উপন্যাস : তোমায় ঘিরে - ২
লেখিকা : জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান
গ্রন্থ :
প্রকাশকাল :
রচনাকাল : ২৯ নভেম্বর, ২০২২ ইং
লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরানের “তোমায় ঘিরে - ২” শিরোনামের এই ধারাবাহিক উপন্যাসটি তার ব্যক্তিগত ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া হয়েছে। লেখিকা এটি “তোমায় ঘিরে” উপন্যাসের দ্বিতীয় সিজন হিসেবে লিখেছেন। ‘কবিয়াল’ পাঠকদের জন্য উপন্যাসটি পর্ব আকারেই প্রকাশিত হল। লেখিকা অনবদ্য এ উপন্যাসটি ২০২২ সালের নভেম্বরের ২৯ তারিখ থেকে লেখা শুরু করেছেন।
![]() |
তোমায় ঘিরে - ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান |
1111111111111111111111
২৯ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
তোমায় ঘিরে- ২ || জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান (পর্ব - ৩০)
আসর এর আযান কানে ভাসতেই নবনির জ্ঞান ফিরে।নবনির মনে হলো কানের কাছে আরাফ বলছে নবনি কতো ঘুমাবে।উঠে নামায পড়ো।
নবনি তাৎক্ষণিক উঠে আরাফকে চারপাশে খুজে।কিন্তু আরাফ কোথাও নেই।আরাফ এর গিটারটা বিছানায় পড়ে আছে।
নবনি গিটারটা হাতে নিলো।গিটার বাজানো আরাফ শিখিয়েছিলো নবনিকে।কিন্তু নবনি কখনো বাজায় নাই।কারন নবনি সব সময় বলতো আপনি থাকতে আমার কখনো এটা হাতে নিতে হবে না।আমার আপনিই আছেন তো।
নবনি তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে গিটারে সুর তুললো~
Dil ibadat kar raha hai
Dhadkane meri sun,
Tujhko main kar loon hasil lagi hai yehi dhun,
Zindgi ki shakh se loon kuch hasin pal le chun
Tujhko main kar loon hasil lagi hai yahi dhun
Tujhse he mujhe ko paane yaado ke woh nazrane
Ek jinpe haq ho bas mera
নবনি হিচকি তুলে কাদছে।কান্নার জন্য গলা দিয়ে শব্দ উচ্চারণ হচ্ছে না।কিন্তু নবনির মাথায় জেদ চেপে বসেছে।সে একটুও থামছে না।
Bahoon main de bas jaane
Sine main de chup jaane
Tujh bin main jaaungi kaha?
আরাফ এর স্মৃতি গুলো সারা রুম জুড়ে ভাসছে।নবনি রুমে চোখ বুলাচ্ছে। আর গিটারে আংগুল চালাচ্ছে।নবনির হাত থেকে রক্ত পড়ছে সে দিকে তার কোনো খেয়াল নেই।নবনি হারিয়ে গিয়েছে আরাফ এর স্মৃতি গুলোর মাঝে।
নবনি আরাফ এর কন্ঠ শুনতে পেলো।
আরাফ~
Teri yaado main rahoo
Tere khwabo main jagun
Mujhe doondhe jab koi
Teri aankho main milu.
Jo bhi saanse main bharoo unhe tere sang bharoo
Chahe jo hona rasta use tere sang chalu.
Dil Ibadat kar raha hai
Dhadkane meri sun
Tujhko main kar loon hasil lagi hai yehi dhun.
নবনি পুরো রুমে আরাফকে খুজে।খুজতে যেয়ে হাত লেগে বেড সাইডে থাকা গ্লাসটা পড়ে ভেঙে যায়।কাচ গুলো নবনির পা রক্তাক্ত করে দেয়।কিন্তু নবনি ব্যাথার টেরই পাচ্ছেনা।হাটার কারনে কাচ গুলো আরো গভীরে ঢুকে যাচ্ছে।কিন্তু নবনি আরাফকে এক ঝলক দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে।কোথাও আরাফ এর অস্তিত্ব না পেয়ে বাস্তবে ফিরে আসে।সে মেনে নেয় আরাফ আর নেই।
নবনি~
তুমি তো নেই আরাফাত চৌধুরী।কিন্তু রেখে গেলে এমন কাউকে যার সবটা শুধুই তোমায় ঘিরে...
অনেক ভালোবাসি আরাফ পাখি।
নবনি ওযু করে নামাযে দাঁড়ায়।নামায শুরু করবে এমন সময় আদর চৌধুরী কন্ঠ শুনতে পেলো।
আদর চৌধুরীঃনবনি মা।হতচ্ছারা তোমাকে অনেক জ্বালিয়েছে তাই না?এই যে দেখো এইবার ওকে মেরে সাইজ করে দিবো।
এইবার কিন্তু ও আমার কাছে এসে পড়েছে। এখন কিন্তু তুমি একটা ভালো ছেলে দেখে বিয়ে করতেই পারো।
আরাফঃআব্বু।তুমি কিন্তু বেশি কথা বলছো।তোমার জন্য তো দেখছি দুনিয়াতে বউকে একা রেখে এসে শান্তি নেই।
আদর চৌধুরীঃতো কি আমার বউ মা কি একা থাকবে না কি ওখানে?
আরাফঃএকা কই? আমার ছেলে মেয়েদের রেখে এসেছি না? ওদের সাথে থাকবে।তুমি উল্টাপাল্টা কথা বলবে না তো আমার নবনিপাখিকে।আমার বউ শুধুই আমার। মরে গেলেও আমি আমার বউয়ের ভাগ কাউকে দিবো না।
আদর চৌধুরী আর আরাফ ঝগড়া করছে।নবনি আরাফ এর মুখ চেপে ধরতে নিলে তার অদৃশ্য হয়ে যায়।নবনি কাদতে কাদতে মাটিতে বসে পড়ে।
আমাকে এই শাস্তি কেন দিলো আল্লাহ।
নিলীমা চৌধুরীঃকেদো না। বউমা।আরাফ আর আদরকে আমি দেখবো তুমি আমার নাতিদেরকে দেখে রেখো।
নবনি ভেজা চোখে শাশুড়ীর দিকে তাকায়।তাকানোর সাথে সাথেই উনি চলে যান।নবনি হাটা চলার শক্তিটুকু ও পাচ্ছে না।মাটিতে কনুইয়ের উপর ভর করে নবনি জায়নামাজ পর্যন্ত পৌছায়। নামাযে বসে আল্লাহর কাছে চিৎকার করে কান্না করে।কান্না করতে করতে নবনির হিচকি উঠে যায়।নবনি বসে বসেই নামায পড়তে শুরু করে।নবনি।সিজদাহ্ যেয়ে আল্লাহর কাছে আরাফকে চাইতে থাকে।
নবনিঃইয়া আল্লাহ। তুমি তো সিজদাহরত অবস্থায় বান্দার সব থেকে কাছে থাকো।তুমি কি চোখ বন্ধ করে নিয়েছো আল্লাহ?
একবার আমার দিকে তাকাও।আমি পারছি না তো।এক একটা নিশ্বাস আমাকে আরাফ এর অনুপস্থিতির অনুভব করাচ্ছে।তুমি যদি আরাফকে এই শ্বাসগুলো দাও নাই তাহলে আমাকে কেন দিয়ে রেখেছো?আমার সবটাতো আরাফকে ঘিরে।আমার থেকে ও কেড়ে নাও।
মেহরাব আরাফকে দাফন এর সব ব্যবস্থা সেরে নবনির কাছে আসে।আরাফকে শেষ দেখা দেখানোর জন্য।একটু পরই আরাফকে নিয়ে যাওয়া হবে।মেহরাব রুমে প্রবেশ করতেই দেখে নবনি সেজদায়।মেহরাব বসে অনেকক্ষন যাবত অপেক্ষা করে নবনির সিজদাহ থেকে ওঠার।কিন্তু নবনি উঠে না।
মেহরাব নবনির গায়ে হাত দিতেই নবনি জায়নামাযে ঢলে পড়ে।মেহরাব কাপাকাপা হাতে নবনির নার্ভস চেক করে দেখে নবনির নিশ্বাস চলছে না।মেহরাব নবনিকে বুকে জড়িয়ে আম্মু বল চিৎকার করে। চিৎকার এর শব্দে পুরো চৌধুরী ভিলা কেপে উঠে।
নূর আরিয়ান আদ্রিতা তিথি মেহরাব সবাই দৌড়ে আসে নবনির রুমে।
মেহরাব সবার আগে নবনির দিকে তাকায়।কারন মেহরাব শাহরিয়ার এর মন আগেই আগাম দিয়েছিলো নবনি পারবে না আরাফকে ছাড়া বাকিটা পথ চলতে।
নূরঃকি হয়েছে মেহের?
মেহরাব পাথর হয়ে গিয়েছে।কোনো শব্দই উচ্চারণ করছে না।আরিয়ান নবনির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে গেলো। নবনি পা হাত থেকে এখনো রক্ত পড়ছে।আরিয়ান নবনিকে ধরতে যেয়ে টের পায় নবনির হাত ঠান্ডা।নার্ভস চেক করে দেখে নবনির নিশ্বাস চলছে না।
আরিয়ান মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়ে।আদ্রিতা তিথি নূর নবনিকে জড়িয়ে ধরে।মেহরাব মেহেরকে ধরে সরাতে চায় কারন মেহের কোনো রেসপন্সই করছে না।
মেহরাবঃআরিয়ান।মেহেরকে সামলাও।
আরিয়ান কিছু করার অবস্থায় নেই।স্থির হয়ে আছে।চোখ উপচে পানি পড়ছে।আরাফ এর মৃত্যুর সময় আদ্রিতার কথা ভেবে নিজেকে কন্ট্রোল এ রাখলেও এখন আর পারছে না।তিথি নবনির মাথা নিজের কাছে নিতেই মেহের উঠে যেয়ে কাচ দিয়ে হাত কাটতে নেয়।মেহরাব মেহের এর হাত ধরে নাও।
মেহরাবঃপাগলামী করো না মেহের।
মেহরাব চোখ গরম করে মেহরাব এর দিকে তাকায়।যেন সে মেহরাবকেই আঘাত করে ফেলবে।
মেহরাবঃনূর।নূর এখানে আসো।মেহেরকে সামলাও নূর।এই পরিবার আর মৃত্যু নিতে পারবে না।নূউউর।
মেহরাব এর ডাকে নূর এর চোখ মেহের এর উপরে যায়।মেহের কাচ ফেলে ওয়ালে ঘুষি দিতে শুরু করে।
নূর মেহরাবকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে।
নূরঃআম্মু কষ্ট পাবে মেহের।এমন করবেন না।আম্মুর রুহ এখনো এখানেই আছে।
মেহরাব শান্ত হয়ে আসে।ঘুরে নূরকে জড়িয়ে ধরে।
মেহরাব চিৎকার করে কান্না করছে। আদ্রিতা কোনো কথাই বলছে না। একদম চুপ চাপ হয়ে গিয়েছে।তিথি আদ্রিয়ানকে ডাকছে।
পুরো বাড়ির জীবন থেমে গেলো।
আরাফ এর পাশেই নবনিকে কবর দেয়া হলো।
মেহেরঃআব্বু আম্মু একজন আর একজনকে দেখে রেখো।
মেহরাবঃআর তুমি সবাইকে দেখে রেখো মেহরাব।তোমার আব্বুকে নিরাশ করো না।তোমার আম্মু আব্বু তুমি আছো বলেই সব কিছু রেখে যেতে পেরেছেন।সামলে নাও তোমার বাবা মার রেখে যাও কলিজার টুকরো গুলোকে।
তোমাকে হয়ে উঠতে হবে আরাফাত চৌধুরী।আর নূরকে নবনি।আদ্রিতা আরিয়ান তিথি আদ্রিয়ান সবাইকে তোমার আর নূরকেই দেখতে হবে।তোমার বাবা চলে যাবে বলেই তো তোমাদের সবার জীবন গুলো সাজিয়ে দিয়ে গিয়েছেন।
মেহের মেহরাবকে জড়িয়ে ধরে।মেহরাব মেহের এর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়।
তাদের ভালোবাসার সমাপ্তি এই পর্যন্তই ছিলো।
শুরুটা আরাফ এর নবনিকে ঘিরে হলেও শেষটা নবনি করলো আরাফকে ঘিরে।
সবার মনে গেথে থাকবে আরাফ নবনির তোমায় ঘিরে।
আরাফ নবনি চলে গেলো কিন্তু তাদের ভালোবাসা হাজার মানুষের হ্রদয়ে বেচে থাকবে।
যখন কোনো ছেলে ভালোবাসা খুজবে সে চাইবে নবনিকে আর যখন কোনো মেয়ে ভালোবাসা খুজবে সে চাইবে আরাফকে।আর যখন আরাফ নবনি এক হবে তখনই ভালোবাসা হয়ে উঠবে তোমায় ঘিরে।
আপনার পছন্দের গল্পের নাম কমেন্টে জানান
সবার আগে সব পর্ব পেতে যুক্ত হন আমাদের ফেসবুক পেজে।
চলবে ...
৩১ তম পর্ব পড়তে এখানে ক্লিক/ট্যাপ করুন
লেখক সংক্ষেপ:
তরুণ লেখিকা জান্নাতুল ফেরদৌস সিমরান সম্পর্কে তেমন কিছুই জানা যায়নি। তবে তিনি নিজের সম্পর্কে লিখেছেন, আমি আমার মতো। আমি কারো মতো না। আমি আমিতেই পারফেক্ট। যারা আমাকে এমনভাবে গ্রহণ করতে পারবে, তারাই আমার আপন।
কবিয়াল
কবিয়াল’এ প্রকাশিত প্রতিটি লেখা ও লেখার বিষয়বস্তু, ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ও মন্তব্যসমুহ সম্পূর্ণ লেখকের নিজস্ব। প্রকাশিত সকল লেখার বিষয়বস্তু ও মতামত কবিয়াল’র সম্পাদকীয় নীতির সাথে সম্পুর্নভাবে মিলে যাবে এমন নয়। লেখকের কোনো লেখার বিষয়বস্তু বা বক্তব্যের যথার্থতার আইনগত বা অন্যকোনো দায় কবিয়াল কর্তৃপক্ষ বহন করতে বাধ্য নয়। কবিয়াল’এ প্রকাশিত কোনো লেখা বিনা অনুমতিতে অন্য কোথাও প্রকাশ কপিরাইট আইনের লংঘন বলে গণ্য হবে।
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন