উপন্যাস : আরশি
লেখিকা : মৌসুমি আক্তার মৌ
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ৭ ডিসেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ'র “আরশি” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি তার ফেসবুক পেজে ২০২২ সালের ৭ ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন। এই উপন্যাসে গল্পটি সম্পূর্ণ কাল্পনিক। বাস্তবের সাথে এর কিছুই মিল নেই। এটি মূলত লেখিকার ‘প্রাণস্পর্শী’ উপন্যাসের চরিত্রদের কেন্দ্র করে লেখা হয়েছে।
![]() |
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ |
৫ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
আরশি || মৌসুমি আক্তার মৌ (পর্ব - ০৬)
সাতদিন পার হয়ে গিয়েছে। সন্ধ্যা ছয়টা বাজে; মাগরিবের ওয়াক্ত শেষ। এসআই তুরাণ মাহবুব হাজির হলো চেয়ারম্যান বাড়িতে। আরশি সাতদিন পরে আসতে বলেছিল। ডায়নিং-এ অপেক্ষা করছে আরশির জন্য। আরশির সৎমা আরশিকে ডাকতে গেল। আরশি তখন বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিল; কারণ তার সামনেই আহিরের বেলকনি। দারুণ একটা সুবাস পায় আরশি এখান থেকে। কিন্তু আজ আহির নেই।আরশিকে দেখে দুই-একটা কথা বলে বেরিয়ে গিয়েছে। কোনো একটা কারণে চিন্তিত আহির। আরশির সৎমা আরশির রুমে প্রবেশ করে বলল, “নবাবের বাচ্চা! কথা কানে ঢুকছে না তোর? নিচে পুলিশ বসে আছে। তোকে ডাকছে।”
আরশি বরাবরের মতোই গুরুগম্ভীর ভঙ্গিতে আছে। গম্ভীর চোখে-মুখে সৎমায়ের দিকে তাকিয়ে বলল, “আমাকে ডাকছে কেন?”
“তোকে ডাকছে কেন বুঝছিস না? তোর বাপ ম'র'ছে। তোরে তো ডাকবেই।”
“কেন? খু' ন কি আমি করেছি যে, আমাকে ডাকবে!”
“হায় আল্লাহ! কী সর্বনাশের কথা! নিজের বাপের কথা এইভাবে বলতে ঠোঁট কাঁপল না তোর?”
এরই মাঝে তুরাণ মাহবুব দরজার বাইরের থেকে বলে উঠল, “খু' ন যে করেননি তারও বা প্রমাণ কী?”
আরশি দরজার দিকে তাকাল। দেখল– তার ছোটো চাচির সাথে দাঁড়িয়ে আছে তুরাণ মাহবুব। সে এবার ঘরের ভেতরে প্রবেশ করল কোনো অনুমতি ছাড়াই। আরশির ঘরে ঢুকে চারদিক অভিজ্ঞ নয়নে দেখছে। চোখ জুড়ে রয়েছে কৌতুহল। ব্যাপারটা আরশির একদমই সহ্য হচ্ছে না। সে রে'গে যাচ্ছে। তার রুমে তার একারই আধিপত্য। অন্য কারো আসা-যাওয়া তার পছন্দ নয়। তুরাণ মাহবুব একবার আরশির দিকে তাকাচ্ছে তো একবার রুমের একেক কোনায় তাকাচ্ছে। হঠাৎ আরশির ক্রোধান্বিত নয়ন পানে দৃষ্টি দিয়ে মুগ্ধ হলো তুরাণ মাহবুব। এত রহস্যে ভরা; অথচ তুরাণ মাহবুব এই মেয়েটার রূপে মুগ্ধ। অদ্ভুত কারণে মেয়েটাকে একবার দেখেই মনে গেঁথে গিয়েছে। বিগত সাতদিন আরশির মুখের প্রতিচ্ছবি ভেসে উঠেছে তার চোখে। একজন পুলিশ হিসাবে যেমন– তার দায়িত্ব কেসের সমস্ত সত্যতা তুলে ধরা, সেই সাথে সাথে কেসের সত্যতা তোলার পাশাপাশি এই মেয়েটাকে দেখাটাও যেন তুরাণ মাহবুবের বাহানা। তুরাণ মাহবুব এবার বেলকনিতে পা রাখল। পা রাখতেই দেখল একটা ছেলে মাত্রই সামনের বেলকনি ত্যাগ করল। তুরাণ মাহবুব সামনের বেলকনিতে দৃষ্টি রেখে বলল, “ওই রুমটা কার?”
আরশির সৎমা বলল, “আরশির বাবার বন্ধুর বাড়ি ওটা। আর ওই রুমে তার একমাত্র ছেলে আহির থাকে।”
তুরাণ মাহবুব একজন অভিজ্ঞ মানুষ। সাথে সাথেই তার মনে সন্দেহের দানা বাঁধল। আহির আর আরশি সম্পর্কে একটা ধারণা তার মনে উঁকি দিল। হিংসায় যেন কেমন জ্ব' লে উঠল। অজান্তেই আহিরের প্রতি হিংসা হলো তার। পিস্তল বের করে একটা গু' লি আহিরের মাথায় ঢুকিয়ে রাস্তা পরিষ্কার করতে মন চায়ল। আরশি এবার বলল, “আপনার কাজ কি আমার বেডরুমে? দয়া করে কাজ শেষ হলে বের হয়ে যান।”
তুরাণ মাহবুব বাঁকা হেসে বলল, “বাইরে বেরোতে বলেছিলাম বেরোননি। আমাকে তো আসতেই হতো এখানে।”
“আমার সাথে কীসের কথা আপনার?”
“কথা তো সব আপনার সাথেই। নিজের বাবার মৃত্যুতে আপনি এত খুশি। সেটার কারণ তো জানতেই হবে।”
“আমি খুশি সেটা আপনাকে বলেছি?”
“এত রে'গে যাচ্ছেন কেন? কিছু ইনফরমেশন নেওয়ার ছিল।”
“আচ্ছা বলুন।”
“আপনি একটু ফ্রি হোন আমার সাথে।ক্লোজলি মিশুন। নরমালি শেয়ার করুন সবটা। রেগে না গিয়ে নরমালভাবে উত্তর দিন। আর আপনারা বাইরে যান।”– তুরাণ মাহবুব কথাটা বলতেই আরশির সৎমা আর চাচি বেরিয়ে গেল।
তুরাণ মাহবুব বলল, “আমি যা জানতে চাই তারই উত্তর দিন প্লিজ।”
“কী জানতে চান?”
“বাগানে কেন গিয়েছিলেন?”
“বলব না।”
“না বললে কিন্তু অপরাধের তির আপনার দিকেই উঠবে। আর আমি সেটা চাইছি না।”
“আপরাধের তির আমার দিকে?”
“জি। ওই বাগানে আপনার বাবার র'' ক্ত পাওয়া গিয়েছে। যেখানে খু*ন করা হয়েছে।”
“আপনি বলতে চাইছেন আমিই আমার বাবাকে খু*ন করেছি?”
“আপনাকে বাঁচাতে চাইছি আমি।”
“আপনি একজন পুলিশ অফিসার। অপরাধ যদি করেই থাকি তাহলে বাঁচাতে চাইবেন কেন?”
“কারণ আপনিই আমার বেঁচে থাকার কারণ। আপনার নিষ্পাপ মুখের মায়ায় পড়েছি। আই থিংক– আপনাকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই আপনাকে আমার বাঁচাতে হবেই। সহস্র খু*নের দায় নিজ কাঁধে নিলেও আপনাকে বাঁচাব আমি।”
“পুরুষের চরিত্র কি এমনই হয়? মেয়ে দেখলেই ঝুঁকে পড়বে?”
“মেয়ে দেখলেই ঝুঁকে পড়া পুরুষ আর আমি আলাদা। আমি শুধু আপনাকে দেখেই আকৃষ্ট হয়েছি। আগে পরে আর এমন অনুভূতি হয়নি। এইজন্য আপনাকে বাঁচাতে চাইছি। আপনার সাথে থাকা ছেলেটির পরিচয় চাইছি। ছেলেটিকে যা জবাবদিহীতা করার করব। এদিক দিয়ে আপনি বেঁচে যাবেন।”
“আপনি অকারণ তাকে টানছেন।”
“আচ্ছা, সে কি আহির চৌধুরী?”
“আপনার প্রশ্ন শেষ হলে আসতে পারেন।আজ আমার জীবনের বিশেষ একটি দিন।সময়টা উপভোগ করতে চাই।”
“কেন বিশেষ কেন?”
“আজ আমার ইদ।”
“কারণটা জানতে পারি?”
“নো।”
“ওকে, প্রফেশনাল প্রশ্নে আসি। আপনার বাবার বিষয়ে।”
“এ বিষয়ে কোনো উত্তর দিতে আমি আগ্রহী নই।”– বলেই আরশি বেরিয়ে গেল রুম থেকে। বেরোনোর সময় দেখল দরজায় তার ছোট চাচি দাঁড়িয়ে আছে। চাচির দিকে তাকিয়ে বলল, “আমার জানামতে– বাবার মৃত্যুতে সব থেকে খুশি আপনি হয়েছেন।”
আরশির চাচি অবাক হয়ে তাকাল আরশির দিকে।
গায়ে কালো হুডি, পরনে ব্লু জিন্স, এক হাতে হেলমেট আরেক হাতে বাইকের চাবির রিং আঙুলে ঘুরাতে ঘুরাতে বাড়ি থেকে বের হচ্ছে আহির। বেশ চিন্তিত সে। ইদানীং সবসময় কিছু একটা ভাবতে থাকে। ভাবনায় বিভোর হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাওয়ার সময় ডায়নিং-এ চোখ বোলালো সে। দেখল– তার মা-বাবা বেশ থমথমে মুখের অদল নিয়ে বসে আছেন। তাদের সাথে মেঘলাও বসে আছে। আহির বুঝতে পারল মেঘলা তার মা-বাবাকে কিছু একটা বলেছে যার ফলে তার মা-বাবার মুড অন্য রকম দেখাচ্ছে। আহির সেদিকে তোয়াক্কা না করেই পা বাড়াল বাইরের উদ্দেশ্য।
ইদানীং আহির সারাক্ষণ ধ্যানমগ্ন থাকে। কে কী করছে; কে কী ভাবছে এসব নিয়ে সে ভাবে না। আহিরের বাবা থমথমে মুডে ডাকল, “দাঁড়াও আহির।”
আহিরের চলমান পা দু'টো থেমে গেল।দাঁড়িয়ে বলল,
“জি, বলুন।”
“তুমি বিয়েটা কবে করছ?”
“করব বাবা, খুব শিঘ্রই।”
“যাকে বিয়ে করবা তার সাথে মিসবিহেভ করছ কেন?”
“আপনি ভুল জানেন বাবা। আমি যাকে বিয়ে করতে চলেছি তার সাথে কখনো মিসবিহেভ করি না।”
“মেঘলা কি তাহলে মিথ্যা বলছে?”
“ওহ বাবা, ভালো কথা মনে করিয়েছেন।মেঘলার বিষয়টা ক্লোজ করা উচিত। আই ডোন্ট লাইক হার, আই ডোন্ট ফিল হার।”
“এসব ইংরেজি ছাড়ো আহির। আমি বাংলা ভাষায় বলে দিচ্ছি– তোমার মেঘলাকেই বিয়ে করতে হবে। আমি কথা দিয়েছি মেঘলার বাবাকে। আমার সম্মানের বিষয় এটা।”
“আমিও একজনকে কথা দিয়েছি বাবা।”
“কাকে কথা দিয়েছ?”
“আরশি।”
“কী! আমাদের বাচ্চা আরশি?”
“জি বাবা।”
“আরশির কয়দিন বয়স, আরশি কি বিয়ে সংসার এসব বুঝবে? এখন বলছ এটা? মেঘলার সাথে বিয়ে ঠিক হওয়ার আগে বলোনি কেন?”
“আমি নিষেধ করেছিলাম বিয়ে ঠিক করতে।”
“ছেলে বড়ো হলে বিয়ে ঠিক করব না!”
“ছেলে বড়ো হলে পারমিশন নেওয়া উচিত। তদের জানিয়ে দিন– বিয়ে ক্যান্সেল।”
বলেই আহির বেরিয়ে গেল নিজের রুম থেকে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৭ম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা মৌসুমি আক্তার মৌ সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে জানতে পারলে তা অবশ্যই কবিয়াল পাঠকদের উদ্দেশ্যে তুলে ধরা হবে।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন