উপন্যাস       :         আরশি
লেখিকা        :         মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ               :         
প্রকাশকাল   :         
রচনাকাল     :         ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং

লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কিছুই মিল নেই। এটি মূলত লেখিকার ‘প্রাণস্পর্শী’ উপন্যাসের চরিত্রদের কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ Bangla Golpo - Kobiyal
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ

1111111111111111111111

০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন

আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ০৫)

লম্বা-ফরসা ছিপছিপে গড়নের একটি ছেলে অভিজ্ঞ নয়নে তাকিয়ে আছে আরশির দিকে। ছেলেটিকে চিনতে আরশির একটুও ভুল হলো না। গতরাতে এই ছেলেটিই আরশিকে দাঁড়াতে বলেছিল; কিন্তু আরশি গ্রাহ্য না করে বাগানে প্রবেশ করেছিল।আরশি ছেলেটির দিকে তাকাতেই তাকাতেই সোজা নিজের রুমের দিকে রওনা হলো।ছেলেটি এবার উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
“আরশি, আপনিই তাহলে আরশি! সেই রহস্যময়ী নারী?”

আরশি ছিপছিপে গড়নের মানুষটার দিকে তাকিয়ে থমকে গেল। কয়েক সেকেন্ড থম মেরে থেকে কোনো উত্তর না দিয়ে নিজের রুমের দিকে রওনা হলো। ছেলেটি আবারও বলল,
“এক্সকিউজ মি! আমার কথার উত্তর না দিয়ে কোথায় যাচ্ছেন? আমি এসআই তুরাণ মাহবুব। আপনার বাবার কেসের দায়িত্ব আমি নিয়েছি। আপনার সাথে এই বিষয়টা নিয়ে ডিসকাস করতে চাই আমি।”

আরশি গম্ভীর ভঙ্গিতে তাকাল এসআই তুরাণের দিকে। বয়সটা বেশ কম। এত কম বয়সি এসআই আগে দেখেনি সে। গম্ভীর মুডেই উত্তর দিল, 
“আজ নয়! আজ আমার জীবনের বিশেষ একটি দিন। আপনি সাতদিন পরে আসুন।”
তুরাণ মাহবুবের কাছে এই মেয়েটিকে এইবার আরও বেশি রহস্যময়ী লাগল। কাল রাত থেকে ভোর পর্যন্ত সে একভাবে ভেবে চলেছে এই মেয়েটিকে নিয়ে। এই মেয়েটিকে ভীষণ রহস্যময়ী লেগেছে তার কাছে। আর এখনকার কথা শুনে যেন কৌতুহল হাজারগুণ বেড়ে গেল। যার বাবা মারা গিয়েছে তার কাছে দিনটিকে বিশেষ মনে হচ্ছে। কী অদ্ভুত না! এই দিনটা কেন বিশেষ এটা জানতে ভেতর থেকে দারুণ কৌতুহলী হয়ে উঠেছে সে। কিন্তু সে কৌতুহল চেপে রেখে আইনের লোকের মতোই  উত্তর দিল,
“আপনি একজন এসআইকে বলছেন সাতদিন পরে আসতে? আপনার কোনো ধারণা আছে কাকে কী বলছেন?”

“আই থিংক– আপনারও ধারণা নেই আপনি কার সাথে কথা বলছেন।”
তুরাণ মাহবুবের কৌতুহল আরও এক দফা বেড়ে গেল। মেয়েটার প্রতিটা কথা এত রহস্যময় কেন? তুরানও বেশ ড্যামকেয়ার ভাব নিয়ে উত্তর দিলো,
“অফ কোর্স আছে। আপনি একজন প*রি।যে মাঝ রাতে গহীন অরণ্য ঘুরে বেড়ান। কী করছিলেন অত রাতে বাগানে?”

“আপনি এখানে আমার বাবার কেস দেখতে এসছেন। আমার ব্যাক্তিগত জীবন নিয়ে ঘাঁটাঘাঁটি করার জন্য তো আসেননি। আর সরকার আপনাকে সেজন্য টাকাও দেয় না।”
তুরাণ বুঝতে পারল মেয়েটা খুব একটা সুবিধার নয়। অন্য পাঁচটা মেয়ের মতোও নয়। ভিন্ন একদম ভিন্ন। এই মেয়ের থেকে সোজাসাপ্টা কিছুই পাওয়া যাবে না বুঝেই দূর্বল জায়গা আঘাত করে বলল,
“ছেলেটা কে ছিল?”

“ছেলেটার ব্যাপারে কৌতুহল না দেখালেও চলবে। আপনার কেসের সাথে ছেলেটার কোনো যোগসূত্র নেই।”
“যোগসূত্র আপনিই ঘটিয়েছেন।”
“আমিই?”
“ইয়েস।
“কীভাবে?”
“কারণ তো মাস্ট আছেই।”
“আপনার বিষয়টা এড়িয়ে যাওয়া উচিত।”

“এটা এড়িয়ে যাওয়ার মতো বিষয় নয়।আপনি আমাকে ক্লিয়ারলি বলবেন– বাবা মারা যাওয়ার দিন একটা ছেলের সাথে গহীন অরণ্যে অত রাতে কী করছিলেন? আপনার আম্মা যতই খারাপ ঈঙ্গিত দিক আমি অন্য রহস্যের গন্ধ পাচ্ছি। এটা আপনাকেই ক্লিয়ার করতে হবে।”
“আপনাকে প্রথমেই বলেছি তাকে এর মাঝে ইনভলভ করবেন না।”

“ইনভলভ অলরেডি হয়ে গিয়েছে। আমি একজন এসআই। কেঁচো খুড়তে সা' প বেরোনোর জায়গায় তো আমাকে ইনভলভ হতেই হবে।”
“সা*পের দং**শন সহ্য করতে পারবেন তো?”
“আপনার বয়স তো খুব একটা নয়। এই বয়সে এত ওজনের কথা বলেন কেন? সব কিছুতে এত রহস্য কেন আপনার?”
“আগেও বলেছি বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়া উচিত আপনার।”
“এই রহস্য উন্মোচন না করে আমি এই গ্রাম থেকে যাব না। নিশ্চয়ই ছেলেটিকে ধরলে সব প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যাবে।”

“সেই ছেলেটি সাধারণ কোনো ছেলে নয়।শুধু শুধু ওঁর পিছনে লাগতে যাবেন না।”
“আপনি তার নাম না বললেও আমি খুঁজে বের করব। তখন কিন্তু খুব খারাপ হবে।”
“থ্রেট দিচ্ছেন? কিন্তু আরশি তো ভ-য় পায় না। ভ-য়ও ভ-য় পায় আরশিকে দেখে।আপনি এখন আসতে পারেন। তাকে এসবে ইনভলভ না করার অনুরোধ রইল। সে একজন ভালো মানুষ।” – বলেই আরশি নিজের রুমে প্রবেশ করল।

এসআই তুরাণ চিন্তিত দৃষ্টিতে আরশির চলে যাওয়া দেখল। এতটুকু একটা পিচ্চি মেয়ে এমন রহস্যজনক কথা বলে গেল যে তুরানের মাথা ফেটে যাচ্ছে। এই রহস্যর উন্মোচন করতে না পারলে তার শান্তি নেই।তার জীবনে এমন অদ্ভুত মেয়ে সে দেখেনি।কিছুক্ষণ আগে বাইরের একটা ঘটনা সে নিজ চোখে দেখেছে। আরশির মামা ইমতিয়াজকে আরশি কীভাবে ধাক্কা মারল।কেউ কাউকে ভালোবাসলে এইভাবে আঘাত করতে পারে সেটা আরশিকে না দেখলে তুরাণ বুঝত না। এই এত এত রহস্য কেন মেয়েটার মাঝে? এত সুন্দর দেখতে মেয়েটা যে-কোনো ছেলের প্রাণ**নাশের কারণ হওয়া উচিত; অথচ মেয়েটা রহস্যে ভরপুর।ইমতিয়াজকে মা*রার মতো কোনো কারণই খুঁজে পেল না।

আরশি নিজের ঘরে প্রবেশ করল। দরজাটা খুব জোরে লাগিয়ে দিল। ঘরে প্রবেশ করেই আলমারিটা খুলল। আলমারির মাঝে রাখা ছোট্ট একটা কাঠের বাক্স রাখা। বাক্সটা তার আম্মু মেলা থেকে কিনে দিয়েছিল। এই বাক্সে গুপ্ত কিছু রাখা আছে। আরশি বাক্সটা খুলল। বাক্সটা খুলেই চমকে উঠল। ভয়া*নকভাবে চমকে উঠল। বাক্সে কিছু একটা আছে যেটা দেখে আরশি ভীষণভাবে চমকে উঠল। কিছুক্ষণ দেখে বাক্সটা বন্ধ করে আবার আলমারিতে ঢুকিয়ে রাখল।
আনমনে বলে উঠল, “ আমি এবার ধরা পড়ে যাব। কেউ না কেউ তো আছেই যে এই বাক্সের চাবির সন্ধান পেয়েছিল। একটা চাবি উধাও। সে নিশ্চয়ই এই বাক্স খুলেছিল। সে আমার সব সত্য জেনে গিয়েছে। এই বাড়ির কে হতে পারে যে আমার এই ভয়ংকর সত্য জেনে গেল! আমার সৎমা না কি ইমতিয়াজ মামা না কি দাদি, না কি চাচা-চাচিরা কেউ! কে হতে পারে?”

জীবনের সব থেকে লুকিয়াতি রহস্য অন্যের হাতে যাওয়ার মতো দুশ্চিন্তা আর কিছুতে নেই। সকাল গড়িয়ে দুপুর হলো। আরশি রুম থেকে বের হলো না। দুপুরে বেলকনির দরজা খুলে দাঁড়াল। সামনেই আহিরের ঘর।আহির সকালে এসেই ঘুমিয়েছে। আর ওঠেনি। আহিরদের বাড়ির কাজের খালার ছোটো মেয়ে আরশিকে বেলকনিতে দেখে আহিরকে ডেকে তুলল। আহির ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে বলল,
“কী হয়েছে রে?”

মেয়েটা আস্তে করে বলল, “ভাইয়া, আরশি আপা আইছে বেলকনিতে।”
কথাটা কর্ণকুহরে প্রবেশ করতেই আহির লাফিয়ে উঠল। বিছানা ত্যাগ করে বেলকনিতে এসে দাঁড়াল। সকাল থেকে ঘুমিয়ে চোখ ফুলে গিয়েছে। খালি গায়ে ফরসা শরীরে এসে বেলকনিতে দাঁড়াল।আরশির দিকে তাকিয়ে বলল,
“এ্যাই রাজকন্যা, দিলে তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে!”
ঘুম ঘুম কণ্ঠেই কথাটা বলল আহির। কণ্ঠে মাদকতার ছোঁয়া, নেশালো এক সংমিশ্রন।
“কী করেছি আমি?”

আহির নিজের চুলে হাত চালিয়ে বলল,
“এই যে স্বপ্নে এসেছিলে।”
“দিনের বেলায়ও স্বপ্ন!”
“শুধু স্বপ্ন নয় বালিকা; আরও অন্য কিছু।”
“ শুধু আজেবাজে কথা!”
“আজেবাজে নয়; কাম সেরে ফেলছি।”
“কী কাম?”

“আজ একদম স্বপ্নে বিয়ের সাথে ফুলসজ্জা করে ফেলেছি। আগামী মাসে প্রেগন্যান্সির টেস্ট করিয়ে নিয়ো।”– বলেই আহির বাম চোখ টিপে সামনের চুলে হাত চালালো।
আরশি ক্রোধান্বিত দৃষ্টিতে বলল, “ছি! কী বেয়াদবের মতো কথা!
“একবার তোমাকে কাছে পাই আরশি, দেখে নিয়ো কী পরিমাণ বেয়াদবি করি। বেয়াদবের লিডার হব আমি।”
“ আপনি রুমে যান তো।”

“একবার পাই কাছে তোমায় আরশি। তোমায় যে কী করব!”
আরশি এবার আরও রেগে গেল। রেগে গিয়ে বলল,
“ঘুম থেকে উঠে কি মাথায় গ্যাস্ট্রিক হইছে আপনার? এইসব ফাউ কথা বলছেন!”
“আমাকে তো এইসব তুমি শিখাইছ। ভুলে গিয়েছ? আগে রোমান্টিক ভিডিয়ো সেন্ট করে বলতে, 'বিয়ের পর এইভাবে আদর করবেন।”
“আমি মোটেও সেসব বলতাম না।”
“তাহলে কী বলতে?”

“বলতাম আপনি বলিউডের হিরোদের মতো রোমান্টিক হবেন।– এটুকু বলেই আরশি খিলখিল করে হেসে দিল। 
আহির বেশ অবাক হয়ে মনে মনে বলল, “এইভাবে না হেসে খু**ন করে ফেলো আমায়। এই হাসিতেই ফিদা আমি। আজ কতদিন পর তোমার সেই পুরনো হাসি দেখলাম। এই আরশিকেই খুঁজছি আমি।আমার প্রাণস্পর্শী তুমি। কতদিন পর স্বাভাবিক দেখছি তোমায়!”
আরশির দিকে আহির মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। আহির ভ্রু-নাচিয়ে বলল,
“কী হলো বউ? এত হেসো না। আমি জ্ঞান হারাব এবার।”
“আপনার প্যান্ট।”

আহির নিচের দিকে তাকাল। খালি গায়ে পরনে থ্রী কোয়ার্টার। প্যান্ট নাভির নিচে নেমে গিয়েছে কিছুটা। দ্রুত বিছানা ছেড়ে আসার সময় খেয়াল করেনি। দ্রুত প্যান্ট টেনে উপরে তুলে বলল,
“ইয়া হাবিবি, এই মেয়ে আমার সব দেখে ফেলল। কিছু দেখোনি তো তুমি?”
“হ্যাঁ দেখেছি।”
“দেখেই যখন ফেলেছ আসো একটা চুমু দিই।”– বলেই আরশির দিকে উড়ন্ত চুমু ছুড়ে মারল আহির।

আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান 

সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।


চলবে ...

০৬ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন


লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।

কবিয়াল
 
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।

Post a Comment

নবীনতর পূর্বতন