উপন্যাস : প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল
লেখিকা : আরশি আয়াত
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ১২ই ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা আরশি আয়াতের “প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশ করা হলো। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের ১২ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত |
1111111111111111111111
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
প্রেমের জোয়ারে ভাসলো দুকূল || আরশি আয়াত (পর্ব - ০৮)
লাঞ্চ ব্রেকে খাবার সামনে নিয়ে শয়ন পাখিকে ফোন করলো।হঠাৎ শয়নের ফোন পেয়ে পাখি খুশি হয়ে উঠলো।রিসিভ করতেই শয়ন বলল,'এখন কেমন আছেন?ব্যাথা আছে?'
'ভালো।ব্যাথাও কম আছে।'
'খেয়েছেন?'
'না,এখন খাবো।আপনি খেয়েছেন?'
'আমিও খাবো।খাওয়া শেষ করে মনে করে ঔষধ খেয়ে নেবেন।'
'আচ্ছা।'
'আচ্ছা,তাহলে রাখছি।'
পাখি মনে মনে খুশি হলো তারপরই আবার মনে হলো এই সুখ সাময়িক তবে ও শয়নকে হারাতে চায় না।এই অল্প সময়েই ভালো লেগে গেছে মানুষটাকে।কিন্তু নিয়তিতে যা আছে সেটাই হবে।
বিকেলে উঠোনে বসে নিজের জন্য পান বানাচ্ছিলেন ফারজানা বেগম।তখনই ঘটকের আগমন ঘটে।তিনি ঘটককে দেখে বিগলিত হেসে বললেন,'কি গো ঘটক সাব?খবর কি?পাত্রীর সন্ধান পাইছেন?'
'হ,আফা এইজন্যই তো আইলাম।একটা ভালো মাইয়া পাইছি যেমন সুন্দর,তেমন ভালা।মাইয়ার বাপের চাইলের আড়ত আছে আর মাইয়ার কোনো ভাই-বইন নাই।সম্পত্তি সব মাইয়ায় পাইবো।'
ফারজানার বেগমের চোখ চকচক করে উঠলো।তিনি ঘটক'কে নিজের বানানো পান দিয়ে বললেন,'মাইয়ার ছবি আছে নি?'
'হ,দেহাইতাছি।'
ঘটক নিজের ব্যাগ থেকে মেয়ের ছবি বের করে ফারজানা বেগমের হাতে দিলেন।মেয়ের ছবি দেখে তার মুখ মলিন হয়ে গেলো।দেখতে শ্যামলা আর খাটো।একদম ই ভালো লাগে নি ফারজানা বেগমের।তার মনে পড়ে গেলো পাখির কথা।ওর মত সুন্দরী দুই-চার গ্রামেও নাই।নিজের ছেলের সাথেও বেশ মানাচ্ছিলো।আত্নীয়রা তো প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিলো।ফারজানা বেগম নিজেও বেশ খুশি ছিলেন।পাখিকে দেখেই তিনি আর কিছু বিচার করেন নি।বিয়ে ঠিক করে ফেলেছিলেন।বিয়েও হলো।সব ঠিক ছিলো তবে মেয়ের যে আগের বিয়ে ছিলো এটা বিয়ের আগে জানাই যায় নি।কিন্ত এই অপয়া মেয়ের সাথে নিজের ছেলের জীবন তিনি কিছুতেই জড়াতে দিতে পারেন না।ফারজানা বেগম ঘটক'কে বললেন,'আর কোনো মাইয়া নাই?এই মাইয়া তো কালা।আমার পোলার লগে মানাইতো না।'
ঘটক সাহেব পানের পিক ফেলে বললেন,'আরেকটা মাইয়া আছে কিন্তু মাইয়ারা গরিব।'
'দেহি মাইয়ার ছবি।'
দ্বিতীয় মেয়েটির ছবি দেখে ফারজানা বেগম মোটামুটি পছন্দ করলেন যদিও এটাও পাখির মত এতটাও সুন্দরী না তবুও তিনি মনস্থির করলেন।সব খোঁজ খবর নিয়ে সব কিছু ঠিক থাকলে এখানেই বিয়ে দেবেন ছেলের।তিনি ঘটক'কে বললেন,'ঘটক সাহেব,এই মাইয়ার চৌদ্দগোষ্ঠীর খবর চাই আমার।মাইয়ার আগে কোনো সম্পর্ক,বিয়া আছিলো কি না!সব খবর নিবেন।বাপ,মারও খবর নিবেন।কোনো খারাপ কিছু পাইলেই আমারে কইবেন।দেইখেন বিয়ার পর যেন খারাপ কিছু না বাইর হয়।নাইলে আপনের কপালে খারাপি আছে।'
'আফা,আপনে কোনো চিন্তা কইরেন না।আমি সব খোঁজ,খবর নিয়াই আইছি।মাইয়ার কোনো সমস্যা ই নাই।'
'তাইলে মাইয়া দেহানের ব্যাবস্থা করেনে।'
'আইচ্ছা আমি মাইয়ার বাপ-মার লগে কথা কইয়া আপনেরে জানাইতাছি।'
'তাড়াতাড়ি কইরেন।'
'আইচ্ছা আফা।'
ঘটক সাহেব চলে যাবার পর ফারজানা বেগম মনে মনে ফন্দি আঁটলেন মেয়ে দেখতে গিয়ে তিনি বিয়ে ঠিক করে ফেলবেন।তারপর শয়নকে অসুস্থতার কথা বলে নিয়ে আসবেন।হাজার হোক মায়ের অসুখের কথা শুনে ছেলে আসতে বাধ্য হবেই।
রাস্তায় চটপটি আর ফুচকার দোকান দেখে শয়ন পাখির জন্য নিয়ে নিলো।বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে পাখির ঘরে গিয়ে দেখলো বিছানায় হেলান দিয়ে গান শুনছে ও।শয়নকে দেখে পাখি বলল,'কখন এলেন?'
'এইত মাত্রই।'
'সরি,গান শুনছিলাম তো শব্দ পাই নি।আপনি একটু বসুন আমি কফি নিয়ে আসি।'
শয়ন বাঁধা দিয়ে বলল,'আসার সময়ই খেয়েছি কফি পুরোনো এক বন্ধুর সাথে।তাই এখন আর খাবো না।তবে আপনার জন্য কিছু এনেছি।'
পাখি ভ্রু কুঁচকে বলল,'কি?'
শয়ন কিছু না বলে উঠে গিয়ে ফুচকা আর চটপটির প্যাকেট নিয়ে এলো পাখির রুমে।ওর হাতে দিয়ে বলল,'আসার সময় চোখের সামনে পড়ার নিয়ে এসেছি।আচ্ছা,আমি এখন যাচ্ছি।আর রাতের খাবার একটু পর বানাবো।'
পাখি তড়িঘড়ি করে বলল,'আমি বানাতে পারবো।আপনি কষ্ট করবে না প্লিজ।'
শয়ন হেসে বলল,'কষ্ট কিসের আমি যখন ব্যাচেলর ছিলাম তখন নিজের রান্না নিজেই করতাম।রান্নার জন্য কখনো কাউকে রাখিনি।চাকরি নেবার পরও নিজের রান্না নিজে করেছি।তাই আপনি চুপচাপ রেস্ট করুন।আর নিজের পড়া পড়ুন।সময় বেশি নেই।পরীক্ষায় কিন্তু ভালো করতে হবে।'
পাখি মাথা নাড়লো।শয়ন ওর রুমে থেকে বেরিয়ে নিজের ঘরে এসে বড়ভাইকে ফোন করলো।অয়ন ফোন রিসিভ করেই বলল,'কিরে?কি অবস্থা তোর?'
'ভালোই।তোমাদের কি অবস্থা?'
'ভালোই আছি।'
'মায়ের রাগ কমেছে?'
'না রে!আমাদের কারো সাথে কথা বলছে না।ঠিক মত খাচ্ছেও না।'
'এখন কি করবো বলোতো?কিভাবে বোঝাবো মা'কে?'
'আমিও বুঝতে পারছি না।'
শয়ন দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,'তোমরা একটু খেয়াল রেখো মায়ের।আমি কিছুদিন পর আবার আসবো।'
'হুম,তুইও নিজের আর মেয়েটার খেয়াল রাখিস।'
আজ শুক্রবার।অভ্যাস বশত দেরি করেই উঠলো শয়ন।ফ্রেশ হয়ে বাইরে এসে দেখলো পাখি নাস্তা বানিয়ে ফেলেছে।শয়নকে দেখে পাখি হাসিমুখে বলল,'আপনি ঘুমাচ্ছিলেন তাই আমিই বানিয়ে ফেললাম।'
শয়ন একটু অপ্রস্তুত হেসে বলল,'সারা সপ্তাহে এই একদিনই একটু ছুটি পাই তাই দেরি হয়ে যায় উঠতে।'
'আমি জানি।এখন নাস্তা করে নিন।'
শয়ন আর পাখি একসাথে বসেই নাস্তা করে নিলো।তারপর শয়ন গেলো বাজারে আর পাখি পড়তে বসলো।দুপুরের রান্নায় পাখি সাহায্য করেছে আর শয়ন রান্না করেছে।রান্না শেষে শয়ন শাওয়ার নিয়ে পাঞ্জাবি পরে নামাজের বিছানা নিয়ে মসজিদে চলে গেলো আর পাখিও গোসল করে শাড়ি পড়লো।
সারাদিন মোটামুটি একসাথেই কেটেছে ওদের।বিকেলের দিকে শয়ন বেরিয়েছে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে আর পাখি বসেছে পড়তে যদিও একদমই মন বসছে না পড়াতে।এই সুন্দর বিকেলে বরের হাতে হাত রেখে হাঁটতে যাওয়ার ব্যাপারটা অন্যরকম।
শুক্রবার দিন'টা সুন্দরভাবেই শেষ হলো।দু'জনেই রাতের খাবার খেয়ে ঘুমাতে গেলো।পাখি আজ সারাদিনের কথা মনে করে ভাবে এমন সুন্দর একটা সংসারই চেয়েছিলো ও।হয়তো কিছুদিনের তবুও এই দিনগুলো ও মনে রাখবে সারাজীবন।
প্রতিদিনের মত সকালে উঠে নামাজ পড়ে ড্রইং রুমে এলো পাখি।হঠাৎ ড্রইং রুমের টি-টেবিলের ওপর পানির গ্লাসের নিচে একটা কাগজ চাপা রাখা দেখতে পেলো।পাখি কাগজ'টা হাতে নিতেই দেখতে পলো সেখানে লেখা,'
পাখি,
আমার আম্মু অসুস্থ।তাই আমি গ্রামে যাচ্ছি।যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমি ফিরে আসবো।আপনি সাবধানে থাকবেন আর নিজের খেয়াল রাখবেন।কোনে সমস্যা হলে আমাকে জানাবেন।আল্লাহ হাফেজ।'
চিরকুট'টা পড়ে পাখি দ্রুত শয়নের রুমে গিয়ে দেখলো পুরো ঘর খালি পড়ে আছে।ওর ভয় লাগলো খুব।মনে মনে প্রার্থনা করলো যেন খারাপ কিছু না ঘটে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৯ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আরশি আয়াত সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে অবশ্যই তা কবিয়াল পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হইবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন