উপন্যাস : তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান
লেখিকা : রাজিয়া রহমান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
রচনাকাল : ১১ই ডিসেম্বর, ২০২২ইং
লেখিকা রাজিয়া রহমানের “তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হবে। এটি মূলত লেখিকার প্রথম উপন্যাস “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর”-এর দ্বিতীয় খন্ড। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ইং সালের ১১ই ডিসেম্বর থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান |
1111111111111111111111
০২ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তুমি অন্য কারো ছন্দে বেঁধো গান || রাজিয়া রহমান (পর্ব - ০৩)
শ্রাবণদের বাড়িটি দোতলা। পুরনো যুগের রাজবাড়ির আদলে তৈরি করেছেন শ্রাবণের দাদার বাবা জমিদার শাহাবুদ্দিন চৌধুরী। এখন যদিও জমিদারি নেই তবুও সবাই তাদের বাড়িকে জমিদার বাড়ি বলেই জানে।
সকাল হতেই রান্নাঘর থেকে চিৎকার ভেসে আসতে লাগলো। শ্রাবণ মাথার উপর আরেকটা বালিশ তুলে দিলো।বারান্দার সামনের বাগানবিলাস গাছে একটা কাক বসেছে।তার বেসুরো গলার কা কা শব্দ তুলে শ্রাবণের ঘুমের দফারফা করে দিচ্ছে সে ও।
রাত জেগে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করে শ্রাবণ ফজরের নামাজ পড়ে শুয়েছে।এখন সবেমাত্র সাড়ে আটটা বাজে অথচ শ্রাবণ ঘুমাতে পারছে না।কানের উপর একটা বালিশ দিয়ে শ্রাবণ জোর করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলো। তন্দ্রাভাব আসতেই আবারও সেই একই স্বপ্ন দেখতে পেলো।গত ৫ মাস ধরে প্রায় সময় এই স্বপ্ন দেখছে সে।
তাদের বাড়ির সামনের বিশালাকৃতির বটগাছের তলায় একটা মেয়ে বসে আছে। পরনে তার আকাশী রঙের একটি শাড়ি। স্বপ্নে কি মানুষ রঙের অস্তিত্ব বুঝতে পারে?
শ্রাবণ জানে না। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে শ্রাবণ স্পষ্ট আকাশীরং দেখতে পাচ্ছে।
শ্রাবণ জানে এরপর কি হবে।মেয়েটা দু'হাতে মুখ ঢেকে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কান্না করবে ঠিক সেই মুহুর্তে শ্রাবণ হাজির হবে সেখানে।
মেয়েটার মুখখানা দেখার জন্য শ্রাবণ সামনে এগিয়ে যাবে সেই মুহুর্তে মেয়েটা ছুটে পালিয়ে যাবে,মেয়েটার পায়ের পায়েল ছিড়ে পড়ে যাবে। আর স্বপ্ন ভেঙে যাবে।
ঠিক তাই হলো। শ্রাবণ যেই মেয়েটার মুখখানা দেখতে গেলো তখনই মেয়েটা পালিয়ে গেলো,সেই পায়েলখানা ছিড়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো।
ঘুম ভেঙে গেলো শ্রাবণের।
শ্রাবণের হঠাৎ করেই বুকের ভেতর কেমন শূন্য শূন্য লাগতে লাগলো। মনে হচ্ছে এই মেয়েটা তার জনম জনমের চেনা।মেয়েটা দূরে সরে গেলেই শ্রাবণের বুকের বাম পাশে সূক্ষ্ম ব্যথা জন্ম নেয়,মনের উপর চাপ বাড়ে,মাথার ভেতর শূন্য শূন্য লাগে।
নিজেকে ভীষণ ব্যর্থ মনে হয় শ্রাবণের। কেনো সে পারছে না মেয়েটাকে দেখতে?
একবার দেখতে পেলেই তো খুঁজে বের করতো সেই স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা কে।সারা পৃথিবী তন্নতন্ন করে খুঁজতো শ্রাবণ। একবার পেলেই নিজের করে নিতে এক মুহূর্ত ও দেরি করতো না সে।
শ্রাবণের মনে হয় এই সেই বন্দী রাজকন্যা, যার গল্প ছোট বেলা থেকে শুনতো।যেভাবেই হোক তাকে মুক্ত করতেই হবে।
দশটা বাজতেই বাধ্য হয়ে বিছানা ছাড়লো শ্রাবণ। ছাদে গিয়ে কিছুক্ষণ হাটাহাটি করতে লাগলো।
সালমা আক্তার বড় একটা ইলিশ মাছ বের করলেন ফ্রিজ থেকে।সরিষা ইলিশ রান্না করবেন বলে। বড় ছেলে শ্রাবণের ইলিশ মাছ ভীষণ পছন্দ। তাছাড়া বৃষ্টি ও আসবে আজকে।
সালমার বড় জা সালেহা এলো বড় একটা লাউ নিয়ে।লাউ দিয়ে মাছের মাথা রান্না করা হবে।একান্নবর্তী পরিবার শ্রাবণদের।
শ্রাবণের দাদা নাজিমুদ্দিন চৌধুরীর দুই ছেলে।
বড় ছেলে হাসানুজ্জামান চৌধুরী পেশায় একজন ডাক্তার। তার দুই মেয়ে এক ছেলে ঈশিতা ও নিশিতা।
ঈশিতা স্কুল শিক্ষিকা আর নিশিতা ইন্টারে পড়ছে। ছোট ছেলে নুরুজ্জামান চৌধুরী পেশায় একজন চার্টার্ড একাউন্টেট।তার এক ছেলে শ্রাবণ।অনার্স শেষ করেছে,চাকরি করতে মোটেও আগ্রহী নয়।একজন সফল ফ্রিল্যান্সার, সেই সাথে শখের ফটোগ্রাফার।আর ছোট মেয়ে শ্রাবণী এবার অনার্স সেকেন্ড ইয়ার।
শ্রাবণ নাশতা খেতে এলো কিছুক্ষণ পর। সালমা আক্তার হাসিমুখে এসে বললেন,"বাবু,আজকে বৃষ্টি আসবে।"
শ্রাবণ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে বললো, "এই শীত কালে বৃষ্টি আসবে কই থেকে?কে তোমাকে এসব ভুলভাল তথ্য দেয়?"
সালমা আক্তার হেসে বললেন,"আরে আমার হবু বউ বৃষ্টি আসবে।ওকে আনতে স্টেশনে যাস তো।"
শ্রাবণ কোনো প্রতিক্রিয়া দেখালো না।চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো, "রমিজ কাকুকে পাঠাও না মা।আমার ভালো লাগছে না।"
সালমা আক্তার বিরক্ত হয়ে বললেন, "৩ বছর পর মেয়েটা আসছে,ভদ্রতা জানিস না না-কি। রমিজকে পাঠিয়েছি আমি বাজার করতে।"
শ্রাবণ বিরক্ত হয়ে বললো, "এসব ভালো লাগছে না আমার। এতো ভদ্রতা আমার আসে না।"
সালমা অবাক হলেন।এতোই অবাক হলেন যে হাত থেকে চামচ পড়ে গেলো।
তারপর বললেন,"বাবু,এই মেয়েটাকে তুই নিজে পছন্দ করেছিস।তোর গ্রাজুয়েশন কমপ্লিট করে বিয়ে করার কথা এই মেয়েটাকে।বিয়ের কথা বললেই আজ নয় কাল,কাল নয় পরশু করে সময় নিচ্ছিস।অথচ এখন কি-না তুই এরকম ব্যবহার করছিস?"
শ্রাবণ জবাব দিতে পারলো না।নিজের মনকে সে বুঝতে পারে না।এমন নয় যে সে বৃষ্টি কে অপছন্দ করে। অপছন্দ করার মতো মেয়ে না বৃষ্টি। বৃষ্টিকে তার ভালো লাগে,ভালো লাগে বলেই বাবা মায়ের কথায় অমত করে নি। কিন্তু তবুও কোথাও একটা যেনো ছন্দপতন হয়ে গেছে। মনের ভেতর থেকে কোনো পজিটিভ সাইন পায় না সে।
বৃষ্টির সাথে শ্রাবণের পরিচয় যখন শ্রাবণী আর বৃষ্টি ঢাকা একটি স্কুলে পড়তো, শ্রাবণীর প্রিয় বান্ধবী বৃষ্টি। স্কুলের হোস্টেলে দুজন এক রুমে থাকতো, সেভাবে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে দুই জনের।দুই বান্ধবীর থেকে সম্পর্ক গড়িয়েছে দুই পরিবারের মধ্যে। ইন্টারে পড়াকালীন শ্রাবণ বৃষ্টিকে দেখে পছন্দ করে। শ্রাবণের আগেই তার বাবা মা বৃষ্টিকে ছেলের বউ করবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
রাজবাড়ী রেলস্টেশনে রেল থেকে নেমে বৃষ্টি অপেক্ষা করছে শ্রাবণের। একটা আকাশীরং জামদানী শাড়ি পরনে,হাত খোঁপা করে খোঁপায় বেলীফুলের মালা জড়িয়েছে।লাল রঙের লাগেজ হাতে নিয়ে বারবার সময় দেখছে বৃষ্টি।
শ্রাবণ এলো একটা রিকশা নিয়ে। বৃষ্টি সময় দেখলো শ্রাবণ ৪৫ মিনিট লেট।
বৃষ্টির রাগ হওয়ার কথা কিন্তু রাগ হতে গিয়েও হতে পারলো না।
শ্রাবণ রিকশা থেকে নেমে একটা গোলাপ ফুল এগিয়ে দিলো বৃষ্টির দিকে।আকাশীরং শাড়ি পরা বৃষ্টিকে দেখে এক মুহুর্তের জন্য চমকে গিয়েছিলো শ্রাবণ। পরক্ষণেই পায়ের দিকে তাকালো। না, বৃষ্টির পায়ে পায়েল নেই।মুচকি হেসে বৃষ্টি ফুলটি নিলো।
শ্রাবণ বৃষ্টিকে নিয়ে রিকশায় উঠলো। বৃষ্টি রিকশায় বসে শ্রাবণের বাম কাঁধে মাথা রাখলো।বিব্রত হয়ে কাঁধ সরিয়ে নিতে চাইলো শ্রাবণ কিন্তু পারলো না।বৃষ্টি ছাড়ছে না।অনিচ্ছায় বসে রইলো শ্রাবণ।
বাড়ি ফিরে মা'কে বললো, "খুশি হলে তো এবার?দিয়েছি তোমার দেওয়া ফুলটা ওকে।ওই তো ওর হাতেই। "
এক দন্ড না দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলে শ্রাবণ নিজের রুমের দিকে চলে গেলো। সালমা আক্তার মুচকি হেসে বৃষ্টির কাছে গেলেন।
চৈতালি লিখা শেষ করে ফাল্গুনীর পাশে এসে বসলো।তারপর ফাল্গুনীর হাত চেপে ধরে বললো, "তুই স্কুলে না গেলে সেদিন আমি ও যাই না।অথচ তুই কি-না আজ একা স্কুলে চলে গেলি আমাকে বাসায় একা রেখে?"
ফাল্গুনী হাঁফ ছেড়ে বাঁচলো।শক্ত করে চৈতালিকে জড়িয়ে ধরে বললো, "তুই আর আমি তো,একই।"
নবনী এসে বললো, "হ্যাঁ, ঠিকই। আমি তো কেউ না।আমি কারো বোন না।"
বিকেলে সবাই মিলে জম্পেশ আড্ডা দিলো।হাসি আনন্দে মুখরিত সবার দিকে তাকিয়ে ফাল্গুনী ভাবলো,"আমি বাবা মা'কে ঠকাচ্ছি না তো!"
ভাবতেই দুই চোখ জলে ভরে গেলো।পরক্ষণেই মনে হলো, রিশাদের কথা।
একটু আগে জন্ম নেওয়া অপরাধবোধ হারিয়ে গেলো রিশাদের কথা ভাবতেই।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
০৪ পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা রাজিয়া রহমান বাংলাদেশের লক্ষ্মীপুর জেলায় জন্মগ্রহন করেন। লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে শিক্ষাজীবন শেষ করেছেন তিনি। তরুণ এই লেখিকা বৈবাহিক সূত্রে লক্ষ্মীপুরেই বসবাস করছেন। বর্তমানে তিনি একটি পুত্র সন্তানের জননী। পেশাগতভাবে তিনি গৃহিনী হলেও লেখালেখির প্রতি তার ভিষন ঝোক। আর তাই শত ব্যস্ততার মাঝেও শখের বশে ধারাবাহিকভাবে লিখে যাচ্ছেন একের পর এক উপন্যাস। ২০২২ সালের মধ্যদিকে গর্ভকালিন সময়ে লেখিকা হিসেবে হাতেখড়ি নিলেও এরই মধ্যে লিখে ফেলেছেন “তুমি অন্য কারো সঙ্গে বেঁধো ঘর” ও “শালুক ফুলের লাঁজ নাই” -এর মতো বহুল জনপ্রিয় উপন্যাস।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন