উপন্যাস       :        প্রিয়ন্তিকা
লেখিকা        :         আভা ইসলাম রাত্রি
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ১২ আগস্ট, ২০২২ ইং

লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রির “প্রিয়ন্তিকা” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১২ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি Bangla Golpo - Kobiyal
প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি

1111111111111111111111

৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

প্রিয়ন্তিকা || আভা ইসলাম রাত্রি (পর্ব - ৩২)

মাহতিম ইয়ান এক পাগলাটে প্রেমিকের নাম। মানুষটার সর্বস্ব জুড়ে একট মেয়ের নাম খোদাই করা ছিল। মেয়েটার চোখের দিকে একবার তাকালেই মাহতিম ইয়ানের মস্তিষ্ক থমকে যেত। মেয়েটার ঠোঁটের তিরতির কাপুনি তৃষ্ণার্ত করে তুলত মাহতিম ইয়ানের স্বত্বা। মাহতিম ইয়ান উন্মাদ ছিল প্রিয়ন্তি নামক মেয়ের তরে। অনেক ত্যাগ তিতিক্ষা করে শেষ অব্দি জয় করেই নিয়েছে নিজের উন্মাদনাকে। আজ তাদের এক হবার দিন। মাহতিম বারান্দায় গ্রিল ঘেঁষে দাঁড়িয়ে আছে। চোখের দৃষ্টি ঝাপসা। কেমন যেন সব অবিশ্বাস্য লাগছে। প্রিয়ন্তিকা আজ থেকে শুধুমাত্র মাহতিমের। মাহতিম যখন চাইবে, প্রিয়ন্তিকাকে মনখুলে ভালোবাসবে। প্রিয়ন্তিকাকে আগে ভালোবাসতে মাহতিমের জড়তা কাজ করত। এখন সেই জড়তার দুটো ছিন্নবিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। প্রিয়ন্তিকা মনেপ্রাণে, ধর্মীয় ভাবে বৈধ হয়েছে মাহতিমের জন্যে। এই ব্যাপারটা যেন সব স্বপ্ন লাগছে তার কাছে। মাহতিম সিগারেট ধরাতে চাইল। কিন্তু পরমুহূর্তে প্রিয়ন্তির নারাজির কথা মনে করে সিগারেট ফেলে দিল। আজ থেকে মাহতিম সকল বদ অভ্যাস ত্যাগ করবে। কষ্ট হবে কিছুটা। কিন্তু ভালোবাসার মানুষের সঙ্গে একসঙ্গে দীর্ঘবছর বেচে থাকার জন্যে মাহতিম এই কষ্ট মুখ বুজে সহ্য করে নেবে। মাহতিমকে অনেকক্ষণ ধরে বারান্দায় দাড়িয়ে থাকতে দেখে প্রিয়ন্তি ঘর থেকে বারান্দায় আসে। মাহতিমকে অন্যমনস্ক দেখে প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে। লেহেঙ্গা সামলে এগিয়ে যায় তার দিকে। মাহতিমের কাঁধে হাত রাখতেই মাহতিম শেরওয়ানি হাতা দিয়ে চোখ মুছে দ্রুত পেছন ফেরে তাকায়। প্রিয়ন্তি নরম কণ্ঠে বলে, 
' ঘুমাবে না? '

মাহতিম আগাগোড়া প্রিয়ন্তিকে দেখে। চোখ বুজে জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে তাকায় প্রিয়ন্তির দিকে। তারপর বলে,
' আজ না ঘুমালে কি খুব বেশি ক্ষতি হয়ে যাবে, প্রিয়ন্তিকা? '
প্রিয়ন্তি শুনে। মাহতিমের গভীর কণ্ঠে কথা শুনে কেঁপে উঠে মেয়েটা। প্রিয়ন্তি বলে, 
' সারারাত সজাগ থেকে কি করবে? '
মাহতিম এগিয়ে আসে। দুহাতের আজলায় কোলে তুলে নেয় প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি আচমকা আক্রমনে ভয় পেয়ে খামচে ধরে মাহতিমের শেরওয়ানি কলার। মাহতিম প্রিয়ন্তির উন্মুক্ত কোমরে আঙ্গুল দিয়ে মৃদু চাপ দিয়ে বলে,
' সারারাত কাটানোর বেস্ট উপায় জানা আছে আমার। '

প্রিয়ন্তি কিছু বলবে তার আগেই মাহতিম ' শুসস..' বলে উঠে। প্রিয়ন্তি চুপ করে যায়। মাহতিম নিজেদের রুমের দরজা খুলে উঁকি দেয়। বাইরে কেউ আছে কি না দেখে নেয়। বিয়ে বাড়ির মেহমান সবাই বাইরে বসে গল্প করছে। হয়ত আজ সারারাত তাদের গল্প চলবে। মাহতিম চিন্তায় পরে যায়। প্রিয়ন্তি অধৈর্য্য হয়ে বলে,
' দরজা খুললে কেন? কেউ আমাদের এরকম অবস্থাতে দেখলে লজ্জায় পরতে হবে। নামাও না আমাকে। '
মাহতিম কাউকে খুঁজে। একটু পর ভাবিকে পেয়ে যায়। চা নিয়ে এদিকেই যাচ্ছেন। মাহতিম ডাকে,
' ভাবি, ও ভাবি। '

নয়না পাশে তাকান। মাহতিমের কোলে প্রিয়ন্তিকে দেখে নয়না হা হয় যান। দ্রুত এদিকে এগিয়ে আসেন। মাহতিমের হাতের বাহুতে থাপ্পড় দিয়ে বলেন, 
' নির্লজ্জ। বউ নিয়ে ঘরে ঢুক। যা করার দরজা বন্ধ করে কর। কেউ এভাবে তোদের দেখে নিলে..'
প্রিয়ন্তি লজ্জায় হতভম্ব। এই পাগল ছেলের জন্যে আরো কত কিছু যে সহ্য করতে হবে প্রিয়ন্তিকে। মাহতিম এসব শুনে না। সে নিজের মত করে বলে,
' ভাবি, রাস্তা খালি করে দাও। ছাদে যাব। '
নয়না প্রশ্ন করেন, ' এত রাতে ছাদে গিয়ে কি করবি? '
' ছাদে বাসর করব। উফ, ভাবি। এত প্রশ্ন কেন করছ। একটু হেল্প করো না। প্লিজ! এতসময় ওকে কোলে নিয়ে হাত ব্যথা করছে আমার। '

নয়না বুঝতে পারেন, মাহতিম কথা শোনার মত ছেলে নয়। মাহতিম কথা শুনেছে কখনো, এরকম রেকর্ড নেই আদৌ। সবসময় বেপরোয়া এই ছেলেকে নিয়ে বাসার সবাই বেশ ঝামেলা পোহায়। নয়না চোখ রাঙান মাহতিমকে। তারপর চায়ের ট্রে নিয়ে এগিয়ে যান বসার ঘরে। সবাইকে কি সব বলেন। শোনা গেল না। একটু পর সবাই যার যার মত করে নিজেদের ঘরে ঢুকে গেল। ঘরে ঢুকেই এদের গল্পের আসর আবার শুরু হয় গেল। সবার হাসাহাসির শব্দে কানের পোকা বের হয়ে যাবার উপক্রম। মাহতিম পা টিপেটিপে এগিয়ে যায় সামনে। নয়না দরজা খুলে দেন। এক গোছা চাবি মাহতিমের প্যান্টের পকেটে রেখে দিয়ে বলেন,
' দরজার চাবি রেখে দিলাম। দ্রুত আসবি। ' 

মাহতিম সুন্দর করে হাসে। চোখের ইশারায় ধন্যবাদ জানিয়ে সিঁড়ি ভেঙে ছাদে উঠে যায়।  
ছাদের উঠে প্রিয়ন্তি দেখে আগে থেকেই ছাদে মাদুর পেতে রাখা। মাদুরের উপর কতগুলি সাদা রঙের কুশন। আজ আকাশে এক মস্ত বড় চাঁদ উঠেছে। ঈষৎ লাল রঙা চাঁদ প্রিয়ন্তির চোখে খুব সুন্দর লাগে। মাহতিম মাদুরের উপর আস্তে করে প্রিয়ন্তিকে নামিয়ে দেয়। 
নিজেও এসে প্রিয়ন্তির পাশে বসে। অতঃপর আচমকা প্রিয়ন্তির কোলে নিজের মাথা রেখে শুয়ে পরে। প্রিয়ন্তি চমকে যায়। মাহতিম প্রিয়ন্তির হাত উঠিয়ে তার মাথায় রাখে। আদুরে কণ্ঠে আবদার করে,
' চুল টেনে দাও না, প্রিয়ন্তিকা। '

প্রিয়ন্তি অবাক হয়। কি করবে কি করবে ভেবে না পেয়ে দ্বিধা নিয়ে মাহতিমের চুলে হাত রাখে। আলতো হাতে চুল টেনে দিতে থাকে। মাহতিমের চুল ভীষন ঘন এবং কালো। প্রিয়ন্তির এমন চুল টেনে দিতে ভীষন আরাম লাগছে। প্রিয়ন্তি মাহতিমের চুল দেখে মনেমনে কয়েকবার ' মা শা আল্লাহ ' বলে ফেলেছে। 
মাহতিমের প্রিয়ন্তির কোলে মাথা রেখে আকাশের দিকে চেয়ে আছে। প্রিয়ন্তির নরম হাত তখনো বুলিয়ে যাচ্ছে মাহতিমের চুল। একসময় মাহতিম বলে,
' জানো প্রিয়ন্তিকা। আমার স্বপ্ন ছিল, তোমার কোলে মাথা রেখে চাঁদ দেখার। কখনো ভাবিনি, এই স্বপ্ন পূরন হবে। অথচ আজ দেখো। আমার সারাজীবনের স্বপ্ন আমার কাছে আজ সত্যি হয়ে ধরা দিয়েছে। '

প্রিয়ন্তি চুপ করে বসে থাকে। কথা বলে না। আরো একবার দ্বিধায় জড়ায়। মাহতিম ছেলেটাকে কি প্রিয়ন্তি একবার আবার ভালোবাসার চেষ্টা করবে? 
মাহতিম হঠাৎ করে প্রিয়ন্তির কোলে মাথা ঘুরায়। মুখ গুঁজে দেয় প্রিয়ন্তির পেটে। প্রিয়ন্তি হতভম্ব হয়ে যায়। চুল টেনে ধরে মাহতিমের। মাহতিম ঘোর লাগা কণ্ঠে বলে,
' প্রিয়ন্তিকা! '
প্রিয়ন্তি কেঁপে উঠে। এমন আবেগঘন কণ্ঠে আদৌ কি কেউ ডেকেছিল তাকে? কথা বলার সময় মাহতিমের ঠোঁট স্পর্শ করে প্রিয়ন্তির উন্মুক্ত পেট। প্রিয়ন্তি অনুভূতির আঁচড়ে কেমন মুচড়ে যায়। মাহতিমের চুল টেনে ধরে সরিয়ে দিতে চায় নিজের থেকে। মাহতিম সরে না। বরং প্রিয় মানুষের সঙ্গে আরেকটু ঘনিষ্ট হয়ে পুনরায় প্রশ্ন করে,
' তুমি কি আমায় ভালোবাসে বিয়ে করেছ নাকি বাধ্য হয়ে? '

প্রিয়ন্তি থমকে যায়। আচমকা প্রিয়ন্তির ছটফটানি থেমে যায়। মাহতিমের চুলে বুলিয়ে যাওয়া হাত নেমে আসে ক্রমশ। মাহতিম প্রিয়ন্তির কোল থেকে মাথা তুলে। চোখ ছোটছোট করে চায় প্রিয়ন্তির দিকে। তার চোখে রয়েছে আশা। প্রিয়ন্তি মাহতিমের ওই কাতর চোখে চায়। দেখে অনেককিছু। প্রিয়ন্তির দুনিয়া তোলপাড় হয়ে যায়। আর চেয়ে থাকতে পারে না। ঢোক গিলে। অন্যদিকে চোখ সরিয়ে শুধু এইটুকু বলে,
' আমার সময় লাগবে। '

মাহতিম দীর্ঘশ্বাস ফেলে। চুপ করে প্রিয়ন্তির কোল থেকে মাথা তুলে সোজা হয়ে বসে। দুই হাঁটু বুকের সাথে চেপে গম্ভীর হয়ে বসে থাকে। ভাবছে সে কিছু একটা। প্রিয়ন্তি কি করবে ভেবে পায় না। আস্তে করে মাহতিমের কাছে ঘেঁষে সে। মাহতিমের কাঁধে হাত রেখে নরম স্বরে বলে,
' আই অ্যাম সরি! আমি বারবার তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি। কিন্তু আমি নিরূপায়। প্লিজ। ভুল বুঝ না। আমি সত্যি চেষ্টা করছি সবকিছু মেনে নেবার। ট্রাই টু অ্যান্ডারসট্যান্ড। '

মাহতিম কিছু বলে না। কিছুক্ষণ চুপ থাকে। প্রিয়ন্তি দীর্ঘশ্বাস ফেলে।  চেয়ে থাকে নির্নিমেষ। অতঃপর মাহতিম আচমকা পাশ ফিরে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে প্রিয়ন্তিকে। প্রিয়ন্তি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। মাহতিম প্রিয়ন্তির ঘাড়ে ঠোঁট চেপে বিড়বিড় করে কতগুলো কথা আওড়ায়। যা শুনে প্রিয়ন্তির নিঃশ্বাস অস্বাভাবিক হয়ে যায়। হাঁপরের মত উঠানামা করতে লাগে বুক।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

৩৩ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা আভা ইসলাম রাত্রি সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে। তবে তিনি তার ফেসবুক পেজে নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, “গল্প লেখে সে, কলমের কালিতে কল্পনার চিত্র আঁকিবুকি করা তার নেশা! অক্ষরের ভাজে লুকায়িত এক কল্পপ্রেয়সী!”

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন