছিলো মেহরাবের।মেহরাব ঢলে ঢলে হাটছে।চোখ গুলো অসম্ভব লাল।পড়ে যেতে নিলে নেহা ধরে ফেলে।
মেহরাব নেহাকে ঝাড়া দিয়ে সরিয়ে দেয়।
মেহরাবঃএই মেয়ে একদম কাছে আসবে না তুমি!একদম না।
আসার পর থেকে আমার জীবনটা হেল করে দিয়েছো তুমি।আমি বেচে ছিলাম না? নূরকে ছাড়া।ছিলাম তো।তুমি এসে সব এলোমেলো করেছে।বার বার বার বার নূরের মতো কাজ কর্ম করো।বার ওকে মনে করাও।কেন করাও?
তুমি কি নূর?!!
মেহরাব নেহার দুইহাতের বাহু ধরে ঝাকাতে থাকে।
বলো। বলো না কেন?তুমি নূর?
নেহাঃনা।
মেহরাবঃতাহলে কেন ওর মতো কাজ করো?কেন?কেন তোমাকে দেখলেই মনে হয় তুমি আমার নূর?কেন মনে হয় বলো না?কেন?
মেহরাব হাটু গেড়ে মাটিতে বসে পড়ে।মেহরাব এর চোখে পানি চিকচিক করছে।
মেহরাবঃতুমি নূর কেন না নেহা?কেন?
তুমি জানো তুমি যেমন আমার সব কিছুতে লেগে পড়ে থাকো। নূর ও তেমনি থাকতো। কিন্তু তুমি টাকার জন্য করো আর নূর আমার জন্য করতো।
তুমি যদি নূর হতে আমি তোমাকে কিছু বলতাম না। সত্যিই বলতাম না।আমার সব কিছুর উপর আমার নূরপাখির অধিকার শুধুই নূর আর কেউ না।
নেহা মেহরাবের কাছে যাওয়ার সাহস ও পাচ্ছে না।মেহরাব অনেক ড্রিংকস করেছে।নিজের বাস্তবিক কান্ডজ্ঞান হারিয়ে ফেলেছে মেহরাব।
মেহরাবঃতুমি জানো কেন আমি তোমার উপর এতো বিরক্ত হই?কেন রাগী?
কারন নূর চলে যাওয়ার পর আদ্রিয়ান নিখোজের খবর পাই।আদ্রিয়ান চলে যাওয়ায় তিথি ভেঙে পড়ে।তখন আদ্রিতা আমাকে ফোর্স করতে থাকে তিথিকে বিয়ে করতে।কিন্তু আমি কি করে বিয়ে করবো?বলো?
তিথি কি নূর হতে পারবে? না তুমি পারবে নূর হতে।
তিথির কি হলো জানি না।ও আদ্রিয়ানের কষ্ট ভুলে আমার প্রতি ঝুকে গেলো।আমার সব কিছুতে অধিকার জমাতে শুরু করলো।আমি বিরক্ত হোতাম কিন্তু কিছুই করতে পারতাম না।
কি করে করবো বলো।ওকে কিছু বললে ও আত্মহত্যা করতে চাইতো
আল্লাহর মনে হয় আমার উপর করুনা হলো।আদ্রিয়ান ফিরে আসলো।আর আমি এই যন্ত্রনা থেকে রেহাই পেলাম।
মেহরাব থেমে আবারো বলতে শুরু করলো।
তিথির সব রাগ এতো দিন তোমার উপর ঝেড়েছি।কারন তুমি ও তিথির মতোই জোর করে অধিকার জমাচ্ছো।
কেন বুঝতে পারছো না তোমরা মেহরাব চৌধুরী শুধুই নূর চৌধুরীর। শুধু তার।
হ্যা ও আমাকে ঠকিয়েছে।আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছে তবুও আমি তার।শুধুই তার।
মেহরাব বাচ্চার মতো কাদতে লাগলো।নেহা চোখ দিয়েও টপটপ করে পানি পড়ছে।মেহরাবের কষ্ট গুলো তীরের মতো বিধছে বুকে।
নেহা মেহরাবের পাশে যেয়ে বসলো।মেহরাব নেহাকে জড়িয়ে ধরলো।
মেহরাবঃনেহা বলো না তুমিই আমার নূর। বলো না।আমি সত্যিই একটুও রাগ করবো না তোমার উপর। কখনো জিজ্ঞেস করবো না আমাকে কেন ছেড়ে গিয়েছিলে। বলবো না সত্যিই।
আমি অনুভব করতে পারি তুমিই আমার নূর।তোমার হাতের কফি চোখ স্পর্শ সব আমাকে নূরের কথা মনে করায়।
আমি কি আমার নূরপাখিকে চিনতে ভুল করতে পারি? বলো।
নেহার ও খুব ইচ্ছে করছে মেহরাবকে জড়িয়ে ধরতে।জড়িয়ে ধরে বলতে এই অনুভূতি গুলো সে নিজেও অনুভব করেছে।কিন্তু এগুলো কি করে সত্যিই হতে পারে?নেহার স্বামীর নাম তো মেহের। মেহরাব চৌধুরী না।
মেহরাবঃএকবার ডাকো মেহের করে। আমি সব ভুলে যাবো।একবার ডাকো নূর পাখি।
নেহা পিলকে চমকে উঠে।কাপা কাপা গলায় বললো
নেহাঃকককিই বলে ডাকবো?
মেহরাবঃমেহের। নূরের মেহের।
নেহার হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না নেহা।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৪১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন